মাননীয় এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর লেখা থেকে
কলেমার প্রকৃত অর্থ- “আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ (আদেশদাতা, সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক) নেই”- কে বদলিয়ে ‘কোন মা’বুদ (উপাস্য) নেই’- তে পরিবর্তন করা হয়েছে অর্থাৎ কলেমাটারই পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে। এর ফলে কী পরিণাম হয়েছে তার সাক্ষী ইতিহাস। মানুষ জাতীয় জীবনে আল্লাহর সমস্ত আদেশ প্রত্যাখ্যান করে ইহুদী-খ্রিষ্টান সভ্যতা অর্থাৎ দাজ্জালকে ইলাহ এবং রব (প্রভু) বলে মেনে নিয়েছে। এদিকে ব্যক্তি জীবনে সালাহ (নামায), যাকাহ, হজ, সওম (রোযা) ও নানাবিধ কাজ করে আত্মতুষ্টিতে ডুবে আছে এই মনে করে যে তারা খুব ইবাদত করছে। কিন্তু আল্লাহ কি এই ইবাদতের মুখাপেক্ষী? তাহলে প্রকৃত ইবাদত কী?
ইবাদতের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে, যে জিনিসটিকে যে কাজ করার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে সেই কাজটি করাই হচ্ছে সেই সৃষ্ট জিনিসটির ইবাদত। সূর্যকে সৃষ্টি করা হয়েছে আলো এবং তাপ দেবার জন্য, ঐ কাজই তার ইবাদত এবং সূর্য নিরবচ্ছিন্নভাবে তা করে চলেছে- ইবাদত করছে। আল্লাহ এই পৃথিবীকে অর্থাৎ মাটিকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন অর্থাৎ প্রধানত গাছ-পালা, ফসল, ফল, ফুল ইত্যাদি উৎপাদন করা, তা সে ক্রটিহীনভাবে করে চলেছে, মাটি তার জন্য নির্দিষ্ট ইবাদত করে চোলেছে। এমনিভাবেই পানি, আলো, বিদ্যুৎ, আগুন ইত্যাদি প্রত্যেক সৃষ্টিই সেটাকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তা নিখুঁতভাবে পালন করে চলেছে এবং যার যার জন্য নির্দিষ্ট ইবাদত করে চলেছে। এ গেল আল্লাহর সৃষ্ট জিনিসগুলি। মানুষের সৃষ্ট জিনিসের ব্যাপারেও ঐ একই নিয়ম; মানুষ যে জিনিস সৃষ্টি করেছে সেই কাজটি করাই সে জিনিসের ইবাদত। মানুষ মোটর গাড়ি (Car) সৃষ্টি করেছে, উদ্দেশ্য- ঐ সৃষ্ট জিনিসটি মানুষকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাবে। ঐ কাজটি করাই মোটর গাড়ির (ঈধৎ) ইবাদত। মানুষ বিদ্যুত উৎপাদন করছে আলো দেবার জন্য, রেডিও টেলিভিশন এবং অন্যান্য যন্ত্র চালাবার জন্য। বিদ্যুৎ তার কাজ করছে, এটাই তার ইবাদত এবং বিদ্যুৎ রেডিও, টেলিভিশন, কম্পিউটার ইত্যাদি যে সমস্ত যন্ত্র চালাচ্ছে- সেই সব যন্ত্রের যার যা কাজ তাই করাই ঐ সব যন্ত্রের ইবাদত এবং তারা তা নিখুঁতভাবে করে যাচ্ছে। এখন দেখতে হবে আল্লাহ মানুষকে কি জন্য, কি কাজের জন্য সৃষ্টি করলেন। সেটা জানতে ও বুঝতে পারলেই আমরা বুঝতে পারব আমাদের প্রকৃত ইবাদত কী?
