গত ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৩ শনিবার সকাল ১০ ঘটিকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে দৈনিক দেশেরপত্রের আয়োজনে “মানবতার কল্যাণে সত্য প্রকাশে গণমাধ্যমের করণীয় এবং জঙ্গীবাদ/সন্ত্রাসবাদ নিরসনে আমাদের প্রস্তাবনা” শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের অপর আলোচ্য বিষয় ছিল বর্তমান সমাজের যাবতীয় অন্যায়, অশান্তি দূরীকরণে সিস্টেম পরিবর্তনের বিকল্প নেই। দেশেরপত্রের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া উক্ত আলোচনা অনুষ্ঠানে দেশের সর্বস্তরের প্রশাসনিক ব্যক্তিত্ব ও খ্যাতনামা প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার আমন্ত্রিত অতিথিগণ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দৈনিক দেশেরপত্রের উপদেষ্টা মসীহ উর রহমান, প্রধান বার্তা সম্পাদক সামসুল হুদা, দৈনিক নিউজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হুমায়ুন কবিরসহ আগত অন্যান্য অতিথিবৃন্দ।
দেশেরপত্রের প্রধান বার্তা সম্পাদক জনাব সামসুল হুদা তাঁর মূল্যবান বক্তব্যে বর্তমান পৃথিবীতে জঙ্গীবাদের উৎপত্তি ও বিস্তার রোধে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশের সরকার কর্তৃক পরিচালিত উল্লেখযোগ্য কিছু কার্যক্রম তুলে ধরেন এবং সেগুলোর ব্যর্থতাও প্রমাণ করেন। তিনি জঙ্গীবাদ নির্র্মূলে যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর সরকারের কাছে দেওয়া প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, দেশের অবস্থান যখন সংকটাপন্ন, সরকারের আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এমনকি সাধারণ মানুষও এই সমস্যার সমাধানের জন্য বিভিন্ন উপায়ে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে জঙ্গীবাদ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হোচ্ছে অথচ সরকার জঙ্গীবাদ দমনে ব্যর্থ হচ্ছে, ঠিক সেই মুহুর্তে যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী বাংলাদেশ সরকারকে জঙ্গী দমনে এক যুগান্তকারী প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন।
অনুষ্ঠানে আগত অতিথি আলমগীর হোসেন তার বক্তব্যে দৈনিক দেশেরপত্র কর্তৃক জঙ্গীবাদ দমন ও সিস্টেম পরিবর্তনের এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রসংশা করেন এবং সত্য প্রকাশে যামানার এমাম মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর জীবনের কিছু অংশ তুলে ধরেন। ন্যাপ ভাসানীর সভাপতি মোস্তাক আহমদ বলেন, দৈনিক আযাদ যেমন পাকিস্তান এনেছে, ইত্তেফাক যেমন বাংলাদেশ এনেছে তেমনি দেশেরপত্র সিস্টেম পরিবর্তন করে এই বাংলাদেশকে শান্তিময় সমাজ উপহার দেবে। ধর্মের বিষয়ে তিনি বলেন, ধর্মের অপব্যাখ্যার কারণেই জঙ্গীবাদের উৎপত্তি হয়েছে। তিনি মনে করেন যে সমস্ত বিষয়ে অপব্যাখ্যা রয়েছে তার সঠিক ব্যাখ্যা প্রয়োজন।
দৈনিক দেশেরপত্রের উপদেষ্টা মসীহ উর রহমান বর্তমানে প্রচলিত এই সিস্টেমের অসারতাগুলো একে একে তুলে ধরে বলেন, যে সিস্টেম ঘুষ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির বিস্তার ঘটায়, যে সিস্টেম সমাজের একজন নিরীহ ছেলেকে সন্ত্রাসী বানায়, যে সিস্টেম একজন সৎ ব্যবসায়ীকে ভেজাল মেশাতে প্রলুব্ধ করে, মানুষকে জড়বাদী ও স্রষ্টাবিমুখ করে সেই সিস্টেমের পরিবর্তন করে আল্লাহর দেওয়া সিস্টেমে পুনরায় ফিরে গিয়ে আমাদের সমাজের যাবতীয় অন্যায় ও অশান্তি দূর করা আজকের মানবতার দাবী। তিনি সকল গণমাধ্যমকে উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, আসুন আমরা একত্রিতভাবে জঙ্গীবাদ দমন ও সিস্টেম পরিবর্তনে কার্যকর ভূমিকা পালন করি।
