এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী
একদিন মহানবী (দ:) বোললেন, ইহুদী জাতি একাত্তর ভাগে বিভক্ত হোয়েছিল যার একটি ভাগ জান্নাতী আর সত্তরভাগ জাহান্নামী। খ্রিস্টান জাতি বাহাত্তর ভাগে বিভক্ত হোয়েছিল যার মধ্যে একাত্তর ভাগই জাহান্নামী একভাগ জান্নাতি। তাঁর শপথ যার হাতে মোহাম্মদদের (দ:) প্রাণ, আমার উম্মাহ তেহাত্তর ভাগে বিভক্ত হবে যার মধ্যে একটি মাত্র ভাগ জান্নাতে যাবে, বাকী বাহাত্তর ভাগই জাহান্নামে যাবে।” রসুলাল্লাহকে জিজ্ঞেস করা হোল, “তারা (জান্নাতী) কারা?” তিনি জবাব দিলেন, “যারা আমাদের (অর্থাৎ আমি এবং আমার সাহাবীগণ) পথে আছে”। [আবু হোরায়রা (রা.) থেকে আবু দাউদ, আউফ বিন মালেক (রা:) থেকে ইবনে মাজাহ]
আজ দুনিয়াময় মোসলেম বোলে পরিচিত যে জাতিটি আছে তারা বহু ভাগে, ফেরকায় বিভক্ত। প্রত্যেক ভাগ অর্থাৎ প্রত্যেক ফেরকা বা মাজহাব বিশ্বাস করে যে, তারাই শুধু প্রকৃত মোসলমান, তাদের মাজহাব বা ফেরকাই ঠিক বাকি সব ফেরকা পথভ্রষ্ট। এই বিভ্রান্তিকর পরিবেশ থেকে সত্যিকার জান্নাতি ফেরকাকে চিনে নেওয়ার উপায় কি? এ প্রশ্নেরই জবাব আমরা ধারাবাহিকভাবে দেওয়ার চেষ্টা কোরছি। জান্নাতী ফেরকার অন্যতম কর্ত্তব্য হবে মোসলেম বোলে পরিচিত এই জনসংখ্যাকে প্রশ্ন করা যে, আল্লাহর রসুলের (দ:) সঙ্গে সর্বদা থেকে, তার সঙ্গে প্রতিটি সংগ্রামে সঙ্গী হোয়ে সরাসরি তার কাছে থেকে যারা ইসলাম কি, তা শিখেছিলেন, তারাই ঠিক ইসলাম শিখেছিলেন, না আজকের মওলানা, মওলবী, পীর-মাশায়েখরা যে ইসলাম এই জাতিকে শেখান এই ইসলাম ঠিক? এ ব্যাপারে দু’একটি হাদীস উল্লেখ করা অসঙ্গত হবে না। রসুলাল্লাহ (দ:) বোলেছেন- আমার সঙ্গীরা উজ্জ্বল তারকার মত- তাদের যে কাউকে মানুষ অনুসরণ কোরতে পারে (হাদীস ওমর বিন খাত্তাব (রা:) থেকে রাযিন মেশকাত)। এর অর্থ হোচ্ছে মহানবী স্বয়ং তার সঙ্গীদের ইসলাম কি, এর উদ্দেশ্য কি, ঐ উদ্দেশ্য অর্জনের প্রক্রিয়া কি সবই শিক্ষা দিয়েছেন সুতরাং প্রকৃত ইসলাম কি তা ঐ আসহাবদের চেয়ে বেশী কেউ জানতে বুঝতে পারতে পারে না, তা অসম্ভব। কারণ তারা আল্লাহর রসূলের সঙ্গে সর্বদা থেকে, তার সঙ্গে অবিরত সংগ্রাম কোরে তার প্রতি সুখ-দুঃখে অংশীদার হোয়ে যে প্রকৃত শিক্ষা তার কাছ থেকে লাভ কোরেছেন সে শিক্ষা পরবর্ত্তীতে কারো