দেশের কোটি কোটি মানুষ যখন ঈদের আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে আছে, সর্বত্র উৎসব-আনন্দের জোয়ার বইছে, তখন একমাত্র ব্যতিক্রম হিসেবে হেযবুত তওহীদকেই আপনি পাবেন যারা সকল প্রকার অন্যায়-অবিচার, অশান্তি, ধর্মব্যবসা, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জাতিকে সচেতন করে দেশের ১৬ কোটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে ঈদের দিনেও সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। ঈদ উপলক্ষে দেশের অন্যান্য পত্র-পত্রিকা বন্ধ থাকলেও বন্ধ ছিল না ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর’ স্লোগানে উদ্দীপ্ত ‘দৈনিক বজ্রশক্তি’র প্রকাশনা। হেযবুত তওহীদের একঝাঁক প্রাণোদ্দীপ্ত তরুণ-তরুণীর নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের সৌজন্যে জাতির মুক্তির বার্তা বহনকারী এই পত্রিকাটির হাজার হাজার কপি রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে, এমনকি প্রত্যন্ত গ্রমাঞ্চলেও পৌঁছে গেছে। আমাদের সমাজে মানবতার ধ্বজাধারী অনেকেই আছেন, কিন্তু প্রকৃতপক্ষেই মানবতাকে ধারণ করা এবং কাজে প্রমাণ দেওয়ার মতো লোক কয়জন আছেন তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা যেতেই পারে। অন্যদিকে হেযবুত তওহীদ বরাবরই কথায় নয়, কাজে প্রমাণ দিয়ে এসেছে। অথচ অবাক হতে হয় যখন, আমাদেরকে সত্য প্রতিষ্ঠার এই সংগ্রাম করার কারণে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় যে, আপনারা সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়েদেরকে কেন মাঠে নামিয়েছেন? অনেকে আবার আমাদের মেয়েদেরকে এমন প্রশ্নও করেন- আপনাদের কি স্বামী, সংসার, ছেলে-মেয়ে নাই? সবাই যখন ঈদ আনন্দ করছে তখন আপনারা মাঠে-ঘাটে ঘুরে পত্রিকা বিক্রি করছেন কেন?
প্রশ্নটি অবাক করার মতো হলেও এ জাতির বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা অবাক হই না। যাদের চোখের সামনে ১৩ বছরের শিশুকে পিটিয়ে হত্যা করা হলেও কেউ সাহায্যের হাত বাড়ানো পরের কথা সাপের খেলা দেখার মতো সে হত্যাকা- উপভোগ করে, যখন শিশুটি বলে ‘অ ভাই, আমারে এক গললাস (গ্লাস) পানি দেওরেবা, আমার গলা হুকাই গেছে (শুকিয়ে গেছে), আর আমারে মারিও না, আমার আত-পাও (হাত-পা) ভাঙ্গি গেছে’ এমন আর্তচিৎকারেও যাদের হৃদয়ে শিশু সন্তানটির জন্য মায়া জন্মায় না, যেখানে বাড়তি বেতনের আশায় এক দোকানের কাজ ছেড়ে অন্য দোকানে কাজ নেওয়ার অধিকারকেও অন্যায় মনে করে তার শাস্তি নির্ধারণ করা হয় মলদ্বার দিয়ে হওয়া ঢুকিয়ে পেটের নাড়ি-ভূড়ি ফাটিয়ে নিষ্ঠুরতমভাবে হত্যা, যে সমাজে ‘মা’ অসুস্থতার ভান করে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সন্তানকে হাসপাতালে এনে সন্ত্রাসী দিয়ে খুন করায়, আবার সন্তান ঠান্ডা মাথায় ঘুমন্ত পিতা-মাতার গলায় চুরি চালায়, যে সমাজে একটি জাতীয় উৎসবে লক্ষ লক্ষ লোকের ভিড়ের মধ্যে প্রায় ১৬ জন তরুণীকে বিবস্ত্র করে