মোহাম্মদ আসাদ আলী:
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক সংশয়বাদী ও নাস্তিক প্রশ্ন রাখেন যে, আল্লাহ যদি রিজিকদাতা হয়ে থাকেন তাহলে পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ প্রতিদিন কেন অভুক্ত থাকে, কেন তাদের রিজিকের ব্যবস্থা হয় না? যারা এমন প্রশ্ন করেন দু’টি বিষয়ে তাদের ধারণা পরিষ্কার থাকতে হবে।
প্রথমত, আল্লাহ রিজিকদাতা- এই কথার অর্থ এই নয় যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো মালায়েক এসে খাদ্য রান্না করে মানুষের মুখে মুখে তুলে দিয়ে যাবেন। বস্তুত খাবারের যাবতীয় উপাদান তিনি প্রকৃতিতে দিয়ে রেখেছেন। বাকিটা করতে হবে মানুষকেই। মানুষকেই অনুসন্ধান করে খাবার যোগার করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘ভূপৃষ্ঠে বিচরণশীল যত প্রাণী রয়েছে সবার রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর’ (হুদ ০৬)। খেয়াল করুন, আল্লাহ বলেছেন কেবল ‘বিচরণশীল’ প্রাণীর কথা, অর্থাৎ যারা রিজিকের তালাশ করবে, অনুসন্ধান চালাবে তাদেরকে তিনি রেজেক দান করবেন। অলসতা করে কেউ ঘরে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে তার জন্য আর যাই হোক আসমান থেকে খাদ্য নাজিল হবে না।
দ্বিতীয়ত, প্রশ্ন আসতে পারে- এই যে আজকে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ ক্ষুধার্ত থাকছে, মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষে মারা যাচ্ছে, আড়াই কেজি চালের বিনিময়ে সন্তানকে বিক্রি করে দিচ্ছে, তারা তো খাদ্যের তালাশ করছেই, তবু প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষকে পেটের ক্ষুধা পেটে রেখে ঘুমাতে হচ্ছে। তাহলে তাদের রিজিকের ব্যবস্থা হচ্ছে না কেন? এর জবাব হচ্ছে- তারা খাদ্যের তালাশ করছে ঠিকই, খাদ্য উৎপাদনও হচ্ছে যথেষ্টই, কিন্তু মানুষই মানুষকে না খাইয়ে রাখছে। এর জন্য আল্লাহ দায়ী নন, দায়ী মানুষ। আল্লাহ শেখালেন (কল্যাণকর কাজে) ব্যয় করতে, খরচ করতে, স¤পদ স্তুপিকৃত করে না রাখতে, দান করতে। কিন্তু আমরা জমা করি, সঞ্চয় করি। স¤পদের পাহাড় বানাই। ফলে ৪০০ কোটি মানুষের স¤পদ জমা হয় মাত্র ৮ জন মানুষের হাতে। একদিকে সম্পদের পাহাড় জমে, চাহিদার অতিরিক্ত খাদ্যদ্রব্য সমুদ্রে ফেলে দিতে হয়, অন্যদিকে মানুষ কুকুরের সাথে ডাস্টবিনের খাবার ভাগাভাগী করে খায়। এই অর্থনৈতিক অবিচারসহ যাবতীয় অন্যায়, অবিচার ও বঞ্চনা থেকে মানবজাতিকে মুক্তি দেবার উদ্দেশ্যেই আল্লাহ যুগে যুগে নবী-রসুল পাঠাতেন। শেষ নবীও সেই মুক্তির পথনির্দেশ নিয়েই ধরাপৃষ্ঠে আবির্ভুত হয়েছিলেন। ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে- ‘যদি কারো বাড়ির আশেপাশে চল্লিশ ঘর পর্যন্ত কেউ ক্ষুধার্ত থাকে আর ঐ ব্যক্তি পেট পুরে খেয়ে ঘুমুতে যায় তাহলে ঐ ব্যক্তি মো’মেন নয়।’ এই দীক্ষা গ্রহণ করার ফলে এককালে কেমন অর্থনৈতিক সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা আজও ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ আছে। মানুষের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, যাকাত গ্রহণ করার মত লোক খুঁজে পাওয়া যেত না। ওই পথ-নির্দেশ মোতাবেক চললে আজও তেমনই অর্থনৈতিক সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হবে, আল্লাহর দেওয়া রেজেক আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে সুষমভাবে বণ্টিত হবে। কিন্তু যেহেতু সেই পথনির্দেশকে আমরা পরিত্যাগ করেছি, নিজেদের চলার পথ নিজেরাই রচনা করে নিয়েছি, সুতরাং আজকের এই অর্থনৈতিক অবিচার, এই ক্ষুধা-দরিদ্রতা-শোষণের জন্য আসলে আমরা নিজেরাই দায়ী। এমতাবস্থায়, এর চেয়ে নির্বুদ্ধিতা আর কী হতে পারে যে, আমরা একদিকে আল্লাহর দেখানো পথনির্দেশ পরিত্যাগ করছি, অন্যদিকে আল্লাহকে দোষারোপ করছি কেন তিনি কোটি কোটি মানুষকে ক্ষুধার্ত থাকতে দিচ্ছেন!