রাকীব আল হাসান:
——————
ঋগবেদের কিছু কিছু শ্লোকের বর্ণনা নিুরূপঃ তিনি কোন পরম ঈশ্বর যার উদ্দেশ্যে আমি পূজা আর্চনা করব? তিনি মহান ঈশ্বর যিনি আমাকে দিয়েছেন জীবন। যিনি দিয়েছেন শক্তি সামর্থ। ঈশ্বরের নির্দেশ সকল উজ্জ্বল দেবতাবৃন্দ অবনত মস্তকে পালন করেন। ঈশ্বরের প্রতিচ্ছবি হলো অমরত্ব। তার ছায়া হলো মৃত্যু।
একচ্ছত্র প্রভু
তিনি কোন ঈশ্বর, যারা পূজা-আর্চনা আমি করব? তিনি ঐ ঈশ্বর যিনি নিজ শক্তি বলে সকল নিঃশ্বাস বিশিষ্ট প্রাণী ও আলোকিত বিশ্বের একচ্ছত্র মালিক বা প্রভু। তিনি বিশ্বের মানব এবং পশু তথা সকল কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন।
তিনি কোন মহান ঈশ্বর যারা পূজা-আর্চনা আমি করব? তিনি সেই পরম ঈশ্বর যার শক্তিতে সৃষ্টি হয়েছে তুষার ধবল পর্বতাবলী, সমুদ্র, মহাসমুদ্র, সুদীর্ঘ (রস) নদী। সকল দিক দিগন্ত সে মহা প্রভুর দুটি বাহুর মতো।
ভূমণ্ডল
তিনি কোন ঈশ্বর, যার পূজা আর্চনা আমি করব? তিনি সে ঈশ্বর যারা ইচ্ছায় এক মুহূর্তে সৃষ্টি হয়েছে মহাকাশ মণ্ডল, ধরণীপুঞ্জ এবং তার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে ভূমণ্ডল ও নভোমণ্ডল। তিনি নভোমণ্ডলে অন্তর্ভুক্ত করেছেন পরিমিত বায়মণ্ডল।
নভোমণ্ডল
তিনি কোন ঈশ্বর যার উদ্দেশ্যে আমরা পূজা আর্চনা করব? তিনি সে ঈশ্বর যার ইচ্ছায় নভোমণ্ডল ও পৃথিবী দৃঢ়ভাবে আছে। ঊর্ধ্ব দিকে তাকিয়ে আছে ভীত প্রকম্পিত হৃদয়ে। যে নভোমণ্ডলে সূর্য অধিকতর কিরণ বিতরণ করে।
হিরণ্যগর্ভ
তিনি কোন ঈশ্বর যার উদ্দেশ্যে আমরা পূজা-আর্চনা করব? তিনি সে মহান ঈশ্বর যার ইচ্ছায় মহানদীসমূহ বিভিন্ন দিকে প্রবাহিত হয়। হিরণ্যগর্ভ দৃঢ়ভাবে স্থাপিত-যা থেকে বিকশিত হয় আলোকমালা এবং তা থেকে হিঃসৃত হয় দেবদেবীদের শ্বাস-প্রশ্বাস।
প্রাকৃতিক শক্তি দেবতা
তিনি কোন পরম ঈশ্বর যার উদ্দেশ্যে আমরা পূজা আর্চনা করব? তিনি সে পরম ঈশ্বর যিনি স্বীয় শক্তি বলে সলীল সমুদ্র থেকে দৃষ্টিপাত করেন এবং সে সলীল মালায় আছে জীবানু শক্তি এবং যা থেকে সৃষ্টি হয় আলো। তিনি সে পরম ঈশ্বর যিনি সকল দেবদেবীর উপরে একমাত্র পরম ঈশ্বর।
সুবিচারক
তিনি কোন পরম ঈশ্বর যার উদ্দেশ্যে আমরা পূজা আর্চনা করব? তিনি সেই ঈশ্বার যার থেকে আমাদের কোনো দুঃখ এবং ক্ষতি আসবে না। যিনি সৃজন করেছেন বিশ্ব চরাচর। তিনি সুবিচারক, যিনি সৃষ্টি করেছেন স্বর্গ মর্ত। যিনি সৃজন করেছে উজ্জ্বল আকাশ এবং প্রবল জল প্রবাহ।
ঋগবেদের উপরোক্ত শ্লোক সমূহে (১০ম অধ্যায়, শ্লোক ১২১ থেকে) আল-কুরআনুল কারিমের সুরা আর-রহমানের একটি বাক্যের যে বর্ণনাভঙ্গি “ফাবে আইয়ে আলায়ে রাব্বিকুমা তুকাজ্জিবান” (তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা অস্বীকার করবে?” আয়াতের বর্ণনা ভঙ্গির অনুরণ এবং প্রতিফলন রয়েছে। এভাবে সম্পূর্ণ বেদের মধ্যে বহু শ্লোক রয়েছে যা কোর’আনের অনেক আয়াতের সাথে মিলে যায়। এভাবে মূল মূল ধর্মগ্রন্থগুলো যারাই গবেষণা করেছেন তারা এটা স্বীকার করেছেন যে এই ধর্মগ্রন্থগুলো একই স্রষ্টা থেকে আগত। কেবল স্থান, কাল ও পরিস্থিতির কারণে কিছু পার্থক্য বিদ্যমান। মৌলিক বিষয়গুলো একই। ঋগবেদের মধ্যে বলা হয়েছে, “ঈশ্বর একম ইভা দ্বিতীয়ম।” অর্থাৎ “ঈশ্বর এক, তার কোনো দ্বিতীয় নেই।” এভাবে সকল ধর্মেই আল্লাহর একত্ববাদের কথা, ওয়াহদানিয়াতের কথা বলা হয়েছে। এ নিদর্শনগুলিই প্রমাণ করে যে উল্লেখযোগ্য সকল ধর্মই এক আল্লাহর নিকট থেকে আগত, ধর্মগ্রন্থের বাণী সমূহ মহান আল্লাহরই বাণী। কাজেই সত্য যেখানেই থাক তা আমাদের মান্য করা উচিত। আমরা কেবল অজ্ঞতার কারণে এক ধর্মের মানুষ অন্য ধর্মের মানুষের বিরুদ্ধে বিদ্বেষবাষ্প ছড়াই, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করি। অথচ আমরা যদি বুঝতাম যে আমারেদ মাঝে আসলে কোনো বিরোধ নেই, বরং আমাদের সকলের গন্তব্য একই দিকে, সমাজে শান্তি ও আখেরাতে তথা পরজনমে মুক্তি তবে আমরা একই সাথে পথ চলতে পারতাম। আল্লাহ আমাদের সেই তওফিক দিন। আমিন।