হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম
হেযবুত তওহীদের কর্মসূচি পাঁচ দফা, চারটা মূলনীতি এবং আমাদের স্থানীয় দায়িত্বশীলদের প্রতি আমার চারটা নির্দেশনা। কর্মসূচির পাঁচদফা হলো তওহীদের উপরে ঐক্যবদ্ধ হওয়া, নেতার আদেশ শোনা, নেতার আদেশ পালন করা, হিজরত করা মানে বয়কট করা। অন্যায়, অবিচার, ধর্মব্যবসা, শিরক-কুফর ইত্যাদিকে বয়কট করা। তারপরে জেহাদ করা, সংগ্রাম করা। জেহাদের কথা শুনলে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। আমি আগেই বলেছি, ঈমান হাইজ্যাক করা হয়েছে। আমার রসুল জেহাদ করেছেন। মো’মেনের সংজ্ঞায় জেহাদ আছে। হাদিসে জেহাদের কথা বলা আছে। এখন এই যে মানুষের বুকে বোম বেঁধে, মানুষ হত্যা করে, সন্ত্রাসী কর্মকা- করে জেহাদের নামে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এটা জেহাদ নয়। এগুলো করে জেহাদের মত একটা পবিত্র আমলের বদনাম করা হয়েছে। তাদের কাজের দরুণ এখন মুসলিমদেরকে টার্গেট করা হয়েছে, প্রচার করা হচ্ছে যে মুসলমান সন্ত্রাসী, মুসলমান জঙ্গি, মুসলমান কূপম-ূক, মুসলমান যে দেশে থাকবে, সেখানে মানুষ শান্তি পাবে না। কোথাও একটা সন্ত্রাসী হামলা চালানো হলো, সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন উঠল – ঐ হামলা চালিয়েছে কে? নিশ্চয়ই মুসলমান। এটা প্রপাগান্ডা একটি গভীর ষড়যন্ত্র। ঐ সা¤্রাজ্যবাদীদের গভীর ষড়যন্ত্র। যে ইসলাম এসেছে মানুষের মুক্তির জন্য, সেই ইসলাম সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে পারে না। কাজেই জেহাদ মানে সন্ত্রাস নয়। আমরা যে জেহাদের কথা বলছি কাজেই সেটা জঙ্গিবাদীদের ঐ চাপাতি মারার জেহাদ নয়, আমরা আল্লাহ-রসুলের প্রকৃত জেহাদের কথা বলছি। এই জেহাদের কথা সবাইকে বলতে হবে। সেই জেহাদ সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জেহাদ। আজকে তোমরা যারা জেহাদের নামে সন্ত্রাসী কর্মকা- করছ, আমি তোমাদেরকে বলতে চাই, জেহাদের প্রকৃত অর্থ চলে এসেছে, প্রকৃত ব্যাখ্যা চলে এসেছে। আমরা জেহাদ করব, আমরা জেহাদ করছি। তোমরা জেহাদের নাম দিয়ে সন্ত্রাস করছ। ঐ পথ ত্যাগ কর। ঐ পথে জাতি বিনাশপ্রাপ্ত হবে, দেশ বিনাশপ্রাপ্ত হবে, সমাজ বিনাশপ্রাপ্ত হবে। তোমরা এদেশটাকেও সিরিয়া, আফগানিস্তান বানিয়ে ছাড়বে তোমরা।
আমাদের এই কর্মসূচি আমরা নিজেরা তৈরি করি নি। এটি আল্লাহ তাঁর রসুলকে দিয়েছেন, রসুল উম্মাহকে দিয়েছেন। কিন্তু উম্মাহ এই কর্মসূচি ত্যাগ করেছিল। এটি একটি হাদিস। এর শেষ অংশে আল্লাহর রসুল বলেছেন এই কর্মসূচির বন্ধনি থেকে এক বিঘত সরে গেলেও জাহান্নামের জ্বালানি পাথর হতে হবে। নামায পড়লেও, রোযা রাখলেও, নিজেদেরকে মুসলমান দাবি করলেও তারা জাহান্নামের জ্বালানি পাথর হবে। এই পাঁচ দফা কর্মসূচিতে আমরা আছি।
ইসলামের বুনিয়াদ কয়টি? তওহীদ, সালাহ, যাকাত, হজ্জ্ব, সাওম এই পাঁচটা। এদিকে রসুল বলছে, আল্লাহ আমাকে পাঁচটি কাজের আদেশ করেছেন। এখানেও পাঁচটি। এ উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য কাজ হচ্ছে পাঁচটা। বুনিয়াদ পাঁচটি নিয়ে একটি হাদিস, কর্মসূচি পাঁচটি নিয়ে আরেকটি হাদিস। এই দশটি বিষয় নিয়েই পূর্ণ ইসলাম, পূর্ণ কোর’আন। এর বাইরে কোনো ইসলাম নেই।
মুসলমান আজ ঈমানের মধ্যে নাই, আল্লাহর হুকুমের মধ্যে নাই, আর এই পাঁচদফার কর্মসূচির মধ্যেও নাই। একেকদলের একেক কর্মসূচি। এখন আমরা এই সঠিক কর্মসূচি পেয়েছি, রসুলের রেখে যাওয়া সেই কর্মসূচি। এখন সেটা নিয়ে আমরা সামনে এগুবো। ইনশাল্লাহ, আল্লাহর সাহায্য আসবে। আল্লাহ সাহায্য করবেন কাকে? আমি যতই বলি, আপনারা যতই বলুন, আল্লাহর সাহায্য ছাড়া, আল্লাহর নসর ছাড়া, আল্লাহর সরাসরি হস্তক্ষেপ (Direct Intervention) ছাড়া এ জাতির মুক্তির আর কোনো পথ নাই। আপনাদের কাছে কী আছে? ওদের সামরিক শক্তি (Military Might) কল্পনাও করতে পারবেন না। তাদের আর্থিক শক্তি কল্পনাও করতে পারবেন না। মিডিয়ার প্রভাব কল্পনাও করতে পারবেন না। ওরা কোথায় চলে গিয়েছে! গত কয়েক শতাব্দী ধরে সামরিক শক্তি, প্রযুক্তি, বৈজ্ঞানিক উন্নতি কোথায় চলে গিয়েছে আর আপনারা এই মারামারি-হানাহানি, এই ফেরকা-মাযহাব, মাসলা মাসায়েল করে করে করতে করতে আরো গর্তের ভিতরে ঢুকে গিয়েছেন। কার টাখনুর নিচে কাপড় আছে, কার দাঁড়ি কতটুকু, কার টুপি আছে নাকি নাই, খাওয়ার আগে একটু নিমক খাওয়া, খাওয়ার পরে একটু মিঠাই খাওয়া, দোয়াল্লিন হবে না যোয়াল্লিন হবে, মেয়ে মানুষ দেখা হারাম ইত্যাদি নিয়ে মারামারি করতে করতে শেষ হয়ে গিয়েছেন। আর তারা পঞ্চাশ বছর আগে চলে গেছে চাঁদের দেশে। গ্রহ-গ্রহান্তরে তাদের মহাকাশযান ছুটে বেড়াচ্ছে। তারা এটম বোম আবিষ্কার করেছে, জঙ্গিবিমান আবিষ্কার করেছে, স্মার্ট ফোন আবিষ্কার করেছে। তারা আবিষ্কার করে আমরা বোয়াল মাছের মতো চেয়ে থাকি। তারা শাসক, আমার শাসিত। তারা আবিষ্কারক আর আমরা ব্যবহারও করতে জানি না। এই কি উম্মতে মোহাম্মদী? আমাদের রাজনৈতিক সংকট আমরা সমাধান করতে পারি না। ইংল্যান্ডে বিচার বসে, নিউইয়র্কে বিচার বসে আর বানর রুটি ভাগ করে। একটু অবাধ্যতা দেখলেই তারা উড়ে আসে। কী হবে আমাদের? আমরা বলি আল্লাহ আমাদের বাঁচাবেন। তিনি কি বাঁচাচ্ছেন কোথাও? নাকি আমাদেরকে বাঁচানোর সামর্থ্য নেই তাঁর? তিনি কি এতই অথর্ব? আমার আল্লাহ কি এত কমজোর যে আমাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সংকট সমাধান করতে পারেন না! খালি সোবাহানাল্লাহ, সোবাহানাল্লাহ পড়লে জান্নাত দেবেন। এছাড়া আর কোনো দাম নাই আল্লাহর? আর কোন কাজ নাই আল্লাহর (নাউজুবিল্লাহ)?
না। তিনি সর্বশক্তিমান। তিনি সক্ষম। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। কিন্তু তিনি তো সাহায্য করবেন মো’মেনদের, আমরা কি মো’মেন হতে পেরেছি যে তাঁর সাহায্যের আশা করতে পারি, সাহায্যের দাবি করতে পারি? আমরা বলতে চাই, মো’মেন না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ সাহায্য করবেন না। শুধু মো’মেন হন। মো’মেন হওয়ার পর, আপনি আলেম হোন অসুবিধা নাই, আপনি মুফতি হোন অসুবিধা নাই, আপনি আল্লামা হোন, আপনি হাফেজে কোর’আন হোন, আপনি তফসীর-মুফাস্সির হোন, আপনি মুহাদ্দিস হোন, হাজার হাজার হাদিস মুখস্থ করেন, আমার কোন আপত্তি নাই। মো’মেন না হলে সব নামাজ রোজা বৃথা! সেই মো’মেন আমাদেরকে হতে হবে যে মো’মেনের সঙ্গে আল্লাহর ওয়াদা। তিনি বলেছেন, ‘তোমরা হতাশ হয়ো না, তোমরা নিরাশ হয়ো না, তোমরা বিজয়ী হবে, যদি তোমরা মো’মেন হও।’ মো’মেন হওয়া ছাড়া এ জাতি বাঁচবে না। বাঁচার কোনো লক্ষণ দেখি না। মো’মেন হলে আল্লাহই বাঁচাবেন।
[১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখ সোমবার ঢাকার উত্তর বাড্ডায় অনুষ্ঠিত একটি আলোচনা সভায় হেযবুত তওহীদের এমাম জনাব হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম কর্তৃক প্রদত্ত ভাষণের খ-াংশ। সম্পাদনায় মো. রিয়াদুল হাসান। বক্তব্যের পরবর্তী অংশ দেখুন আগামীকাল।]