প্রেক্ষিত: আমাদের কার্যক্রম
আজকের সামাজিক ও জাতীয় পরিস্থিতি:
এই কথা সর্বজনবিদিত যে, বর্তমানে আমরা এমন একটি সময় পার করছি যখন মানুষ নৈতিক ও চারিত্রিক অধঃপতনের চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। দুনিয়াজোড়া প্রায় একই পরিস্থিতি। খুন, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদসহ সব ধরনের অপরাধ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এমনকি সন্তান বাবা-মাকে হত্যা করছে, বাবা-মা সন্তানকে হত্যা করছে। স্বামী স্ত্রীকে হত্যা করছে, স্ত্রী স্বামীকে হত্যা করছে। কেবল নারী নয়, দুই বছরের শিশু থেকে শুরু করে ৬০ বছরের বৃদ্ধাও ধর্ষিত হচ্ছে। মানুষের প্রতি মানুষের অবিশ্বাস, ঘৃণা, সংঘাত-সংঘর্ষ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। প্রতিদিনের সংবাদপত্র যেন ভয়াবহ দুঃসময়ের দিনলিপি। এই অবস্থায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপরাধ দমনের চেষ্টা করে যাচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে, তাদের নতুন নতুন ফোর্স, শাখা, ইউনিট গঠন করা হচ্ছে। তাদেরকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করা হচ্ছে, প্রশিক্ষিত করে তোলা হচ্ছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এত এত প্রচেষ্টা এবং দিন-রাত পরিশ্রমের পরও দিন দিন অপরাধ বেড়েই চলেছে। কিছুতেই মানুষের অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধিতে লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। এর কারণ কী?
শুধু শক্তিপ্রয়োগ নয়, প্রয়োজন নৈতিক শিক্ষা:
আমাদেরকে একটা বিষয় উপলব্ধি করতে হবে যে, মানুষ কেবল দেহনির্ভর একটি প্রাণী নয়, তার একটি আত্মাও আছে। মানুষের যখন আত্মিক ও চারিত্রিক অধঃপতন ঘটে, সামাজিক অবক্ষয় যখন মানুষকে গ্রাস করে ফেলে তখন তারা অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠে। এমতাবস্থায় শুধুমাত্র শাস্তির ভয় দেখিয়ে তাদেরকে এই অপরাধপ্রবণতা থেকে নিবৃত্ত রাখা সম্ভব হয় না। এর বাস্তব প্রমাণ আমাদের আজকের পরিস্থিতি। মানুষের এই অপরাধ প্রবণতা রোধ করতে তাদেরকে শাস্তি প্রদানের পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষা প্রদানের কোনো বিকল্প নেই। মানুষকে ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য বুঝানো, তাদেরকে ন্যায় ও সত্যের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ করা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার করে তোলার মধ্য দিয়ে অপরাধ প্রবণতা অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব। ধর্মের সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত একজন মানুষ নির্জন স্থানেও কোনো অপরাধ করতে গেলে তার হৃদয় তাকে বাধা দেয়। তিনি বিশ্বাস করেন, এই কাজের জন্য তাকে একদিন না একদিন স্রষ্টার কাছে জবাবদিহি করতেই হবে। এভাবে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা যুগে যুগে মানবসমাজে অপরাধ দমনে অদৃশ্য ঢাল হিসেবে কাজ করে এসেছে। কিন্তু আমাদের জন্য দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, আজকে একদিকে ধর্মের সেই সঠিক শিক্ষা যেমন হারিয়ে গেছে, অন্যদিকে পাশ্চাত্যের অনুকরণে মানুষের অপরাধকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কেবল শক্তি প্রয়োগের উপর নির্ভর করা হচ্ছে। মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী আদর্শ যেমন আমাদের ধর্মীয় গুরুদের কাছে নেই, তেমনি আত্মিক পরিশুদ্ধির মাধ্যমে মানুষের বিবেককে জাগ্রত করার রাষ্ট্রীয় কোনো পদক্ষেপও এখানে নেই। ফলে শুধুমাত্র শক্তি প্রয়োগের একমুখী প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
