আতাহার হোসাইন:
২০০২ সালে গুজরাটের গোধরা রেল স্টেশনে একটি রেলগাড়িতে (সবরমতি এক্সপ্রেস) অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়কে সন্দেহ করে গুজরাটে সৃষ্ট একতরফা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রায় দুই হাজার মুসলমানকে নৃশংসভাবে হত্যা, গর্ভবতী মুসলিম নারীর পেট চিরে চোখের সামনে তাদের শিশু ভ্রুণ হত্যা, নির্মমভাবে অগ্নিদগ্ধ করাসহ দুই লাখ মানুষকে উদ্বাস্তু বানানোর ক্ষেত্রে যে মানুষটিকে প্রত্যক্ষভাবে দায়ী করা হয় তিনি হচ্ছেন গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ও বর্তমানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাওয়া বিজেপি প্রধান নরেন্দ্র দামোদারাস মোদী, যিনি ইদানীং আবার ‘মোদী ভাই’ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছেন। সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনে তার নেতৃত্বাধীন দল বিজেপি শতাধিক বছরের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল কংগ্রেসকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করে নিরঙ্কুশভাবে বিজয় অর্জন করেছে। ব্যক্তি জীবনে নরেন্দ্র মোদী কট্টর হিন্দুত্ববাদে বিশ্বাসী এবং ভারতের ধর্মীয় দল এরএসএস এর সদস্য। তরুণ বয়সেই তিনি এই দলটির অনুসারী হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত করেন। ধীরে ধীরে এই পরিশ্রমী ও কঠোর হৃদয়ের মানুষটির উত্থান ঘটতে থাকে। চার চার বার তিনি নির্বাচিত হয়ে গুজরাট প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। আদর্শগত দিক থেকে ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল, যার মধ্যে প্রভাব রয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আরএসএস), শিবসেনা, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ(ভিএইচপি) বা বজরং ইত্যাদি হিন্দু গোড়াপন্থী সংগঠনগুলোর।
লোকসভা নির্বাচনে মোদীর কৃতিত্ব এই যে, তিনি প্রবল হিন্দু জাতীয়তাবাদী ও কট্টর দৃষ্টিভঙ্গিকে কাজে লাগিয়ে জাতপাতে বিভক্ত, প্রবল অন্ধবিশ্বাসে আচ্ছন্ন জাতিটিকে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ করে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন। এর পেছনে অবশ্য ঐসব কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ও ভারতীয় ধনকুবেরদের নিয়ন্ত্রাণাধীন মিডিয়া গ্র“পগুলোর প্রচার-প্রচারণা কাজ করেছে, যারা মোদীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় গুজরাটে বিনিয়োগ করে নিজেরা সুবিধা লাভ করেছে এবং স্বাভাবিকভাবেই স্থানীয় অর্থনীতিতে উন্নয়ন ঘটিয়েছে। এদের মধ্যে ছিলেন টাটা গ্র“পের রতন টাটা, আম্বানী গ্র“পের মুকেশ আম্বানী, ধীরুভাই আম্বানীর ছোট্ট ছেলে অনিল, সিএসআই’র সভাপতি গোদরেজ কোম্পানির আদি গোদরেজ থেকে জিন্দাল, ইন্দো-ইউ.এস বিজনেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান রণ সামার্স, ইউ.কে-ইন্ডিয়া বিজনেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান প্যাট্রিক হিউইট। রয়েছেন টাটা গোষ্ঠীর সাইরাস মিস্ত্রি, মাহিন্দ্রা গ্র“পের আনন্দ মাহিন্দ্রা, মাদানি গ্র“পের চেয়ারম্যান গৌতম মাদানি, এসার গ্র“পের চেয়ারম্যান শশী রুইয়া, এল অ্যান্ড টি’র কে ভেঙ্কটরমণ প্রমুখ। নির্বাচনের আগে আম্বানি, সুনীল মিত্তালদের মত শিল্পপতিরা খোলাখুলিই বলে দিয়েছেন মোদীকেই তারা প্রধানমন্ত্রী পদে দেখতে চান, যিনি দেশকে একজন কর্পোরেট সিইও’র ন্যায় চালাতে পারবেন।