পক্ষে সম্ভব নয়। আর যে হাদীসে বিশ্বনবী (দ:) বোললেন, ‘আমার উম্মাহ ভবিষ্যতে তেহাত্তর ভাগে (ফেরকায়) বিভক্ত হোয়ে যাবে। এবং ঐ তেহাত্তর ফেরকার মধ্যে একটি ফেরকা জান্নাতী (অর্থাৎ সঠিক ইসলামে থাকবে) আর বাকী বাহাত্তর ফেরকাই আগুনে নিক্ষিপ্ত (না’রি) হবে। ঐ একমাত্র জান্নাতী ফেরকা কোনটা এই প্রশ্নের জবাবে আল্লাহর রসুল (দ:) বোললেন, যার উপর আমি ও আমার সাহাবীরা আছি (হাদীস- আবদুল্লাহ বিন আমর (রা:) থেকে- তিরমিযি, মেশকাত)। এ ব্যাপারে অগণিত হাদীস উল্লেখ করা যায় যাতে সংশয়ের কোন অবকাশ থাকে না যে মহানবী (দ:) জানতেন যে তিনি তাঁর আসহাবদের প্রকৃত দীন শিক্ষা দিতে সক্ষম হোয়েছিলেন। এখন একটা অতি প্রয়োজনীয় প্রশ্ন হোচ্ছে এই, যে কাজটা শেষ নবীর (দ:) উম্মাহ তার ওফাতের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আরম্ভ কোরে দিলো অর্থাৎ অস্ত্র হাতে স্বদেশ থেকে বের হোয়ে পড়লো এর অর্থ কি? আবার বোলছি এই জীবন ব্যবস্থায় অর্থাৎ ইসলামের উদ্দেশ্য ও পদ্ধতির গুরুত্ব নির্দেশনায় এই ঘটনা একটি অতি প্রয়োজনীয় বিষয়। উম্মতে মোহাম্মদীর পতনের মূলে যে কয়েকটি প্রধান কারণ কাজ কোরেছে তার মধ্যে অন্যতম হোচ্ছে এই ঐতিহাসিক ঘটনার মূল্যায়নে পরবর্ত্তী কালের উম্মাহর ব্যর্থতা। তদানিন্তন পৃথিবীর বোধহয় সবচেয়ে পশ্চাদপদ, সবচেয়ে অশিক্ষিত, সবচেয়ে দরিদ্র এই জাতিটি হঠাৎ কোরে মরুভূমির গভীর অভ্যন্তর থেকে একযোগে বেরিয়ে এসে শক্তিশালী সভ্যজগতের মুখোমুখী হোয়ে দাঁড়ালো। এ কথা বুঝতে কোন অসুবিধা নেই যে, ঐ উম্মাহ নিশ্চয়ই ঐ কাজটাকে তাদের সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্ত্তব্য বোলেই বিবেচনা কোরেছিলেন। তা না হলে রসুলাল্লাহর (দ:) ওফাতের সঙ্গে সঙ্গে তারা একযোগে ঐ কাজ কোরতে সব কিছু ত্যাগ কোরে আরব থেকে বের হোয়ে পড়তেন না। বিশ্বনবীর (দ:) সাহচর্যে থেকে তার কাছ থেকে সরাসরি যারা এই জীবন ব্যবস্থার মর্মবাণী, উদ্দেশ্য, প্রক্রিয়া শিক্ষা কোরেছিলেন তারা কি বোঝেন নি কোন কর্ত্তব্য বড়, কোন কর্ত্তব্য ছোট? কোনটা আগে কোনটা পরে (Priority)? মহানবীর (দ:) আসহাব যদি তা না বুঝে থাকেন তবে আমরা চৌদ্দশ’ বছর পরে তা বোঝার কথা চিন্তাও কোরতে পারি না। তাহলে বিশ্বনবীর (দ:) উম্মাহর ঐ কাজের প্রকৃত অর্থ কি?