মানুষ সৃষ্টির বহু আগেই তিনি এই মহাবিশ্ব ও মালায়েকদের (ফেরেশতা) সৃষ্টি করেছেন। একদিন তিনি মালায়েকদের বললেন আমি পৃথিবীতে আমার খলিফা স্থাপন করতে চাই (সুরা বাকারা ৩০)। এবং মালায়েকদের মৃদু আপত্তি সত্তে¡ও তিনি তাঁর খলিফা আদমকে (আ.) সৃষ্টি করলেন, বনি-আদম (সুরা বাকারা ২১৩; সুরা ইউনুস ১৯; সুরা নেসা ১)। অর্থাৎ আদম (আ.) ও ঐ সঙ্গে আমরা মানুষ হলাম আল্লাহর খলিফা। তাহলে খলিফা শব্দের প্রকৃত অর্থ কি তা আমাদের সঠিকভাবে বুঝে নেয়া অতি প্রয়োজনীয়। তা না হলে আমরা আমাদের প্রকৃত ইবাদত কি তা বুঝতে পারবো না। খলিফা শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- প্রতিনিধি; সার্বভৌম সরকারের শাসনিক প্রতিনিধির পদ বা কার্য্যত দূত; উপরওয়ালার বদলে কার্যরত ব্যক্তি; কোন রাজার প্রতিনিধি স্বরূপ শাসক, রাজপ্রতিনিধি ইত্যাদি (বিভিন্ন অভিধান)। অর্থাৎ কেউ কোন কাজ নিজে না করে অন্য কাউকে সেই কাজ করার জন্য নিযুক্ত করলে সেই লোক হল তার খলিফা।
উদাহরণস্বরূপ যদি বলি একজন সার্বভৌম বাদশাহ বা রাজা তার বিশাল রাজত্বের একটি প্রদেশের জন্য একজন শাসক (Governor) নিযুক্ত করলেন। ঐ শাসক হলেন বাদশাহর নিযুক্ত রাজ প্রতিনিধি অর্থাৎ বাদশাহর খলিফা। বাদশাহর তৈরি আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, অর্থনীতিতে কোন পরিবর্তন করার। ঐ প্রতিনিধি যদি মুখে বাদশাহর সার্বভৈৗমত্বকে সদাসর্বদা স্বীকার করেও বাদশাহর দেওয়া আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, অর্থনীতি ইত্যাদির কোনটা বাদ দিয়ে তার নিজের হুকুম চালান তবে বাদশাহ কি তাকে তার পদে রাখবেন? তাকে তার প্রতিনিধি হিসাবে স্বীকৃতি বহাল রাখবেন? নাকি তাকে রাজধানীতে ডেকে নিয়ে তাকে শুধু পদচ্যুতই করবেন না, তাকে কঠোর শাস্তিও দেবেন। ঐ প্রতিনিধি, গভর্নর, খলিফা যদি প্রকাশ্যে বাদশাহর সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করে দিনে পাঁচবার বাদশাহকে সাজদাও করে কিন্তু বাদশাহর দেওয়া শাসনব্যবস্থাকে বাদ দিয়ে নিজের তৈরি শাসনব্যবস্থা, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, সমাজনীতি, অর্থনীতি তৈরি করে সেগুলি দিয়ে বাদশাহর প্রদেশ শাসন করে তবে বাদশাহ তার মৌখিক ঘোষণা ও পাঁচবার সাজদাকে কোনই দাম দেবেন না, তাকে কঠোর শাস্তি দেবেন। তাহলে বোঝা যাচ্ছে যে খেলাফত হচ্ছে কেউ তার নিজের কর্তব্য কাজগুলি যদি নিজে না করে সেগুলি করার জন্য অন্য কাউকে নিযুক্ত করে তবে তাকে খেলাফত অর্থাৎ প্রতিনিধিত্ব দেয়া হলো এবং সেই নিযুক্ত লোকটি হলো খলিফা। আল্লাহ আদম (আ.) অর্থাৎ বনি-আদম, মানুষজাতিকে তাঁর খলিফা নিযুক্ত করলেন, এবং করলেন তাঁর মহাসৃষ্টির, মহাবিশ্বের মধ্য থেকে শুধু এই পৃথিবীতে। বললেন, “ফিল আরদ” অর্থাৎ পৃথিবীতে, মহাবিশ্বের অন্য কোথাও নয় (সুরা বাকারাহ ৩০)। তাহলে খলিফা হিসাবে পৃথিবীতে মানবজাতির কাজ কি? কর্তব্য কি?
