মাননীয় এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর লেখা থেকে-
পূর্ববর্তী নবীদের যে কারণে আল্লাহ পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন তার এই শেষ নবীকেও সেই একই উদ্দেশ্যেই পাঠালেন অর্থাৎ পৃথিবীতে মানুষের জীবনে শান্তি, ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে। তাঁকে নির্দেশ দিলেন, পৃথিবীতে যত রকম জীবনব্যবস্থা দীন আছে সমস্তগুলিকে নিষ্ক্রিয়, বাতিল করে এই শেষ জীবন ব্যবস্থা মানুষের জীবনে প্রতিষ্ঠা করতে (সুরা তওবা ৩৩, সুরা আল ফাতাহ ২৮, সুরা সফ ৯)। কারণ শান্তির একমাত্র পথই আল্লাহর দেয়া ঐ জীবন বিধান। আল্লাহ তার শ্রেষ্ঠ নবীকে শুধু নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত ইত্যাদি শেখাতে পাঠান নি, ওগুলো তার সেই উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য যে জাতির দরকার সেই জাতির চরিত্র গঠনের প্রক্রিয়া, উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য দীনুল কাইয়্যেমা, সেরাতুল মোস্তাকীমকে পৃথিবীময় প্রতিষ্ঠা।
এই বিশাল দায়িত্ব, সমস্ত পৃথিবীময় এই শেষ জীবন বিধান প্রতিষ্ঠা করা এক জীবনে অসম্ভব। বিশ্বনবী (দ.) তার নবী জীবনের তেইশ বছরে সমস্ত আরব উপদ্বীপে এই শেষ জীবন বিধান প্রতিষ্ঠা করলেন- ইসলামের শেষ সংস্করণ মানব জীবনের একটি অংশে প্রতিষ্ঠা হলো। কিন্তু তাঁর উপর আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব পূর্ণ হল না, তার দায়িত্ব সমস্ত পৃথিবী, সম্পূর্ণ মানব জাতি। এর আগে কোন নবীর উপর সম্পূর্ণ মানব জাতির দায়িত্ব অর্পিত হয় নি। যতদিন সম্পূর্ণ মানব জাতির উপর এই শেষ জীবন বিধান জাতীয়ভাবে প্রতিষ্ঠা না হবে ততদিন মানুষ জাতি আজকের মতই অশান্তি, যুদ্ধবিগ্রহ, অবিচারের মধ্যে ডুবে থাকবে- শান্তি, ইসলাম আসবে না এবং বিশ্বনবীর (দ.) উপর আল্লাহর দেয়া দায়িত্বও পূর্ণ হবে না। আল্লাহর রসুল (দ.) জাজিরাতুল আরবে অর্থাৎ পৃথিবীর একটি অংশে তার দায়িত্ব পূর্ণ করে চলে গেলেন এবং তাঁর বাকি কাজ পূর্ণ করার ভার দিয়ে গেলেন তাঁর সৃষ্ট জাতির উপর, তার উম্মাহর উপর। প্রত্যেক নবী তার উপর দেয়া দায়িত্ব পূর্ণ করেছেন তার অনুসারীদের, তাঁর উম্মাহর সাহায্যে। কোন নবীই একা একা তার কাজ, কর্তব্য সম্পাদন করতে পারেন নি। কারণ তাদের প্রত্যেকেরই কাজ জাতি নিয়ে, সমাজ, জনসমষ্টি নিয়ে, ব্যক্তিগত নয়। কেউই পাহাড়ের গুহায়, নির্জনে, বা হুজরায় বসে তার কর্তব্য করেন নি, তা অসম্ভব ছিলো। শেষ নবীর (দ.) বেলাও তার ব্যতিক্রম হয় নি। নবুয়াত পাবার মুহূর্ত থেকে ওফাত পর্যন্ত পৃথিবীর ব্যস্ততম মানুষটির জীবন কেটেছে মানুষের মধ্যে, জনকোলাহলে নিরবিচ্ছিন্ন সংগ্রামে, সশস্ত্র