মিজানুর রহমান, আমীর, রাজশাহী জেলা, হেযবুত তওহীদ
পাশ্চাত্যের ধর্মহীন বস্তুবাদী চিন্তা চেতনার শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিকতার তেমন কোনো শিক্ষা নেই। সেখানে সচেতনভাবে ধর্ম সম্পর্কে অবজ্ঞা, সন্দেহ ও নিরাসক্ততা সৃষ্টি করা হয়েছে। সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত অধিকাংশ মানুষের মধ্যে ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতাপ্রসূত বিদ্বেষ ও শত্রুতামূলক মনোভাব তৈরি হয়ে যায়। তারা মাদ্রাসাশিক্ষিত মানুষকে অনেক তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন এবং বোধবুদ্ধিহীন মনে করেন। কারণ মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থায় জ্ঞান-বিজ্ঞান, আধুনিক দুনিয়া সম্পর্কে তেমন কিছুই শিক্ষা দেওয়া হয় না। তারা সেখানে কেবল আরবি ভাষা ও মাসলা মাসায়েলের জ্ঞান লাভ করেন যা ধর্মীয় অঙ্গনের বাইরে কোনো কাজে আসে না। এখন এই আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত কোনো ছেলে যদি ইসলামের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ে, যদি সে মুসলিম জাতির দুর্দশা দেখে ব্যথিত হয়ে তা দূর করার সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করতে চায় তখন এই মাদ্রাসা শিক্ষিত লোকগুলো তার উপর সর্বপ্রথম দাড়ি-টুপি আর লেবাসের শর্ত আরোপ করেন। তাকে বোঝান যে, ইসলামের কাজ করতে হলে, ইসলামের কথা বলতে হলে সর্বপ্রথম তোমাকে দাড়ি রাখতেই হবে। অথচ ছেলেটির এতদিনের গড়ে ওঠা রুচিবোধের সঙ্গে এই দাড়ি-টুপি সামঞ্জস্যশীল নয়। এখানেই হচ্ছে মাদ্রাসা শিক্ষিতদের চিন্তার স্থবিরতা। তারা কোনো কিছুর গুরুত্ব বিচার করার ক্ষেত্রে তার বাস্তবমূল্য ও কার্যকারণ বিবেচনার বোধ হারিয়ে ফেলেছেন। তাদের জ্ঞান ফতোয়ার কেতাবে বন্দী হয়ে গেছে, দাড়ি-টুপি সুন্নত (অনেকে বলেন ওয়াজিব) তাই রাখতেই হবে। যদি আল্লাহর সার্বভৌমত্বই প্রতিষ্ঠা না করা যায় তাঁর বিধানও প্রতিষ্ঠা হবে না। সেক্ষেত্রে ইসলামের যে মূল লক্ষ্য সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা সেটাও বাস্তবায়িত হবে না। তখন নামাজ, রোজা, হজ্ব, দাড়ি, টুপি, লেবাস কিছুরই কোনো মূল্য থাকবে না এটা বোঝার জন্য যে চিন্তাশক্তি লাগবে, তারা সেই চিন্তার ঘরে তালা মেরে দিয়েছেন। পৃথিবীর সব মানুষও যদি দাড়ি রেখে দেয় তাতেই কি সমাজে শান্তি নিরাপত্তা কায়েম হয়ে যাবে? যাবে না। এটাই চিন্তার স্থবিরতা। ইসলামকে তারা বাস্তবতার নিরিখে উপস্থাপন না করে ১৪০০ বছর আগে আরবের মানুষের যে চুল-দাড়ির কাটিং, পোশাকের রীতি বা ফ্যাশন ছিল সেটাকেই ইসলামের প্রথম দায়িত্ব বলে নিরূপণ করে নিয়েছেন। চিন্তার এই জড়ত্বকে তারা বিস্তার করে দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। একারণেই চিন্তাশীল মানুষ ইসলামকে প্রত্যাখ্যান করে ইসলামবিদ্বেষী হয়ে যাচ্ছেন।