হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

ইতিহাসের পাতা থেকে মুসলিম জাতির অতীত

Untitled-114-300x102রাকীব আল হাসান:

আমাদের, অর্থাৎ আমরা যারা নিজেদের মুমিন, মুসলিম ও উম্মতে মোহাম্মদী বলে মনে করি, আমাদের ইতিহাস কী? আমরা কোথা থেকে এসেছি, কেমন করে আমাদের জন্ম হয়েছে, কেন আমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে, কী উদ্দেশ্যে আমাদের একটি জাতি হিসেবে গঠন করা হয়েছে? আজকের এই প্রায় ১৬০ কোটির জাতির মনে এই প্রশ্নগুলি জাগে না। কেউ এই প্রশ্নগুলি করলে ১৬০ কোটির কাছ থেকে অন্তত দশকোটি রকমের বিভিন্ন উত্তর পাওয়া যায়। চৌদ্দশ’ বছর আগে যখন এই জাতিটির জন্ম হয়েছিল আল্লাহর রসুল তার অক্লান্ত চেষ্টা, অতুলনীয় ত্যাগ, অবিচল নিষ্ঠা, অটল অধ্যবসায় এবং সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে এই জাতিটিকে গঠন করেছিলেন তখন কিন্তু ঐ জাতির প্রত্যেকটি মানুষকে উপরোক্ত ঐ প্রশ্নগুলি করলে সবাই একই উত্তর দিতেন, কোনো মতভেদ ছিল না। ঐ জাতির ইতিহাস হচ্ছে এই যে, জাতিটি গঠিত হবার পঁচিশ বছরের মধ্যে তদানীন্তন পৃথিবীর দুইটি মহাশক্তিকে সশস্ত্র সংগ্রামে, যুদ্ধে পরাজিত করে সমগ্র মধ্য এশিয়ায় শান্তি, শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করেছিল। ঐ মহাশক্তিশালী সাম্রাজ্য দুইটি ছিল রোমান ও পারসিক, একটি খ্রিষ্টান অপরটি অগ্নি উপাসক। সংখ্যায়, সম্পদে, সামরিক বাহিনীর সংখ্যায়, অস্ত্রশস্ত্রে, এক কথায় সবদিক দিয়ে ঐ দুইটি বিশ্বশক্তি ছিল ঐ শিশু জাতির চেয়ে বহুগুণে বড় কিন্তু তবুও তারা ঐ সদ্য প্রসূত ছোট্ট জাতির সঙ্গে সামরিক সংঘর্ষে বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল। তারপর ৬০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ঐ জাতিটি তখনকার দিনের অর্ধেক পৃথিবী জয় করে আল্লাহর আইনের শাসনের অধীনে নিয়ে এল। এই পর্যন্ত ঐ জাতির ইতিহাস তাদের চেয়ে বহুগুণে শক্তিশালী শক্তির বিরুদ্ধে নিরবচ্ছিন্ন সামরিক বিজয়ের ইতিহাস।

উম্মতে মোহাম্মদীর এই সংগ্রাম কিসের লক্ষ্যে?

ঐ সামরিক বিজয়ের উদ্দেশ্য কি ছিল? সাম্রাজ্য? নাকি অন্য ধর্মের লোকজনকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করা? না, এর কোনটাই নয়। এর উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ছিল ঠিক তাই যে উদ্দেশ্য, যে লক্ষ্য অর্জনের জন্য আল্লাহর নির্দেশে তাঁর শেষ রসুল এই জাতিটিকে, এই উম্মাহটি গঠন করেছিলেন, আর সেটি হলো সশস্ত্র সংগ্রাম করে সমস্ত পৃথিবীতে আল্লাহর আইন-কানুন অর্থাৎ দীন প্রতিষ্ঠা ও কার্যকরী করে মানব জাতির ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত জীবনের সমস্ত অন্যায়, অবিচার, শোষণ, অত্যাচার নিঃশেষ করে দিয়ে ন্যায়, সুবিচার, নিরাপত্তা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। আর এই জন্যই এই দীনের নাম ইসলাম, আক্ষরিক অর্থেই শান্তি। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত, আদম (আ:) থেকে মোহাম্মদ (সা:) পর্যন্ত ঐ একই নাম, ইসলাম বা শান্তি। আজ আমাদের ধর্মীয় ও অধর্মীয় (অর্থাৎ রাজনীতিক) নেতারা যে অর্থে ইসলামকে শান্তির ধর্ম বলেন তার ঠিক বিপরীত অর্থ। উম্মতে মোহাম্মদী মানুষের জাতীয় জীবনে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সংগ্রামের মাধ্যমে, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে একটি মানুষকেও তারা তার ধর্ম ত্যাগ করে এই দীন গ্রহণে বাধ্য করেননি। অর্ধেক পৃথিবীতে আল্লাহর আইন প্রবর্তন করার ফলে ঐ সমস্ত এলাকায় লুপ্ত হয়ে গেল শোষণ, অবিচার, অন্যায়, নিরাপত্তাহীনতা অর্থাৎ ফাসাদ ও সাফাকুদ্দিমা। প্রতিষ্ঠিত হলো সুবিচার; ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত, অর্র্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনীতিক, সুবিচার ও নিরাপত্তা; এক কথায় শান্তি।