সংগ্রামে- এ ইতিহাস অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। নবুয়াতের সমস্ত জীবনটা বহির্মুখী- যে দীন তিনি আল্লাহর কাছে থেকে এনে আমাদের দিলেন সেটার চরিত্রও হলো বহির্মুখী (ঊীঃৎড়াবৎঃ) সংগ্রামী। আল্লাহর রসুল (দ.) তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্ব যে তাঁর উম্মাহর উপর ন্যস্ত করে গেলেন তা যে তাঁর উম্মাহ পূর্ণভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিল তার প্রমাণ হল তাঁর উম্মাহর পরবর্তী কার্যক্রমের ইতিহাস। কারণ বিশ্বনবীর (দ.) লোকান্তরের সঙ্গে সঙ্গে তার উম্মাহ তাদের বাড়িঘর, স্ত্রী-পুত্র, ব্যবসায়-বাণিজ্য এক কথায় দুনিয়া ত্যাগ করে তাদের প্রাণপ্রিয় নেতার অসমাপ্ত কাজ পূর্ণ করতে দেশ ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে পড়েছিল। এ ইতিহাস অস্বীকার করারও কোন পথ নেই। মানুষের ইতিহাসে এমন ঘটনা নেই যে, একটি সম্পূর্ণ জাতি এক মহান আদর্শ পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য পার্থিব সব কিছু ত্যাগ করে দেশ থেকে বের হয়ে পড়েছে। এবং সে মহান আদর্শ হচ্ছে সমস্ত পৃথিবীতে এমন একটি জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা যেটা মানুষের সমষ্টিগত এবং ব্যক্তিগত জীবনে পূর্ণ শান্তি আনবে। অর্থাৎ এই জাতিটি তাদের নেতা আল্লাহর শেষ নবী (দ.) যেমন করে মানুষের কল্যাণের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন ঠিক তেমনি করে পৃথিবীর মানুষের কল্যাণের জন্য নিজেদের সব কিছু বিসর্জন দিয়ে দেশ ছেড়ে বেরিয়ে পড়লো। তাদের নেতা তাদের বলেছিলেন আমাকে অনুসরণ কর, আমার সুন্নাহ পালন কর, যে আমার সুন্নাহ ত্যাগ করবে সে আমার কেউ নয় (হাদিস)। নেতার সুন্নাহ কি? আল্লাহ তার নবীকে (দ.) নির্দেশ দিচ্ছেন পৃথিবীতে যত জীবন বিধান আছে সে সমস্তগুলির উপর তোমার কাছে অবতীর্ণ এই জীবন বিধানকে প্রতিষ্ঠা কর (সুরা তওবা ৩৩, সুরা ফাতাহ ২৮, সুরা সফ ৯)। আল্লাহর রসুল (দ.) সারাজীবন ধরে তাই করলেন এবং যাবার সময় তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার ভার দিয়ে গেলেন তার সৃষ্ট জাতিটার উপর। স্রষ্টার সর্বশ্রেষ্ঠ রসুল (দ.) যে জাতি সৃষ্টি করলেন সে জাতিও সর্বশ্রেষ্ঠ (সুরা ইমরান ১১০), সে জাতি- সে উম্মাহ, তাদের নেতার উপর অর্পিত দায়িত্ব পূর্ণ করতে সমস্ত কিছু কোরবান করে নেতার পাশে এসে দাঁড়ালো, নিজেদের প্রাণ উৎসর্গ করে দিল।
