কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা তুলে ধরার লক্ষ্যে এক বিশাল কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ২ ডিসেম্বর মানবতার কল্যাণে নিবেদিত অরাজনৈতিক আন্দোলন হেযবুত তওহীদের উদ্যোগে এ কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলার খাস মথুরাপুর ইউনিয়নের বড় বাজারে অনুষ্ঠিত এ কর্মীসভায় প্রধান আলোচক হিসাবে বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দীন, সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুয্যামান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন হেযবুত তওহীদের দৌলতপুর উপজেলা সভাপতি মহররম আলী।
অনুষ্ঠান শুরু হয় বাদ মাগরেব। হেযবুত তওহীদের কর্মীদের নিয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও প্রধান বক্তার বক্তব্য শুরু হওয়ার কিছু সময়ের মধ্যেই এলাকার সাধারণ মানুষের ঢল নামে। কর্মীসভা রূপ নেয় বিশাল জনসভায়। দর্শক-শ্রোতাদের জন্য নির্ধারিত স্থান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় বহু মানুষকে দাঁড়িয়ে বক্তব্য শুনতে হয়। উপস্থিত আপামর জনতা হেযবুত তওহীদের এমামের বক্তব্যের সাথে একাত্মতা পোষণ করেন। অনুষ্ঠান শেষে বহু মানুষ হেযবুত তওহীদের এমামের সাথে একবার হাত মেলানোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন, একটু হাত মিলিয়ে অনেকেই আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন। সত্যের সন্ধান লাভে তাদের চোখে-মুখে ফুটে ওঠে প্রশান্তির আভা, অনেকের দু-চোখ বেয়ে ঝরতে দেখা যায় অশ্রু।
উল্লেখ্য যে, আজ থেকে ১৬ বছর আগে এই মথুরাপুরে একটা অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাকে ইস্যু করে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের প্রায় ৫০টি বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। সেই ঘটনার সাথে জড়িত অনেকেই এখন দুঃখপ্রকাশ করেন এবং হেযবুত তওহীদের সাথে ঐক্যমত পোষণ করেন।
গত কয়েক বছর ধরে রাজধানীসহ দেশের প্রায় সবক’টি জেলা, থানা এমনকি গ্রামগঞ্জে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতাসহ যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে জনসচেতনামূলক কাজ করে যাচ্ছে হেযবুত তওহীদ। জঙ্গিবাদকে ইস্যু করে একটির পর একটি মুসলিম দেশকে যখন ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে, বাংলাদেশকে নিয়েও যখন একই ষড়যন্ত্র চলছে তখন দেশকে নিরাপদ রাখতে ষোল কোটি মানুষকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, ধর্মব্যবসা, অপরাজনীতি এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হওয়া অপরিহার্য। হেযবুত তওহীদ এই ষোল কোটি মানুষের মাঝে ঐক্য সৃষ্টির জন্য নানামুখী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে উক্ত সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সর্বস্তরের মানুষ স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে অংশগ্রহণ করে।
হেযবুত তওহীদের এমাম তাঁর বক্তব্যে বলেন, বর্তমান সময় অত্যন্ত ভয়াবহ। মানুষ অন্য সৃষ্টির মতো নয়, আল্লাহ তার মধ্যে অসম্ভব চিন্তাশক্তি দান করেছেন, কাজেই এই সময় নিয়ে মানুষকে ভাবতে হবে, চিন্তা করতে হবে। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদে আক্রান্ত বিশ্বের বহু দেশ, বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলো। এখন আমাদেরকে এটা নিয়ে ভাবতে হবে, সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। অন্যথায় ধর্মব্যবসায়ীরা ধর্মবিশ্বাসী সাধারণ মানুষের ঈমানকে ভুল খাতে প্রবাহিত করে দেশে সন্ত্রাসের বিস্তার ঘটাতেই থাকবে। ফলে আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমিকেও ইরাক-সিরিয়ার মতো করুণ পরিণতি বরণ করতে হতে পারে। এ জন্য প্রয়োজন একটি সঠিক আদর্শের। এই সঠিক আদর্শটি হেযবুত তওহীদের কাছে আছে।
তিনি বলেন এই ভয়ঙ্কর সঙ্কট থেকে রক্ষা করতে পারেন একমাত্র মহান আল্লাহ। এই সঙ্কটে পড়ে ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, লিবিয়া ইত্যাদি দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে, এখন যদি বাংলাদেশকে এই সঙ্কট থেকে বাঁচাতে হয় তবে একমাত্র উপায় হলো আমাদেরকে মো’মেন হওয়া। কারণ মো’মেনের সাথে আল্লাহর ওয়াদা, তিনি মো’মেনদের রক্ষা করবেন, তিনি মো’মেনদের অভিভাবক। আর এই মো’মেন হতে হলে যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অন্যায় যে-ই করুক তার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে ইসলামের নামে আমাদের সমাজে বহু অনৈসলামিক কার্যক্রম চলছে। এগুলো আল্লাহ রসুলের ইসলাম নয়। তিনি প্রকৃত ইসলাম ও বিকৃত ইসলামের রূপ তুলে ধরে বলেন, প্রকৃত ইসলাম মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল, শত্রæকে ভাই বানিয়েছিল, আরবের অবজ্ঞাত, উপেক্ষিত, অশিক্ষিত একটা জাতিকে শ্রেষ্ঠ জাতি, শিক্ষকের জাতিতে পরিণত করেছিল। আর বর্তমানের বিকৃত ইসলাম মানুষের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি করে, এক জাতিকে হাজার হাজার ফেরকা, মাজহাব, দল-উপদলে ভাগ করে পরস্পর শত্রুতে পরিণত করে।
তিনি বর্তমান বিশ্বপরিস্থিতি, মুসলিম জাতির করুণ দুর্দশার চিত্র, বাংলাদেশের পরিস্থিতি ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরেন। তিনি জঙ্গিবাদের উৎপত্তি কীভাবে হলো, কীভাবে পরাশক্তিরা মুসলমানদের ঈমানকে কিছু ভাড়াটে আলেমদের মাধ্যমে হাইজ্যাক করে জঙ্গিবাদের সৃষ্টি করল সেটাও ইতিহাসের আলোকে তুলে ধরেন। তিনি হেযবুত তওহীদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরে বলেন, মানবজাতির মধ্য থেকে যাবতীয় অন্যায়, অবিচার, অনৈক্য, ভেদাভেদ দূর করে শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনের জন্য রসুলাল্লাহ (সা.) এর প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা তুলে ধরে মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ করার কাজ করে যাচ্ছে হেযবুত তওহীদ। এটা করার জন্য হেযবুত তওহীদের সদস্যরা তাদের জীবন ও সম্পদ মানবতার কল্যাণে উৎসর্গ করে যাচ্ছেন। এই কাজের পুরস্কার তারা মহান আল্লাহর নিকট আশা করেন, তারা এর বিনিময়ে পার্থিব কোনো স্বার্থ আশা করেন না। তাদের কোরবানীর বিনিময়েই হেযবুত তওহীদ যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে। কাজেই হেযবুত তওহীদের কোনো আর্থিক ও রাজনীতিক স্বার্থ নেই। তিনি হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে যাবতীয় অপপ্রচারের জবাব দেন, হেযবুত তওহীদের বৈধতার দলিলপত্র উপস্থাপন করেন এবং হেযবুত তওহীদ যে গত ২২ বছরে একটিও আইন ভঙ্গ করে নি তার স্বপক্ষে আদালতের রায়ের শত শত কপি সকলের সামনে উপস্থাপন করেন। দেশবাসীর প্রতি তিনি ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান করে বলেন, ধর্মব্যবসায়ীদের দ্বারা প্রচারিত ধর্মের অপব্যাখ্যা থেকে বের হয়ে আমাদের ধর্মের প্রকৃত চেতনা দ্বারা জাতিকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
একই বিষয়বস্তুর উপর হেযবুত তওহীদের কর্মীদের নিয়ে গত ৪ ও ৬ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারায় কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উভয় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের এমাম। আশেপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে গাড়ি বহরে করে দলে দলে মানুষ যোগ দেয় অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন হেযবুত তওহীদের কুষ্টিয়া জেলা সভাপতি মিজানুর রহমান মজনু।