শাকিলা আলম
বর্তমান সভ্যতায় জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের যে ঊর্ধ্বশ্বাস দৌড় আরম্ভ হয়েছে তাতে নারী পুরুষ উভয়কেই জীবিকার অন্বেষণে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়েছে। জীবিকার সংগ্রাম দিন দিন কঠোর থেকে কঠোরতর হচ্ছে। সেই সংগ্রামে পুরুষের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমে অথবা অংশগ্রহণ করে নারী তার শারীরিক লাবণ্য, মানসিক সৌরভ, চারিত্রিক মাধুর্য- এক কথায় তার নারীত্ব বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলছে। এতে তার দৈহিক গড়ন পুরুষালী হয়ে যচ্ছে, তার কিন্নর কন্ঠ হয়ে যাচ্ছে কর্কশ।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেমন প্রকৃতির সবচেয়ে কোমল, ভঙ্গুর এবং নরম জিনিসটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তেমনি সত্যের আলো থেকে বিচ্যুত হবার ফলে সর্বপ্রথম ক্ষতিগ্রস্ত হয় নারী ও শিশুরা। লোহাকে আগুনে পুড়িয়েই আকৃতি দিতে হয়, কিন্তু ফুলকে রাখতে হয় ফুলবাগানে কিংবা ফুলদানিতে। সেই ফুলকে যদি কামারশালায় নিয়ে তপ্ত আগুনে পুড়িয়ে হাতুড়ি পেটা করা হয় তার পরিণতি কী হবে? আজ নারীকে তাই করা হয়েছে। এতে তার মর্যাদা বাড়ে নি বরং সে নিজের সমস্ত অধিকার হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে। কীভাবে?
পশ্চিমা সংস্কৃতির ক্রমাগত ‘আঘাতে’ একটি কিশোরী তার বাবা-মাকে অবজ্ঞা করতে শিখছে, বাবা-মাও নিজেদেরকে অসহায় মনে করছেন তথাকথিত আধুনিকার সামনে। মেয়েদের স্বাধীনচেতা ধ্যান-ধারণা অথবা স্বামীর দায়িত্বহীনতার কারণে সংসার ভেঙ্গে যাচ্ছে, সে স্বামীর স্নেহ ও সুরক্ষা হারাচ্ছে। যদি সংসার থাকেও সেখানে শান্তি থাকছে না। আকাশ সংস্কৃতি প্রতিটি মানুষকে ত্যাগী হওয়ার বিপরীতে ভোগবাদী, শালীনতার বিপরীতে অশ্লীলতার পুজারী ও সম্প্রীতিসূচক মনোভাবের পরিবর্তে কলহপ্রিয়, মিতভাষীর পরিবর্তে বাকচতুর, ধৈর্য-সবরের পরিবর্তে অসহিষ্ণু ও অস্থির করে তুলছে।
যৌথ পরিবার ভেঙ্গে যাওয়ায় এবং বাবা-মায়ের ব্যস্ততার কারণে সন্তানের শিক্ষকের আসন গ্রহণ করেছে টেলিভিশন, ইন্টারনেট, স্মার্টফোন। প্রাকৃতিক প্রতিশোধ হিসাবে বার্ধক্যে ঐ সন্তানেরা তার মাকে যত্ন করছে না। তার কাছে স্ত্রী বা প্রেমিকাই অধিক গুরুত্ব আদায় করে নিচ্ছে। এভাবে সে নারী একে একে তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের প্রতিটি পর্যায় থেকে অধিকার-বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ এই পারিবারিক স্নেহের বন্ধন ছিল তার মৌলিক অধিকার। তবে মানুষের পরিবার থাকুক আর না থাকুক প্রাণধারণ করতে হলে খাদ্য-বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদি তার লাগবেই। তাই নারীও বাধ্য হয়ে সেই কষ্টকর পরিশ্রমগুলির দিকে পা বাড়ায়। যারা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত তারা হয়তো একটু ভদ্রস্থ পরিবেশে কাজের সুযোগ পান, আর যারা সার্টিফিকেট যোগাড় করতে পারেন নি তাদেরকে দিনমজুর পর্যন্ত হতে হয়। কোটি কোটি নারীর মধ্যে কয়েকজন নারী সেনাবাহিনীর অফিসার, বিচারপতি, পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক হতে পারা অর্থাৎ দু’চারজন ঐ সব গুরুত্বপূর্ণ পদে যাওয়ার অর্থ এই নয় যে, সমগ্র নারীই অধিকার পেল। এখনো সামগ্রিকভাবে নারীসমাজ বঞ্চিত, নিগৃহীত, অধিকারহারা।
(লেখিকা: সাংবাদিক ও হেযবুত তওহীদের সদস্যা)