এই উম্মাহর সহায়তায় শেষ নবী (দ.) সমস্ত আরবে শেষ জীবন বিধান প্রতিষ্ঠা করে চলে গেলেন। তার সৃষ্ট জাতি কিন্তু ভুলে গেলেন না যে তাদের নেতার দায়িত্ব শেষ হয় নি, তার উপর আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব হচ্ছে সমস্ত পৃথিবীতে এই দীন প্রতিষ্ঠা করা। কারণ তিনি ছিলেন সমস্ত মানব জাতির জন্য প্রেরিত এবং সেই দায়িত্ব এসে পড়েছে এবার তাদের উপর। তাই ইতিহাসে দেখি বিশ্বনবী (দ.) ওফাতের সঙ্গে সঙ্গে তার উম্মাহ পৃথিবীর সমস্ত কিছু ত্যাগ করে আরব থেকে বের হয়ে পড়েছিলো। একটা জাতি তাদের দেশ ত্যাগ (গরমৎধঃরড়হ) করে অন্য স্থানে চলে গেছে, এমন ঘটনা ইতিহাসে আছে। কিন্তু সেগুলোর কারণ দিগি¦জয়, অন্য জাতির আক্রমণ, দুর্ভিক্ষ, আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়ে দেশ বাসের অযোগ্য হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। কিন্তু একটা আদর্শ স্থাপন ও প্রতিষ্ঠা করার জন্য একটা গোটা জাতির দেশ থেকে বের হয়ে যাওয়া মানুষের ইতিহাসে আর নেই। আমরা যদি আমাদের মুসলিম জীবনের অর্থ খুঁজে পেতে চাই তবে ইতিহাসের এই নজীরবিহীন ঘটনাকে আমাদের গভীর ভাবে বুঝতে হবে। প্রথম কথা হলো বিশ্বনবীর সঙ্গীরা (রা.) আসহাব এই যে অস্ত্র হাতে আরব থেকে বের হয়ে পড়লেন এ কাজ ঠিক হল কি হল না? রসুলাল্লাহ (দ.) জীবনভর যে শিক্ষা দিলেন ঐ কাজটি সে শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কি না? যদি না হয়ে থাকে তবে পরিষ্কার বলা যায় যে, আল্লাহর সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রসুলের (দ,) জীবন বৃথা (নাউযুবিল্লাহ)। কারণ তার ওফাতের কয়েক মাসের মধ্যেই তার সৃষ্ট জাতি, উম্মাহ, তার একান্ত সঙ্গী সহচররা তার শিক্ষার বহির্ভূত একটি কাজ আরম্ভ করে দিলেন। শুধু তাই নয়, লক্ষ্য করার বিষয় হল এই যে, সমগ্র জাতিটা একযোগে এ কাজটা আরম্ভ করে দিল এবং পাঁচ লক্ষ মানুষের জাতিটির মধ্য থেকে একটি মানুষও এর প্রতিবাদ তো দূরের কথা, সর্ব প্রকারে ঐ কাজে সাহায্য করলেন। বহু হাদীস উল্লেখ করা যায় যা থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় যে, শেষনবী (দ.) নিশ্চিত ছিলেন যে তার সাহাবা (রা.) তার দেয়া শিক্ষায় সম্পূর্ণভাবে শিক্ষিত হয়েছিলেন, তার শিক্ষার মর্মবাণী তারা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন এবং তাদের নেতার, বিশ্বনবীর (দ.) প্রকৃত নায়েব অর্থাৎ প্রতিনিধি হবার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। উম্মতে মোহাম্মদীর পতনের মূলে রয়েছে সেই ঐতিহাসিক ঘটনার মূল্যায়নে ব্যর্থতা।
