হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

বিপথে চালিত জেহাদী জোশ ভয়ঙ্কর

শামীম আশরাফ

জঙ্গিবাদ, ধর্মব্যবসা, ধর্ম বা রাজনীতিকে কেন্দ্র করে যে দাঙ্গামূলক ঘটনা আমাদের দেশে ঘটানো হয় তার বিরুদ্ধে হেযবুত তওহীদ আদর্শিক লড়াই করে যাচ্ছে। অনেকেই অভিযোগ করে বলেন যে দেশে তো অনেক সমস্যা আছে, সেগুলো নিয়ে কেন কথা বলেন না, দুর্নীতি দারিদ্র্য কত সমস্যাই তো আছে। তাদের জবাবে আমরা বলি, ধরুন এমন একজন রোগী যার ক্যান্সার হয়েছে আবার সর্দিও হয়েছে। আপনি তার কোন রোগের চিকিৎসা আগে করা উচিত বলে মনে করেন? যেহেতু জাতির অস্তিত্বকেই সংকটে ফেলবে তাদের ভুল পথে চালিত ধর্মবিশ্বাস। তাই এ সংক্রান্ত বিষয় নিয়েই আমাদেরকে কাজ করা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। যতদিন না জাতির ধর্মবিশ্বাসকে লেবাসধারী ধর্মব্যবসায়ীদের হাত থেকে মুক্ত করা যাবে, ততদিন জাতি নিরাপদ হবে না। তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হিসাবে বাংলাদেশের ওপর পাশ্চাত্যের পরাশক্তিগুলো ওৎ পেতে আছে, তারা সত্যি হোক বা মিথ্যা হোক একটা জঙ্গি ইস্যু চায়।
কিছু মাদ্রাসাশিক্ষিত মানুষ হঠাৎ জেগে ওঠা ধর্মীয় আবেগে না বুঝে সেই ইস্যু পশ্চিমাদের হাতে তুলে দেয়। হেফাজতে ইসলামের ঘটনা, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার ঘটনা তার উদাহরণ। তাদের সেই আবেগ বা জোশ ২/৩ দিনও স্থায়ী হয় না। কারণ তাদের এই ক্ষণস্থায়ী আবেগের সম্বল মূলত লক্ষহীন প্রতিহিংসা, সংখ্যার গৌরব যার বহিঃপ্রকাশ তারা ঘটিয়ে থাকে তর্জন-গর্জন, ভাঙচুর ইত্যাদির মাধ্যমে। প্রকৃত অর্থে গন্তব্যহীন যাত্রী তারা, ইসলামী চেতনা আছে হৃদয়ের ভিতরে, সুতরাং তার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে হবে। যদি সঠিক উপায় জানা না থাকে তাহলে ভুল পথে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে এটাই স্বাভাবিক। তারা কর্তৃপক্ষের বা প্রতিপক্ষের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কী করবে, কীভাবে করবে তা বুঝতে না পেরে অনুকরণের সরল পথ বেছে নিয়েছে। রাজনীতিক দলগুলো দেশ ও দশের ক্ষতি সাধন করে সরকাকে দাবিপূরণে বাধ্য করতে চায়, এই ইসলামপন্থীরাও সেটাই করতে চাচ্ছে। তারা খেয়াল করল শাহাবাগীরা রাস্তার মধ্যে আল্পনা এঁকে সেখানে দাঁড়িয়ে শ্লোগান দেওয়ার সদ্য গজানো পশ্চিমা রীতির অনুকরণ করছে, হেফাজতিরাও সেটাই শুরু করল। তারা দেখল আরব বসন্তের দেখাদেখি শাহাবাগীরা লক্ষ লক্ষ মানুষ জড়ো করো রাতারাতি গণমাধ্যমে তাক লাগিয়ে দিল। কথিত আলেমরাও সংখ্যার দিক থেকে অগুনিত। ২৫,০০০ কওমী মাদ্রাসা নাকি আছে এদেশে, প্রায় অর্ধকোটি মানুষ তারা একত্র করতে সক্ষম বলে ঘোষণা দেয়। তারাও দেখিয়ে দিল। রাজনৈতিক দলগুলো যেভাবে দেশে অরাজকতা, ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে, কথিত আলেমরাও সেটা করে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিল। পার্থক্য হলো তারা এই কাজগুলো করল ধর্মের নামে, ফলে তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের যাবতীয় দায় গিয়ে পড়ল আল্লাহ-রসুলের উপর।
