এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর লেখা থেকে
এখন মানুষ রচিত সর্বরকম ব্যবস্থা, তন্ত্র (Ism) ব্যর্থ হবার পর স্রষ্টা আল্লাহর দেওয়া দীন (জীবনব্যবস্থা) আবার কার্যকর করে দেখা ছাড়া আর কি পথ বাকী আছে? নেই। এখন প্রশ্ন হলো আমরা হেযবুত তওহীদ যে আদর্শ অর্থাৎ ইসলামের প্রকৃত আকিদাকে জাতীয় জীবনে কার্যকর করতে চাই সেটি কার্যকর করার পদ্ধতি কী?
কথার কোনো মারপ্যাঁচে না যেয়ে আমার সোজা উত্তর হচ্ছে, ১৪০০ বছর আগে যে পদ্ধতিতে আল্লাহর রসুল কার্যে পরিণত করেছিলেন সেই পদ্ধতি। সেই পথ হচ্ছে বালাগ অর্থাৎ এই আদর্শ মানুষের কাছে পৌঁছিয়ে দেওয়া। মানুষকে বুঝিয়ে দেওয়া যে, পৃথিবীতে পূর্ণ নিরাপত্তায়, অর্থনৈতিক, সুখ-স্বাচ্ছন্দে, অবিচার, অশান্তি, মানুষে মানুষে সংঘাত, রক্তপাত বিহীন একটি সমাজে বাস করতে চাইলে স্রষ্টার দেওয়া পথ ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। আমরা যদি বুঝিয়ে বলতে পারি এবং সমাজ যদি সেটা গ্রহণ করে তবে মানুষ পরিপূর্ণ শান্তি ও সমৃদ্ধিতে বাস করবে। এই অবস্থাকেই বলা হয় ইসলাম অর্থাৎ আক্ষরিক অর্থেই শান্তি। আল্লাহর রসুল এই পথই অনুসরণ করেছেন। তাঁর ১৩ বছরের মক্কার জীবন শুধু মানুষকে এই আহ্বান পৌঁছাতেই, বালাগ দিতেই কেটে গেছে। এই ১৩ বছর তিনি এবং তাঁর সঙ্গী সাথীরা, যাঁরা তাঁর এই মতে বিশ্বাসী হয়েছিলেন এই প্রচারকাজ চালিয়ে গেছেন। তাঁদের ওপর বিরুদ্ধবাদীদের অর্থাৎ যারা স্রষ্টার দেওয়া এই বিধানকে মানতে রাজী নন, তারা অবর্ণনীয় নিপীড়ন, নির্যাতন চালিয়ে গেছেন, যেমন আজ আমাদের উপরও চালানো হচ্ছে। তাদের কয়েকজনকে হত্যাও করেছেন, যেমন আজ আমাদের কয়েকজনকেও হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর রসুল ও তাঁর অনুসারীগণ সমস্ত সহ্য করেছেন, কখনও প্রত্যাঘাত করেন নাই। আমরাও গত ২৩ বছর ধরে অনুরূপভাবে নির্যাতিত হচ্ছি এবং আমরাও কোথাও প্রত্যাঘাত করি নাই। সমাজ, জাতি যদি আমাদের এই আহ্বানে সাড়া না দেয়, আমাদের কিছুই করার নেই। আমরা সংখ্যায় অতি সামান্য। একমাত্র ডাক দেওয়া ছাড়া, মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করা ছাড়া আমাদের কিছু করার নেই, করছিও না। কারণ মানুষের মনের উপর জোর চলে না, তাই তো আল্লাহ নবীকে বলেছেন, তোমার কাজ শুধু পৌঁছে দেওয়া, হেদায়াত করা আমার হাতে। তুমি ইচ্ছা করলেও কাউকে হেদায়াতে আনতে পারবে না। নবীর উম্মত হিসাবে আমরা শুধু মানুষকে আমাদের বক্তব্য পৌঁছে দিচ্ছি অর্থাৎ বালাগ করছি।