বনি-আদমকে, মানুষকে তাঁর খলিফা, প্রতিনিধি নিযুক্ত না করলে আল্লাহর যে কাজ ছিলো সেইটাই হলো মানুষের কাজ, কর্তব্য। কী সেই কাজ? আল্লাহর কি কাজ? আল্লাহর কাজ হলো শাসন। নিজের সৃষ্ট এই মহাবিশ্বকে শাসনই তাঁর কাজ। পৃথিবীতে এই কাজটা তিনি নিজে না করে দায়িত্ব দিলেন মানুষকে; অর্থাৎ মানুষ আল্লাহর হয়ে, তাঁর খলিফা, প্রতিনিধি হয়ে পৃথিবীতে শাসন করবে। কেমন করে করবে? আল্লাহ যেমন নিজের তৈরি আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি মোতাবেক মহাবিশ্ব শাসন করছেন, তেমনি পৃথিবীর শাসনের জন্য তিনি নিজে শাসন করলে যে আইন-কানুন, নিয়মনীতি দিয়ে শাসন করতেন সেই আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি তাঁর খলিফাকে দিয়ে বললেন- এইগুলি অনুযায়ী তোমরা তোমাদের শাসনকার্য পরিচালনা করবে। এটাই হলো তোমাদের ইবাদত যে জন্য তোমাদের আমি সৃষ্টি করেছি।
এই মহাবিশ্ব (Universe) সৃষ্টি করে তাঁর স্রষ্টা আল্লাহ সেটাকে তাঁর নিজের সৃষ্ট আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি মোতাবেক পরিচালনা করছেন। এই মহাসৃষ্টির মধ্যে কেউ নেই, কোন জিনিস নেই যার বিন্দুমাত্র, এমনকি অণুমাত্র স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি আছে। যাকে যে কাজ বেঁধে দিয়েছেন সে কাজ সে নিখুঁতভাবে করে চলেছে; তা থেকে পরমাণু পরিমাণও বিচ্যুতির শক্তি নেই। এই প্রথম তিনি একটি জীব সৃষ্টি করলেন যার মধ্যে তিনি তাঁর আইন-কানুন, নিয়ম-নীতিকে ভঙ্গ করবার ইচ্ছাশক্তি দিলেন। কেমন করে দিলেন? আদমকে (আ.) সৃষ্টি করে তিনি তাঁর মধ্যে নিজের রূহ, আত্মা থেকে ফুঁকে দিলেন সুরা হেজর ২৯; সুরা সাজদা ৯; সুরা সা’দ ৭২)। নিজের আত্মা থেকে ফুঁকে দেওয়ার অর্থ আল্লাহর যত গুণ (সিফত্) আছে সবগুলিই আদমের মধ্যে চলে এল। আল্লাহর গুণগুলির (সিফত) মধ্যে একটি হলো কাদেরিয়াহ, নিজের ইচ্ছামত কাজ করার শক্তি, যেটা সৃষ্টির আর কারো নেই; যে জন্য মানুষকে বলা হয় আশরাফুল মাখলুকাত অর্থাৎ সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে সম্মানিত। আল্লাহর গুণগুলি (সিফত্) প্রত্যেকটিই অসীম, যেমন তিনি নিজে অসীম; কিন্তু আদমের (আ.) অর্থাৎ মানুষের মধ্যে যেটুকু তিনি ফুঁকে দিলেন সেটুকু হলো অতি সামান্য। মহাসমুদ্র থেকে একটি ফোটার মত, এমনকি তাও নয়। আল্লাহ আদমকে (আ.) তাঁর নিজের গুণাবলি ও শক্তি দিলেন কেন? কারণ হলো- কেউ কাউকে তার নিজের কাজ করার জন্য খলিফা, প্রতিনিধি নিযুক্ত করলে তাকে তার পক্ষ হয়ে কাজ করার ক্ষমতা অবশ্যই দিতে হবে নইলে সে কি করে কাজ করবে? পার্থিব কাজেও কেউ নিজের কাজের দায়িত্ব অন্যকে অর্পণ করলে তাকে ওকালতনামা বা Power of Attorney দিতে হয়। নিজের আত্মা থেকে আদমের (আ.) মধ্যে ফুঁকে দেওয়াকেই তিনি বললেন আমি আদমকে আমার আমানত দিলাম (সুরা আহযাব ৭২)।
তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, আল্লাহ একমাত্র আদেশদাতা, ইলাহ এবং একমাত্র উপাস্য, মা’বুদ। প্রথমে তাঁকে একমাত্র ইলাহ, আদেশদাতা সার্বভৌম বলে স্বীকৃতি দিতে হবে, তারপর তাঁর আদেশ মেনে তাঁর খেলাফতের দায়িত্ব পালন করতে হবে অর্থাৎ তিনি নিজে যে কাজ করতেন অর্থাৎ শাসন তা তারই দেয়া আদেশ-নির্দেশ মোতাবেক করতে হবে, এটাই হলো তাঁর ইবাদত। কলেমার ইলাহ শব্দকে মা’বুদে, উপাস্যে পরিণত করার ফল এই হয়েছে যে আজ মুসলিম বলে পরিচিত কিন্তু কার্যত কাফের, মোশরেক, যালেম, ফাসেক ও মোনাফেক এই জনসংখ্যা ইলাহতেও নেই, মা’বুদেও নেই, কারণ এটা আল্লাহর উলুহিয়াহ্ এবং রবুবিয়াহ্ ত্যাগ করে দাজ্জালের উলুহিয়াহ্ এবং রবুবিয়াহ গ্রহণ করেছে এবং আল্লাহর ইবাদত ত্যাগ করে দাজ্জালের পায়ে সাজদায় প্রণত হয়েছে, তার ইবাদত করছে। এই জনসংখ্যা ইবাদত মনে করে কি কাজ করছে তা দেখা যাক।
আল্লাহ মানুষকে অর্থাৎ আদম (আ.) ও বনি-আদমকে তাঁর খলিফা নিযুক্ত করেছেন, অর্থাৎ তাঁর হয়ে তাঁরই দেয়া আইন-কানুন, নিয়মনীতি অনুযায়ী নিজেদের শাসন কাজ পরিচালনা করতে আদেশ করেছেন। আল্লাহ বলেছেন, যারা আমার নাযেল করা বিধান দিয়ে শাসনকার্য পরিচালনা (হুকুম) করে না, তারা কাফের, জালেম এবং ফাসেক (সুরা মায়েদা, আয়াত ৪৪, ৪৫, ৪৭)। এই বিভ্রান্ত (দোয়াল্লিন) জনসংখ্যা সালাহ (নামায), যাকাহ, হজ ও সওম (রোযা) পালন করে মনে করছে আমরা খুব ইবাদত করছি। আল্লাহর প্রতিনিধি হয়ে পৃথিবীতে তাঁর কাজ যদি খেলাফত অর্থাৎ ইবাদত হয়ে থাকে তবে প্রশ্ন এই যে- আল্লাহ কি সালাহ (নামায) কায়েম করেন? তিনি কি যাকাহ দেন? তিনি কি হজ করেন? তিনি কি সওম (রোযা) রাখেন বা রাত্রে ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদ পড়েন বা অন্যান্য যে সব কাজ করে এরা মনে করেন যে খুব ইবাদত করছি, তার একটাও করেন? অবশ্যই নয়। এগুলো খেলাফতের অর্থাৎ প্রকৃত ইবাদতের কাজ নয়। তাহলে এগুলো কি? এগুলো হচ্ছে- আল্লাহর দেয়া দীনে (জীবন-ব্যবস্থায়) মানুষের জীবনের সর্বপ্রকার অঙ্গনের, ভাগের (Facet) সমাধান ও ব্যবস্থা দেওয়া আছে; তা না হলে তা সর্বাঙ্গীন ও নিখুঁত হয় না। আল্লাহর দেয়া দীন (জীবন-ব্যবস্থা) পরিপূর্ণ, সম্পূর্ণ। তিনি বলেছেন, “তোমাদের জন্য দীন আমি সম্পূর্ণ ও পরিপূর্ণ করে দিয়েছি (সুরা মায়েদা ৩)।” শুধু তাই নয় তিনি বলেছেন, “এতে আমি কিছুই বাদ দেইনি (সুরা ফোরকান ৩৩)।” কাজেই মানুষের জীবনের বিভিন্ন ভাগের (Facet) জন্য তাঁর বিধান দেয়া আছে। তাঁর দীনকে স্থায়ী ও স্থিতিশীল রাখার জন্য ও কখনও এটার ওপর কোন আক্রমণ আসলে তাকে প্রতিহত করার জন্য যে ঐক্য, শৃংখলা, আনুগত্যপূর্ণ ও অন্যায়বিরোধী চরিত্রের মানুষের প্রয়োজন