শ্লীলতাহানি করা হয় কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করার সাহস করে না, যে সমাজে বুকের ধন সোনামনিকে স্কুল থেকে অপহরণ করে নিয়ে বস্তাবন্দী করে ডোবা-নালায় ফেলে দেওয়া হয়, মায়ের পেটেই সন্তান গুলিবিদ্ধ হয়, সেই সমাজের মানুষ যখন দেখে একদল লোক, যাদের মধ্যে আবার প্রায় অর্ধেকই নারী, নিঃস্বার্থভাবে মানবতার কল্যাণে কাজ করছে তখন কৌতূহল জাগ্রত হওয়াই স্বাভাবিক। যাদের বেঁচে থাকার ভিত্তি হলো স্বার্থচিন্তা, মানুষের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করা যাদের কাছে অলীক কল্পনা ছাড়া কিছুই নয়, তারা হেযবুত তওহীদের এই নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের মধ্যেও স্বার্থের গন্ধ খুঁজতে যাবেন, এতে আর অবাক হবার কী আছে? তাই তো আমাদের ভাই-বোনরা যখন তাদের প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন, তারা ভ্রু কুঁচকে মন্তব্য করেন, এই যুগে কেউ স্বার্থ ছাড়া কোনো কাজ করে নাকি? নিশ্চয়ই আপনাদেরও কোনো স্বার্থ আছে।
এমন মনোভাব যাদের আছে, তাদের ব্যাপারে কথা নেই। স্বার্থের সমুদ্রে তারা এতই গভীরে তলিয়ে গেছে যে, আমাদের সাধ্য নেই তাদের সত্য বোঝাবার, একমাত্র আল্লাহই পারেন তাদের অন্তর্দৃষ্টি খুলে দিতে। তবে অনেকে ইতিবাচক দৃষ্টি থেকেও শুধুই কৌতূহলবশত আমাদের মেয়েদেরকে প্রশ্ন করছেন যে, কেন তারা ঈদের আনন্দ উপভোগ না করে পথে পথে পত্রিকা বিক্রি করছে? তাদের প্রতি আমাদের কথা হলো-
সকল ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য করে যে ধর্ম, সকল সত্যের উৎস যে ধর্ম, মানবজাতির মুক্তির জন্য, শান্তির জন্য আগমন ঘটেছে যে ধর্মের সেই ধর্মই আজ এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী ধর্ম ব্যবসায়ীর কারণে অশান্তির মূল কারণে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই স্রষ্টায় বিশ্বাসী, কোন না ধর্মে বিশ্বাসী, তাদের মধ্যে গভীর ধর্মীয় চেতনা রয়েছে যা মানবজাতির অতুলনীয় উপকার সাধন করতে পারতো, কিন্তু বাস্তবে সেই শুভ চেতনাই আজ বিপদজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের এই ধর্মবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির ধর্মব্যবসায়ী ব্যবসা করে খাচ্ছে। একটি শ্রেণি বলছে- আমাদেরকে দান কর, মসজিদে-মন্দিরে দান কর, মাদ্রাসায় দান কর, মাজারে দাও তাহলে তুমি স্রষ্টার সন্তুষ্টি পাবে। আরেক শ্রেণি বলছে- আমাদেরকে ভোট দাও, আমাদেরকে চাঁদা দাও, আল্লাহ জান্নাত দিবেন, ব্যালট পেপার জান্নাতের টিকিট হবে ইত্যাদি। এছাড়াও রয়েছে আরেকটি শ্রেণি যারা মানুষের জেহাদী চেতনাকে ভুল পথে ব্যবহার করে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের জন্ম দিচ্ছে। এমতাবস্থায় হেযবুত তওহীদ জাতির সম্মুখে তুলে ধরছে মানুষের ধর্ম কি, মানুষের প্রকৃত এবাদত কি, মানবজন্মের সার্থকতা কোথায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সত্য প্রকাশের চেয়ে জরুরি কোনো কিছুই থাকতে পারে কি?
