মাননীয় এমামুযযামানের লেখা থেকে সম্পাদিত
কেবলমাত্র মো’মেনদের আমলই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য, কাফের ও মোশরেকদের সকল আমল পণ্ডশ্রম। তবু কাফেররা আমল করে যায়, কারণ তারা জানে না যে তারা কাফের। আল্লাহ তাদের প্রসঙ্গে বলেন, “তারা ঐ সব লোক যাদের পার্থিব জীবনের যাবতীয় প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে, অথচ তারা ধারণা করে যে, নিশ্চয়ই তারা উত্তম আমল করছে (সুরা কাহফ ১০৪)।” মুসলিম জনসংখ্যার বর্তমান অবস্থা এটাই। তারা নিজেদেরকে মো’মেন ও মুসলিম বলে বিশ্বাস করে নামাজ, রোজা, হজ, কোরবানিসহ বহু আমল করে যাচ্ছে কিন্তু তাদের সবই পণ্ডশ্রম, কারণ তারা আল্লাহর সংজ্ঞা মোতাবেক মো’মেনই নয়, তারা কাফের ও মোশরেক। আল্লাহ বলছেন- মো’মেন শুধু তারা যারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে বিশ্বাস করে (অর্থাৎ জীবনের সর্বস্তরে আল্লাহর বিধান ছাড়া আর কাউকে মানে না) তারপর তা থেকে বিচ্যুত হয় না এবং নিজেদের প্রাণ ও সম্পদ দিয়ে (তা প্রতিষ্ঠার জন্য) আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম, জেহাদ করে (সুরা হুজরাত ১৫)। অর্থাৎ মো’মেন হবার জন্য আল্লাহ দু’টি শর্ত দিচ্ছেন। একটা জীবনের সর্বস্তরে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব স্বীকার অর্থাৎ তওহীদ এবং দ্বিতীয়টি সেই তওহীদকে সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। এই দু’টোর যে কোন একটা বাদ গেলেই সে বা তারা আর মো’মেন নয়। সারারাত তাহাজ্জুদ পড়লেও নয়, সারা বছর রোজা রাখলেও নয়। অথচ এই জাতি বহু শতাব্দী আগেই তওহীদ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ছেড়ে দিয়েছে, যার ফলে আল্লাহ এই জাতিকে খ্রিষ্টান জাতিগুলির দাসে পরিণত করে দিয়েছেন। এর পর থেকে তারা আল্লাহর দীন পরিত্যাগ করে ইহুদি খ্রিষ্টানদের তৈরি দীন তথা নানা তন্ত্র-মন্ত্র বরণ করে নিয়েছে। এভাবে তারা পূর্ণাঙ্গরূপে মো’মেনের সংজ্ঞা থেকে বের হয়ে গেছে। ইসলামের কোনো হুকুম তাদের জন্য নয়, সুতরাং তারা যতই নামাজ, রোজা, কোরবানি করুক আল্লাহ সেগুলির দিকে দৃষ্টিপাতও করবেন না, করছেন না। কাফের মোশরেক হওয়া ছাড়াও আরেকটি কারণ আছে এবাদত কবুল না হওয়ার। সেটা হলো এই আমলগুলির উদ্দেশ্য সম্পর্কে তাদের ভুল ধারণা। যে কোন আমল তার নিয়তের উপর নির্ভরশীল। নিয়ত বা লক্ষ্য যদি ভুল হয়, যত আমলই করা হোক সেগুলি কোনো সওয়াব লেখাবে না। যেখানে এই জাতিকে সৃষ্টিই করা হয়েছে এই জন্য যে, তারা গলিত সীসার তৈরি প্রাচীরের মতো ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল্লাহর দীন ধারণ করবে এবং মানবজাতিকে শেষ দীনের আওতায় আনবে। সেখানে তারা নিজেরাই আল্লাহর সত্যদীন প্রত্যাখ্যান করে দাজ্জালের তৈরি বিধান গ্রহণ করে নিয়ে হাজার হাজার রাজনৈতিক দলে বিভক্ত, দীনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ব্যখ্যা বিশ্লেষণপ্রসূত মাসলা মাসায়েল নিয়ে হাজার হাজার তরিকা, ফেরকা, মাজহাব, দল, উপদলে বিচ্ছিন্ন হয়ে দাঙ্গা হাঙ্গামায় লিপ্ত রয়েছে। অথচ মুসলিম জাতির মধ্যে যে কোনো প্রকার বিভক্তিই আল্লাহ ও রসুলের ভাষায় কুফর। এভাবে কুফরের মধ্যে নিমজ্জিত থেকে কোনো এবাদত কবুল হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এখন এই জাতির মুখ্য কর্তব্য হলো, অতি দ্রুত আল্লাহর তওহীদের ভিত্তিতে সত্যের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। আল্লাহর সার্বভৌমত্ব স্বীকারের মাধ্যমে ইসলামের গণ্ডিতে প্রবেশের পরে আসবে আমলের প্রশ্ন।