জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, অপরাজনীতি ও মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে করণীয় প্রসঙ্গে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রতি প্রস্তাবনা পেশ করে সংবাদ সম্মেলন করেছে হেযবুত তওহীদ। গত ২২ মে, ২০১৭ তারিখ বিকাল ৪টায় টাঙ্গাইল সদরের নিরালা মোড়স্থ পিয়াসী হোটেলের ২য় তলায় সকল ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার স্থানীয় সাংবাদিকদের নিয়ে উক্ত সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
টাঙ্গাইল জেলা হেযবুত তওহীদের সভাপতি সাজ্জাদ কাদির খানের সভাপতিত্বে “জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, অপরাজনীতি ও মাদকের কবল থেকে দেশ ও জাতিকে উদ্ধার করার ক্ষেত্রে সরকারের প্রতি হেযবুত তওহীদের প্রস্তাবনা” শীর্ষক উক্ত সম্মেলনে মূল প্রস্তাবনা পাঠ করেন হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও দৈনিক বজ্রশক্তির প্রকাশক ও সম্পাদক এস.এম.সামছুল হুদা। এসময় তিনি ৯ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. এনামুল হক বাপ্পা।
সংবাদ সম্মেলনে হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক এস.এম. সামসুল হুদা বলেন, ধর্মের অপব্যাখ্যা থেকে সৃষ্ট জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার মতো সংকটগুলো মোকাবেলায় আমরা হেযবুত তওহীদ দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে একটি বিরাট জনগোষ্ঠীর মধ্যে আমরা ইসলামের সঠিক আদর্শ তুলে ধরতে এবং জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তাদেরকে সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ করতেও সমর্থ হয়েছি। আমাদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে এই সংকটকে কার্যকরভাবে মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে সরকারের জন্য সহায়ক হবে এমন কিছু প্রস্তাবনা সরকার ও প্রশাসনের সামনে তুলে ধরছি। তার উপস্থাপিত প্রস্তাবনাগুলো ছিল-
১. সকল ধর্মবিশ্বাসী মানুষের কাছে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা ও সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরতে হবে যেন কেউ তাদেরকে বিকৃত ব্যাখ্যা দ্বারা প্রভাবিত করে বিভ্রান্ত করতে না পারে।
২. শুধুমাত্র শক্তি প্রয়োগ করে জঙ্গিবাদ নির্মূল করা সম্ভব নয়, কেননা জঙ্গিবাদ একটি আদর্শিক বিষয়। তাই জঙ্গিবাদের মোকাবেলায় শক্তি প্রয়োগের পাশাপাশি এই উগ্র মতাদর্শের ভ্রান্তি ও অসারতাগুলো অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বিভিন্ন ধারার গণমাধ্যমগুলো। জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতির বিরুদ্ধে যে অকাট্য যুক্তি, তথ্য, ধর্মগ্রন্থের দলিল আমরা তুলে ধরছি তা গণমাধ্যমগুলোতে ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে যেন এ অন্যায়গুলোর বিরুদ্ধে জাতি শক্তিশালী চেতনার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে।
৩. যারা ইতোমধ্যে উগ্র মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়েছে তাদেরকে কাউন্সেলিং করে ভ্রান্ত এই আদর্শের ব্যাপারে ডিমোটিভেটেড করতে হবে। ইসলামের সঠিক আকীদা, কোরআন, হাদীস, ইসলামের ইতিহাস ইত্যাদির আলোকে তাদের অনুসৃত পথ যে ভুল তা অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্যভাবে তাদের সামনে তুলে ধরতে হবে।
৪. সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও বিভক্তি দূরকল্পে সর্বধর্মীয় সম্মেলন ও অন্যান্য অনুষ্ঠানাদির আয়োজন করতে হবে। যে সব বিষয়ে প্রত্যেক ধর্মের মধ্যে মিল রয়েছে সেগুলোকে ঐক্যসূত্র হিসেবে সকলের সামনে তুলে ধরতে হবে। নিজ ধর্মের পাশাপাশি মানুষ যেন অন্যান্য ধর্মের নবী, রসুল, অবতার তথা মহামানবদের প্রতি যেন শ্রদ্ধাশীল হয়, যেন সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা, শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস বিকাশ লাভ করে এজন্য আদর্শিক শিক্ষা তাদেরকে দিতে হবে।
