হে নবী আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্যে সুসংবাদ দানকারী এবং ভয় প্রদর্শনকারী হিসেবে পাঠিয়েছি (সুরা সাবা-২৮)।
রসুলাল্লাহ তাঁর সাহাবাগণকে নিয়ে পবিত্র কাবাঘর তাওয়াফ ও মেরামত করার বাসনা ছিলো। ৬ষ্ঠ হেজরীর শাওয়াল মাসে রসুলাল্লাহ স্বপ্নে দেখলেন। সাহাবায়কেরামকে নিয়ে তিনি কাবাঘরে প্রবেশ কোরছেন। স্বপ্ন দ্বারা এই বাসনা আরও তীব্র হোয়ে উঠলে, তিনি কাবাঘর মেরামতের সংকল্প কোরে যেলক্বাদ মাসে মদিনা থেকে ১৪০০ সাহাবা ও কোরবানির পশু নিয়ে মক্কা অভিমুখে রওয়ানা কোরলেন এবং এহরাম বাঁধলেন।
যুল হুলায়ফা নামক স্থানে এসে তিনি বনু খোজায়ার এক ব্যক্তিকে সতর্কতা হিসেবে গুপ্তচর প্রেরণ কোরলেন। তিনি আসফান নামক স্থানে এসে নবীকে খবর দিলেন যে, কোরায়েশগণ আপনার আগমন সংবাদ পেয়ে মস্ত এক বাহিনী মোকাবেলার জন্যে সমবেত কোরেছে। তারা আপনাকে মক্কায় প্রবেশ কোরতে দেবে না, তিনি সাহাবাগণের সাথে পরামর্শ কোরলে আবুবকর সিদ্দিক (রা:) বোললেন, ‘আমরা ওমরার নিয়ত কোরে এসেছি, যুদ্ধের জন্য আসিনি, কেউ যদি আমাদের বায়তুল্লাহর মাঝে প্রতিবন্ধক হোয়ে দাঁড়ায় তবে বাধ্য হোয়েই তার সাথে লড়াই করা উচিত।’ এভাবে উভয় পক্ষের মধ্যে বারকয়েক দূত বিনিময় ও কথা কাটাকাটি হওয়ার পর রসুলাল্লাহ (সা:) ওসমান (রা:) কে চূড়ান্ত দূত হিসেবে মক্কায় প্রেরণ কোরলেন। মক্কায় ওসমান (রা:) এর সাথে প্রথম সাক্ষাত ঘটে আবান এবনে সাঈদের। আবান সঙ্গে সঙ্গে তাকে তার জিম্মায় নিলো এবং সাথে কোরে আবু সুফিয়ান সহ অন্যান্য কোরায়েশ সর্দারের নিকট নিয়ে গেলো। কোরায়েশরা ওসমানের (রা:) বক্তব্য শুনে তাকে আটকে রাখলো, এদিকে ওসমান (রা:) ফিরে আসতে দেরী হওয়ায় মোসলেমদের মধ্যে এই খবর রটে গেলো যে, মক্কাবাসীরা ওসমানকে (রা:) শহীদ কোরে দিয়েছে। এই খবর শুনেই রসুলাল্লাহ বোললেন, ওসমান হত্যার প্রতিশোধ না নিয়ে আমরা এখান থেকে একটুও নড়বো না। তিনি তখনই একটি গাছের নিচে বোসে পড়লেন এবং সমস্ত সাহাবা থেকে প্রাণ বিসর্জন দেওয়ার বায়াত গ্রহণ কোরলেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পর ওসমান (রা:) ফিরে এলেন তিনিও অনুরূপ বায়াত নিলেন, এটাই বায়াতে রেদওয়ান নামে খ্যাত। আল্লাহ বলেন, মো’মেনরা যখন বৃক্ষতলে আপনার নিকট বায়াত গ্রহণ কোরল, তখন আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হোলেন (সূরা ফাতাহ- ১৮)। যারা বায়াত গ্রহণ করে তারাতো আল্লাহরই বায়াত গ্রহণ করে। আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর, সুতরাং যে তা ভঙ্গ করে তার পরিণাম তারই, এবং যে আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার পূর্ণ করে তিনি মহা পুরস্কার দেন (সুরা ফাতাহ- ১০)।
