রাশেদুল হাসান
সনাতন শব্দের অর্থ- নিত্য, চিরস্থায়ী, চিরন্তন, শাশ্বত এবং দীনুল কাইয়্যেমা শব্দের অর্থ- যা চিরদিন প্রবহমান, চিরন্তন ও শাশ্বত। এই অর্থে সনাতন এবং কাইয়্যেমা একার্থবোধক। অর্থাৎ যে নিয়ম, নীতি, পদ্ধতি লক্ষ বছর পূর্বে ছিল, এখন আছে এবং লক্ষ বছর পরেও যা সত্য থাকবে। যেমন লক্ষ বছর আগেও আগুন উত্তাপ দিত, এখনও আগুন উত্তাপ দেয় এবং লক্ষ বছর পরেও আগুন উত্তাপ দেবে- এটিই হলো চিরন্তন, শাশ্বত, সনাতন নীতি, পদ্ধতি। এরকম সনাতন, শাশ্বত নিয়ম, নীতি, পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে যে জীবনব্যবস্থা তাই হলো সনাতন জীবনব্যবস্থা বা দীনুল কাইয়্যেমা। আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে ইসলামকে দীনুল কাইয়্যেমা বলেছেন (সুরা বাইয়েনাহ-৫, ইউসুফ-৪০)। অর্থাৎ সনাতন জীবনব্যবস্থাই ইসলাম।
আদম (আ.) থেকে শুরু করে শেষনবী (দ.) পর্যন্ত আল্লাহ যে জীবন বিধান মানুষের জন্য পাঠিয়েছেন, স্থান, কাল ভেদে সেগুলোর নিয়ম-কানুনের মধ্যে প্রভেদ থাকলেও সর্বক্ষণ ভিত্তি থেকেছে তওহীদ এবং মৌলিক বিষয়গুলিতেও কোনো পরিবর্তন আনা হয় নি। এই জীবনব্যবস্থার ভিত্তি এবং মৌলিক বিষয়গুলি সানাতন, শাশ্বত, কাইয়্যেমা, যা পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই। যেমন ভিত্তি হচ্ছে তওহীদ, একমাত্র প্রভু, একমাত্র বিধাতা (বিধানদাতা) আল্লাহ। যার আদেশ নির্দেশ, আইন-কানুন ছাড়া অন্য কারো আদেশ, নির্দেশ, আইন-কানুন কিছুই না মানা। আল্লাহ মানুষের কাছে এইটুকুই মাত্র চান। কারণ তিনি জানেন যে, মানুষ যদি সমষ্টিগতভাবে তিনি ছাড়া অন্য কারো তৈরি আইন কানুন না মানে, শুধু তারই আইন-কানুন মানে তবে শয়তান তার ঘোষিত উদ্দেশ্য অর্থাৎ মানুষকে দিয়ে অশান্তি, অন্যায় আর রক্তপাত অর্জনে ব্যর্থ হবে এবং মানুষ সুবিচারে, শান্তিতে (ইসলামে) পৃথিবীতে বসবাস করতে পারবে- অর্থাৎ আল্লাহ যা চান। কত সহজ। আল্লাহ এই দীনুল কাইয়্যেমার কথা বলে বলছেন- এর বেশি তো আমি আদেশ করি নি (সুরা আল বাইয়েনাহ ৫)।
এই সনাতন জীবনব্যবস্থাই ইসলাম। যুগে যুগে এই জীবনব্যবস্থার মৌলিক রূপের কোনো পরিবর্তন হয় নি। হিন্দুরা যে ধর্মের অনুসারী সেটি যেমন সনাতন ধর্ম অর্থাৎ ইসলাম, খ্রিস্টানরাও মূলত ঐ একই ধর্মের অনুসারী। আবার বৌদ্ধ, ইহুদি ও মুসলিম সকলেই একই সনাতন বা ইসলাম ধর্মের অনুসারী কারণ আল্লাহ যুগে যুগে নবী-রসুলদের কাছে যে দীন পাঠিয়েছেন তার নাম ইসলাম। কিন্তু প্রতিটা ধর্মই তার অনুসারীদের মধ্যে থেকে কিছু অতিভক্তিবাদী শয়তান প্রকৃতির স্বার্থান্বেষী মানুষের এবং ধর্মব্যবসায়ীদের হস্তক্ষেপে মূল সনাতন রূপ হারিয়ে গেছে। এর ফলেই আজ নানা ধর্মের সৃষ্টি কিন্তু আদিতে, গোড়ায় এক।