আজকে ধর্মকে ব্যবহার করা হচ্ছে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থ উদ্ধার করার কাজে। বিশেষ একটি শ্রেণির কাছে ধর্ম হয়ে গেছে রুটি-রুজির হাতিয়ার। আরেকটি শ্রেণির কাছে ধর্ম হয়ে গেছে রাজনৈতিক ফায়দা লাভের হাতিয়ার, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর হাতিয়ার। এমনকি যে ধর্ম এসেছিল মানবজাতিকে শান্তি দেওয়ার জন্য, মানবতাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য, সেই ধর্মই আজ হয়ে উঠেছে অশান্তির বড় কারণ। ধর্মীয় বিকৃত ব্যাখ্যার মাধ্যমে মানুষকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এমতাবস্থায় একমাত্র হেযবুত তওহীদ মানুষের মধ্যে ধর্মের প্রকৃত শিক্ষাকে প্রচার করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। মানুষকে যাবতীয় অন্যায় ও অপরাধের বিরুদ্ধে এবং সত্যের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য এ আন্দোলনের সদস্যরা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এ কাজ করতে গিয়ে আমরা বহু প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছি কিন্তু থেমে থাকি নি। আমরা বিশ্বাস করি, অন্যায় অশান্তিপূর্ণ একটি সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্তই হচ্ছে ঐ সমাজের বাসিন্দাদেরকে ন্যায়ের পক্ষে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করা, তাদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা, তাদেরকে ধর্মীয় ও নৈতিক দীক্ষায় দীক্ষিত করে তোলা। এ ক্ষেত্রে তাদের সামনে ধর্মের সঠিক আদর্শ তুলে ধরার কোনো বিকল্প নেই। আর হেযবুত তওহীদ এ কাজটিই করে যাচ্ছে।
জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে হেযবুত তওহীদের সাম্প্রতিক কার্যক্রম :
বর্তমান বিশ্বে, বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোর জন্য সবচেয়ে বড় বিভীষিকা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে জঙ্গিবাদী মতাদর্শ। ধর্মের বিকৃত ব্যাখ্যা থেকে জন্ম নেওয়া এই জঙ্গিবাদকে কেন্দ্র করে একটির পর একটি মুসলিম দেশকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমা অস্ত্রব্যবসায়ী সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী অত্যন্ত সুকৌশলে তাদের স্বার্থ উদ্ধারে এই জঙ্গিবাদকে ব্যবহার করে যাচ্ছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমপ্রধান দেশ হিসেবে বাংলাদেশও যে এই পশ্চিমা ষড়যন্ত্রের বাইরে নয় তা অনেক আগেই আমরা উপলব্ধি করতে পেরেছি। আমরা শুরু থেকেই বলে এসেছি, যেহেতু ধর্মীয় বিকৃত ব্যাখ্যা থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষ জঙ্গিবাদী মতাদর্শে আকৃষ্ট হচ্ছে, তাই জঙ্গিবাদকে মোকাবেলা করার জন্য শক্তিপ্রয়োগের পাশাপাশি এর বিরুদ্ধে আদর্শিক মোকাবেলাও অপরিহার্য। পরবর্তীতে সকলেই আমাদের এ বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন এবং এর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই জঙ্গিবাদের বিপরীতে ধর্মের সঠিক আদর্শ তুলে ধরার জন্য এবং সরকারের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার জন্য দেশের আপামর জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। গত কয়েক