এখানে মোদীর সাম্প্রদায়িক চরিত্র সম্বন্ধে সজাগ ও সচেতন থাকা সত্ত্বেও ঐ ধনকুবেরগণ তাকে কেন সমর্থন করেছে সেটা অবাক বিষয় হলেও অবাস্তব কিছু ছিলো না। কারণ, ঐসব বস্তুবাদী ধনকুবের ব্যবসায়ীদের কাছে ব্যবসায়ীক স্বার্থই মুখ্য, কাকে বা কেমন চরিত্রের লোককে সমর্থন করা হচ্ছে তা তাদের কাছে বিবেচ্য বিষয় নয়। তাছাড়া মোদী যে সকল সুবিধার বিনিময়ে তাদের সমর্থন আদায় করেছে সেসবের কুফল আজ হোক কিংবা কাল হোক তা সাধারণ মানুষের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। তারা তখন এই পুঁজিপতিদের বিরোধিতায় রাস্তায় নামবে। তখন যাতে তাদেরকে নির্মম হাতে দমন করা যায় সে জন্য মোদীর মত লোককে যে দরকার হবে তা সহজেই বুঝে নিয়েছে ওইসব পুঁজিপতিরা। তাই গোড়াপন্থী ও বেনিয়া গোষ্ঠী উভয়পক্ষের স্বার্থ খাপে খাপে মিলে যাওয়াতেই আজকে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসতে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী।
সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের ভোটকে কব্জা করার জন্য এবং নিজের দলের দিকে টানতে মোদী যে বিষয়গুলো ভারতীয়দের সামনে তুলে ধরেছেন তার মধ্যে অন্যতম হলো:- নির্বাচনী ইশতেহারে ১৯৯২ সালে অযোদ্ধায় উগ্রপন্থী হিন্দুত্ববাদী দলগুলো কর্তৃক ধ্বংসপ্রাপ্ত বাবরি মসজিদ এর স্থলে রাম মন্দির নির্মাণের প্রতিশ্র“তি, প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীদের বহিষ্কার- ‘হিন্দু ভাইদের ছাড়া’ ও প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কথা বলা ইত্যাদি। ফলাফল, বিজেপির প্রতি জাতীয়তাবাদী চেতনায় উজ্জীবিত সংখ্যাগুরুদের ভোটের জোয়ারে ভাসানো।
‘মোদী ভাই’য়ের উত্থানে সবচেয়ে হুমকির মুখে পড়েছে সে দেশের সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়। যদি তাদেরকে ভারতের মাটিতে নিরাপদে বসবাস করতে হয় তাহলে প্রতিটি মুহূর্তেই সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের কৃপায় বাঁচতে হবে, বাঁচতে হবে অধিকার বঞ্চিত হয়ে, আধুনিক বিশ্বের নাগরিক হয়েও দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে। যেমনটা তারা ছিলো কংগ্রেস আমলে (দেখুন, সাচার কমিটি রিপোর্ট), এবং এখন বরং আরো বহুগুণে বেশি খারাপ থাকতে হতে পারে।
মোদীর দল তথা কট্টরপন্থী গোড়া দলগুলোর প্রতিনিধি ক্ষমতায় যাওয়ায় মুসলমান সম্প্রদায় হুমকির মুখে একথা যে কেউ স্বীকার করতে বাধ্য এবং স্বীকার করছেনও। তাই আন্তর্জাতিক মহলে বার বার মুসলমানদের নিরাপত্তার বিষয়টি উঠে আসছে। গত বুধবার (২১.০৫.২০১৪) বিবিসি বাংলার সান্ধ্য আয়োজন প্রবাহে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয় যে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ অনুষ্ঠানে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশসহ সার্কভুক্ত দেশগুলোর নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। সাম্প্রতিক অতীতে ভারতের কোন প্রধানমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠানে প্রতিবেশী দেশগুলোর নেতাদেরকে আমন্ত্রণ জানানোর রেওয়াজ নেই। ফলে মোদীর এ পদক্ষেপ কার্যত নজিরবিহীন। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী সেই রেওয়াজ ভাঙতে চেয়েছেন কেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাক্তন কূটনীতিক ও বর্তমানে বিজেপির পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম প্রধান রূপকার হার্বিক পোরি বিবিসিকে জানান, সুচিন্তিত এই নীতির মাধ্যমে তারা এটাই প্রমাণ করতে চেয়েছে যে সার্কভুক্ত প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করাটাই তাদের সরকারের নীতি। কিন্তু নির্বাচনের আগে মোদীর মুখ থেকে মুসলমান সম্প্রদায় ও পার্শ্ববর্তী মুসলিম দেশ বাংলাদেশ-পাকিস্তানের ব্যাপারে উচ্চারিত বাক্যগুলোর কি হবে জানতে চাওয়া হলে এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আসলে নির্বাচনের প্রচারে যেসব গৎবাধা কথা বলা হয়, সরকার যখন দায়িত্ব নেয় তার অনেকগুলোই পাশে সরিয়ে রাখতে হয়। তখন ইস্যুগুলো প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্ক বাড়ানোর তাগিদ থেকে দেখতে হয়। এ দু’য়ের মধ্যে কোন বিরোধিতা নেই।’ কিন্তু প্রতিবেশী দেশগুলো কি এত সহজেই নরেন্দ্র মোদীর উপর আস্থা রাখতে রাজী হবে, কিংবা অতীতে তিনি যা বলেছেন, যা করেছেন তা কি তাদের পক্ষে ভুলে যাওয়া সম্ভব হবে? এব্যাপারে পররাষ্ট্রনীতির অধ্যাপক ও সার্ক বিশেষজ্ঞ অশ্বিনী রায়ের অভিমত হচ্ছে- মোদীর রাজনীতি এবং তার দলের মনোভাব সম্বন্ধে সন্দেহ তো আছেই। তবে এ পদক্ষেপের মাধ্যমে মোদী সবাইকে নিয়ে চলতে চান এটা বোঝানোর চেষ্টা করছেন। এছাড়াও মুসলমান এবং মুসলমান দেশের মানুষ যাতে ভয় না পায় সে ধরনের একটি ইঙ্গিত দিতে চাচ্ছেন।
এবারে একটু ভিন্ন দিকে মনোযোগ দেওয়া যাক। হিন্দু ধর্মে দেবতার সংখ্যা তেত্রিশ কোটি। এ ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে বহু ভাগ, জাতপাতের ব্যাপক বৈষম্য। প্রাচীন এই ধর্মটি এখন তাদের নিজস্ব শাস্ত্র থেকে বহু দূরে অবস্থান করছে। তাদের ধর্মীয় গ্রন্থগুলো আর আদি ও অকৃত্রিম অবস্থায় নেই যা ঐ ধর্মের বিশেষজ্ঞরাও নির্দ্বিধায় স্বীকার করেন। কিন্তু এত বিভাজন, ধর্মগ্রন্থে এত সংযুক্তি থাকা সত্ত্বেও এই ধর্মের অনুসারীরা ভারতের রাষ্ট্রক্ষমতায় ধর্মনিরপেক্ষ দল শাসন করবে, নাকি ধর্মাশ্রয়ী দল (হিন্দুরা) শাসন করবে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত প্রদান করেছে যে ধর্মাশ্রয়ী দলই শাসন করবে। অন্যদিকে তাদের এই সিদ্ধান্তের ফলে চাপে পড়া মুসলমান সম্প্রদায়ের স্বগোত্রীয়দের সংখ্যা বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় ১৬০ কোটি। এ ধর্মটি (দীন, জীবন ব্যবস্থা) তুলনামূলকভাবে আধুনিক এবং এ ধর্মের নির্দেশনা দানকারী ঐশী গ্রন্থ আজও অবিকৃত আছে (এমনকি কেয়ামত পর্যন্ত অবিকৃত থাকবে)। কিন্তু তারাও আজ হিন্দুদের মতই নানা ভাগে, নানা মাজহাবে বিভক্ত হয়ে আছে। রাজনৈতিকভাবে তারা প্রায় পঞ্চান্নটি দেশে বিভক্ত, রাজনৈতিক দল যে কি পরিমাণ আছে তার কোন হিসেব নেই, তরিকাগত দিক থেকে আছে হাজারো ভাগ। অথচ এক সময় এ জাতিটিই যখন স্রষ্টার প্রেরিত দিক নির্দেশনা আল কোর’আন এবং শেষ রসুলের শিক্ষা অনুযায়ী নিজেদের মধ্যে কোন ধরনের মতভেদ ও বিভক্তির উর্ধ্বে উঠে সীসা ঢালা প্রাচীরের ন্যায় ঐক্যবদ্ধ ছিলো তখন তৎকালীন অর্ধদুনিয়া তাদের পায়ের তলায় লুটিয়ে পড়েছিলো। এরই একটি ঢেউ যখন ভারতের বুকে আছড়ে পড়েছিলো তখন তারা দীর্ঘ সাতশো বছর শাসন করেছে ভারতবর্ষকে। মুসলিমরা যখন ভারতের শাসন দখল করে নেয় তখন ঐ অর্থে হিন্দুরা বিরোধিতা করেনি। বরং তাদের অধিকাংশই মুসলিম শাসনকে অভিনন্দন জানিয়ে নিজেরাও নিজেদের পিতৃধর্ম ত্যাগ করে সে দীনটিকে আলিঙ্গন করে নিয়েছে। ইসলামের মৌলিক নীতি হিসেবেই ভারতীয়দের উপর কখনোই এ ধর্মকে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। যদি তাই করা হতো তবে ভারতের মাটিতে আজ মুসলমানরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকতো। এ কথাটি ভারতের ক্ষেত্রে যেমন সত্য তেমনি পৃথিবীর আর যে সকল এলাকায় ইসলাম প্রবেশ করেছে সেসব স্থানের ক্ষেত্রেও একইভাবে সত্য।