সেই চরিত্রের মানুষ সৃষ্টির জন্য সালাতের (নামাযের) ব্যবস্থা রেখেছেন। মানুষের জীবনে অর্থ ও সম্পদ একটি অতি প্রয়োজনীয় বিষয়; সেটার সুব্যবস্থা, যাতে সেখানে অর্থ ও সম্পদের অসম বণ্টন না হয়, অবিচার না হয় সেজন্য সমস্ত সম্পদের দ্রæত সঞ্চরণভিত্তিক যাকাতের ব্যবস্থা রেখেছেন। সমস্ত পৃথিবীতে দীনের কোথায় কী অবস্থা, কী সমস্যা, কোথায় কী করা প্রয়োজন এবং হাশরের দিনে আল্লাহর কাছে জীবনের কাজের হিসাব দেবার মহড়ার (Rehearsal) জন্য বাৎসরিক হজের ব্যবস্থা রেখেছেন। তারপর যেহেতু মানুষ দেহ ও আত্মার সম্মিলিত একটি একক (Unit) তাই তার আত্মার পরিচ্ছন্নতা উন্নতির জন্য ব্যবস্থা রেখেছেন সাওমের (রোযার)। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে দীনের পাঁচটি রোকনের (স্তম্ভের) চারটিই সমষ্টিগত, মাত্র একটি হচ্ছে ব্যক্তিগত এবং সেটি সওম (রোযা)।
ইবাদত মনে করে আজ এই গোমরাহ (বিভ্রান্ত) জনসংখ্যা যা করছে তা প্রকৃত ইবাদত অর্থাৎ খেলাফতের কাজ নয়; খেলাফতের কাজ অর্থাৎ আল্লাহর দেয়া দীনকে (জীবন-ব্যবস্থা) প্রয়োগ ও কার্যকরী (Effective) ঠিক রাখার জন্য আল্লাহ যে সমস্ত বিধান দিয়েছেন সেগুলি। প্রকৃত ইবাদত হচ্ছে আল্লাহর দেয়া দীন (জীবনব্যবস্থা) মোতাবেক তাঁর পক্ষ হয়ে শাসন করা। সেই ইবাদত থেকে এই জনসংখ্যা আজ শুধু লক্ষ কোটি মাইল দূরে নয়, একেবারে বিপরীতমুখী। দাজ্জালের অর্থাৎ মানুষের সার্বভৌমত্ব মেনে নিয়ে এটা আল্লাহর ফাসেক (অবাধ্য) হয়েছে এবং দাজ্জালের, মানুষের তৈরি জীবন-ব্যবস্থা জীবনে প্রয়োগ করে আল্লাহর উপাসকের বদলে দাজ্জালের উপাসকে পরিণত হয়েছে। আজ মুসলিম নামধারী নামাযী, যাকাহ দানকারী, হজ ও রোযা পালনকারী এই জনসংখ্যা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কলেমার ইলাহতেও নেই, সেটার ভুল অর্থ করে যে মা’বুদে গেছে সে ইবাদতেও নেই। আল্লাহ এই জনসংখ্যার ইলাহও নন, মা’বুদও নন।
আমি জানি না যে আল্লাহ যে ইবাদত করার জন্য মানুষ সৃষ্টি করলেন সেই প্রকৃত ইবাদত আমি বুঝিয়ে বলতে পারলাম কিনা। যে ইবাদতের কথা তিনি বলেছেন, “আমি জ্বীন ও মানুষ জাতিকে আমার ইবাদত করা ব্যতিত অন্য কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি (সুরা যারিয়াত ৫৬)।” এই ইবাদত হচ্ছে আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করে নিয়ে তাঁর খেলাফত অর্থাৎ প্রতিনিধিত্ব করা। এটা করতে গেলেই তাঁর পূর্বশর্ত তাঁর দীনুল হক অর্থাৎ তাঁর দীন মানুষের জীবনে প্রতিষ্ঠা করা। এটা আজ পৃথিবীর কোথাও নেই। অর্থাৎ কোথাও তাঁর প্রকৃত ইবাদত অর্থাৎ খেলাফত নেই, এমন কি আমরা হেযবুত তওহীদ, যারা দীনুল হকে আছি, আমরাও প্রকৃত ইবাদত করতে সমর্থ নই।
(সম্পাদনায়: মুস্তাফিজ শিহাব, সহকারী সাহিত্য সম্পাদক, দৈনিক বজ্রশক্তি)