উম্মতে মোহাম্মদীর উদ্দেশ্যচ্যুতি

রসুলাল্লাহর ওফাতের ৬০/৭০ বছর পর্যন্ত উম্মতে মোহাম্মদী একদেহ একপ্রাণ হয়ে সংগ্রাম চালিয়ে গেলেন। তাঁরা বিশ্বের সকল জাতির মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের আসন লাভ করলেন। এরপর ঘটল এক মহা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। ঐ জাতি হঠাৎ তার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ভুলে গেল। জাতি ভুলে গেল যে কাজের জন্য তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে, গঠন করা হয়েছে, প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে সেই কাজ ছেড়ে দেওয়া আল্লাহ ও তাঁর রসুলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা। কিন্তু জাতির লোকদের আকিদা অর্থাৎ উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্বন্ধে ধারণা বিকৃত হয়ে যাওয়ায় জাতি ঠিক তাই করল, আল্লাহর দীন সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা, সংগ্রাম ত্যাগ করল এবং ত্যাগ করে অন্যান্য রাজা বাদশাহরা যেমন রাজত্ব করে তেমনি শান শওকতের সঙ্গে তাদের মতোই রাজত্ব করতে শুরু করল। এই সর্বনাশা কাজের পরিণতি কী তা তারা উপলদ্ধি করতে পারলেন না। তারা উপলদ্ধি করতে পারলেন না যে, যে জিনিস যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হয় সেটা যদি সেটাকে দিয়ে না হয়, তবে আর ঐ জিনিসের কোনো দাম থাকে না, সেটা অর্থহীন হয়ে যায়। একটা ঘড়ির উদ্দেশ্য হচ্ছে সময় জানা, ঘড়িটা যদি না চলে, সময় না দেখায়, এমন কি যদি ভুল সময় দেখায় তবে আর সে ঘড়িটার কোনো দাম থাকে না। ঘড়িটা সোনা, হীরা জহরত দিয়ে তৈরি করলেও না।