এখন একটা অতি প্রয়োজনীয় প্রশ্ন হচ্ছে এই, যে কাজটা শেষ নবীর (দ.) উম্মাহ তার ওফাতের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আরম্ভ করে দিল অর্থাৎ অস্ত্র হাতে স্বদেশ থেকে বের হয়ে পড়ল এর অর্থ কী? আবার বলছি এই জীবন ব্যবস্থায় অর্থাৎ ইসলামের উদ্দেশ্য ও পদ্ধতির গুরুত্ব নির্দেশনায় এই ঘটনা একটি অতি প্রয়োজনীয় বিষয়। উম্মতে মোহাম্মদীর পতনের মূলে যে কয়েকটি প্রধান কারণ কাজ করেছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এই ঐতিহাসিক ঘটনার মূল্যায়ণে পরবর্তী কালের উম্মাহর ব্যর্থতা। ইসলামকে যারা বিকৃতরূপে দেখাতে চান তারা বলেন- এই অভিযান ছিলো একটি সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন। একথা সত্যি হলে দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় যে, স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, মানব জাতির আদর্শ, যাকে আল্লাহ স্বয়ং পৃথিবীর উপর তার রহমত, করুণা বলে বর্ণনা করেছেন তিনি কি একটি পরদেশলোভী রক্তপিপাসু জাতি সৃষ্টি করে গিয়েছিলেন? এই অভিযোগ যে সত্য নয় তার প্রমাণ হল এই যে, আলেকজান্ডার, চেঙ্গিস, হালাকু খানের সাম্রাজ্যবাদী বিজয় ছিলো ক্ষণস্থায়ী। এগুলোর আয়ু কয়েক বছরের বেশী হতে পারে নি কোথাও। আর মোহাম্মদের (দ.) উম্মাহর অভিযানের ফলে পৃথিবীর যে অংশটুকুতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হয়েছিল সেটুকুতে আজ চৌদ্দশ’ বছর পরও তা মৃতপ্রায় হলেও বেঁচে আছে। ইসলামকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টায় অন্য যে অভিযোগটি করা হয় তা হচ্ছে, উম্মতে মোহাম্মদীর ঐ সামরিক অভিযানের উদ্দেশ্য ছিলো মানুষকে জোর করে ধর্মান্তরিত করা। এ অভিযোগও যে মিথ্যা তার প্রমাণ হলো এই যে, যে বিরাট এলাকায় এই শেষ জীবন ব্যবস্থা তারা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সে এলাকা তারা একচ্ছত্রভাবে শাসন করেছেন বহু শতাব্দী ধরে। জোর করে ধর্মান্তরিত করলে মরক্কো থেকে বোর্নিও পর্যন্ত এই ভূ-ভাগে আজ ইসলাম ছাড়া আর কোন ধর্মের অস্তিত্ব থাকত না। তদানিন্তন পৃথিবীর বোধহয় সবচেয়ে পশ্চাদপদ, সবচেয়ে অশিক্ষিত, সবচেয়ে দরিদ্র এই জাতিটি হঠাৎ করে মরুভূমির গভীর অভ্যন্তর থেকে একযোগে বেরিয়ে এসে শক্তিশালী সভ্যজগতের মুখোমুখী হয়ে দাঁড়াল। এ কথা বুঝতে কোন অসুবিধা নেই যে, ঐ উম্মাহ নিশ্চয়ই ঐ কাজটাকে তাদের সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য বলেই বিবেচনা করেছিলেন। তা না হলে রসুলাল্লাহর (দ.) ওফাতের সঙ্গে সঙ্গে তারা একযোগে ঐ কাজ করতে সব কিছু ত্যাগ করে আরব থেকে বের হয়ে পড়তেন না। বিশ্বনবীর (দ.) সাহচর্যে থেকে তার কাছ থেকে সরাসরি যারা এই জীবন ব্যবস্থার মর্মবাণী, উদ্দেশ্য, প্রক্রিয়া শিক্ষা করেছিলেন তারা কি বোঝেন নি কোন কর্তব্য বড়, কোন কর্তব্য ছোট? কোনটা আগে কোনটা পরে (Priority)? মহানবীর (দ.) আসহাব যদি তা না বুঝে থাকেন তবে আমরা চৌদ্দশ’ বছর পরে তা বোঝার কথা চিন্তাও করতে পারি না। তাহলে বিশ্বনবীর (দ.) উম্মাহর ঐ কাজের প্রকৃত অর্থ কি?