বছরে আমরা সারা দেশে লক্ষাধিক জনসভা, সেমিনার, পথসভা, র্যালি ইত্যাদি করেছি। আমরা দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ করছি, পুস্তক-পুস্তিকা, ম্যাগাজিন, ডকুমেন্টারি ফিল্ম ইত্যাদির মাধ্যমে যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে জাতির মধ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আদর্শিক প্রেরণা জাগ্রত করে যাচ্ছি। আমরা ধর্মব্যবসায়ী উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলোর কূপম-ূকতা ও সাম্রাজ্যবাদীদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ষোল কোটি বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যকে সামনে রেখে এখনো কাজ করে যাচ্ছি। সাম্রাজ্যবাদীরা অস্ত্রব্যবসাকে তাদের অর্থনীতির মূল উৎসে পরিণত করেছে। তারা মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে যুদ্ধ ছড়িয়ে দিয়ে সেখানে অস্ত্রের বাজার বসাতে চায়। এ এক মরণখেলায় নেমেছে তথাকথিত উন্নত দেশগুলো। আমাদের দেশটাও যেন তাদের ষড়যন্ত্রের রঙ্গমঞ্চে পরিণত না হয় সেজন্য যে আদর্শ দরকার সেটা আল্লাহ দয়া করে বাংলার মাটিতে দান করেছেন। আমরা সেটাই মানুষের সামনে তুলে ধরতে চেষ্টা করছি। এ কাজে আমাদের কোনো অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার অভিসন্ধি নেই। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তাগণ ঘনিষ্ঠভাবে হেযবুত তওহীদকে দেখেছেন তারা এটা জানেন। তারা হেযবুত তওহীদের কার্যক্রম পরিচালনায় দীর্ঘদিন ধরেই সহযোগিতা করে আসছেন।
সীমাহীন অপপ্রচারের শিকার হেযবুত তওহীদ:
ধর্মের সঠিক রূপ মানুষের সামনে তুলে ধরতে গিয়ে, মানুষকে ন্যায়, শান্তি ও মানবতার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ করতে গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই আমাদেরকে সমাজে ধর্মের নামে প্রচলিত বিভিন্ন অধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলতে হয়েছে। আমাদের এই কাজে স্বভাবতই একটি কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর স্বার্থে আঘাত লেগেছে। তারা আমাদের বিরুদ্ধে ফতোয়া আরোপ করে জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক অপপ্রচার চালিয়েছে। তারা ওয়াজে, খুৎবায় হেযবুত তওহীদ ইহুদি-খ্রিষ্টানদের এজেন্ট, তারা খ্রিষ্টান, কাফের, মুরতাদ, তাদেরকে হত্যা করা বৈধ ইত্যাদি ডাহা মিথ্যা ও আইনবিরোধী বক্তব্য দিয়ে তারা ধর্মবিশ্বাসী মানুষকে বিভ্রান্ত করে এসেছে। এমনকি বিভিন্ন সময়ে তারা এ ধরনের ফতোয়া দিয়ে ধর্মান্ধ-উগ্রপন্থী সন্ত্রাসীদের জড়ো করে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে, আমাদের সদস্যদেরকে হামলা করে বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে, সবকিছু লুটে নিয়েছে, পঙ্গু বানিয়ে দিয়েছে, এমন কি প্রকাশ্য দিবালোকে আমাদের নারী-পুরুষদেরকে পিটিয়ে জবাই করে হত্যাও করেছে। ধর্মবিশ্বাসী মানুষের ঈমানকে হাইজ্যাক করে এ ধরনের পাশবিক ঘটনা কারা ঘটাতে পারে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ও সচেতন ব্যক্তি হিসেবে আপনারা অবশ্যই তা জেনে থাকবেন।
