হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম:
আমাদের একটি জনসভায় এক সময়ের বিরোধী দলের একজন সদস্য প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হন। তিনি সেই জনসভায় এক প্রকার অভিযোগের সুরে বলেন, “বর্তমানে আমাদের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। আমরা মাঠে নামতে পারছি না, আমাদের জনসভা করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না, মিথ্যে মামলার মাধ্যমে আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে। কিন্তু আপনারা নির্বিঘ্নে জনসভা, আলোচনা অনুষ্ঠান, সেমিনার ইত্যাদি করতে পারছেন এবং জনসভায় পুলিশের পাহারাও থাকছে। তাহলে আমরা কি ধরে নিতে পারি যে, আপনারা সরকারের কোনো বিশেষ পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করছেন?”
শুধুমাত্র তিনিই নন, অনেকেই হেযবুত তওহীদকে একই প্রশ্ন করে থাকেন। শুধুমাত্র সভা-সেমিনারের অনুমোদন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা কিছু অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার মানে এই নয় যে আমরা সরকারের কোনো বিশেষ পরিকল্পনাকে বাস্তাবায়ন করছি। এর পেছনের ঘটনাগুলো আগে জানতে হবে তাহলে বুঝতে পারবেন কীভাবে আমরা অনুমোদন পাই এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়।
হেযবুত তওহীদ সরকারের কোনো বিশেষ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে, সরকারের দালালি করছে, সরকারের বি-টিম হিসাবে কাজ করছে- এগুলো এক ধরনের অপপ্রচার। আমাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অপপ্রচার নতুন নয়। হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আমাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অপপ্রচার হয়েছে। আমাদেরকে খ্রিষ্টান বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে, ইহুদিদের দালাল, সরকারের দালাল, হিন্দুদের দালাল, নিষিদ্ধ দল, জঙ্গি সংগঠন, কুফরি সংগঠন ইত্যাদি বলে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। আমরা বিভিন্ন জায়াগায় এসকল মিথ্যাচারের জন্য আক্রান্ত হয়েছি, বহু জায়গাতে আমাদের অনেককে আহত করা হয়েছে, ৪ জনকে হত্যা পর্যন্ত করা হয়েছে। কিন্তু এখন জনগণ আমাদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যাচারগুলোকে ধরতে পারছে। জনগণ বুঝতে পারছে আমরা কারো দালাল নই, আমরা প্রকৃত মো’মেন, মুসলিম ও উম্মতে মোহাম্মদী হওয়ার চেষ্টা করছি।
আমার জোর দিয়ে বলতে চাই, গত ২৩ বছর হেযবুত তওহীদ একটি আইনও ভঙ্গ করে নি, একটি অন্যায় কাজ করে নি। গণতন্ত্রের নামে আমাদের দেশে অনেক দল জ্বালাও, পোড়াও করেছে, ভাঙচুর করেছে, হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে। কিন্তু আমরা হেযবুত তওহীদ তেমন কিছুই করি নি। উল্টো গত ২৩ বছরে আমাদের সাথে ব্যাপক অন্যায় করা হয়েছে। আমাদের নামে ৫ শতাধিক মিথ্যা মামলা করা হয়েছে, আমাদের সদস্যদের তুলে নিয়ে বছরের পর বছর জেলে বন্দী করে রাখা হয়েছে। রাতের বেলা বিনা দোষে ধরে নিয়ে গিয়ে সকাল বেলা সন্ত্রাস-বিরোধী আইনে মামলা দিয়েছে। আমাদের বহু কোর্ট-কাচারিতে দৌড়াতে হয়েছে। এখানেই শেষ নয়। আমাদের কোনো সভা, সেমিনার, সমাবেশ করতে দেয়া হয় নি। আমরা ঘরেও শান্তিতে বসতে পারি নি। কোনো সাংবাদিক যদি ফোন দিয়ে পুলিশকে কোনো তথ্য দিত তখন পুলিশ এসে কোনো প্রমাণ ও তদন্ত ছাড়াই আমাদের তুলে নিয়ে গিয়েছে। তখন আমাদের পক্ষে কেউ দাঁড়ায় নি। কেউ বলে নি যে আমাদের সাথে অন্যায় হচ্ছে।
বর্তমানের এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে একটি আন্দোলনকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করার জন্য ২৩ বছর ঢের বেশি সময়। সরকার আমাদের কার্যক্রম লক্ষ করেছে এবং সরকারের অনেক মানুষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্য আমাদের কর্মকাণ্ডে যথেষ্ঠ সন্তুষ্ট হয়েছেন। আমরা হেযবুত তওহীদ মানবতার কল্যাণে, দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করি, আমরা জাতি-বিনাশী কোনো কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত না, তা তারা বুঝতে সক্ষম হয়েছেন। আমাদের নীতিগুলোর মধ্যে প্রথম হচ্ছে আমরা রাজনীতি করি না, আমরা অরাজনৈতিক আন্দোলন এবং প্রচলিত ধারার রাজনীতি আমরা কখনই করব না। দ্বিতীয়ত আমরা কখনই অবৈধ অস্ত্রের সংস্পর্শে যাব না।
দেশের প্রতিটি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার অনুযায়ী আমরা সমাবেশ, র্যালী, জনসভা, সেমিনার ইত্যাদি করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট দরখাস্ত করি। আমাদের একশ আবেদন করার পর একটা বা দুইটা আবেদন মঞ্জুর করা হয়, সাথে ২০/২২ টি শর্তও জুড়ে দেয়া হয়। এই হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে, সকল শর্ত মেনে নিয়ে আমরা একটি জনসভা করি। সেই সব জনসভায় অনাকাক্সিক্ষত যেকোনো ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে এবং সেই কারণেই আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দারস্থ হই, নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করি। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই কখনো কখনো আমদের নিরাপত্তা প্রদান করা হয় কখনো আবার হয় না।
একটি রাষ্ট্র গঠনের গুরুত্বপূর্ণ যে চারটি বিষয় রয়েছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে সরকার। সরকার একটি জাতির মস্তক স্বরূপ। যে দলই সরকার হিসেবে থাকুক না কেন তাদের নিকট থেকে অনুমোদন নিয়েই আমাদের কাজ করতে হবে। তাদেরকে আমাদের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে হবে, সঠিকভাবে অবগত করতে হবে নয়তো আমাদের কাজের বিরোধিতা যারা করে তারা সরকারকে ভুল বুঝাবে, ফলে আমরা পুনরায় অতীতের মতো হয়রানির শিকার হব। এ কারণে সাংগঠনিকভাবেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সরকার হিসেবে যে দলই থাকুক না কেন সেই দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গকে আমাদের সেমিনার ও জনসভায় রাখার চেষ্টা করব, প্রশাসনকে আমাদের যাবতীয় বিষয় অবহিত করব এবং আমাদের অনুষ্ঠানেও তাদেরকে আমন্ত্রণ জানাবো যেন তারা আমাদের কার্যক্রম সম্পর্কে সঠিকভাবে অবহিত থাকেন।
লেখক: এমাম, হেযবুত তওহীদ।