এই মহা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা অর্থাৎ উম্মতে মোহাম্মদীর আরব থেকে বের হোয়ে অন্যান্য জাতির সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হোয়ে যাওয়ার প্রকৃত অর্থ এই যে, রসুলাল্লাহর (দ:) কাছ থেকে সরাসরি ইসলাম শিক্ষা করার ফলে তারা সঠিকভাবে বুঝেছিলেন ইসলাম কি, এর উদ্দেশ্য কি, ঐ উদ্দেশ্য অর্জন করার প্রক্রিয়া কি, কোনটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, কোনটা কম প্রয়োজনীয়। তারা বুঝেছিলেন আল্লাহর প্রতি ইবলিসের চ্যালেঞ্জ হোচ্ছে সে মানুষকে প্ররোচনা দিয়ে দীন অর্থাৎ আল্লাহর দেয়া জীবন বিধানকে হয় বিকৃত না হয় অস্বীকার কোরিয়ে মানুষকে দিয়ে বিধান তৈরী কোরিয়ে মানুষকে অশান্তি, অবিচার, যুদ্ধ রক্তপাতের মধ্যে পতিত করাবে। আর সেই অন্যায়, অবিচার আর রক্তপাত থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহ যে জীবন ব্যবস্থা তার নবীর (দ:) মাধ্যমে পাঠালেন সেটাকে সর্বাত্মক সংগ্রামের মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করা হোচ্ছে তাদের সর্বপ্রধান ও সর্বপ্রথম কর্ত্তব্য। ঐ শিক্ষাই তাদের নেতা, স্রষ্টার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, তার শেষ ও বিশ্বনবী (দ:) তাদের দিয়ে গিয়েছিলেন, নিজে কোরে তাদের হাতে কলমে শিখিয়ে গিয়েছিলেন। অর্থাৎ মানব জাতিকে অশান্তি, অবিচার, অন্যায়, রক্তপাত, যুদ্ধ থেকে বাঁচাবার জন্য পৃথিবীতে শান্তি, ইসলাম, প্রতিষ্ঠার জন্য, যে জন্য বিশ্বনবীকে (দ:) আল্লাহ পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন, ঐ জাতি নিজেদের সব কিছু কোরবান কোরে সেই কাজ কোরতে আরব থেকে বাইরে বেরিয়ে পড়েছিলেন।
আল্লাহর রসুলের (দ:) শেখানো ইসলামের বিপরীতমুখী বর্ত্তমানের বিকৃত ইসলামের ধারক-বাহকরাও অস্বীকার করতে পারবে না যে এই দীনে সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার ও সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান রাখা আছে শহীদদের জন্য। আল্লাহর দেয়া সহজ-সরল পথ, সেরাতুল মোস্তাকীমকে, দীনুল কাইয়্যেমাকে যারা এক কঠিন দুর্বোধ্য দীনে পরিণত কোরে বাহাত্তর ফেরকায় বিভক্ত কোরে এর শক্তি নিঃশেষ কোরে দিয়েছেন, আর যারা বিশ্বনবী (দ:) যে উম্মাহর হাতে তলোয়ার ধরিয়ে দিয়ে তাকে ঘর থেকে বের কোরে পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন, সেই উম্মাহর হাত থেকে তলোয়ার ছিনিয়ে নিয়ে, তার হাতে তসবিহ ধরিয়ে দিয়ে তাকে পেছনে টেনে খানকায়, হুজরায় বসিয়ে দিয়ে তার গতি রুদ্ধ কোরে স্থবির, অনঢ় কোরে দিয়েছেন, তাদের কাজের সম্মিলিত ফল এই হোয়েছে যে এই উম্মাহর চরিত্রের যে প্রধান বৈশিষ্ট্য, অপরাজেয়, দুর্দ্ধর্ষ যোদ্ধা তা লুপ্ত হোয়ে সর্বপ্রধান বৈশিষ্ট্য হোয়েছে পলায়নপর কাপুরুষতা। প্রতিটি অন্যায়, প্রতি অবিচারের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধংদেহী মনোভাব এই উম্মাহর চরিত্রে মহানবী (দ:) সৃষ্টি কোরেছিলেন তা পর্যবসিত হোয়েছে সমস্ত অন্যায়, সমস্ত অবিচার থেকে অতি সযত্নে এড়িয়ে গা বাঁচিয়ে চলায়, অন্যায়কে গ্রহণ করায়, ঘৃণ্য কাপুরুষতায়। জান্নাতী ফেরকার প্রধান কর্ত্তব্য হবে এই উম্মাহর হারিয়ে যাওয়া সেই সংগ্রামী, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন চরিত্রকে আবার জাতির জীবনে ফিরিয়ে আনা।
রসুলাল্লাহ (দ:) বোলেছেন- বনি ইসরাইল বাহাত্তর ফেরকায় বিভক্ত হোয়ে গিয়েছিলো, আমার উম্মাহ তিয়াত্তর ফেরকায় বিভক্ত হবে এবং মাত্র একটি ফেরকা (যেটা জান্নাতী) বাদে সবগুলি ফেরকাই আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে। অতি স্বাভাবিক কথা। কারণ যে ঐক্য ছাড়া পৃথিবীতে কোন কাজই করা সম্ভব নয়, কাজেই যে ঐক্যকে অটুট রাখার জন্য আল্লাহ সরাসরি হুকুম কোরলেন-“আমার দেওয়া দীন সকলে একত্রে ধোরে রাখো এবং নিজেরা বিচ্ছিন্ন হোয়ো না (সূরা এমরান ১০৩)” যে ঐক্যকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য মহানবী (দ:) বোললেন, “কোর’আনের কোন আয়াতের অর্থ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক কুফর (হাদীস আব্দাল্লাহ বিন ওমর (রা:) থেকে-মুসলিম, মেশকাত)” যে ঐক্য ও শৃঙ্খলা সুদৃঢ় করার জন্য বোললেন- “কান জীবনে ন্যায়-শান্তি আনা এবং তার জীবিত অবস্থায় ও তাঁর ওফাতের পরে তাঁর সঙ্গীদেরও (আসহাব) জীবন ঐ একই কাজে ব্যয় হোয়েছে। অর্থাৎ নেতা ও তার জাতির সম্পূর্ণ জীবন কেটেছে মানব জাতির কল্যাণের জন্য। যে কল্যাণের একটিমাত্র পথ-মানবের জাতীয় ও ব্যক্তিগত জীবনে আল্লাহর দেওয়া জীবন বিধান প্রতিষ্ঠা, এক কথায় আল্লাহকে দেওয়া ইবলিসের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় আল্লাহকে জয়ী কোরে সমস্ত মানব জাতিকে অন্যায়-অবিচার-অশান্তি-যুদ্ধ ও রক্তপাত থেকে উদ্ধার কোরে পরিপূর্ণ শান্তি, ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা। যে বা যারা এই সংগ্রাম কোরবে শুধু তারাই রসুলাল্লাহর (দ:) সুন্নাহ পালনকারী, অর্থাৎ যার উপর আল্লাহর রসুল (দ:) ও তার আসহাব (রা:) ছিলেন। ইতিহাসের দিকে লক্ষ্য কোরলে দেখা যাবে বিশ্বনবীর (দ:) ঐ সঙ্গীরা (আসহাব) তাঁর ওফাতের পর তাদের নেতার উপর আল্লাহর অর্পিত কাজ একাগ্রচিত্তে চালিয়ে গেলেন, পার্থিব সমস্ত কিছু উৎসর্গ কোরে চালিয়ে গেলেন। কারণ তাদের কাছে ঐ কাজ ছিলো বিশ্বনবীর (দ:) সুন্নাহ। ইতিহাসের দিকে লক্ষ্য কোরলে আরও দেখা যায় যে, বিশ্বনবীর (দ:) সংসর্গ যারা লাভ কোরেছিলেন; সরাসরি তাঁর কাছ থেকে এই দীন শিক্ষা কোরেছিলেন; এই দীনের উদ্দেশ্য এবং সেই উদ্দেশ্য অর্জনের প্রক্রিয়া শিক্ষা কোরেছিলেন তারা তাঁর (দ:) ওফাতের পর ৬০/৭০ বছর পর্য্যন্ত বেঁচেছিলেন এবং ঐ ৬০/৭০ বছর পর বিশ্বনবীর (দ:) সাক্ষাত-সঙ্গীরা (রা:) শেষ হোয়ে যাবার পরই পৃথিবীতে এই দীন প্রতিষ্ঠার সশস্ত্র সংগ্রাম বন্ধ হোয়ে গিয়েছিলো। এই সংগ্রাম যেই মুহূর্ত্তে বন্ধ হলো জাতি হিসাবে ত্যাগ করা হলো সেই মুহূর্ত্ত থেকে জাতি হিসাবে প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী শেষ হোয়ে গেলো। সেই জন্য মহানবী (দ:) তাঁর সুন্নাহ বোলতে শুধু তাঁর নিজের সুন্নাহ বোললেন না। বোললেন- “আমি ও আমার সঙ্গীরা যার উপর আছি” এবং অন্য সময় এও বোললেন যে “আমার উম্মাহর আয়ু ৬০/৭০ বছর।”
এই সংগ্রাম-জেহাদ ত্যাগ কোরে অর্থাৎ আল্লাহর রসূলের (দ:) প্রকৃত সুন্নাহ ত্যাগ কোরে এই জাতি যখন শান-শওকতের সঙ্গে পৃথিবীর অন্যান্য রাজতন্ত্রের মত রাজত্ব কোরতে শুরু করলো তখন এক সমস্যা দেখা দিলো। সেটা হলো এই জাতি তার নেতার সুন্নাহ পালন কোরবে কেমন কোরে? প্রকৃত সুন্নাত ত্যাগ করা হোয়েছে অথচ সুন্নাহ ছাড়া চোলবেও না। কারণ আল্লাহর রসুল বোলেছেন, “তার সুন্নাহ ত্যাগ করার অর্থই উম্মতে মোহাম্মদী থেকে বহিষ্কার হওয়া।” এই সমস্যা থেকে জাতিকে উদ্ধার কোরলেন সেই অতি বিশ্লেষণকারী পণ্ডিত শ্রেণী, ফকীহ-মুফাসসির ইত্যাদি। সেটা হলো আসল সুন্নাহ যখন বর্জনই করা হোয়েছে তখন নকলটাই করা যাক। তখন সুন্নাহ হিসাবে নেয়া আরম্ভ হলো বিশ্বনবীর (দ:) ব্যক্তিগত ব্যাপারগুলি যে গুলির সাথে তাঁর জীবনের মুখ্য ও চূড়ান্ত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের কোন সম্পর্ক নেই। তাঁর খাওয়া-শোয়া-ওঠা-বসা ইত্যাদি নেহায়েত ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপার। তাঁর (দ:) সুন্নাহ বোলতে তিনি কখনই এগুলি বোঝান নি, বোঝালেও ওগুলো পালন না করার জন্য তার উম্মাহ থেকে বহিষ্কার অবশ্যই বোঝান নি। কারণ যে কাজের জন্য তাঁকে পৃথিবীতে পাঠানো হোয়েছিলো অর্থাৎ ‘সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া যে পর্য্যন্ত না সমস্ত পৃথিবীর মানুষ আল্লাহ ছাড়া কারো বিধান মানিনা এবং মোহাম্মদ (দ:) আল্লাহর প্রেরিত, একথা বিশ্বাস না করে- সালাত কায়েম না করে, যাকাত না দেয় (আব্দাল্লাহ ইবনে ওমর (রা:) থেকে বোখারী)। ঐ কাজের সাথে ঐ সংগ্রামের সাথে তাঁর ব্যক্তিগত অভ্যাস-পছন্দ-অপছন্দের কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু ঐ সমাধানই গ্রহণ করা হলো এবং আজ পর্য্যন্ত এ হাস্যকর সমাধানই এই জাতি অতি নিষ্ঠার সাথে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পালন করার চেষ্টা কোরছে। (চোলবে…)