রসুলাল্লাহর সুন্নাহর বিকৃতি

বিশ্বনবী (সা.) তার উম্মাহকে পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে, তার চলে যাবার পর তিনি যেমন করে সংগ্রাম করে সমস্ত আরবে দীন প্রতিষ্ঠা করলেন, ঠিক তেমনি করে বাকি দুনিয়ায় ঐ দীন প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব তাদের ওপর অর্পিত হবে। এটাকে নবী (সা.) বললেন “আমার প্রকৃত সুন্নাহ”, অর্থাৎ আমি সারা জীবন যা করে গেলাম, এবং এও বললেন যে, যে আমার এই সুন্নাহ ত্যাগ করবে সে বা তারা আমার কেউ নয় (বোখারী, মুসলিম); অর্থাৎ আমার উম্মত নয়। তারা উম্মতে মোহাম্মদীর দাবি করতে পারে না।
প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে প্রথম যিনি মহানবীকে (সা.) প্রেরিত বলে স্বীকার করে এই দীনে তথা ইসলামে প্রবেশ করলেন; অর্থাৎ আবু বকর (রা.) মুসলিম হয়েই রসুলাল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞেস করলেন- “হে আল্লাহর রসুল! এখন আমার কাজ কী? কর্তব্য কী? মহান আল্লাহ শেষ নবী (সা.) উত্তর দিয়ে বললেন, “এখন থেকে আমার যে কাজ তোমারও সেই কাজ”। ইতিহাসে পাচ্ছি, শেষ ইসলামকে গ্রহণ করার দিনটি থেকে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আবু বকরের (রা.) কাজ একটাই হয়ে গিয়েছিল, সেটা ছিল মহানবীর (সা.) সংগ্রামে তার সাথে থেকে তাকে সাহায্য করা। শুধু আবু বকর (রা.) নয়, যে বা যারা নবীজীকে (সা.) বিশ্বাস করে মুসলিম হয়েছেন সেই মুহূর্ত থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি বা তারা বিশ্বনবীকে (সা.) তাঁর ঐ সংগ্রামে সাহায্য করে গেছেন, তার প্রকৃত সুন্নাহ পালন করে গেছেন।
আর কেমন সে সাহায্য! স্ত্রী-পুত্র পরিবার ত্যাগ করে, বাড়ি-ঘর সহায়-সম্পত্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য ত্যাগ করে, অর্ধাহারে-অনাহারে থেকে, নির্মম অত্যাচার সহ্য করে, অভিযানে বের হয়ে গাছের পাতা খেয়ে জীবন ধারণ করে এবং শেষ পর্যন্ত যুদ্ধক্ষেত্রে জীবন বিসর্জন দিয়ে। এই হলো তার উম্মাহ, উম্মতে মোহাম্মাদী তার প্রকৃত সুন্নাহ পালনকারী জাতি।
রসুলাল্লাহর বিদায় নেওয়ার ৬০/৭০ বছর পর এই জাতি সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ত্যাগ করেই ক্ষান্ত হলেন না। তারা রসুলের সুন্নাহরও ভিন্ন সংজ্ঞা আবিষ্কার করলেন। ইতিহাস সাক্ষী যতদিন তিনি এই দুনিয়ায় ছিলেন ততদিন তিনি ও তাঁর আসহাব একদেহ একপ্রাণ হয়ে আল্লাহর দীনকে বিজয়ী করার জন্য মাত্র ১০ বছরের মধ্যে ১০৭টি ছোট বড় যুদ্ধ করেছেন। তারপর যখন আল্লাহর রসুল এই দুনিয়া থেকে চলে গেলেন তখন ঐ দায়িত্ব স্বভাবতই এসে পড়ল তাঁর গঠন করা জাতিটির ওপর। শুধু আরব দেশটাকে আল্লাহর আইনের শাসনের মধ্যে আনা হয়েছে; বাকি পৃথিবী মানুষের তৈরি আইনের অধীনে চলছে। রসুলাল্লাহর নিজ হাতে গড়া জাতিটি হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেছিলেন যে উম্মতে মোহাম্মদীর অস্তিত্বের অর্থই হলো তাদের নেতা বিশ্বনবীর সুন্নাহ অনুসরণ করা। তারা তাদের এই দায়িত্ব সম্বন্ধে এত সচেতন ছিলেন যে নেতার দুনিয়া থেকে চলে যাবার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি-ঘর, ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্ষেত-খামার, পরিবার পরিজন, এক কথায় পার্থিব সব কিছু কুরবান করে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পূর্ণ করতে অস্ত্র হাতে তাদের স্বদেশ আরব থেকে বের হয়ে পড়েছিলেন। সংগ্রাম ছেড়ে দেবার পর নবীর সুন্নাহর বিকল্প হিসাবে নেয়া হলো তাঁর ব্যক্তিগত অভ্যাস-অনভ্যাস, পছন্দ-অপছন্দ ইত্যাদি যে গুলোর সাথে তাঁর জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য, তাঁর উপর আল্লাহর দেয়া দায়িত্বের কোনো সম্বন্ধই নেই; যেগুলো নেহায়েৎ ব্যক্তিগত ব্যাপার। নিষ্ঠুর পরিহাস এই যে, জিহাদ ত্যাগকারীদের কাছে মানব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম বিপ্লবীর সুন্নাহ হয়ে দাঁড়াল, তাঁর বিপ্লব নয়, তাঁর মেসওয়াক করা, খাবার আগে জিহ্বায় একটু নিমক দেওয়া, খাবার পর একটু মিষ্টি খাওয়া, ডান পাশে শোয়ার মতো ছোট-খাট অসংখ্য তুচ্ছ ব্যাপার। মানুষের ইতিহাসে কোনো জাতি তার নেতার এমন অপমানকর অবমূল্যায়ন করেছে বলে আমাদের জানা নেই।

