গত ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় হিজবুত তাওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন, সন্ত্রাস দমনে জনসম্পৃক্ততার বিকল্প নেই। প্রধান অতিথি হিসাবে চলমান সঙ্কট থেকে জাতিকে উদ্ধারের জন্য দিকনির্দেশনামূলক প্রাঞ্জল বলিষ্ঠ বক্তব্য রাখেন হিজবুত তাওহীদের এমাম। কানায় কানায় পূর্ণ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে দর্শক-শ্রোতাগণ মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তার আলোচনা শুনেন।
বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ পৃথিবীকে এক মহাযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে উপনীত করেছে। বাংলাদেশেও একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করার হীন উদ্দেশ্যে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে। এই পরিস্থিতে জাতি ও দেশকে নিরাপদ রাখতে ষোল কোটি মানুষ সকল প্রকার সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-ধর্মব্যবসা-অপরাজনীতি এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হওয়া অপরিহার্য। সে লক্ষ্যে বিগত বিশ বছর যাবৎ দেশের জনগণকে সেই সঠিক আদর্শের ভিত্তিতে ধর্মীয় কর্তব্যবোধ এবং দেশপ্রেমের প্রেরণায় উজ্জীবিত করে যাচ্ছে হিজবুত তাওহীদ। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল “বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার নানামুখী ষড়যন্ত্র মোকাবেলায়, সন্ত্রাস দমনে জনসম্পৃক্ততার বিকল্প নেই” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে হিজবুত তাওহীদ এবং মিডিয়া পার্টনার হিসাবে সহযোগিতা করে ‘দৈনিক বজ্রশক্তি’, ‘বাংলাদেশেরপত্র.কম’ ও ‘জেটিভি অনলাইন’। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন আবুল হোসেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জনাব ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন, বিশিষ্ট সমাজসেবক ডা. এবিএম গোলাম রব্বানী, ঢাকা দক্ষিণের ৩৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব ইয়াহিয়া মাহমুদ খোকন, কাজী আরেফ ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী মাসুদ আহাম্মেদ, মতিঝিল থানা শ্রমিকলীগের কার্যকরী সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও হিজবুত তাওহীদের সাহিত্য সম্পাদক রিয়াদুল হাসান। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন দৈনিক বজ্রশক্তির উপদেষ্টা রুফায়দাহ পন্নী। অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন হিজবুত তাওহীদের আমীর মসীহ উর রহমান। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে ভিডিও
আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদে আক্রান্ত বিশ্বের বহু দেশ। আমাদের প্রিয় জন্মভূমি এই বাংলাদেশকে নিয়ে ভেতরে বাইরে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। যদি কোনোভাবে এই দেশকে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে দেওয়া যায় তবে ষড়যন্ত্রকারী স্বার্থান্বেষীদের উদ্দেশ্য সফল হবে। তাই এই মুহূর্তে করণীয় হলো আগে এই সঙ্কট অনুধাবন করা এবং দেশের আপামর জনগণকে সঙ্কটের বিরুদ্ধে ইস্পাতকঠিন ঐক্যবদ্ধ করা। এ জন্য প্রয়োজন একটি সঠিক আদর্শের। দেশের জনগণকে সেই সঠিক আদর্শের ভিত্তিতে ঈমানী চেতনা এবং দেশপ্রেমের প্রেরণায় উজ্জীবিত করতে হবে। অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন।
প্রধান অতিথি ও মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে হিজবুত তাওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন, আজ সমগ্র পৃথিবী ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসেছে, বিশ্বের পরাশক্তিধর দেশগুলো ১৬ হাজারের বেশি পারমাণবিক বোমা ও হাইড্রোজেন বোমা মজুদ করেছে মানবজাতিকে ধ্বংস করার জন্য। অন্যদিকে পৃথিবীব্যাপী চলছে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ। এই জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটিয়েছে ঐ পশ্চিমা পরাশক্তিধর দেশগুলো। অস্ত্রব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য একদিকে তারা জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটাচ্ছে অন্যদিকে সন্ত্রাস দমনের নামে সাম্রাজ্যবাদের বিস্তার ঘটাচ্ছে। এখন তারা পৃথিবীকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছে। এখন যদি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয় তবে সমগ্র মানবজাতি ধ্বংস হয়ে যাবে। এদিকে আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ অবস্থাও ভয়ানক। একদিকে সামাজিক অন্যায়-অবিচার জ্যামিতিক হারে বেড়ে চলেছে, অপর দিকে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটানোর নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে। এই অবস্থায় শুধুমাত্র শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে এই জঙ্গিবাদ ও সামাজিক অপরাধ দূর করা সম্ভব নয়, শক্তি প্রয়োগের পাশাপাশি প্রয়োজন একটি নির্ভুল আদর্শ। সেই আদর্শ মহান আল্লাহ দয়া করে হিজবুত তাওহীদকে দান করেছেন। এখন এই সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও সামাজিক অপরাধ দূরীকরণে জনসম্পৃক্ততার বিকল্প নেই। জনগণের কাছে এই সঠিক আদর্শটি তুলে ধরার ক্ষেত্রে গণমাধ্যম অগ্রনী ভূমিকা পালন করতে পারে। এ ব্যাপারে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। সর্বোপরি জনগণকেই এগিয়ে আসতে হবে দেশরক্ষার এই মহতী কাজে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আবুল হোসেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জনাব ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন বক্তব্যের শুরুতেই প্রধান অতিথির বক্তব্যের প্রশংসা করে ও একমত পোষণ করে বলেন, আজ কোর’আন-হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ইসলামের নামে, জেহাদের নামে ধর্মবিশ্বাসী মানুষদেরকে জঙ্গিবাদী কাজে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। পৃথিবীব্যাপী এই জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটানো হচ্ছে। ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, আফগানিস্তানের কী করুণ অবস্থা। সেখানে মুসলমানরা নিজেদের মধ্যে হানাহানি করে মারা যাচ্ছে। কিন্তু ইসলামে কোনো বিভেদ নেই। অথচ শিয়া-সুন্নির নামে আরও অনেক নামে মুসলমানরা আজ বিভক্ত। রসুলাল্লাহ (সা.) যে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করে গেছেন সেই ইসলামে জঙ্গিবাদ ছিল না, অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা ছিল না, পেট্রোল বোমা মেরে মানুষকে পুড়িয়ে দেওয়া ছিল না। আজ ইসলামের নামে যা চালানো হচ্ছে এগুলি রসুলাল্লাহর প্রতিষ্ঠা করা ইসলামে তো ছিল না। আমাদেরকে ইসলামে মূল শিক্ষা, মূল বক্তব্য নিয়ে থাকতে হবে। যার তার কথায় ভুল বুঝে এসব কাজে লিপ্ত হওয়া যাবে না। হিজবুত তাওহীদের সকল কার্যক্রমের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে তিনি বক্তব্য শেষ করেন।
বিশিষ্ট সমাজসেবক ডা. এবিএম গোলাম রব্বানী অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু উল্লেখ করে বলেন, আজকের আলোচনার বিষয়টি অত্যন্ত সময়োপযোগী। জঙ্গিবাদ কেবল আমাদের দেশের সমস্যা নয়, কেবল আমাদের এই উপমহাদেশ তথা ভারত-পাকিস্তানের সমস্যা নয়, এটা এখন সমগ্র পৃথিবীর জন্য ভয়াবহ সমস্যা। এই জঙ্গিবাদকে ঘৃণা করতে হবে, জঙ্গিবাদ নির্মূলে আমাদেরকে উদ্যোগী হতে হবে। এটি নির্মূলে শক্তি প্রয়োগের পাশাপাশি আদর্শ দিয়ে মোকাবেল করতে হবে। কিন্তু একই সাথে এটাও বুঝতে হবে যে, জঙ্গিবাদ কেন সৃষ্টি হচ্ছে, কারা সৃষ্টি করছে। শুধু জঙ্গিদেরকে একপেশে দোষ দিলেই চলবে না, যারা আমার প্রাণপ্রিয় রসুলের (সা.) ব্যাঙ্গচিত্র আঁকে তাদেরকেও প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। কথা বলা ও লেখার স্বাধীনতার নামে যা খুশি লেখা ও যা খুশি বলা কোনো আদর্শই অনুমোদন দেয় না। মানুষের সঠিক ধর্ম কী তা বোঝাতে হবে। হাজার হাজার সৃষ্টির মধ্যে মানুষ শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি কারণ তার মানবীয় গুণাবলী রয়েছে। এই মানবীয় গুণাবলী জাগ্রত করতে পারে তার ধর্ম- এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তিনি আরও বলেন, হিজবুত তাওহীদ সম্পর্কে আমি অনেক ভুল জানতাম, এখন তাদের সম্পর্কে সঠিক বিষয়টি জেনে আমি তাদের ব্যাপারে অত্যন্ত আশাবাদী। তাদের জন্য প্রার্থনা করি তারা যেন তাদের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে।
কাজী আরেফ ফাউন্ডেশনের সভাপতি জনাব কাজী মাসুদ আহাম্মেদ অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তুর সাথে একমত পোষণ করে বলেন, জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমেই আমাদের দেশ থেক জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূল করতে হবে। আমাদের দেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস ঘটায় একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অন্যায়ের পক্ষে যারা কাজ করেছিল, যারা সেদিন পরাজিত হয়েছিল। তারা বিভিন্নভাবে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে কিন্তু তারা কখনোই সফল হবে না, তারা পরাজিত হবেই। ইরাক, সিরিয়ার মুসলমানদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা লজ্জার বিষয়- যে মুসলমানরা শান্তি আনবে সেই মুসলমানরাই আজ ইউরোপের খ্রিষ্টানদের কাছে ভিক্ষা করতে যাচ্ছে। তিনি হিজবুত তাওহীদের জঙ্গিবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেন এবং একাত্মতা পোষণ করেন।
ঢাকা দক্ষিণের ৩৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব ইয়াহিয়া মাহমুদ খোকন বলেন, হিজবুত তাওহীদের কর্মকাণ্ড দেখে আমি ভিষণভাবে খুশি, তাদের সকল কার্যক্রমের সাথে আমি একাত্মতা পোষণ করছি। আমি দোয়া করি হিজবুত তাওহীদ যেন তাদের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারে, তাদের সার্বিক সফলতা কামনা করি। তিনি আরও বলেন, একাত্তর সালে আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আপামর জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে যুদ্ধ করেছিলাম অন্যায়, অবিচার, শোষণ-বঞ্চনা, দুর্নীতি ইত্যাদির বিরুদ্ধে, সেই লক্ষ্য আজও পূরণ হয়নি। আজও আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছি। হিজবুত তাওহীদের লক্ষ্যও অন্যায়, অবিচারহীন বাংলাদেশ গড়া, কাজেই আমরা তাদের সাথে আছি।
বক্তারা দেশবাসীর প্রতি ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান করে বলেন, স্বার্থপরের সমাজ নাই, নামাজ নাই, জান্নাত নাই। বর্তমানে আমাদের দেশে যে ষড়যন্ত্র চলছে, দেশ যে সঙ্কটে পতিত হয়েছে তা থেকে দেশকে বাঁচানো আমাদের ঈমানী দায়িত্ব ও সামাজিক কর্তব্য।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে ধর্মবিশ্বাস: এক বৃহৎ সমস্যার সহজ সমাধান শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।