আমরা বলতে চাই, অন্যায়ের নিরসনকল্পে ইসলাম ধর্ম অনুসারে তাদের কী করা উচিত সেটা তাদের কাছে স্পষ্ট নয়। তাই অনর্থক তারা তাদের ঈমানী শক্তির অপচয় ঘটাচ্ছেন। এভাবে নিরীহ ছাত্রদেরকে গুলির মুখে ফেলে নিজেদের ধর্মব্যবসা টিকিয়ে রাখার কারণে একটা সময় তারা ভালো কাজে ডাকলেও লোক পাবেন না, আজ যেমন অনেক জায়গায় সম্মান পান সেটাও তারা হারাবেন। অর্থাৎ মানুষের মধ্য থেকে ধর্মীয় চেতনাটা আরো হারিয়ে যাবে। তাদের এই সব প্রতিবাদ বিক্ষোভ যা তারা জেহাদের নামে করছেন সেটা আদৌ জেহাদ হচ্ছে না। এই অর্থহীন কাজের বিনিময়ে আল্লাহর কাছ থেকে তারা কোনো পুরস্কারও পাবেন না, বরং ইসলামের নামে অন্যায় কাজ করে নির্দোষ মানুষকে কষ্ট দেওয়ার জন্য আখেরাতে তাদেরকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। অর্থাৎ তাদের আম-ছালা দুটোই যাবে।
তাই আমরা মনে করি তাদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করা প্রয়োজন আছে, ইসলামের স্বার্থে, মানবতার স্বার্থে সর্বোপরি মাদ্রাসাশিক্ষিত শ্রেণিটির স্বার্থে। তাদের ঈমানী চেতনা ভুল পথে প্রবাহিত হয়ে ইসলাম, মুসলিম ও তারা নিজেরাই ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। সমগ্র পৃথিবীতে যখন মুসলিম দাবিদার জনগোষ্ঠীটি চরম দুর্দশাগ্রস্ত তখন এই শ্রেণিটির ঈমানী চেতনা জাতির জন্য একটি বড় সম্পদ। ধর্মব্যবসায়ীদের হাতে পড়ে সেই সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সেই সম্পদকে রক্ষা করা ও সঠিকভাবে ব্যবহার করে মানবতার কল্যাণ সাধন করার পথ হেযবুত তওহীদের কাছে আছে। কিন্তু মাদ্রাসাশিক্ষিতরা অনেকেই তাদের আরবী শিক্ষার গরিমায়, দাড়ি ও লেবাসের অহঙ্কারে অন্ধ হয়ে থাকেন। ফলে মুক্তমনে অন্য কারো বক্তব্য শোনার প্রয়োজনীয়তা বোধ করে না। তারা প্রথমে দেখেন, যে বলছে তার লেবাস আছে কিনা, দাড়ি আছে কিনা, মাদ্রাসায় পড়েছে কিনা, আরবি মাখরাজ জানে কিনা। তাদের মানদণ্ডে উত্তীর্ণ না হলে তার বক্তব্য যতই যৌক্তিক হোক সেটা তারা শ্রবণযোগ্যই মনে করেন না। তাদের এই চিন্তার অন্ধত্ব তাদেরকে কোন অন্ধকার গহ্ববরের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে সেটা দেখার দৃষ্টিশক্তিও তারা হারিয়েছেন। জ্ঞান ও আমলের অহঙ্কার মালায়েকদের সর্দার আজাজিলকে বিতাড়িত শয়তানে পরিণত করেছিল, এ উদাহরণ হয়তো তাদের স্মরণে নেই।
আমরা চাই এই দেশটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হাত থেকে রক্ষা পাক, পশ্চিমা ষড়যন্ত্রকারীদের অস্ত্রব্যবসার বাজারে পরিণত না হোক। সেজন্য আমরা জঙ্গিবাদ, ধর্মব্যবসার বিরুদ্ধে অধিক সোচ্চার। এই দেশকে বাঁচানোই আমাদর প্রথম এবাদত। পায়ের নিচে এই ভূখণ্ডটি যদি না থাকে তাহলে মসজিদ মাদ্রাসা কিছুই থাকবে না। সিরিয়ার নাগরিকরা আজ দেশ হারিয়ে ইউরোপের পথে প্রান্তরে ভিক্ষুকের মতো জীবনযাপন করছে। আমাদের দেশে সেই পরিণতি হোক এটা যারা না চাইবেন তাদেরই উচিত সর্দির চেয়ে ক্যান্সাররূপী জঙ্গিবাদের চিকিৎসায় বেশি মনোযোগী হওয়া।

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...