মোহাম্মদ ইয়ামিন খান:
মানবজাতি যে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে উপনীত হয়েছে তা রাষ্ট্রনায়কগণ না বুঝতে পারলেও এ কালের শ্রেষ্ঠ পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং অনুধাবন করেছেন। মানবসভ্যতা আজ ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন। স্টিফেন হকিং বলেছেন, “নিজেদের তৈরি আপদের কারণে মানবজাতি হুমকির মুখে।” মানবসৃষ্ট ধারাবাহিক আপদ বলতে পরমাণু যুদ্ধ, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং কৃত্রিম ভাইরাসের ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। কারণ অন্যায়, অবিচার, জুলুম, নির্যাতন, যুদ্ধ ও রক্তপাত এমনভাবে চালানো হয়েছে যে পৃথিবী নামক গ্রহটি আজ মুমূর্ষু। পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ এবং ভারসাম্যকে বহু আগেই ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। পানি ও বায়ুমণ্ডলকে সম্পূর্ণ দুষিত করা হয়েছে। অসংখ্য প্রজাতির প্রাণি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ওজনস্তর ক্ষয় করে ফেলা হয়েছে, উষ্ণতা বাড়িয়ে বরফ গলিয়ে দেয়া হচ্ছে। পারমাণবিক বোমা ফেলে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মাটি পর্যন্ত বিষাক্ত করে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া অধিকহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং আধুনিক অস্ত্র-শস্ত্র ও প্রযুক্তিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে শক্তিশালী করার পরও, আইনকে কঠোর থেকে কঠোরতর করার পরও অপরাধ, হত্যা, খুন, গুম, রাহাজানি, ডাকাতি, ছিনতাই, ধর্ষণের মত ঘটনাগুলো প্রতিটি দেশে বেড়ে চলছে লাফিয়ে লাফিয়ে।
মানুষই তাই এই মুহূর্তে পৃথিবীর জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর অস্তিত্ব। আত্মার ধ্বংস, সম্পদের ধ্বংস, স্বাস্থ্যের ধ্বংস এবং জলবায়ু ধ্বংস সব মিলিয়ে মানবজাতি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। কুরক্ষেত্র যুদ্ধের আগে ধরণী ব্রহ্মার নিকট ফরিয়াদ করেছিল যে ‘মানুষ আর তাদের পাপের বোঝা এত বেড়ে গিয়েছে যে আমি আর বইতে পারছি না।’ তখন কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধ সংঘটিত হয় যেখানে ১৮ অক্ষৌহিনী সেনা নিহত হয়। এখনা পৃথিবী মানুষ আর মানুষের সীমাহীন পাপে ভারাক্রান্ত। বিগত শতাব্দীতে দুইটি বিশ্বযুদ্ধ করে ১১ কোটি আদমসন্তানকে হত্যা করা করেছিল। আরো অর্ধকোটি মানুষ নানা যুদ্ধে নিহত হয়েছে। পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলো বিপুল পরিমাণ পারমাণবিক বোমা তৈরি করেছে যা দিয়ে পৃথিবী নামক গ্রহটিকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেয়া যায়। এখন আবার শোনা যাচ্ছে হাইড্রোজেন বোমার কথা যেটা এটম বোমা থেকেও শক্তিশালী বোমা। যেকোনো মুহূর্তে শুরু হয়ে যেতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এটা অনেকেই বলছেন যে ৯/১১ এর পরপরই শুরু হয়ে গেছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যা এখনো অনেকেই বুঝতে পারছে না। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ হয়ে মানবজাতি ও সভ্যতা প্রায় ধ্বংস হবার বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ পরমাণু বোমা কেউ না কেউ অবশ্যই যুদ্ধের এক পর্যায়ে ব্যবহার করে ফেলবে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো। বিজ্ঞানী আইনস্টাইন-কে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিল, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কেমন হতে পারে। তিনি বলেছিলেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কেমন হবে তা বলতে পারি না, তবে চতুর্থ বিশ্বযুদ্ধ লাঠি দিয়ে হবে! আইনস্টাইন-এর কথা থেকে এটা স্পষ্ট যে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা এতটাই হবে যে প্রায় ধ্বংসই হয়ে যাবে মানব সভ্যতা।
তবে পৃথিবী ধ্বংস হবে না কারণ কেয়ামতের সময় আল্লাহ নির্ধারণ করে রেখেছেন। পৃথিবী ও মানবজাতি নিয়ে আল্লাহর যে মহাপরিকল্পনা তা সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত পৃথিবীর অস্তিত্ব থাকবে। নূহ (আ.) এর সময় পুরো মানবজাতিকে আল্লাহ বিনাশ করে দিলেও বীজস্বরূপ কিছু সত্যনিষ্ট মানুষদের রক্ষা করেছিলেন; এটা এক ধরণের প্রাকৃতিক নির্বাচন। এখন মানবজাতির কর্মফলে প্রাকৃতিকভাবে তাদের বিনাশ আসন্ন। এ ধ্বংসের হাত থেকে মানবজাতির রক্ষার একমাত্র পথ হচ্ছে হেযবুত তওহীদ যে মহাসত্যের দিকে আহবান করছে যে মহাসত্যের দিকে নূহ (আ.) সহ সকল নবী-রসুল ও অবতারগণ আহ্বান করেছিলেন। আর তা হচ্ছে যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হওয়া।
লেখক: যামানার এমামের অনুসারী ও হেযবুত তওহীদের সদস্য।