হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম: আজকে যে পরিস্থিতিতে আমরা উপনীত হয়েছি তাকে উপলব্ধি করতে হবে। নরককুণ্ড ষোলো হাজার পরমাণু বোমা বানিয়ে রাখা হয়েছে কাকে মারার জন্য? মানুষকে মারার জন্য। সম্প্রতি পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপের জন্য অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র বানিয়েছে রাশিয়া, তার নাম দেওয়া হয়েছে শয়তান ২। এর থেকে কী আশা করেন? সারা পৃথিবীকে ধ্বংস করে ফেলার জন্য প্রস্তুত তারা। সীমান্তে সীমান্তে সংঘর্ষ, জাতিতে জাতিতে রক্তপাত, পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলো কেউ কাউকে সমীহ করছে না, অস্ত্রের ভাষায় হুমকির ভাষায় কথা বলছে। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত সবাই আশঙ্কা করছেন যে কোনো মুহূর্তে শুরু হতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। পৃথিবীকে ধ্বংস করার জন্য আমরা সমস্ত আয়োজন করেছি। আমেরিকা, জাপান, চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, কোথায় অন্যায়, অবিচার হচ্ছে না? কেবল বস্তুগত উন্নতি হয়েছে। কাঁচা রাস্তা পাকা হয়েছে। কিন্তু আত্মিকভাবে মানুষের কোনো উন্নতি হয় নাই, পৃথিবীকে তারা ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে। পৃথিবী আজ নরককুণ্ড। নরককুণ্ডে বসবাস করে, মানুষকে উদ্ধারের কোনো পথ না খুঁজে, হে মানুষ তোমরা মসজিদ ভর্তি করছো, গীর্জা ভর্তি করছো, মন্দির ভর্তি করছো, আল্লাহকে ঈশ্বরকে ভগবানকে পাবার আশায়? কখনই পাবে না।
আবার তাকিয়ে দেখুন পৃথিবীর মুসলমান জনগোষ্ঠীর দিকে। একজন মুসলমান হিসেবে আমাদেরকে এটা নিয়েও ভাবতে হবে। আমি আল্লাহকে ভালোবাসি, আমার রসুলকে ভালোবাসি, আল্লাহ যে কিতাব পাঠিয়েছেন সেটা বিশ্বাস করি। আমাদের স্র্রষ্টা কয়জন? একজন। রসুল কয়জন? একজন। উম্মতে মোহাম্মদী আমরা কয়খ- ছিলাম? অখ- ছিলাম। আমরা হচ্ছি এক আল্লাহর অনুসারী, এক রসুলের উম্মত, এক জাতি। একশ পঞ্চাশ কোটি সংখ্যা আমাদের। আমাদের লক্ষ লক্ষ আলেম, মুফতি, মাহাদ্দিস, মুফাসসির, আইনজ্ঞ, বিশেষজ্ঞ, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু সর্বত্র আমরা নির্যাতিত হই, মার খেয়ে মরি। আমরা কাশ্মীরে মার খাই, মিয়ানমারে মার খাই, চীনে মার খাই, বসনিয়ায় মার খাই, ফিলিস্তিনে মার খাই। কেন? আমি প্রশ্ন করতে চাই- এর কারণ কী? যাদেরকে আল্লাহ বিজয়ের অঙ্গীকার করেছেন তারা দুনিয়াজোড়া মার খাবে কেন? কয়েক মাস আগে ছয় লক্ষ মুসলমানকে তাদের নিজেদের বাড়িঘর থেকে বের করে দিল। তারা কী পরিমাণ নির্যাতনের শিকার হয়েছে তার খবর আপনারা জানেন। আমার কথা বিশ্বাস না করলে খবরের কাগজ পড়ে দেখুন। রোগের উৎপত্তি নিয়ে কথা বলতে হবে, গোড়া খুঁজতে হবে। কেবল ভাসাভাসা কথা বললে হবে না। রোগ হলে ডাক্তাররা রোগের উৎপত্তিস্থল খোঁজার চেষ্টা করেন। মুসলিমদের আজকের পরিণতির পেছনেও উৎপত্তিস্থল খুঁজতে হবে। মুসলমানদের অবস্থা তো এমন ছিল না, আজ এমন হলো কেন? আমাদের ইসলাম তো এমন ছিল না, আজ কেন ইসলামের নামে হানাহানি, সন্ত্রাস, রক্তারক্তি, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা?