ঘৃণ্য পরাজয় ও দাসত্বের সূচনা

আল্লাহ সুরা তওবায় ৩৮ এবং ৩৯ নং আয়াতে এই জাতিকে জিহাদ ছেড়ে দেবার পরিণতি সম্বন্ধে এই বলে সাবধান করে দিয়েছেন- “যদি তোমরা সামরিক অভিযানে বের না হও তবে তিনি তোমাদের কঠিন শাস্তি দেবেন এবং তোমাদের স্থলে অন্য কোনো জাতিকে প্রতিষ্ঠা করবেন” অর্থাৎ তোমাদের অন্য কোনো জাতির দাস, গোলাম বানিয়ে দেবেন। এই কঠোর সতর্কবাণী সত্ত্বেও আকিদা অর্থাৎ জাতির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্বন্ধে সঠিক সম্যক ধারণার বিকৃতিতে এই জাতি জিহাদ ছেড়ে দিয়ে নফসের সাথে নিরাপদ জিহাদ শুরু করল। আল্লাহও তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কিছুদিন পরই ইউরোপের খ্রিষ্টান জাতিগুলিকে দিয়ে ঐ জাতিকে সামরিকভাবে পরাজিত ও পর্যুদস্ত করে শাসনভার ও কর্তৃত্ব তাদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে খ্রিষ্টানদের হাতে তুলে দিলেন। ঐ জাতিকে দাসে পরিণত করার পর খ্রিষ্টান প্রভুরা তাদের উপরে আল্লাহর বিধানের পরিবর্তে নিজেদের তৈরি করা জীবনব্যবস্থা চাপিয়ে দিল। কোনো জাতি যদি আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থার বদলে অন্য কোনো জীবনব্যবস্থা মেনে নেয়, তখন তারা আল্লাহর দৃষ্টিতে আর মুমিন মুসলিম থাকে না, কাফের ও মোশরেক হয়ে যায়।

শিক্ষাব্যবস্থায় ঔপনিবেশিক ষড়যন্ত্র

ভবিষ্যতে এই জাতিটি যেন আর মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সেজন্য ব্রিটিশ শাসকরা কিছু সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করল। তার একটি হচ্ছে-তারা তাদের অধিকৃত মুসলিম দেশগুলিতে পাশাপাশি দু’টি শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করল। একটি সাধারণ শিক্ষা এবং অপরটি মাদ্রাসা শিক্ষা। বৃহৎ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে শাসকরা তাদের পছন্দমতো একটি ইসলাম শিক্ষা দেবার জন্য তাদের অধিকৃত সমস্ত মুসলিম দুনিয়ায় মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করল। এই মাদ্রাসায় ‘ইসলাম’ শিক্ষা দেবার জন্য খ্রিষ্টান পণ্ডিতরা বহু গবেষণা করে একটি নতুন ‘ইসলাম’ দাঁড় করালেন, যে ‘ইসলামের’ বাহ্যিক দৃশ্য ইসলামের মতোই কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেটার আকিদা এবং চলার পথ আল্লাহর রসুলের ইসলামের ঠিক বিপরীত। এই সিলেবাসে নামাজ, রোযা, বিয়ে-শাদী, বিবি-তালাক, দাড়ি-টুপি, পাজামা, পাগড়ী, মেসওয়াক, কুলুখ, ওজু গোসল, হায়েয-নেফাস ইত্যাদি হাজার রকমের বিষয়গুলিকে ইসলামের অতি জরুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে উপরে স্থান দেয়া হলো। পক্ষান্তরে তওহীদকে ব্যক্তিগত বিষয়ে পরিণত করা হলো এবং তওহীদের ঠিক পরেই যে সত্যদীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের স্থান সেই সংগ্রামকে অতি অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে পরিণত করে প্রায় বাদ দেওয়া হলো। এই শিক্ষাব্যবস্থায় অংক, ভূগোল, বিজ্ঞান, অর্থনীতি, প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষা ইত্যাদির কোনো কিছুই রাখা হলো না, যেন মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে এসে আলেমদের রুজি-রোজগার করে খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য এই দীন, ধর্ম বিক্রি করে রোজগার করা ছাড়া আর কোনো পথ না থাকে এবং যেন তাদের ওয়াজ নসিহতের মাধ্যমে বিকৃত ইসলামটা এই জনগোষ্ঠীর মন-মগজে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়;
অপরদিকে ধর্মনিরপেক্ষ সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থাটি তারা চালু করল স্কুল কলেজের মাধ্যমে। এ ভাগটা তারা করল তাদের এই বিরাট এলাকা শাসন করতে যে সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের কেরাণীর কাজ করার উপযুক্ত জনশক্তি তৈরি করতে। তারা এতে ইংরেজি ভাষা, সূদভিত্তিক অংক, বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক, ভূগোল, প্রযুক্তিবিদ্যা অর্থাৎ পার্থিব জীবনে যা যা প্রয়োজন হয় তা শেখানোর বন্দোবস্ত রাখল; সেখানে আল্লাহ, রসুল, আখেরাত ও দীন সম্বন্ধে প্রায় কিছুই রাখা হলো না। তাদেরকে এমনভাবে শিক্ষা দেওয়া হলো যাতে তাদের মন শাসকদের প্রতি হীনম্মন্যতায় আপ্লুত থাকে এবং পাশাপাশি তাদের মন-মগজে আল্লাহ, রসুল, দীন সম্বন্ধে অপরিসীম অজ্ঞতাপ্রসূত বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়। আজ আমাদের রাজনীতিক, আর্থ-সামাজিক জীবন পরিচালিত হচ্ছে পাশ্চাত্যের খ্রিষ্টানদের তৈরি করা নানা রকম তন্ত্র-মন্ত্র দিয়ে আর ব্যক্তিগত ধর্মীয় জীবন পরিচালিত হচ্ছে খ্রিষ্টান পণ্ডিতদের তৈরি করা বিকৃত ‘ইসলাম’ দিয়ে, আল্লাহ রসুলের ইসলাম দিয়ে নয়। ভাবতে অবাক লাগে এর পরও আমরা নিজেদের মুমিন, মুসলিম ও উম্মতে মোহাম্মদী বলে বিশ্বাস করি এবং পরকালে আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাতের আশা করি।