৫. যারা সাম্প্রদায়িক ও গোষ্ঠীগত বিদ্বেষ ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তাদেরকে বয়কট করতে হবে এবং রাষ্ট্রকে তাদের ব্যাপারে কঠোরতা প্রদর্শন করতে হবে। কেননা বিদ্বেষ উদ্রেগকারী এই শ্রেণিগুলো ধর্মবিশ্বাসী সাধারণ মানুষকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও জঙ্গিবাদী কর্মকা-ের দিকে ঠেলে দিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
৬. সরকারকে যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে এবং অন্যায়কারী ব্যক্তি যে-ই হোক তাকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ন্যায়ের দ- ধারণই রাষ্ট্রের ‘ধর্ম’। রাষ্ট্র তথা শাসকগোষ্ঠী যদি সর্বাবস্থায় ন্যায়ের দ- ধারণ করে তবে মানুষের ইমানকে ভুল খাতে প্রবাহিত করে জঙ্গিবাদ ও অন্যান্য রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমে ব্যবহারের সুযোগ থাকবে না।
৭. প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। বিভাজনমূলক শিক্ষাব্যবস্থা বাদ দিয়ে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার পাশাপাশি নীতি-নৈতিকতা, মূল্যবোধ, ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা, দেশপ্রেম ইত্যাদির সমন্বয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে। এই শিক্ষাব্যবস্থা নাগরিকদের একদিকে দক্ষ ও কর্মক্ষম করে তুলবে, অন্যদিকে নৈতিক ও চারিত্রিক গুণাবলির বিকাশকে নিশ্চিত করবে। প্রস্তাবিত শিক্ষাব্যবস্থায় একজন নাগরিকের জ্ঞানার্জনের মূল উদ্দেশ্য হবে অর্জিত জ্ঞানকে ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারে নয় বরং জাতির কল্যাণে ব্যবহার করা।
৮. চলমান স্বার্থের রাজনীতি পরিহার করতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক বিভক্তি দূর করে রাজনৈতিক দলগুলোকেও দেশ ও মানুষের কল্যাণে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর নীতি-নির্ধারকদের এগিয়ে আসতে হবে। জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, নৈরাজ্য, সন্ত্রাস ইত্যাদির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যখন বিভাজন ভুলে ঐক্যবদ্ধ হবেন তখন তা নিশ্চিতভাবেই সাধারণ জনগণকেও ঐক্যবদ্ধ হতে উদ্বুদ্ধ করবে।
৯. মাদকাসক্তি থেকে তরুণ সমাজকে ফেরাতে হলে তাদেরকে জীবনের মূল্য, জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রকৃত সত্য জ্ঞান দিতে হবে। তারা মূলত সঙ্গদোষে বা কোনো প্রকার হতাশা থেকে মাদকসেবী হয়। তাদের এই হতাশা দূর করার জন্য মানবজীবনকে সার্থক করার পথ তাদের সামনে তুলে ধরতে হবে। বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত উদ্যোগ দিয়ে এ সংকট মোকাবেলা করা যাবে না, একটি ব্যাপক ও সামগ্রিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
এস. এম. সামসুল হুদা এসময় আরো বলেন, এদেশের নাগরিক হিসেবে জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলাকে আমরা নাগরিক দায়িত্ব বলে মনে করি। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেলে জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা, অপরাজনীতি ও ধর্মব্যবসার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে আমাদের চলমান কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক বজ্রশক্তি পত্রিকার টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলা প্রতিনিধি মো. সাইফুল হোসেন, নাগরপুর ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি শ্যামল কুমার কর্মকার, ডেইলি স্টারের টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি মির্জা শাকিল, দৈনিক জনতার টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি সিরাজ নান্নু, যায়যায় দিনের জেলা প্রতিনিধি জোবায়ের মল্লিক বুলবুল, দৈনিক মজলুমের কণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার মো. আবু সাইদ, দৈনিক মফস্বলের রিপোর্টার মো. শহীদুল ইসলাম খান রুমি, এশিয়া টিভির রিপোর্টার শফিকুজ্জামান মোস্তফা, নিউজ বিডি ২৪ এর রিপোর্টার মো. কাউছার আহমেদ, দৈনিক মজলুমের কণ্ঠের রিপোর্টার এস এম আওয়াল মিয়া প্রমুখ।