গতকাল খবর পেলাম ইয়েমেন থেকে সৌদি আরবে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। সৌদি আরব সেটা আকাশেই ধ্বংস করে দিয়েছে। দোষ দেওয়া হয়েছে ইরানকে। সৌদির নেতৃত্বে সুন্নিরা, ইরানের নেতৃত্বে শিয়ারা জোট করেছে। একজোট আরেক জোটের বিরুদ্ধে যুদ্ধের তরবারি শান দিচ্ছে। আমাদেরকে কে রক্ষা করবে? বাঙালি মুসলমানকে বুঝতে হবে- আমাদেরকে রক্ষা করবেন একমাত্র আল্লাহ রব্বুল আলামিন। অন্য কেউ রক্ষা করবে না। ইরানও না, সৌদি আরবও না। তারা নিজেরাই কেউ আমেরিকাকে আর কেউ রাশিয়াকে সাহায্যকর্তা হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে।
সারা পৃথিবীতে দুর্বলের উপর সবলের যে অত্যাচার শুরু হয়েছে তা থেকে রক্ষা পাবার একটাই শর্ত- আমাদেরকে মো’মেন হতে হবে। মো’মেন হবার দুইটি শর্ত। এক নম্বর হচ্ছে- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এই ঘোষণা দেওয়া। আর দ্বিতীয় হচ্ছে- মানুষের কল্যাণে নিজের জান-মাল উৎসর্গ করা।
আজকে সব জায়গায় কেবল স্বার্থপরতার শিক্ষা দেওয়া হয়, ভোগের শিক্ষা দেওয়া হয়, ত্যাগের শিক্ষা দেওয়া হয় না। কিন্তু নিজের জীবন-সম্পদকে আল্লাহর রাস্তায় অর্থাৎ মানুষের কল্যাণে উৎসর্গ করতে না পারলে কোনো লাভ নেই। ধ্বংস হয়ে গেলেও আল্লাহর সাহায্য পাবেন না।
একটি আদর্শিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে অনেক ধরনের অপপ্রচার থাকতে পারে। যারা সেই আদর্শের বিরোধী তারা নানা কথা রটিয়ে বেড়ায়। আমাদের বিরুদ্ধেও অনেক অপপ্রচার আছে। ধর্মব্যবসায়ী একটি শ্রেণি এবং ইসলামবিদ্বেষী গণমাধ্যম আমাদের ব্যাপারে অনেক মিথ্যা ছড়িয়েছে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় মানুষ জানতে পারছে হেযবুত তওহীদ আসলে কী, হেযবুত তওহীদের বক্তব্য কী, হেযবুত তওহীদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কী। অনেকে আমাদের অর্থের উৎস জানতে চান। তাদের জন্য বলি- আমরা আমাদের কষ্টের উপার্জিত টাকা দিয়ে আন্দোলন পরিচালনা করি। যদি বিশ্বাস না হয় আমাদের সাথে চলুন। আমাদের সাথে থাকুন। আমরা যা খাই খাবেন, আমাদের সাথে থাকবেন। তারপর নিজের চোখেই দেখবেন সবকিছু। আমাদের সবকিছু দিনের আলোর মত পরিষ্কার। কোনো অর্থনৈতিক স্বার্থ বা রাজনৈতিক অভিপ্রায় নেই আমাদের। মানুষের মুক্তির জন্য আমাদের এই পথচলা। আমাদের জন্য সবাই দোয়া করবেন যেন আমরা সত্যের উপর অটল থেকে পথ চলতে পারি।