মক্কার কোরায়েশরা অনেক বুদ্ধি পরামর্শ কোরে বনু সাকীফ গোত্রের সর্দার উরওয়া এবনে মাসউদকে সমঝোতার উদ্দেশ্যে রসুলাল্লাহর নিকট প্রেরণ কোরলেন, উরওয়া এসে রসুলাল্লাহকে সাহাবাদের সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য কোরলে আবু বকর (রা:) তার দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেন, উরওয়া রসুলাল্লাহর সাথে কথা বলার সময় তার হাত বিস্তার কোরে তাঁর দাড়ির কাছে নিয়ে যেতো এবং দাড়ি ধোরত। মুগীরা এবনে শোবা (রা:) তাঁর এ আচরণ বরদাশত কোরতে না পেরে তরবারির হাতল দিয়ে তার হাতে আঘাত কোরে রসুলাল্লাহর সাথে আদবের সঙ্গে কথা বোলতে বোললেন। শেষে উরওয়া চুপ হোয়ে গেলে রসুলাল্লাহ তাকে তাঁর মক্কা আগমনের কারণ বুঝিয়ে বোললে সে কোরায়েশদের নিকট ফিরে গেলো। এবং রসুলাল্লাহ সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ কোরল।
এরপর কোরায়েশরা সুহায়ল এবনে আমরকে তাদের কিছু শর্তাবলী দিয়ে সর্বময় প্রতিনিধিরূপে প্রেরণ কোরল। রসুলাল্লাহ সুহায়লকে দেখে বোললেন, ব্যাপার এবার সহজ হোয়ে গেলো। সুহায়ল এসে সন্ধির শর্ত উপস্থাপন কোরলে রসুলাল্লাহ তা মেনে নিলেন এবং আলী (রা:) কে ডেকে লেখার নির্দেশ দিলেন। আলী (রা:) সন্ধির শীর্ষে ‘বিসমিল্লাহির রহমানের রহিম’ লিখলেন। কিন্তু সুহায়ল বোলল, আমরা রহমানকে চিনি না। আমাদের রীতি অনুসারে ‘বিসমেকা আল্লাহুম্মা’ লিখ। রসুলাল্লাহর নির্দেশে তাই লেখা হোল। এরপর আলী (রা:) মুহাম্মাদুর রসুলাল্লাহ লিখলে সুহায়ল আবারও আপত্তি কোরে বোলল, আমরা যদি তাঁকে আল্লাহর রসুলই মানতাম তাহোলে ব্যাপারটা এ পর্যন্ত গড়াতো না। তুমি শুধু মুহাম্মাদ এবনে আবদুল্লাহই লিখ। রসুলাল্লাহ বোললেন, “তোমরা মান বা না মান আমি আল্লাহর রসুল।” তারপর আলী (রা:) কে বোললেন, “সুহায়লের ইচ্ছানুযায়ী শব্দটি কেটে দাও।” আলী (রা:) সবিনয়ে বোললেন, ‘এই শব্দটি কেটে দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’ অতঃপর রসুলাল্লাহ কলম নিয়ে নিজ হস্ত মোবারক দিয়ে ঐ শব্দটি কেটে দিলেন।
শর্তসমূহ
(১) মোসলেমরা এ বছর ওমরা না কোরে ফিরে যাবে, আগামী বছর এসে ওমরা কোরবে। মক্কায় প্রবেশকালে কোষবদ্ধ তরবারী ছাড়া আর কোন অস্ত্র সঙ্গে রাখতে পারবে না।
(২) সন্ধির সময়কাল হবে দশ বছর। এ সময়ের মধ্যে কোন পক্ষ অপর পক্ষের জান ও মালের উপর আদৌ হস্তক্ষেপ কোরবে না।
(৩) আরবের প্রতিটি গোত্র ও সম্প্রদায় যে কোন পক্ষের সাথে চুক্তিবদ্ধ হোতে পারবে, ঐ চুক্তি গোত্র ও সম্প্রদায়ের উপরও এ সন্ধির শর্তসমূহ একই ভাবে প্রযোজ্য হবে, উভয় পক্ষেরই অন্যান্য গোত্রকে নিজেদের দলভুক্ত করার এখতিয়ার থাকবে।
(৪) যদি কোরায়েশদের মধ্য থেকে কোন ব্যক্তি তার অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া মোসলেমদের নিকট চোলে যায়, তবে তাকে কোরায়েশদের নিকট ফেরত দিতে হবে। পক্ষান্তরে কোন মোসলেম কোরায়েশদের নিকট এলে তাকে ফেরত পাঠানো হবে না।
(৫) নিজেদের অন্তরে যা আছে তা অন্তরেই থাকবে, তার বহিঃপ্রকাশ করা চোলবে না।
(৬) যাদের ইচ্ছা তারা মুহাম্মদের সাথে চুক্তিবদ্ধ মৈত্রী বন্ধনে আবদ্ধ হোতে পারবে। এতে কোন পক্ষের হস্তক্ষেপ করা চোলবে না।
সন্ধিপত্র লেখা সমাপ্ত হোলে উভয় পক্ষ সেটিতে স্বাক্ষর কোরলেন, কয়েকজন সাক্ষী ও স্বাক্ষর কোরলেন।
সন্ধির সাক্ষীগণ
রসুলাল্লাহ যখন সন্ধিপত্র লেখানো থেকে নিষ্ক্রান্ত হোলেন, তখন তিনি কয়েকজন মোসলেম ও কয়েকজন মোশরেককে ও সন্ধির সাক্ষী বানিয়ে রাখলেন। তাঁরা হোলেন-