আরেকটি শ্রেণিও আমাদের বিরুদ্ধে নিরবচ্ছিন্নভাবে অপপ্রচার চালিয়ে গেছে। তারা হলো ইসলামবিদ্বেষী গণমাধ্যম কর্মীগণ। হেযবুত তওহীদের নাম শুনেই তারা এ আন্দোলন সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে নিয়েছেন। তারা আর খোঁজ নিয়ে দেখারও প্রয়োজন বোধ করেন নি যে এই আন্দোলন কী লক্ষ্যে কাজ করছে, তাদের নীতিমালা কী, কর্মসূচি কী, কর্মকাণ্ড কী? যখন জঙ্গিবাদের প্রসার ঘটল তখন পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোর অনুকরণে আমাদের গণমাধ্যমেও ইসলাম নিয়ে কাজ করছে এমন সকল দলকেই জঙ্গিবাদের দায়ে অভিযুক্ত করতে শুরু করল। তারা সবাইকে এক পাল্লায় মাপার নীতি নিয়ে নিলেন। ফলে প্রায়ই তারা জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীগুলোর নামের তালিকা পত্রিকায়-টেলিভিশনে প্রচার করতে লাগল, সেই তালিকার মধ্যে কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়াই হেযবুত তওহীদের নামও প্রবেশ করিয়ে দিতে থাকল। ‘হেযব’ শব্দের অর্থ হচ্ছে দল। ইসলামি সংগঠন হিসেবে কোনো সংগঠনের নাম যদি আরবিতে রাখা হয়, এই শব্দটি তার সঙ্গে থাকতেই পারে। যেমন পার্টি, লীগ ইত্যাদি বিদেশি শব্দ বহু সংগঠনের নামের মধ্যেই ব্যবহার করা হয়। আরবিতে এই শব্দগুলোর সমার্থক শব্দ হচ্ছে ‘হেযব’। সুতরাং নামের মধ্যে এই শব্দটি থাকা অত্যন্ত স্বাভাবিক। আমাদের দেশে হিজবুত তাহরীর নামে একটি সংগঠন নিষিদ্ধ হয়েছে। অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, নামের আংশিক মিল থাকার কারণে ইসলামবিদ্বেষী সংবাদকর্মীগণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হেযবুত তওহীদকেও ঐ একই কাতারে ফেলে হাজার হাজার অসত্য সংবাদ প্রচার করেছেন (যার কাটিং আমরা দেখাতে পারব)।
এই অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়েছে প্রশাসন:
হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণি এবং ইসলামবিদ্বেষী গণমাধ্যমের এই অবিশ্রান্ত অপপ্রচারে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি প্রশাসনের বহু কর্মকর্তাও বিভ্রান্ত হয়েছেন। প্রচারিত মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ পড়ে আমাদের বিরুদ্ধে আইন-আদালতসহ সর্বস্তরের মানুষের মনে একটি ব্যাপক নেতিবাচক ধারণা গেড়ে বসেছে। একটা সময় ছিল যখন যেখানেই আমাদের সদস্যরা প্রচারকাজ করতে গেছেন সেখানেই কেউ না কেউ তাদেরকে ভুল বুঝেছে। তাদেরকে অনেক সময় না বুঝেই প্রচণ্ড মারধোর করা হয়েছে, পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে অপপ্রচারে প্রভাবিত পুলিশ সদস্যরাও অত্যন্ত সাগ্রহে তাদেরকে ধরে নিয়ে এসে মামলা দিয়েছে। সংবাদকর্মীরা থানাগুলোয় সংবাদের সন্ধানে বসে থাকেন। তারা আমাদের সদস্যদেরকে লাইন ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে, বুকে কাগজের নেমপ্লেট লাগিয়ে ছবি তুলে পত্রিকায় প্রকাশ করে দিয়েছেন। থানাতেও হয় এক পশলা নির্যাতন। তারপর তাদেরকে কোর্টে চালান দিয়ে শুরু হয় তদন্ত। তদন্তে বরাবরই তারা নির্দোষ প্রমাণিত হন। তদন্ত কর্মকর্তা কর্তৃক আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের পর আমাদের সদস্যরা হাজত থেকে মুক্ত হন। হেযবুত তওহীদের সদস্যদের আটকের প্রতিটি সংবাদ সত্য-মিথ্যা মিশিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রচার করা হয়েছে। অথচ তাদের নির্দোষ প্রমাণিত হওয়া এবং মুক্তি পাওয়ার ঘটনাগুলো এখন পর্যন্ত মূলধারার কোনো গণমাধ্যমে প্রচার করা হয় নি। একটি মিথ্যা কথা যখন বহুবার পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তখন সেই মিথ্যাটাই সত্য বলে মানুষ বিশ্বাস করে নেয়। তাই অনেক প্রশাসনিক কর্মকর্তাও হেযবুত তওহীদের বিষয়ে ভুল ধারণায় নিমজ্জিত হয়ে আছেন। এভাবে বিগত ২২ বছরে পাঁচ শতাধিক মামলায় হেযবুত তওহীদকে