হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম
১৭৮১ সনে কলকাতায় ব্রিটিশরা আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করার পর ১৪৬ বছর ২৬ জন খ্রিষ্টান প্রিন্সিপাল সেখানে এই মুসলিম জাতিকে ইসলাম শিখিয়েছে। এ ইতিহাস অনেকেই জানেন না। এই খ্রিষ্টান প-িতদেরকে বলা হত ওরিয়েন্টালিস্ট। তারা কি আমাদেরকে প্রকৃত ইসলাম শিক্ষা দিয়েছে? না। তারা আমাদেরকে সেই ঐক্যের ইসলাম, সাম্যের ইসলাম শিক্ষা দেয় নাই। তারা কোন ইসলাম শিক্ষা দিয়েছে? সেই তেরো শ’ বছর থেকে চলে আসা সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র, গুরুত্বহীন-অনর্থক বিষয় নিয়ে মাসলা-মাসায়েল, তর্ক-বাহাসের ইসলাম। বড় বড় হাতি তাদের পেছন দিয়ে চলে যায় খবর নেই, তারা আছেন মশা মাছি নিয়ে।
কয়েকদিন আগে দেখলাম এক লোক মাসলা জানতে চেয়েছেন যে ইলেকট্রিক র্যাকেট দিয়ে মশা মারা জায়েজ কিনা? তো মুফতি সাহেব উত্তর দিয়েছেন, আগুনে যে কোনো জীবকে পুড়িয়ে হত্যা করা নিষিদ্ধ। তাই বৈদ্যুতিক র্যাকেট দিয়ে মশা মারা হারাম। ভালো কথা, সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে করতে আপনারা এখানে এসেছেন যে মশা মারা জায়েজ কি নাজায়েজ? আমি আপনাদেরকে বলতে চাই, আমি জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে, ধর্মব্যবসার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করি বলে আমার বাড়িতে চারবার হামলা চালিয়ে আমার বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছেন। আমার ভাইদেরকে জীবন্ত আগুন দিয়ে পুড়িয়েছেন। জবাই করে হত্যা করেছেন। চোখ তুলে নিয়েছেন। পেট্রোল দিয়ে তাদের দেহকে জ্বালিয়ে দিয়েছেন। রগ্, পায়ের রগ্ কেটে দিয়েছেন। সেটা কোন জায়েজ নাকি নাজায়েজ? ধর্মের সেন্টিমেন্ট ব্যবহার করে পেট্রোল, বোমা জ্বালিয়ে শত শত মানুষকে তারা হত্যা করেছেন। সেটা জায়েজ না কি নাজায়েজ? এত ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছেন, সারাদিন আমাকে হুমকি দিচ্ছেন আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিবেন, আর আমাকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়ে মশা পোড়ানোর মাসলা জিজ্ঞাসা করছেন? এই হচ্ছে আমাদের আকিদা। বুঝাতে পারলেন তারা কোথায় গিয়েছেন? ঈসা (আ.) বলেছিলেন, আলেমগণ আস্ত উট গিলে ফেলেন, অথচ শরীয়তের মাসলা-মাসায়েল দিয়ে আপনারা মশাও ছাঁকেন।
একদিন আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) হজ করতে গেলেন। ইরাকের এক হাজি জিজ্ঞাসা করলেন যে, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.), আপনি বলুন তো, হজের অবস্থায় মাছি মারা জায়েয না নাজায়েয? এটার কাফ্ফারা কী হবে? আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বললেন, যে ইরাকিরা রসুলাল্লাহ্র কলিজার টুকরা হোসাইনকে হত্যা করেছে, সেই ইরাকিরা আজকে মাছি মারার কাফ্ফারা জিজ্ঞাস করে! হায় আল্লাহ! ইসলামটাকে তারা এখানে এনে দাঁড় করিয়েছেন।
