মোখলেছুর রহমান:
একটি গল্প বলি: ধরুন আপনার পূর্বপুরুষ অগাধ সম্পদের মালিক ছিলেন। দিগন্তবিস্তৃত জমিতে ফলত সোনার ফসল। পুকুর আর দিঘি ভরা ছিল মাছে। এক সময় এক প্রতারক দস্যু এসে আপনাদের সেই সম্পদ দখল করে নিল। আপনার পূর্বপুরুষরা দীর্ঘ সংগ্রাম ও বহু জীবনক্ষয় করে সেই প্রতারকের কাছ থেকে বাস করার জন্য কোনমতে একটুকরো জমি লাভ করল। প্রতারক হয়ে গেল বিরাট জমিদার। এখন প্রতিটি সুবিধা অসুবিধার জন্য জমিদারের শরণাপন্ন হতে হয় আপনাদের। জমিদারের দৃষ্টি আকর্ষণের নিয়ম হলো তার কাঁচারি ঘরের পেছনে প্রজা সাধারণ মানববন্ধন, হরতাল, অনশন, মিছিল করতে পারবে। বলা হলো, এসব করা আপনাদের অধিকার। তাই অধিকার পেয়ে আপনারা ধন্য। জমিদার মশাই সর্বত্র প্রচার করে দিলেন, ‘আমার মত উদারপন্থী লোক পৃথিবীতে নেই। আমি প্রজার সর্বপ্রকার অধিকার আদায়ের সুবিধার জন্য কিছু অধিকার কমিশন করে দিচ্ছি। এরা আমার পক্ষ থেকে করুণা বণ্টন করবে।’ জমিদারের সুনাম ছুটলো দিগ্বিদিক। যতই দিন গড়ায় আপনাদের সংখ্যা এবং চাহিদা বৃদ্ধি পায়। চাহিদা পূরণের জন্য আপনারা বংশপরম্পরায় হরতাল, মানববন্ধন, অবরোধ, মিছিল, অনশন ইত্যাদি করে দাবি জানিয়ে যাচ্ছেন। বহু রক্তক্ষয়, বহু হতাহত হওয়ার পরে একশ’টি দাবির মধ্যে দু’একটি দাবির কিঞ্চিৎ পূরণ করা হয়। এটা জমিদারের দয়া। এ দয়া পেয়ে আপনি ভুলে গেলেন এই সমুদয় সম্পদ আপনাদেরই, এর সর্বত্র যাওয়ার, ভোগ করার ও বসবাস করার ন্যায্য অধিকার আপনাদের, আর ঐ প্রতারক আপনাদের সমস্ত অধিকার এবং স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। এই ইতিহাস ভুলে যাওয়ার পরিণতিতে আপনারা জমিদার মশায়ের দয়ার কাঙ্গাল হয়ে আছেন আর এক টুকরো রুটি পেয়ে ধন্য ধন্য করছেন।
আজকের মুসলিম নামক জাতির অবস্থা কি ঠিক তাই নয়? ইহুদি খ্রিষ্টান ‘সভ্যতা’ এই পৃথিবীকে দখল করে মানুষের সকল অধিকার লুট করে নিয়েছে। এই পৃথিবীর উত্তরাধিকারী আপনি। সে আপনাকে একটি ছোট্ট ভূখণ্ডে আটকে রেখেছে, হাজার হাজার নিয়ম কানুনে আপনার জীবনযাত্রাকে ব্যহত করছে। আপনার সেই অধিকার ফিরিয়ে দিতে পারে কেবল আল্লাহর সত্যদীন।