জড়ানো হয়েছে যার মধ্যে একটি মামলাতেও হেযবুত তওহীদের একজন সদস্যও দোষী প্রমাণিত হন নি। এই মামলাগুলোর তদন্ত রিপোর্টগুলো আমাদের কাছে আছে। এভাবে আমাদেরকে সীমাহীন হয়রানি করার পর আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর বহু সদস্য ও কর্মকর্তা এই ন্যায়নিষ্ঠ আন্দোলন সম্পর্কে সঠিক সত্য জানতে পেরেছেন। তারা পূর্বের নেতিবাচক ধ্যান ধারণা থেকে মুক্ত হয়েছেন। আজ আমরা সারা দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা, গ্রামে-নগরে-বন্দরে যখন জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মব্যবসা, অপরাজনীতি, ধর্মের নামে হুজুগের বিরুদ্ধে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষাগুলো তুলে ধরছি, দেখা যাচ্ছে পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ আমাদের অনুষ্ঠানগুলোতে সহযোগিতা করছেন।
হেযবুত তওহীদের মূলনীতি:
হেযবুত তওহীদের সূচনালগ্নে এ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী এর কয়েকটি বুনিয়াদী নীতি প্রতিষ্ঠা করেন। সেগুলো আপনাদের জানা থাকা জরুরি, কারণ এ নীতিগুলোই আমাদের আন্দোলনের সকল কর্মকাণ্ডের মূলসূত্র।
(ক) হেযবুত তওহীদ তার চলার পথে রসুলাল্লাহর প্রতিটি পদক্ষেপকে অনুসরণ করতে চেষ্টা করবে।
(খ) এ আন্দোলনের কোন গোপন কার্যক্রম থাকবে না, সবকিছু হবে প্রকাশ্য এবং দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। প্রতিটি কাজ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবগতিক্রমে করতে হবে যেন ভুল বোঝার কোনো সুযোগ না থাকে।
(গ) হেযবুত তওহীদের কোনো সদস্য কোনো আইনভঙ্গ করবে না, অবৈধ অস্ত্রের সংস্পর্শে যাবে না। যদি যায় তাহলে আন্দোলনের কর্তৃপক্ষই তাকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে তুলে দেবেন।
(ঘ) আন্দোলনের বাইরের কারো অর্থ গ্রহণ করা হবে না।
(ঙ) হেযবুত তওহীদ কখনও প্রচলিত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হবে না।
(চ) কর্মক্ষম কেউ বেকার থাকতে পারবে না, প্রত্যেকে বৈধ উপায়ে রোজগারের চেষ্টা করবে।
(ছ) ইসলামের কাজের কোনো বিনিময় কেউ গ্রহণ করতে পারবে না।
আইন মান্য করার ক্ষেত্রে হেযবুত তওহীদের অনন্য রেকর্ড :
এই যে নীতিমালাগুলো মাননীয় এমামুয্যামান নির্দিষ্ট করে দিয়ে গেছেন আমরা আজ পর্যন্ত এর একচুলও ব্যতিক্রম করি নি। আমরা যেহেতু প্রচলিত রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত না হওয়ার অঙ্গীকারে আবদ্ধ তাই আজ পর্যন্ত আমরা কোথাও দাবি আদায়ের নামে, বিক্ষোভ প্রদর্শনের নামে দেশ ও জাতির সম্পদ বিনষ্ট করি নি, জ্বালাও পোড়াও করি নি। আজ পর্যন্ত আমরা দেশের একটি আইনও ভঙ্গ করি নি। এটা আমাদের কথা নয়, এটা প্রশাসনের তদন্ত কর্মকর্তাদেরই প্রদত্ত রিপোর্ট। এর পক্ষে নিম্ন থেকে উচ্চ পর্যন্ত সকল আদালতের দলিল আমরা দেখাতে পারব। সম্পূর্ণ নিজেদের অর্থায়নে, নিঃস্বার্থভাবে দেশ, জাতি, ধর্ম ও মানবতার জন্য কাজ করে যাচ্ছে এমন দ্বিতীয় কোনো সংগঠন বাংলাদেশে রয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। শুধুমাত্র তাই নয়, হেযবুত তওহীদ এমন একটি সংগঠন যার সদস্যরা প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত দীর্ঘ ২২ বছরে একটিও অপরাধ করে নি, একটিও আইনভঙ্গ করে নি। আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর চিত্র আপনাদের সামনে রয়েছে, সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার চিত্রও আপনাদের সামনে রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আনীত হাজার হাজার অন্যায়, অপরাধ, দুর্নীতি, খুন ইত্যাদির অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হয়েছে। হেযবুত তওহীদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার এই গৌরবময় অতীত ও বর্তমান সম্পর্কে যারা জানেন তারা আমাদের বিরুদ্ধে কোনো মিথ্যা অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না বলেই আমাদের বিশ্বাস।