এখন কী উপায় হবে আমাদের? কে রক্ষা করবে আমাদের? আমাদের একটা কোনো অভিন্ন সিদ্ধান্ত নাই। জঙ্গিবাদ যখন দেশে আক্রমণ করল, আমাদের আলেমরা এক জায়গায় বসতে পারলেন না। কিছু আলেম ফতোয়ার বই বের করলেন, আর হাজার হাজার আলেম বিরোধিতা করলেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন কোনো ফতোয়া দিলে অন্য আলেমরা মানেন না। কী হবে এই জাতির? কে দিকনির্দেশনা দিবে? কে নেতৃত্ব দেবে? কে বাঁচাবে? কে রক্ষা করবে? কে? কঠিন বিপদে পড়েছি আমরা। আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন এই বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য আল্লাহ রব্বুল আ’লামীন অতীব দয়া করে পথ পাঠিয়েছেন। আলহাম্দুলিল্লাহ। সেই পথ আজ আপনাদের সামনে উত্থাপিত হলো। এই প্রস্তাব আমি দিয়ে গেলাম। আপনারা বিবেচনা করবেন, চিন্তা করবেন, ভাববেন। সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হলে, সালাহ কায়েম করে গভীর রজনীতে মহান রব্বুল আ’লামীনের শানে সেজদা করে কান্নাকাটি করে বলবেন, আল্লাহ সোবাহানুতা’আলা, এত পথ! এত মত! এত ফেরকা! এত মায্হাব! আল্লাহ কোন পথ ঠিক? হেযবুত তওহীদ বলছে, সবাই ভুল, হেযবুত তওহীদ ঠিক। আল্লাহ, তুমি আমাদেরকে পথ দেখাও। যদি হেযবুত তওহীদ ঠিক হয়, আল্লাহ হেযবুত তওহীদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ কর। আর হেযবুত তওহীদ যদি ভুল হয়, দুনিয়া থেকে তাদেরকে বিনাশ করে দাও।
আমাদের এমামুয্যামানও প্রথম প্রথম এই দোয়া করতেন। কিন্তু যখন দেখা যাচ্ছে, হাজার প্রতিবন্ধকতা, অপমান, অপদস্থতা হওয়া সত্ত্বেও লক্ষ লক্ষ মানুষ আজ হেযবুত তওহীদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। তখন আমরা নিশ্চিন্ত হয়ে গেলাম। এই সত্য পথ, এই হক্ব পথ, আলহাম্দুলিল্লাহ, আল্লাহর শোকর। আপনারা যারা সিদ্ধান্তে আসতে পারবেন না আপনারা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবেন। তবে জেনে রাখুন, এই হচ্ছে সত্য, হক্ব, মুক্তির পথ, এই হচ্ছে সেরাতুল মোস্তাকীম। আর কোন পথ নাই। পুরো জাতিকে এখন, পুরো মানবজাতিকে এখন এক কথার উপরে ঐক্যবদ্ধ হতে যে, আমরা আল্লাহর হুকুম ছাড়া কারো হুকুম মানব না।
যে ইসলাম মানবজাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল, যে ইসলাম মানবজাতির মধ্যে সাম্য প্রতিষ্ঠা করেছিল, শত্রুকে ভাই বানিয়েছিল, যে ইসলাম অর্থ পৃথিবীর মানুষের অভাব দূর করে দিয়েছিল, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, সামরিক শক্তিতে বিশ্বের শিক্ষকের আসনে আসীন করেছিল। আল্লাহর রসুলের সেই ইসলাম হারিয়ে গিয়েছে। আজকে আমরা হিরার টুকরা পকেটে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করে বেড়াচ্ছি। আল্লাহ আমাদেরকে পথ ও পথ প্রদর্শক দিয়েছিলেন, সিরাতুল মোস্তাকীম দিয়েছিলেন। আমরা সেই পথ হারিয়েছি। এখন জাতিকে রক্ষা করতে হলে, মাটিকে রক্ষা করতে হলে, ধর্মকে রক্ষা করতে হলে সেই তওহীদে এখন ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া আর কোনো পথ নাই, কোনো উপায় নাই।
[১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখ সোমবার ঢাকার উত্তর বাড্ডায় অনুষ্ঠিত একটি আলোচনা সভায় হেযবুত তওহীদের এমাম জনাব হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম কর্তৃক প্রদত্ত ভাষণের খ-াংশ। সম্পাদনায় মো. রিয়াদুল হাসান। বক্তব্যের পরবর্তী অংশ দেখুন আগামীকাল।]