আজ সমস্ত পৃথিবীতে সামাজিক, রাজনৈতিক, নৈতিক অবক্ষয় দেখে সকল চিন্তাশীল মানুষ আঁতকে উঠছেন, অবস্থার ভয়াবহতা বিবেচনা করে চিন্তাশীল মানুষ বলছেন পৃথিবী আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তারা সকলেই দিশাহারা হয়ে এই অবস্থা থেকে মুক্তির পথ খুঁজছেন। মুক্তির সন্ধানে মানুষ চেষ্টা তো কম করে নি। একের পর এক জীবনব্যবস্থা বদলিয়েছে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে, কিন্তু কোনোটাই সফলতার পরিচয় দিতে পারে নি। বস্তুত মানুষের পক্ষে এই সমস্যার সমাধান বের করা অসম্ভব। যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনিই জানেন কোন পথে মানুষের মুক্তি নিহিত। আল্লাহ হেযবুত তওহীদকে সে পথের সন্ধান দিয়েছেন। পৃথিবীকে এই ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে একমাত্র ধর্মের প্রকৃত জ্ঞান ও তার সঠিক ব্যবহার। ধর্মবিশ্বাসের অপব্যবহারের মাধ্যমে আজ যে জঙ্গিবাদের সৃষ্টি করা হয়েছে সেই ধর্মবিশ্বাসের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমেই কিভাবে জঙ্গিবাদ নির্মূল করে মানুষের কল্যাণ করা যায়, বা ধর্মবিশ্বাসের অপব্যবহার করে যেভাবে দেশে অস্থিশীলতা সৃষ্টি করা হয়ে থাকে, দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধানো হয়, ভাঙচুর করা হয়, অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা হয়, সেই ধর্মবিশ্বাসের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করেই কীভাবে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানো যায়, শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা যায় সে উপায় হেযবুত তওহীদ জাতির সামনে তুলে ধরছে।
সমস্ত অপশক্তির হাত থেকে সমাজকে রক্ষা করার জন্য এই মহাসত্য সকল মানুষের নিকট পৌঁছে দেওয়াকে আমরা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব, এবাদত বলে মনে করি। আমরা আমাদের মধ্যমতো সকল উপায়ে প্রচেষ্টা চালাচ্ছি এ জাতিকে সত্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে। পত্রিকা প্রকাশ তারই একটি অংশমাত্র। আমরা সংখ্যায় অল্প, কিন্তু দায়িত্ব বিরাট-বিশাল। সে দায়িত্ব পালন করতে তাই নারী-পুরুষ সকলের সমান অংশগ্রহণ আবশ্যক। তাছাড়া সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নারীদের অংশগ্রহণকে ইসলাম কেবল সমর্থনই করে না, উৎসাহিতও করে। আল্লাহর রসুলের সময় নারীরা যুদ্ধ করেছেন, এ কথা কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না। যেখানে যুদ্ধ করার অনুমতি রয়েছে, সেখানে আমাদের মেয়েরা সম্পূর্ণ শালীনতা-ভদ্রতা বজায় রেখে পত্রিকা বিক্রি করে থাকেন, এতে অসুবিধা কোথায়? আমাদের মেয়েরা এ কাজ করে স্বেচ্ছায়, এবাদত জ্ঞান করে। এ কাজে তাদের পার্থিব কোন স্বার্থ নাই। এ কাজের বিনিময় তারা পরকালের মহান আল্লাহর কাছ থেকে আশা করে।
তবে সবাই শুধু প্রশ্নই করছেন তা নয়। আমরা খবর পাচ্ছি, অনেক সুহৃদ, সুশীল, সত্যনিষ্ঠ ব্যক্তি আমাদের মেয়েদের এই আত্মোৎস্বর্গকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন, সহযোগিতা করছেন, সসম্মানে বসতে দিচ্ছেন, নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে পত্রিকা বিক্রি করে দিচ্ছেন। তাদেরকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা আমাদের নেই। তাদের জন্য কেবল আমরা এই দোয়া’ই করতে পারি, আল্লাহ যেন মানবতার কল্যাণে সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে একদিন তাদেরকেও শরীক করেন। নিকট ভবিষ্যতে এ জাতির সকলেই হেযবুত তওহীদের সংগ্রামের মর্মবাণী উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন ইনশা’আল্লাহ।