অথচ আমরা আজও হয়রানির শিকার :
দুর্ভাগ্যজনক বিষয় এখানেই। এখনও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে অপপ্রচারে প্রভাবিত, অথবা তারা আইনের দৃষ্টি দিয়ে না দেখে ব্যক্তিগত ধ্যানধারণার ভিত্তিতে হেযবুত তওহীদকে পরিমাপ করেন। আমরা একই দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন বিপরীতমুখী পরিস্থিতির সম্মুখীন হই। হয়তো একটি জেলায় আমাদেরকে প্রশাসন খুব সহযোগিতা করছে, কিছুদিন পরে নতুন কোনো কর্মকর্তা এসে কার্যক্রম বন্ধই করে দিলেন। যখন ঢাকা মহানগরীতে আমরা বড় বড় জনসভা করে যাচ্ছি তখন ঢাকারই কোনো একটি থানায় সেমিনার করারও অনুমতি মিলছে না। অর্থাৎ এটা সুস্পষ্ট যে আমাদের বিষয়ে প্রশাসনের মধ্যে কোনো সুনির্দিষ্ট নীতি নেই। একজন কর্মকর্তার অজ্ঞতাপ্রসূত সন্দেহ বা প্রচেষ্টাই আমাদের বিরাট জনসভার আয়োজনকেও শেষমুহূর্তে পণ্ড করে দিতে পারে। আমরা যেখানে একশটি জনসভা বা জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের অনুমতি চাই, সেখানে একটার অনুমতি পাই। কিন্তু হওয়ার কথা ছিল উল্টো। কেননা দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশ-র্যাব ইত্যাদি বাহিনীর প্রধানগণ বার বার বলেছেন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে, নাগরিকদেরকে এগিয়ে আসতে, ইসলামের প্রকৃত শিক্ষাগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে। আমরা দেশ ও জাতির কল্যাণে তাদের এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে যখন এগিয়ে যাই তখন প্রশাসনের মধ্য থেকেই কাম্য সহযোগিতার পরিবর্তে বিরূপ আচরণ লাভ করি তখন বিস্মিত হই।
আমরা কাজ করতে পারি পারস্পরিক আস্থার ভিত্তিতে :
আমরা আগেই বলেছি, শুধুমাত্র দমন-পীড়নের মধ্য দিয়ে মানুষের অপরাধ প্রবণতা দূর করা যায় না। তার জন্য ধর্মের সঠিক শিক্ষা, মূল্যবোধ, আদর্শ ও নীতি-নৈতিকতার জাগরণ প্রয়োজন। অন্যদিকে জঙ্গিবাদের মতো বৃহৎ সংকট মোকাবেলায় এই আদর্শিক মোকাবেলার প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। এখানে প্রয়োজন পড়ে একটি সঠিক পাল্টা আদর্শ। সেই আদর্শটি আল্লাহর রহমতে আমাদের কাছে আছে। আমরা চাই দেশ ও জাতি এটা প্রয়োগ করে বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ সংকট থেকে পরিত্রাণ লাভ করুক। আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলার লাখো কোটি জনতা ধর্ম ও রাজনীতির নামে চলা সকল প্রকার অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। তারা জানতে পারছে কীভাবে ধর্মের নামে প্রতারণা করে তাদের সম্পদ হরণ করেছে একটি গোষ্ঠী, কীভাবে তাদের ঈমানী চেতনাকে ভুল খাতে নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটেছে ধর্মব্যবসায়ী অপরাজনীতিকরা। আমাদের বক্তব্য যাদের হৃদয়ে সত্যের ঝঙ্কার তুলছে, তারা দেশ ও জাতিকে রক্ষায় নিঃস্বার্থ ভূমিকা রাখতে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। এভাবে গোটা জাতিকে আমরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ করার কাজ করে যাচ্ছি। আমরা চাই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং হেযবুত তওহীদ পারস্পরিক আস্থার মধ্যে থেকে কাজ করে যাবে। বাহিনীগুলোর কাছে রয়েছে শক্তি, আমাদের কাছে রয়েছে আদর্শ। আমরা যদি পরস্পর সহযোগী হিসেবে কাজ করে যেতে পারি, তাহলে তা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে অনন্য শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট আমাদের প্রত্যাশা :
যারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের সাথে জড়িত রয়েছে, আপনারা দেশের আইনমান্যকারী ও কল্যাণকামী নাগরিকদের বন্ধু। আমরা দেশের জন্য, মানবজাতির জন্য কাজ করার সুযোগ চাই। মাননীয় এমামুয্যামান, যিনি হেযবুত তওহীদ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা তিনি আমাদেরকে এই শিক্ষা দিয়ে গেছেন যে মানবজাতির মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই হচ্ছে মানুষের মূল এবাদত। সারা বিশ্বে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোল বেজে উঠেছে। মুসলিম বিশ্ব সামরিক জোট পাল্টা জোট তৈরি করছে। সাম্রাজ্যবাদীরা একটা সুযোগের অপেক্ষায় ওঁত পেতে বসে আছে। এখান থেকেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের বারুদে অগ্নিসংযোগ হবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এমতাবস্থায় আমাদের এই সবুজ শ্যামল দেশটিকে রক্ষা করার জন্য একটি উপায় যখন আমরা প্রস্তাব করছি, তখন আমাদের আশা থাকবে এই প্রস্তাবটি বিবেচনা করা হোক। আমরা যেন মানুষকে এ প্রবল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সচেতন করে তুলতে পারি, সেজন্য আমাদের বিষয়ে প্রশাসনের মধ্যে একটি সুসমন্বিত নীতি থাকা অপরিহার্য বলে মনে করি। আমরা চাই আপনারা অতি দ্রুত আমাদের বিষয়ে সেই নীতি গ্রহণ করবেন। সারা দেশের প্রতিটি থানায় সেই নীতিই অনুসরণ করা হবে। আমরা যদি অন্যায় করি, আমরাদেরকে আইনে সোপর্দ করা হোক। কিন্তু যদি আমরা দেশের জন্য কল্যাণকর শক্তি হিসাবে কাজ করে থাকি তাহলে আমাদের চলার পথকে কণ্টকমুক্ত করা হোক, অবারিত করা হোক। আমাদের সম্পর্কে আপনারা নিশ্চিন্ত হোন, সন্দেহমুক্ত হোন। “আমরা এখন তো ভালো কথা বলছি, ভালো কাজই করছি। কিন্তু ভবিষ্যতে না জানি কী করে ফেলি?” – এ ধরনের অহেতুক সন্দেহ অন্তত আমাদের ব্যাপারে করবেন না। সবাইকে এক পাল্লায় মাপার নীতি অবশ্যই অযৌক্তিক। তাহলে জগতে ভালো-মন্দ, আসল-নকল বলে কোনো কিছু থাকত না। কারা প্রকৃতপক্ষে দেশের মানুষের কল্যাণ চায়, ঐক্য চায়, কারা শত্রুদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে চায়, অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র থেকে মানুষকে নিরাপদ দেখতে চায় তা অবশ্যই আপনাদের সুস্পষ্টভাবে নিরূপণ করতে হবে। ভালো-মন্দ অবশ্যই আলাদা করতে হবে এবং ভালো কাজকে উৎসাহিত করা এবং মন্দকে দমন করাই রাষ্ট্রের নীতি হওয়া উচিত।
আমরা আমাদের দেশে প্রচলিত আইন ভঙ্গ না করার নীতি থেকে কখনোই বিচ্যুত হবো না ইনশা’ল্লাহ। আমাদের সম্পর্কে জানার জন্য হাজারটা পথ খোলা আছে। আমাদের জনসভাগুলোর ভিডিওগুলো অনলাইনে আছে, আমাদের লেখা বইগুলো, পত্রিকাগুলো ওয়েবসাইটে আছে। দেশের প্রায় পঞ্চাশটি জেলা-শহরে আমাদের কার্যালয় রয়েছে। সুতরাং আমাদের বিষয়ে সন্দেহ সৃষ্টির কোনো অবকাশই নেই।
হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম
-এমাম, হেযবুত তওহীদ
ফোন: ০১৭১১০০৫০২৫, ০১৯৩৩৭৬৭৭২৫,
০১৭৮২১৮৮২৩৭, ০১৬৭০১৭৪৬৪৩