এই মহা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা অর্থাৎ উম্মতে মোহাম্মদীর আরব থেকে বের হয়ে অন্যান্য জাতির সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে যাওয়ার প্রকৃত অর্থ এই যে, রসুলাল্লাহর (দ.) কাছ থেকে সরাসরি ইসলাম শিক্ষা করার ফলে তারা সঠিকভাবে বুঝেছিলেন ইসলাম কি, এর উদ্দেশ্য কি, ঐ উদ্দেশ্য অর্জন করার প্রক্রিয়া কি, কোনটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, কোনটা কম প্রয়োজনীয়। তারা বুঝেছিলেন আল্লাহর প্রতি ইবলিসের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সে মানুষকে প্ররোচনা দিয়ে দীন অর্থাৎ আল্লাহর দেয়া জীবন বিধানকে হয় বিকৃত না হয় অস্বীকার করিয়ে মানুষকে দিয়ে বিধান তৈরী করিয়ে মানুষকে অশান্তি, অবিচার, যুদ্ধ রক্তপাতের মধ্যে পতিত করাবে। আর সেই অন্যায়, অবিচার আর রক্তপাত থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহ যে জীবন ব্যবস্থা তার নবীর (দ.) মাধ্যমে পাঠালেন সেটাকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে তাদের সর্বপ্রধান ও সর্বপ্রথম কর্তব্য। ঐ শিক্ষাই তাদের নেতা, স্রষ্টার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, তার শেষ ও বিশ্বনবী (দ.) তাদের দিয়ে গিয়েছিলেন, নিজে করে তাদের হাতে কলমে শিখিয়ে গিয়েছিলেন। অর্থাৎ মানব জাতিকে অশান্তি, অবিচার, অন্যায়, রক্তপাত, যুদ্ধ থেকে বাঁচাবার জন্য পৃথিবীতে শান্তি, ইসলাম, প্রতিষ্ঠার জন্য, যে জন্য বিশ্বনবীকে (দ.) আল্লাহ পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন, ঐ জাতি নিজেদের সব কিছু কোরবান করে সেই কাজ করতে আরব থেকে বাইরে বেরিয়ে পড়েছিলেন।
এই হলো ঐ জাতির উম্মাহর সমস্ত কিছু কোরবান করে দল বেঁধে আরব থেকে বের হয়ে পড়ার একমাত্র কারণ। এবং ঐ জাতিই হলো সত্যিকার অর্থে উম্মতে মোহাম্মদী- মোহম্মদের (দ.) জাতি। ঐ জাতি তাদের নেতার উপর আল্লাহর অর্পিত দায়িত্ব ও তার ওফাতের পর ঐ বিরাট দায়িত্ব তাদের উপর এসে পড়া সম্বন্ধে এত সজাগ ও সচেতন হয়েছিলেন এবং ঐ দায়িত্ব এমন গভীর ভাবে উপলব্ধি করেছিলেন যে, তাদের নেতা আল্লাহর রসুল (দ.) বিদায় নেবার মাত্র আট মাসের মধ্যে তারা অস্ত্র হাতে সব কিছু ত্যাগ করে আরব থেকে বের হয়ে পড়েছিলেন। আর ঐ আট মাসও দেরী বোধ হয় হতনা যদি কয়েকজন মিথ্যা নবী আর মোনাফেকরা মাথাচাড়া দিয়ে না উঠত, যাদের দমন, শায়েস্তা করতে ঐ আট মাস সময় লেগেছিল। মোট কথা এ ইতিহাস অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে, রসুল্লাহর (দ.) ওফাতের সঙ্গে সঙ্গে তার সৃষ্ট জাতিটা দেশ থেকে বের হয়ে পড়েছিল। যে জাতি আল্লাহর রসুলের (দ.) পদতলে বসে তার কাছ থেকে সরাসরি ইসলাম কি তার শিক্ষা লাভ করেছিল সেই জাতি যদি নেতার চলে যাবার পর সর্বপ্রথম ঐ কাজটি আরম্ভ করে তবে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, ঐ কাজটিকেই তারা উম্মতে মোহাম্মদী হিসাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্বপ্রধান কাজই ভেবেছিলেন। কারণ তারা উপলব্ধি করেছিলেন যে, এ কাজ অর্থাৎ এ জীবন ব্যবস্থা সমগ্র মানব জাতির পূর্ণ জীবনে যতদিন প্রতিষ্ঠিত না হবে ততদিন শেষ রসুল (দ.) এবং তার উম্মাহর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অর্জন করা হবে না, তাদের কাজ শেষ হবে না, তাদের কাজ অসম্পূর্ণই থেকে যাবে।
(সম্পাদনায়: মুস্তাফিজ শিহাব, সহকারী সাহিত্য সম্পাদক, দৈনিক বজ্রশক্তি)