হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

রোহিঙ্গা সংকট থেকে আমরা বিচ্ছিন্ন নই

রিয়াদুল হাসান:
রোহিঙ্গারা আজ উদ্বাস্তু হয়ে আমাদের দুয়ারে আশ্রয় প্রার্থনা করছে। ইতোপূর্বেও লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে যারা উপক‚লবর্তী জেলাগুলোয় উদ্বাস্তু হিসাবে জীবনযাপন করছে। আমরা তাদেরকে সুস্থ ও মানবিক জীবন উপহার দিতে পারি নি। আমাদের দেশটি অতিরিক্ত জনসংখ্যার ভারে ন্যুব্জ। উপরন্তু পূর্বে যাদেরকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল তাদের বিষয়ে অনেক অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ রয়েছে। তাই বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই নতুন করে এত বিপুল শরণার্থীর বোঝা মাথায় নিতে নারাজ। কিন্তু মানবতার ঊর্ধ্বে কিছু নেই। তাই প্রথমদিকে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশে আমাদের সরকার বাধা সৃষ্টি করলেও মানবিক কারণে সেই বাধা তুলে নিতে হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের বসতিগুলো এখন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বোমাবর্ষণ, অগ্নিসংযোগে এখন নরককুণ্ড। পুরুষদের গুলি করে, কুপিয়ে, পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছে, নারীরাও ধর্ষিতা হচ্ছে, নিহত হচ্ছে, শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না সরকারের বর্বরতা থেকে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতেও এই ঘটনাকে জাতিগত নিধন বা ঊঃযহরপ ঈষবধহংরহম বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। নির্দোষ মানুষ হত্যার রাজনীতি চিরকালই অন্যায় ছিল এবং চিরকালই অন্যায় থাকবে। কোনো ধর্ম বা জাতীয়তাবাদের অজুহাত একে বৈধতা দিতে পারে না। এই হত্যাযজ্ঞের কারণ কী তা নিয়ে আলোচনার সমালোচনার বিরাম নেই। কেউ বলছে মুসলিমদের বিরুদ্ধে হামলা, কেউ বলছে রোহিঙ্গারা তাদের দেশের নাগরিক নয়। তাই তাদেরকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। সুতরাং এটা নৃজাতিতাত্তি¡ক সংঘাত। এখানে আরসা নামে একটি জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী সরকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে অসম লড়াই করে যাচ্ছে। তারা সরকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযান করলে সেটাকে ‘জঙ্গি হামলা’ আখ্যায়িত করে তার প্রতিশোধ হিসাবে নির্যাতন চালানো হচ্ছে সাধারণ রোহিঙ্গাদের উপর।
একাত্তর সালে আমাদের দেশের মানুষ যেভাবে লাখে লাখে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে মোট উদ্বাস্তুর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ছয় কোটি যারা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো থেকে যুদ্ধকবলিত হয়ে উদ্বাস্তু হয়েছে। মুসলিমদের অভিভাবক হিসাবে যাদেরকে সাধারণ মুসলমানেরা বিশ্বাস করেন, যাদেরকে আল্লাহ বিশ্বের বুকে সবচেয়ে বেশি ধনসম্পদ দান করেছেন সেই আরবরা কার্যত মুসলিমদের বিরুদ্ধে অবস্থা নিয়েছে। তারা আমিরত্ব ও সিংহাসন টিকিয়ে রাখার জন্য সাম্রাজ্যবাদীদের পদলেহন করছে এবং তাদের কাছ থেকে হাজার হাজার বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিনে সেগুলোকে মুসলিমদের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করছে। সাড়ে ছয় কোটি মুসলিমকে উদ্বাস্তু হতে দেখেও তারা নীরব আছে এবং সৌদি আরবের সীমানার মধ্যে একটিও উদ্বাস্তুশিবির নেই।
আশ্রয় প্রদান করে বা ত্রাণ সামগ্রি বিতরণ করে ক্ষুধার্ত উদ্বাস্তুদের প্রাণ বাঁচিয়ে রাখা হয়তো সম্ভব কিন্তু তাদের সম্মান মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। এই পৃথিবীর মালিক আল্লাহ। তিনি মানুষকে তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। তারা সবাই এক পিতা মাতার সন্তান। তাই প্রকৃত বিচারে এই পৃথিবীর কোনো স্থান থেকে কোনো একজন মানুষকেও জোর করে তাড়িয়ে দেওয়া অবিচার ও অনধিকার চর্চা। রোহিঙ্গা সংকট তো পৃথক কোনো সংকট নয়, বরং শত শত বছর ধরে মুসলমানদের উপর আল্লাহর শাস্তিরই ধারাবাহিকতা। আমরা আশ্রয়প্রার্থীকে মানবিক কারণে আশ্রয় দেব, কিন্তু এটা বিশ্বব্যাপী চলমান এই হামলা ও উদ্বাস্তুকরণের কোনো সঠিক সমাধান নয়। আর যারা এদেশে বসবাসকারী বৌদ্ধদের বিরুদ্ধে হামলা করার উস্কানি দেন তারাও ভুল করছেন। এসব সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় নির্দোষ মানুষ কষ্ট পায় এবং কোনো সমাধানও আসে না।
ব্রিটিশদের রাষ্ট্রব্যবস্থা মেনে নিয়ে বিশ্ব আজ প্রায় দুইশত ভাগে বিভক্ত। এই কল্পিত সীমারেখার ধারণাই মানুষকে এই সীমাহীন অবিচারের সম্মুখীন করেছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, কোনো মানুষকে যদি রাষ্ট্র নাগরিক বলে স্বীকার না করে তাহলে তার পৃথিবীতে বাস করারই অধিকার হারিয়ে যায়। তাই মিয়ানমার, সিরিয়া, ইরাকের বহু উদ্বাস্তু সাগরে ভেসে বেড়িয়েছে, কোনো দেশ আশ্রয় দেয় নি। হাজার হাজার বোট পিপলের সলিল সমাধি ঘটেছে এই কথিত সভ্য যুগে। সংকট তো দৃশ্যমান, সবাই দেখতে পাচ্ছেন কিন্তু এর সমাধান কোন পথে সেটা যেন সকলেরই অজানা। এই সমাধানের পথটি মহান আল্লাহ আমাদেরকে দয়া করে দান করেছেন যা আমরা হেযবুত তওহীদ জনসভা করে, পত্রিকা ছাপিয়ে, অনলাইন প্রচারমাধ্যমে সাধ্যমত প্রচার করে যাচ্ছি।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...