গত ২৩ বছরে অর্থাৎ এই আন্দোলনের জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত আমরা আল্লাহর রহমে আমাদের নীতি থেকে বিচ্যুত হই নাই। এই সময়ের মধ্যে অর্থাৎ গত ২৩ বছরে আমরা একটিও আইনভঙ্গ করি নাই, একটিও অপরাধ করি নাই। কিন্তু তা স্বত্তে¡ও কিছু ইসলাম বিদ্বেষী মিডিয়া এবং ধর্মজীবি আলেম শ্রেণীর জঘন্য মিথ্যা প্রচারের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে সরকারের আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বিভাগ এ পর্যন্ত পাঁচ শতাধিকবার আমাদের কর্মীদেরকে জেল হাজতে পাঠিয়েছে। আমরা কোনো অপরাধ, কোনো আইনভঙ্গ করি নাই বলে আদালতে প্রতিবার আমাদের খালাস দেওয়া হয়েছে। তাই ঐ পাঁচ শতাধিকবার নির্দোষ কর্মীদেরকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা সত্ত্বেও হেযবুত তওহীদ সত্যের উপর বিজয়ী, দীপ্ত, আলোকিত। দীর্ঘ ২৩ বছরে একটি মাত্র অপরাধ ও একটি মাত্র আইনভঙ্গ না করার মত দাবি কোনো দল তো দূরের কথা, কোনো আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীও করতে পারবে না। এটি হেযবুত তওহীদের একটি অনন্য গৌরব।
আমাদের এই অসম সংগ্রামের ভবিষ্যৎ কী হতে পারে? হতে পারে একদিন মানুষ আমাদের ডাক, বালাগ বুঝতে পারবে এবং গ্রহণ করবে। তাহলেই সমাজ অতি অল্প ও সামান্য জ্ঞানের অধিকারী মানুষের তৈরি বিভিন্ন জীবনব্যবস্থা প্রত্যাখ্যান করে অসীম জ্ঞানের অধিকারী বিশাল বিশ্বজগতের এবং মানুষের স্রষ্টা আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা গ্রহণ ও জীবনে কার্যকর করবে। আর না হয় আমাদের বালাগ উপেক্ষা ও প্রত্যাখ্যান করে বর্তমানের মতই জীবনের সর্বস্তরে অশান্তি, অন্যায়, অবিচার, নিরাপত্তাহীনতা ও মানুষে মানুষে, দলে দলে, জাতিতে জাতিতে সংঘর্ষ ও রক্তপাতের মধ্যেই বাস করবে। যেটাই হোক, আমাদের এই সর্বাত্মক প্রচেষ্টা (জেহাদ) থামবে না। কোনো অপরাধ, কোনো আইনভঙ্গ না করার নীতিতে অবিচল, একনিষ্ঠ থেকে আমাদের এই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এনশা’আল্লাহ আমরা কখনোই আল্লাহর রসুলের নীতি ও আদর্শ (সুন্নাহ) থেকে বিচ্যুত হব না।
শক্তি ও প্রাধান্যের জন্য তিনটি জিনিসের প্রয়োজন। সে তিনটি হল- অর্থবল (Finance), প্রচারমাধ্যম (Media) ও সামরিক শক্তি (Military might)। এই তিনটি যার হাতে থাকবে সেই পৃথিবীর কর্তৃত্ব করতে পারবে। এ কথা সবারই জানা যে এই তিনটিই বর্তমানে পাশ্চাত্য জগতের অর্থাৎ জুডিও খ্রিষ্টান সভ্যতা অর্থাৎ দাজ্জালের হাতে।এই পাশ্চাত্য জগৎ সমস্ত পৃথিবীর অর্থবল (Finance) ও মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করে এবং সামরিক শক্তিতে তো কথাই নেই। উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশগুলির মিডিয়া অর্থাৎ গণমাধ্যমের সর্বপ্রকার সংবাদ ইত্যাদির উৎস হল উন্নত দেশ অর্থাৎ পশ্চিমা শক্তিগুলির সংবাদ সংস্থাগুলি। সুতরাং সেই উৎস থেকে যে সংবাদ, আদর্শ, অভিমত পরিবেশন করা হয় উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত জগতের মিডিয়া নিজেরা তাই দিয়ে প্রভাবিত হয় এবং তাদের নিজ নিজ দেশের গণমাধ্যমগুলিতে তা-ই প্রচার করে। পশ্চিমের এই সংবাদ সংস্থাগুলি সম্পূর্ণভাবে ইহুদিদের নিয়ন্ত্রণে। ইহুদিরা যে মতবাদ বিশ্বময় প্রচার করতে