মুসলিম বলে পরিচিত জনসংখ্যার বর্তমান অবস্থা

আল্লাহ কোর’আনের বিভিন্ন স্থানে এবং সুরা নুরের ৫৫ নং আয়াতে মুমিনদের এই পৃথিবীর আধিপত্য ও কর্তৃত্বের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে যে যতদিন ঐ জাতি, জাতি হিসাবে জিহাদ চালিয়ে গেছে ততদিন আল্লাহ তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন- অর্ধেক পৃথিবীতে তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং ঐ জাতি যদি তখন জিহাদ ত্যাগ না করত তবে অবশ্যই আল্লাহ বাকি অর্ধেকও তাদের হাতে তুলে দিতেন। আল্লাহর ঐ প্রতিশ্র“তির মধ্য থেকে আরেকটি সত্য ফুটে ওঠে- সেটা হলো এই যে, আমরা নিজেদের মুমিন অর্থাৎ আল্লাহ ও তাঁর রসুলে বিশ্বাসী বলে দাবি করি। তাহলে আল্লাহর প্রতিশ্র“তি অনুযায়ী পৃথিবীর কর্তৃত্ব, আধিপত্য আমাদের হাতে নেই কেন? যে পৃথিবীর ওপর আধিপত্যের অঙ্গীকার আল্লাহ করেছেন, সেই পৃথিবীতে আজ আমাদের অবস্থা কী? আমাদের অবস্থা হচ্ছে: (ক) পৃথিবীতে যে কয়টি প্রধান জাতি আছে তার মধ্যে আমরা নিকৃষ্টতম। (খ) আমাদের ছাড়া আর যে কয়টি জাতি আছে তারা সকলেই পৃথিবীর সর্বত্রই আমাদের অপমানিত, অপদস্থ, করছে, আমাদের আক্রমণ করে হত্যা করছে, আমাদের ধন-সম্পদ লুটে নিচ্ছে, আমাদের বাড়ি-ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে  দিচ্ছে, আমাদের মা, মেয়ে, বোনদের ওপর পাশবিক অত্যাচার করে সতিত্ব নষ্ট করছে। অভিশপ্ত অর্থাৎ মালাঊন হবার সব লক্ষণ আজ এই জাতির গায়ে লেখা। মুমিন, মুসলিম ও উম্মতে মোহাম্মদী বলে পরিচিত এই জাতিটি আকিদার বিকৃতিতে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের দেখানো দিক নির্দেশনা, হেদায়াতের ঠিক বিপরীত দিকে চলার ফলে আল্লাহর চোখে এটা আর মুমিনও নেই, মুসলিমও নেই, উম্মতে মোহাম্মদীও নেই।

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...