উত্তর: আল্লাহর রসুলের উপাধি কী? রাহমাতিল্লিল আলামিন। একজন হিন্দু যদি মনে করেন আমাদের এই কথগুলো জানলে মানুষের কল্যাণ হবে, সকল ধর্মের সকল মতের মানুষের উপকার হবে, তাহলে একজন মানুষ হিসাবে তিনি এই কথাগুলো প্রচার করতেই পারেন। সেদিন নারায়ণগঞ্জের একটি জনসভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা বলেছিলেন, “আমি বিদায় হজের ভাষণ পড়েছি। রসুলুল্লাহর বিদায় হজের ভাষণ মোতাবেক যদি আমাদের সমাজ চলতো তাহলে আমি হলফ করে বলতে পারি আমাদের দেশের সংখ্যালঘুরা সব চেয়ে বেশি অধিকার লাভ করতো।” দেখুন, প্রকৃত ইসলামের কথা বলছেন একজন খোকন সাহা, একজন সনাতন ধর্মের মানুষ। এ কথা বলা কি উনার অপরাধ হয়েছে? তাহলে কেন প্রশ্ন তোলা হচ্ছে যে হিন্দুরা কেন হেযবুত তওহীদের প্রচার করে? সত্য প্রচার করার অধিকার সব মানুষের আছে। তারা মিথ্যা প্রচার করলে আপনারা আপত্তি তুলতে পারতেন। এত সংকীর্ণমনা হওয়া তো ভালো না। ইসলাম হলো পুরো মানব জাতির জন্য। রসুল পুরো মানবজাতির শান্তির জন্য এসেছেন, শুধু আপনার আমার জন্য না। এই সংকীর্ণ মনোভাবের কারণে আজ আমরা মুসলিমরা বড় মনের পরিচয় দিতে পারছি না। কাজেই হিন্দুরা আমাদের বক্তব্যকে সত্য বলে গ্রহণ করে নিলে, এর প্রচার চালালে তাদের অপরাধ হচ্ছে না, গোনাহও হচ্ছে না।
প্রশ্ন: আপনারা ইহুদি খ্রিষ্টানের এজেন্ট কারণ আপনারা আলেমদের বিরুদ্ধে কথা বলেন।
উ: না। আমরা আলেমদের বিরুদ্ধে কথা বলি না। আমরা কথা বলি ধর্মব্যবসার বিরুদ্ধে। আলেম দুই প্রকার। হক্কানি আলেম আর ধর্মব্যবসায়ী আলেম। হক্কানি আলেমরা হলেন মো’মেন আলেম। সেই আলেমদেরকে আমরা শ্রদ্ধা করি। আমাদের আন্দোলনে শত শত আলেম আছেন। আমি কি গণহারে সব আলেমদের সমালোচনা করতে পারি নাকি? যারা আমার জাতির মধ্যে অনৈক্যের বীজ বপন করছেন, জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদের জন্ম দিচ্ছেন, ধর্মব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে চাচ্ছেন, সাম্রাজ্যবাদীদের এজেন্ট হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছেন, ধর্মকে ব্যবহার করে অর্থনৈতিক স্বার্থ উদ্ধার করছেন, আমরা সেই স্বার্থান্বেষী অপরাজনীতিকারী ধর্মব্যবসায়ীদের আমরা সমালোচনা করছি। সবাইকে এক কাতারে মাপবেন না। উপকারী বৃক্ষ আর অপকারী বৃক্ষ আলাদা করতে না পারলে অনেক বিপদ আছে। গজিয়েছে অনেক বৃক্ষ, উপকারী বৃক্ষ সব মরে গিয়েছে।
প্রশ্ন: আপনি বলেছেন আল্লাহ রসুলের প্রকৃত ইসলাম হারিয়েছে। আমি বলব ইসলাম ঠিক আছে, তবে আমরা কিছু মানুষ ইসলাম থেকে দূরে সরে এসেছি। তবে আপনাদের অনেক কথার সাথে একমত।
উ: এখানে একটা বোঝার বেশকম আছে। কোর’আন বিকৃত হয় নি, হবেও না। আল্লাহ এটি সংরক্ষণ করবেন বলে দায়িত্ব নিয়েছেন, সুরা হিজরের ৯ নম্বর আয়াতে সেটি বলা আছে। তাহলে কী হয়েছে? এই হয়েছে যে, আমরা পুরো জাতি আল্লাহ রসুলের সেই প্রকৃত ইসলাম থেকে সরে গিয়েছি। যে রাস্তার মধ্যে রসুল আমাদের উঠিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সেরাতুল মোস্তাকীম, সহজ-সরল পথ, সেই রাস্তা থেকে আমরা নেমে পড়েছি। এখানে ব্যক্তিগত আমলের কথা বলা হচ্ছে না, যে অনেক মানুষ আমল ছেড়ে দিয়েছে বলে আমরা বলছি ইসলাম হারিয়ে গেছে। না আমল হারায় নি। কিন্তু সেই সহজ সরল পথটি, হেদায়াহটি হারিয়ে গেছে। কেউ চুরি চামারি করছেন কেউ মদ খাচ্ছেন। সেটা অন্য জিনিস, আমলের বিষয়। কিন্তু তওহীদের যে ঘোষণা অর্থাৎ আল্লাহর হুকুম ছাড়া কারো হুকুম মানবো না। পুরো জাতি হবে এক জাতি। ইমাম থাকবে একজন। হুকুম চলবে আল্লাহর। এই কথা থেকে আমরা পুরো জাতি নেমে পড়েছি। কোর’আন ঠিক আছে। আমলের ঘাটতি সেটা অন্য জিনিস। আল্লাহ সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দিবেন মো’মেনের। মানুষের গুনাহ থাকতে পারে। সেই গুনাহ তিনি ক্ষমা করবেন মো’মেনের। যারা এই রাস্তায় উঠবে তাদের। যারা ভুল রাস্তায় থাকবে তাদের কোনো আমল আল্লাহ দেখবেন না। তিনি বললেন, তাদের সমস্ত নেক আমল তিনি ধুলো-ময়লার মতো উড়িয়ে দেবেন (সুরা ফোরকান ২৩)। আর যারা এই তওহীদের উপর থাকবে তাদের কোনো আমল তিনি বিনষ্ট করবেন না, তাদের গোনাহ হলেও ক্ষমা করে দেবেন। মো’মেন বান্দা যখন গুনাহ করে তখন তিনি বলেন, এই মালায়েক এখন লিখো না। আমার বান্দা তওবা করবে, আমি জানি। বান্দা যখন তওবা করার জন্য মনস্থির করে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ বলেন, আমি বলি নাই যে সে ক্ষমা চাইবে? আর মো’মেন বান্দা যখন নেক আমল করে সাথে সাথে আল্লাহ বলেন, লেখো। আর তার নেকি কয়েকগুন বাড়িয়ে দাও। কাজেই আল্লাহ তওবা ক্ষমা করবেন মো’মেনের। আমরা সেই মো’মেন হওয়ার পথটিই হারিয়ে ফেলেছি আর ভুল পথে চলে আমল দিয়ে আসমান-জমিন পূর্ণ করছি। ভুল পথে চলে কোনোদিন গন্তব্যে পৌঁছানো যায় না। আগে পথটি ঠিক করতে হবে, তারপরে সেই পথে চলতে হবে। আমরা চলছি ঠিকই- কিন্তু ভুল পথে।