চায়, অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলির সংবাদমাধ্যমগুলি সেই মতবাদই প্রচার করে। ঐ সংস্থাগুলি অনুন্নত ও উন্নয়নশীল জগতের মানুষকে যা ভাবাতে, যা চিন্তা করাতে চায়, গণমাধ্যমগুলির মাধ্যমে তা-ই ভাবায়, যে মন-মানসিকতা সৃষ্টি করতে চায়, তাই সৃষ্টি করে এবং যা বিশ্বাস করাতে চায় তাই বিশ্বাস করায়। এভাবে পশ্চিমা জগৎ প্রাচ্যের মানুষের চিন্তাভাবনা ও সংস্কৃতিকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। শুধু তাই নয়, তথাকথিত উন্নত দেশগুলির পদাঙ্ক অনুসারী, অনুগত মিডিয়া বর্তমানে এতই শক্তিশালী (Powerful) যে, মিডিয়া রক্তচক্ষু দেখালে বা ধমক দিলেই সরকারের কাপড় চোপড় বদলাতে (Shit in the pants) হয়।
অর্থবল (Finance), প্রচারমাধ্যম (Media) ও সামরিক শক্তি (Military might) এই তিনটি শক্তিই আজ ইহুদি খ্রিষ্টান ‘সভ্যতা’ অর্থাৎ পাশ্চাত্যের হাতে অর্থাৎ দাজ্জালের হাতে। এই শক্তিতে বলিয়ান হয়ে দাজ্জাল সমস্ত পৃথিবীকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে যে পৃথিবীতে এমন কোনো স্থান নেই যেখানে সে তার ইচ্ছা বাস্তবায়ন করতে পারে না। এই অবস্থার কথাই আল্লাহর রসুল চৌদ্দশ’ বছর আগে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন। তিনি বলেছেন, দাজ্জালের শক্তি, প্রভাব ও প্রতিপত্তি পৃথিবীর সমস্ত মাটি ও পানি (ভূ-ভাগ ও সমুদ্র) আচ্ছন্ন করবে। সমস্ত পৃথিবীর পৃষ্ঠদেশ চামড়া দিয়ে জড়ানো একটি বস্তুর মত তার করায়ত্ত হবে। আজ এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলি অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত হয়েছে।
দাজ্জাল নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া, গণমাধ্যমের অবিশ্রান্ত, নিরবচ্ছিন্ন অপপ্রচারের ফলে পৃথিবীর সমস্ত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলি, যার মধ্যে কোনো কোনো দেশের ৯৮% মুসলিম, তারা আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা প্রত্যাখ্যান করে দাজ্জালের সৃষ্ট জীবনব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং ফলে তারা অন্যায়, অশান্তি, অবিচার, নানাবিধ সংঘর্ষে, রক্তপাতে নিরাপত্তাহীন জীবনযাপন করছে। এই অর্থবল, প্রচারমাধ্যম ও প্রচণ্ড সামরিক শক্তির বলে বলীয়ান দাজ্জালের বিরুদ্ধে অতি ক্ষুদ্র, নিঃস্ব আমাদের হেযবুত তওহীদের পক্ষে একটি শক্তিই আছে। যেটি হলেন- আল্লাহ, যিনি বলেছেন, “তারা তাদের মুখের কথায় আল্লাহর জ্যোতি নির্বাপিত করতে চায়, কিন্তু তিনি ইচ্ছা করেছেন তাঁর জ্যোতিকে পূর্ণরূপে উদ্ভাসিত করার জন্য, যদিও অবিশ্বাসীগণ তা অপ্রীতিকর মনে করে (সুরা তওবা ৩২)…এবং এর সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট (সুরা ফাতাহ ২৮)। হাসবুনাল্লাহ, আল্লাহই যথেষ্ট। [হেযবুত তওহীদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পুস্তিকা থেকে গৃহীত]