১ আবু বকর সিদ্দীক (রা:)
১ ওমর ইবনে খাত্তাব (রা:)
১ আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রা:)
১ আব্দুল্লাহ ইবনে সুহায়ল ইবনে আমর (রা:)
১ সাদ ইব্ন আবুওয়াক্কাস (রা:)
১ মোহাম্মদ ইবনে মাসলামা (রা:)
১ মুকারিয ইবনে হাফয (তিনি তখনও মোশরেক ছিলেন।)
১ আলী ইবনে আবু তালেব (রা:)
সন্ধিপত্রটি আলীই লিখেছিলেন।
সন্ধির কতিপয় শর্তের ব্যাপারে আবুবকর (রা:) ব্যতীত প্রায় সকল আসহাবগণ দুঃখে, ক্ষোভে, অভিমানে অত্যন্ত উত্তেজিত হোয়েছিলেন কিন্তু রসুলাল্লাহ বোললেন, “ধৈর্য ধর, অচিরেই আমরা বায়তুল্লাহ তাওয়াফ কোরব।” এ কথায় সবাই শান্ত হোলেন।
হুদায়বিয়ার সন্ধিকে পবিত্র কোর’আনে আল্লাহ তা’আলা ফাতহুম মুবীন- সুস্পষ্ট বিজয় বোলে অভিহিত কোরেছেন। হুদায়বিয়ার সন্ধির ফলশ্র“তিতে অতি অল্প সময়ের জন্য হলেও সারা দেশে কিঞ্চিত নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি হোল। মো’মেনগণ কোরায়েশ এবং অন্যান্য কাফেরদের অতর্কিত আক্রমণ থেকে আশংকামুক্ত হলেন। আল্লাহর রসুল এ নিরাপদ নিরুপদ্রব পরিবেশের পরিপূর্ণ সুযোগ গ্রহণ কোরলেন। তিনি দুনিয়াবাসীর কাছে ইসলামের বার্তা পৌঁছাতে মনস্থ কোরলেন। রসুলাল্লাহ সাহাবায়ে কেরামকে জামা’আত কোরে ভাষণ দিলেন। তিনি আল্লাহর হামদ ও সানা উত্তমরূপে পাঠ কোরে বোললেন-
হে মানুষ! আল্লাহ আমাকে সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমত এবং রসুল হিসাবে পাঠিয়েছেন। সাবধান! ঈসার (আ:) হাওয়ারীদের মতো মতবিরোধ কোর না। যাও আমার পক্ষ থেকে রেসালাতের হক আদায় করো।
অতঃপর তিনি রোমান সম্রাট সিজার ইরানের শাহান শাহ, মিসর অধিপতি এবং আরব নেতাদের কাছে পত্র প্রেরণ করেন। পত্রগুলিতে সীল মোহর লাগানোর জন্য তিনি রূপার আংটি তৈরি কোরলেন। নিচ থেকে উপরের দিকে ৩ লাইনে মোহাম্মদ রসুলাল্লাহ বাক্যটি আংটিতে খোদাই করা হোল। আল্লাহর রসুল আসহাবগণকে ব্যক্তিগত দূত কোরে এসব চিঠি প্রেরণ কোরলেন।
এই বাইয়াতে রেদোয়ান সম্পর্কে আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে বলেন, ‘মো’মেনরা যখন বৃক্ষতলে তোমার নিকট বায়াত গ্রহণ কোরল, তখন আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হোলেন। তাদের অন্তরে যা কিছু ছিলো তা তিনি অবগত ছিলেন। তাদের তিনি দান কোরলেন সাকিনা (ঝবষভ ঈড়হভরফবহপব) এবং তাদেরকে পুরস্কার দিলেন আসন্ন বিজয় ও বিপুল পরিমান যুদ্ধে লব্দ সম্পদ, যা তারা হস্তগত কোরবে, আল্লাহ পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। আল্লাহ তোমাদের প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন যুদ্ধে লব্দ বিপুল সম্পদের যার অধিকারী হবে তোমরা, তিনি তা তোমাদের জন্যে ত্বরান্বিত কোরবেন। তিনি তোমাদের হাতে মানুষের হাত নিবারণ কোরেছেন, যেন তা হয় মো’মেনদের জন্যে এক নিদর্শন। এবং আল্লাহ তোমাদের পরিচালিত করেন সরল পথে। আরও বহু সম্পদ রয়েছে যা এখনও তোমাদের অধিকারে আসে নি। তাতো আল্লাহর নিকট রক্ষিত আছে। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সুরা ফাতাহ. ১৮-২১)
এই সন্ধিকে ফাতহুম মুবীন কেন বলা হল?
তওহীদের আহ্বানের প্রথম দিন থেকে মক্কার কাফের মোশরেকরা মহানবীর প্রচণ্ড বিরোধিতা শুরু কোরল। তারা আল্লাহর রসুলকে প্রথমে আক্রমণ কোরল, তাঁকে মুরতাদ, গণক, পাগল, কবি, জীন ভুতে আছর কোরেছে ইত্যাদি অপবাদ দিতো। মহানবীর বিরুদ্ধে জঘন্য অপপ্রচার চালিয়েছিলো তথা অপপ্রচার কোরতে গিয়ে বোলত এই লোকের কথা শুনো না। কেউ তার কথা শুনলে যেন যাদুগ্রস্থ হোয়ে যাবে। এই লোক (রসুলাল্লাহ) আমাদের বাপদাদার ধর্মত্যাগ কোরেছে। আমাদের ধর্মকে ধ্বংস কোরে দিতে চায়। কেউ তার সংস্পর্শে গেলে সে ধর্মান্তরিত হোয়ে যাবে। ইত্যাকার নানা অপপ্রচার চালাতে থাকলো ফলে সাধারণ মানুষ মহানবীর সংস্পর্শে আসার সুযোগ পেল না। তিনি যে সত্য নবী, তিনি যে মানব জাতির কল্যাণের জন্য, মানবতার কল্যাণের জন্য, জান্নাতের সু সংবাদ নিয়ে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত মহামানব তা সাধারণ মানুষকে জানতে দেওয়া হতো না, এত অপপ্রচার, অপবাদ ইত্যাদি সত্ত্বেও মহান আল্লাহর করুণায় ২/৪ জন সাধারণ মানুষ মহানবীর কথা শুনে তাঁর প্রতি ঈমান আনলেও তাদের উপর নেমে আসতো ভয়াবহ নির্যাতন। সারাদিন মরুভূমির উত্তপ্ত বালুর উপর শুইয়ে রাখা, হাত পা বেঁধে চাবুক দিয়ে পিটুনী, উটের সঙ্গে বেঁধে উটকে দাবড়িয়ে দেওয়া ইত্যাদি নিত্য ঘটনা। এই সমস্ত কারণে মহানবীর অনুসারীর সংখ্যা অর্থাৎ উম্মাহর বিস্তার তেমন ঘোটতে পারেনি। হুদায়বিয়ার সন্ধির কারণে ঐ অবস্থা আর থাকলো না। যেহেতু কাফেররা চুক্তিবদ্ধ হোয়েছে যে ১০ বছর কোন সংঘাত সংঘর্ষ কোরবে না এবং মো’মেনদের চলাফেরায় কোন বিঘœ সৃষ্টি কোরবেনা কাজেই সাধারণ মানুষ ব্যাপক ভাবে মহানবী এবং তাঁর অনুসারীদের সঙ্গে মেশার সুযোগ পেলো। মহানবীর কথা শুনলো এবং তাঁকে জানলো। যেই ভালো ভাবে কথা শুনেছে তারই ভুল ভেঙ্গে গেছে। এবং আশ্চর্যান্বিত হোয়েছে যে এতদিন মক্কার ঐসব ধর্মব্যবসায়ী যারা ধর্মকে রুটি রুজির মাধ্যম বানিয়ে ধর্মকে কুক্ষিগত কোরে রেখেছে, ধর্মীয় উৎসব এবং ধর্মীয় উপাসনালয় (যেমন কাবা) কে তাদের বাপদাদার সম্পদের একচেটিয়া অধিকারবলে দখল কোরে রেখেছে, তারা যে এদ্দিন মোহাম্মদের বিরুদ্ধে যা রটনা কোরেছে তা তো সবই মিথ্যা। তখন তারা সত্য জানার পর সত্যের আলোয় নিজেকে আলোকিত করা শুরু কোরল, ফলে দেখা গেল হুদায়বিয়ার সন্ধির পর মাত্র কয়েক বছরের ব্যাবধানে মহানবীর অনুসারীর সংখ্যা কয়েক হাজার হোয়ে গেল। ফলে মহানবী হোয়ে গেলেন অপ্রতিরোধ্য শক্তি। আর যত দিন যাচ্ছিল মক্কার অতি অহংকারী কাবার পুরোহিত ধর্মব্যাবসায়ী আলেম এবং সমাজ নেতাদের পায়ের মাটি সরে যেতে লাগলো তাদের মিথ্যা প্রচারণা তাদের জন্যই বুমেরাং হোয়ে দাঁড়াল, তাদের পেছন থেকে জনতা সরে যেতে লাগলো। এই ভাবে আল্লাহ ও রসুলের বিজয় তরান্বিত হোল আর কাফের, মোশরেক, জালেমদের পরাজয় অনিবার্য হোয়ে গেলো। কাজেই মহান আল্লাহ এই চুক্তিকে সুস্পষ্ঠ বিজয় বা ফাতহুম মুবীন বোলে উল্লেখ করেন।
আজকের প্রেক্ষাপটেও যদি কোন সত্যনিষ্ঠ মহান ব্যাক্তি সত্য অনুধাবন করেন এবং মানবজাতির সামনে ঐ সত্যকে তুলে ধরেন তবে নিঃস্বন্দেহে বলা যায় বর্তমান সমাজের ধর্ম ব্যবসায়ী আলেম মোল্লা শ্রেণি এবং এই মিথ্যাচ্ছন্ন সমাজকে যারা নেতৃত্ব দেয় অর্থাৎ সুবিধাভোগীরা প্রচণ্ড বিরোধিতায় নেমে পড়বে। কিন্তু মানুষ যেদিন প্রকৃত সত্যকে জানতে পারবে সেদিন আর বিজয় ঠেকানো যাবে না।
বায়াত
বায়াত শব্দের অর্থ বিক্রয় করা। হুয়াদবিয়ার ঘটনার একটি পর্যায়ে রসুলের কাছে তাঁর উম্মাহ বায়াত গ্রহণ করে। দেখা যাক, এই বায়াতে তারা কি বিক্রয় করেন? এই বিষয়ে বোখারী শরীফে বেশ কয়েকটি বর্ণনা আছে। ইয়াযীদ ইবন আবু উবাইদ (র.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সালামা ইবন আকওয়া (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, হুদায়বিয়ার দিন আপনারা কিসের উপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর হাতে বায়াত করেছিলেন। তিনি বললেন, মৃত্যুর উপর। আরেকটি বর্ণনায় পাওয়া যায়, সাহাবীরা মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার উপর বায়াত গ্রহণ কোরেছিলেন। উল্লেখ্য যে, ঐ বায়াত রসুল গ্রহণ কোরেছিলেন তাঁর সমগ্র উম্মাহর নিকট থেকে, সুতরাং যারা সেদিন ঐখানে উপস্থিত ছিলেন না, তাদের উপরও এই বায়াত বর্তায়। পবিত্র কোর’আনে এই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত কোরে এবং “প্রতিজ্ঞাকারীরা আল্লাহর হাতে হাত রেখে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হোয়েছে” উল্লেখ কোরে আল্লাহ এই মৃত্যু পর্যন্ত লড়াই করার বায়াতকে কেয়ামত পর্যন্ত সকল উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য নির্ধারিত কোরে দিলেন। আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জীবন থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ, সংগ্রাম চালিয়ে যেতে প্রত্যেক উম্মতে মোহাম্মদী তাদের প্রভু আল্লাহর প্রতি এবং তাদের নেতা রসুলের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ। এই বায়াত শব্দটিকে আজ ধর্মজীবি পীর-গাউস-কুতুবেরা ব্যবহার কোরে থাকেন। মুরিদরা তাদের সকল সম্পদ ও জীবন আখেরাতের ওসিলা হবে ভেবে পীরের হাতে তুলে দিতে অঙ্গীকার করেন। বায়াতের এই যে বিকৃতি ঘটেছে মূলতঃ ভারসাম্যহীন সুফীদের দ্বারা যারা উম্মাহর চরিত্রে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের আকিদাকে ঘুরিয়ে তাদেরকে ঘরমুখী, অন্তর্মুখী, খানকামুখী কোরে দিয়েছেন। কাজেই মানুষ এখন বায়াত বোলতে কেবল বোঝে পাগড়ি বা গামছা প্রান্ত ধোরে পীরের হাতে বায়াত নেওয়া।