রাকীব আল হাসান:
একবার এক ইঁদুর লক্ষ্য করল যে বাড়িতে ইঁদুর মারার ফাঁদ পাতা রয়েছে। সে খুবই ভয় পেল। ফাঁদটি অকেজো করার জন্য সে ওই বাড়িতে থাকা মুরগির সাহায্য চাইল। মুরগি ঘটনা শুনে জবাব দিল- “ফাঁদটি আমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। অতএব আমি এখানে কোনো সাহায্য করতে পারব না”।
মুরগির কাছ থেকে এই উত্তর শুনে ইঁদুর খুব দুঃখিত হলো এবং ছাগলের কাছে গিয়ে সাহায্য চাইল। ছাগল ফাঁদের কথা শুনে বললো- “ওই ফাঁদ বড়দের জন্য নয়। আমি এখানে তোমাকে কোনো সাহায্য করতে পারব না”।
ইঁদুর ছাগলের কাছ থেকে একই উত্তর শুনে দুঃখিত হয়ে গরুর কাছে এলো। সব কথা শুনে গরু বললো- “ইদুরের ফাঁদ আমার মতো বড় প্রাণীর কোনো ক্ষতিই করতে পারবে না। যা আমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না তা নিয়ে আমি কেন বৃথা চিন্তা করব?”। ইঁদুর শেষ পর্যন্ত নিরাশ হয়ে তার ঘরে ফিরে এলো।
রাতের বেলা বাড়ির কর্ত্রী অন্ধকারের ভিতর বুঝতে পারলেন যে ফাঁদে কিছু একটা ধরা পড়েছে। অন্ধকারে ফাঁদের কাছে হাত দিতেই উনি হাতে কামড় খেলেন এবং দেখলেন ফাঁদে ইঁদুরের বদলে সাপ ধরা পড়েছে। তার চিৎকারে কর্তার ঘুম ভাঙল। তাড়াতাড়ি ডাক্তার ডাকা হলো। চিকিৎসা শুরু হয়ে গেল। কিন্তু অবস্থা মোটেই ভালো না। পথ্য হিসেবে ডাক্তার মুরগির সুপ খাওয়াতে বললেন। সুপের জন্য কর্তা মুরগিকে জবাই করে দিলেন। অবস্থা আস্তে আস্তে আরও খারাপ হতে লাগলো। দূর দূরান্ত থেকে অনেক আত্মীয় স্বজন আসতে লাগলো। বাধ্য হয়ে কর্তা ছাগলকে জবাই করলেন তাদের আপ্যায়ন করার জন্য। আরও ভালো চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার দরকার হতে লাগলো। অবশেষে বাড়ির কর্তা তাদের গরুটিকে কসাইখানায় বিক্রি করে দিল। একসময় বাড়ির কর্ত্রী সুস্থ হয়ে উঠল। আর এই সমস্ত কিছু ইঁদুরটি তার ছোট্ট ঘর থেকে পর্যবেক্ষণ করল।
আমাদের দেশ এখন জঙ্গিবাদ দ্বারা আক্রান্ত। প্রথমে ব্লগার হত্যা দিয়ে শুরু হয়ে প্রকাশক, পুরোহিত, শিয়া, বিদেশি নাগরিক ইত্যাদি বিভিন্ন ক্যাটাগরির মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। সর্বশেষ চাঞ্চল্যকর গুলশান হামলা ও শোলাকিয়া ঈদের জামাতে হামলার মাধ্যমে দেশব্যাপী জঙ্গিবাদ ইস্যুটি ব্যাপক আলোচিত হয়েছে। এই ইস্যুটি নিয়ে আমরা দীর্ঘ চার বছর কাজ করেছি। গুলশান হামলার পর থেকে আমরা দেশব্যাপী বহু সভা-সমাবেশ, র্যালী ও মানববন্ধন করে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির কাজ করেছি।
এই কাজ করতে গিয়ে যখন আমরা বিভিন্ন মানুষের কাছে গিয়ে বলেছি যে, জঙ্গিবাদ আমাদের সকলের জন্য এক মহা সঙ্কট, আসুন আমরা এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলি, তখন অনেকেই বলেছেন- এটা আমাদের কোনো সমস্যা নয়, তারা তো আমাদেরকে মারে না, তারা নাস্তিকদের মারে, বিদেশিদের মারে, সরকারের বিরোধিতা করে কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষ। শুধু শুধু এই সব ঝামেলার মধ্যে আমরা নিজেদেরকে জড়াব কেন? যারা স্বার্থপরের মতো এই চিন্তায় ঘরে বসে আছেন যে আপনার উপর কোনো হামলা তো হয়নি তাদের পরিণতি উপরোক্ত গল্পের ওই মুরগি, ছাগল আর গরুর মতোই হবে।
ইরাক-সিরিয়াতে যখন জঙ্গিবাদের উত্থান হচ্ছিল তখন তারাও ভেবেছিল এটা আসাদ সরকারের সমস্যা, এতে আমার তো কোনো সমস্যা নেই। এখন সেই সাধারণ মানুষ উদ্বাস্তু, লক্ষ লক্ষ মানুষ না খেয়ে মারা যাচ্ছে, সমুদ্রে ডুবে মারা যাচ্ছে, ইউরোপের ফুটপাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে, বোমার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হচ্ছে তাদের বাস্তুভিটা, ধ্বংস হয়ে গেছে ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-বাকরি, ক্ষেত-ক্ষামার সবকিছু। তারা যদি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারত তবে তাদের এই করুণ পরিণতি ভোগ হয়ত করতে হতো না।
আমাদের কথা হলো- আমাদের দেশকে আমরা ইরাক-সিরিয়া হতে দিতে পারি না, জঙ্গিবাদ নামক এই বৈশ্বিক সঙ্কট আমাদের দেশকে ধ্বংস করে দেবে আমরা সেটা হতে দেব না ইনশাল্লাহ। আপনারা স্বার্থচিন্তার ঊর্ধ্বে উঠুন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে মাঠে নামুন। একদিকে যেমন মুসলিম হিসাবে এটা আপনার ঈমানী কর্তব্য অন্য দিকে দেশ প্রেমিক হিসাবে এটা আপনার সামাজিক দায়িত্ব।