এই শ্রেষ্ঠ ধর্মটির অনুসারীরা সর্বক্ষেত্রেই শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছিলো। পৃথিবীর কোন শক্তি তাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর সামর্থ রাখতো না। তাদের দীন দীন রবে দুনিয়া থর থর করে কাঁপতো। তাদের নাম শুনলে অত্যাচারী শাসকের অন্তরাত্মা ভয়ে শুকিয়ে যেত। অথচ সেই দীনের অবিকৃত মহাগ্রন্থ তাদের হাতে থাকা সত্ত্বেও, দিনে রাতে কোটি কণ্ঠে তা আবৃত্তি হলেও, এ ধর্মের অনুসারীগণ নিজেদেরকে এক আল্লাহর আবেদ বলে মনে করলেও তাদেরকে পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় ভারতেও আক্রমণের শিকার বানানো হয়, তাদেরকে হত্যা করা হয়, স্বদেশ থেকে উচ্ছেদ করা হয়, নারীদেরকে ধর্ষণ করা হয়, বেশ্যালয়ে বিক্রি করা হয়। অগ্নিপুজক, গাছ পুজারীসহ তেত্রিশ কোটি দেবতার অনুসারীদের হাতে মার খেতে হয়, তাদের কৃপা ভিক্ষা করে বেঁচে থাকতে হয়। আবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে পার্শ্ববর্তী মুসলমানদের নেতাদেরকে দাওয়াত দিয়ে এই জাতিকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয় যে, আমাদের সম্বন্ধে তোমাদের এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই! হায় কি করুণ পরিণতি!
এক্ষেত্রে আমি হিন্দু সম্প্রদায়কে কোন অর্থেই দোষ দেব না, এমনকি তাদের খাটো করে দেখতেও পারিনা। বরং তাদের প্রতি আমি প্রশংসায় পঞ্চমুখ হবো এই কারণে যে, তাদের মধ্যে এত বিভক্তি, এত জাতপাতের পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও আজ তারা একতাবদ্ধ। তারা এখন পৃথিবীর বুকে একটি উদীয়মান পরাশক্তি। যে মোদীকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিজ দেশে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে ভিসা বন্ধ রেখেছিলো, সেই মোদীকেই আজকে ঐ সুপার পাওয়ার রাষ্ট্রের প্রধানকে পূর্ব সিদ্ধান্ত ত্যাগ করে নিজ দেশে আমন্ত্রণ জানাতে হয়! মোদী যদি ভারতীয় হিন্দুদেরকে এক কাতারে না নিয়ে আসতে পারতেন তবে কোনদিনই তাকে যুক্তরাষ্ট্রে শুধু আমন্ত্রণ নয়, সাধারণ মানুষের মর্যাদা নিয়ে প্রবেশ করতে পারতেন কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তাই এই মহতী কাজে যারা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন সেই নেতাদের প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভক্তি জানাতেই হয়। একই সাথে ধিক্কার জানাই আমার নিজ ধর্মের নেতৃত্বকে যারা নিজেদেরকে এক আল্লাহর আবেদ মনে করে এক কোর’আনের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী চলেন বলে দাবি করেন, শেষ রসুলের অনুসারী হিসেবে চেহারা সুরতে একেক জন দরবেশের আকৃতি ধারণ করেছেন অথচ নিজেদের মধ্যে হাজারো ভাগ। জাতির মধ্যে এই বিভক্তি কুফর ছাড়া কিছুই নয়। তারা নানা ফতোয়া ও জটিল মাসলা-মাসায়েলের মাধ্যমে জাতির মধ্যে এতটাই অনৈক্যের প্রাচীর তুলে রেখেছেন যে- তা ভাঙ্গার মত সাধ্য আপাতত কারো নেই। জাতি আজ সেসব ফতোয়া এবং মতভেদে লিপ্ত হয়ে মাকড়সার জালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। জালে আটকা মাছির শেষ পরিণতি যা এখন তাদের তাই হচ্ছে। সংখ্যায় ১৬০ কোটি হয়েও, পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদের এক বিরাট অংশের মালিক হয়ে তাদেরকে অন্যের গোলামি করে কিংবা কৃপা নিয়ে বাঁচতে হয়। ধিক্কার সেই নেতৃত্বকে যারা এখনো নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ জাতি মনে করে গর্বে বুককে স্ফীত করে। প্রকৃতপক্ষে তারা বোকার স্বর্গে বাস করে, যা সুস্পষ্টভাবে লা’নতের একটি চিহ্ন।