দৈনিক নিউজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হুমায়ুন কবির পৃথিবীতে আল্লাহর পাঠানো সকল নবী রসুলদের সম্পর্কে বলেন, তারা সবাই সত্য নিয়ে এসেছেন এবং মানবতার কল্যাণে সত্যকে প্রকাশ করেছেন। বর্তমান পৃথিবীতে যেসব ধর্মগুলি প্রচলিত আছে সেগুলি আল্লাহর পাঠানো। তবে ঐসব নবীদের অনুসারীরা এই ধর্মগুলিকে বিকৃত কোরে ভারসাম্যহীন কোরে ফেলছে, যেকারণে এই সব ধর্মগুলি তার অনাবিল গতি হারিয়ে নির্জীব একটি অনুষ্ঠান সর্বস্ব ধর্মে পরিণত হয়েছে। বর্তমান পৃথিবীর নামধারী আলেমদের ব্যাপারে তিনি বলেন, কোরআনের বাণী অনুযায়ী সকল নবীদের জন্য দীন বিক্রি কোরে অর্থ উপার্জন করা নিষিদ্ধ কিন্তু বর্তমানের আলেম পরিচয়দানকারী ধর্মের পুরোহিতগণ নিজেদেরকে রসুলের ওয়ারীশ পরিচয় দিয়ে সেই নিষিদ্ধ কর্মটি অবলিলায় করে যাচ্ছেন, যে কারণে তারা রসুলের হাদীস মোতাবেক শ্রেষ্ঠ উম্মত হওয়ার বদলে আসমানের নীচে নিকৃষ্টতম জীবে পরিণত হয়েছেন। একজন মিডিয়া কর্মী হিসাবে সকল মিডিয়ার প্রতি আমার আহ্বান এই যে, আমরা কেউ মিথ্যা বলবো না, মিথ্যা লিখবো না, আমরা কারো তাবেদারী কোরব না, কারো গোলামী করবো না। আসুন যা ঘটেছে তাই তুলে ধরি, যিনি সত্য বলেন তাকে তুলে ধরি, যিনি সত্যকে ধারণ করেন সত্যকে প্রকাশ করেন তাকে তুলে ধরি, তার প্রসংশা করি। তাহলে সমাজ ও দেশ থেকে অন্ধকার দূর হবে, সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে। সত্যের জয় অনিবার্য।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ করতে দৈনিক দেশেরপত্র জঙ্গীবাদ দমন ও মানবতার কল্যাণে সত্য প্রকাশের যে কার্যক্রম হাতে নিয়েছে এবং প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছে তার একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। প্রখ্যাত নজরুল গীতি শিল্পী জিল্লুল শাহিন যামানার এমামের বন্দনা করে গান পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলেন। এ ছাড়াও একটা সংক্ষিপ্ত ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর বর্ণাট্য জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠান স্থলের নিকটেই যামানার এমামের লিখিত বিভিন্ন বইসমূহ এবং তওহীদ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত বইসমূহ বিক্রির জন্য প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়।
অনুষ্ঠানের সভাপতি রুফায়দাহ পন্নী তার বক্তব্যে উপস্থিত সকল মিডিয়া কর্মী ও ব্যক্তিত্ব, আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আজ আমাদের ভাবতে হবে যে, একই মাতা পিতা আদম হাওয়ার সন্তান হওয়া স্বত্বেও আজ আমাদের ভিতরে এত বিভেদ কেন? ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে সামষ্টিক পর্যায় পর্যন্ত সর্বত্র অশান্তি আর হাহাকার কেন? অভাব, দারিদ্র, নীতি নৈতিকা ইত্যাদিতে আজ আমরা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাড়িয়েছি। আজ আমরা ভুলে গেছি যে, আমাদের সৃষ্টিকর্তা আমার জীবন চলার জন্য একটা জীবন ব্যবস্থা দিয়েছেন কিন্তু আমরা নিজেদেরকে ¯্রষ্টার চেয়েও জ্ঞানী মনে করে মানব তৈরী মতবাদ অর্থাৎ দাজ্জালীয় জীবন ব্যবস্থাকে গ্রহণ করেছি। আজ আমাদের সমাজে শান্তির জন্য তন্ত্রের পর তন্ত্র এমন কি ব্যক্তির পরে ব্যক্তি পরিবর্তন করে যাচ্ছি কিন্তু ফলাফল খারাপ থেকে আরও খারাপ হচ্ছে। বর্তমান সিস্টেমকে তিনি একটি বিষবৃক্ষের সাথে তুলনা করে বলেন, বিষবৃক্ষ কোন দিনই সুমিষ্ট ফল দিতে পারে না। নারীদের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী হওয়া সত্বেও তারা ধর্মব্যবসায়ীদের ভূল ব্যাখ্যায় প্রভাবিত হয়ে ঘরের চার দেয়ালে বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন। সমাজের জন্য কোন অবদান রাখতে পারছেন না। অথচ রসুলের যুগে নারীরা পরিবার, অর্থনৈতিক, সমাজিক, রাষ্ট্রীয় কাজে অংশগ্রহণ, মসজিদে গিয়ে জুমা সালাহ আদায় করাসহ যুুদ্ধক্ষেত্র পর্যন্ত তাদের অবাধ বিচরণ ছিল। সবশেষে তিনি বলেন, মহান আল্লাহর দেওয়া সিস্টেমকে গ্রহণ করার মাধ্যমে আইয়ামে জাহেলিয়াতের আরবরা যেমন সোনার মানুষে পরিণত হয়েছিল, আজকেও সেই সিস্টেম গ্রহণ করে আমরাও সোনার মানুষে রূপান্তরিত হতে পারি। তিনি সরকারসহ দেশবাসীকে যামানার এমামের জঙ্গী দমনের প্রস্তাবনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং সিস্টেম পরিবর্তনের মাধ্যমে সকল মানুষকে সোনার মানুষে পরিণত হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানান।