সভ্যতা এই শব্দটি এসেছে সভ্য থেকে। সভ্য অর্থ ভদ্র, শিষ্ট, মার্জিত, সুরুচিসম্পন্ন, ভাল (civilian – polite – courteous – mannerly) ইত্যাদি। ভালটাকে গ্রহণ করে মন্দটাকে বর্জন করে ধীরে ধীরে গড়ে উঠে সভ্যতা (Civilization)।
পৃথিবীর অনাদিকাল থেকেই ভাল এবং মন্দ এই দু’টি শব্দ চলে আসছে, সেইসাথে চলছে এই ভাল এবং মন্দের দ্বন্দ্ব। কোনটি ভাল, কোনটি মন্দ? – এ যেন এক অমীমাংসিত প্রশ্ন। কারণ ভাল এবং মন্দের ধারণা একটি আপেক্ষিক বিষয়। আপনার কাছে যেটা ভাল আমার কাছে সেটা মন্দ, তেমনিভাবে আপনার কাছে যেটা মন্দ আমার কাছে সেটাই ভাল। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, কারো কাছে লাল রং খুব পছন্দ আবার কারো কাছে সেই লাল রং-ই খুব অপছন্দের। তেমনিভাবে কেউ হয়তো ঝাল পছন্দ করেন, অন্য একজন হয়তো ঝাল মোটেই পছন্দ করেন না তার কাছে আবার মিষ্টি পছন্দ। পৃথিবীতে কেউ যে তিতা পছন্দ কোরতে পারে এটা হয়তো কেউ ভাবতেই পারবেন না, কিন্তু এটাও পৃথিবীতে আছে। সুতরাং ভাল, মন্দের দ্বন্দ্ব এই শব্দ দুইটির ব্যবহার অনাদিকাল থেকেই চলে আসছে। আসলে কোনটি প্রকৃতপক্ষে ভাল আর কোনটি প্রকৃতপক্ষে মন্দ আমাদের মত কম বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের পক্ষে বলা সম্ভব নয়। কোনটা ভাল, কোনটা মন্দ সেটা যদি জনগণের উপর ছেড়ে দেওয়া হয় তাহোলে এই ভাল-মন্দের দ্বন্দ্ব, সংঘাত কোন দিনই শেষ হবে না। এজন্যই কোনটি ভাল, কোনটা মন্দ এটা বলার জন্য একটা চূড়ান্ত জায়গা থাকতেই হবে এবং সবাইকে সেই চূড়ান্ত জায়গাটার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে, এটাই বাস্তবতা। যদি সেটা না থাকে তাহোলে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, পৃথিবী যাই বলিনা কেন কোথাও কোনদিনই কোন শৃঙ্খলা আসবে না, শান্তি আসবে না, কোন প্রশ্নেরই সমাধান পাওয়া যাবে না।
প্রশ্ন হোল, কোনটা ভাল, কোনটা মন্দ এটা আমাদেরকে কে বলে দিবে? কার বলা ‘ভাল’টাকে আমারা সবাই চূড়ান্তভাবে ‘ভাল’ বলে মেনে নিব? কার ‘মন্দ’ বলাকে আমরা চূড়ান্তভাবে ‘মন্দ’ বলে মেনে নিব? অর্থাৎ ন্যায় অন্যায়ের মানদণ্ড কোনটি হবে?
আমাদের মঙ্গলের জন্য, আমাদের সুখের জন্য, শান্তির জন্য, মানবজাতির কল্যাণ ও প্রগতির জন্য, মানবজাতি ও পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য ভাল-মন্দের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য একটি কর্তৃপক্ষকে মানতেই হবে। সুতরাং যে কোন সংবিধান বা জীবন-ব্যবস্থাতেই শেষ সিদ্ধান্ত নেবার জন্য একটি স্থান থাকতে হয়। অন্যথায় মানবজীবনের যে কোন সমস্যার সমাধানের জন্য পরামর্শ আলোচনায় বসলে তা অনন্তকাল চলতে থাকবে। এই শেষ সিদ্ধান্ত নেবার ও দেবার কর্তৃত্ব ও অধিকারই হোচ্ছে সার্বভৌমত্ব (Sovereignty– এলাহ)। এই সার্বভৌমত্ব হতে পারে মাত্র দুই প্রকার। যিনি সৃষ্টি কোরেছেন তাঁর, অর্থাৎ স্রষ্টার; কিম্বা সৃষ্টের অর্থাৎ মানুষের। বর্তমান পৃথিবীময় যে সভ্যতা চলছে তা হোচ্ছে পাশ্চাত্যের ইহুদি খ্রিস্টানদের তৈরি একটি সভ্যতা। এখানে ইহুদি-খ্রিস্টানরা যেটাকে ভাল ও ন্যায় বোলেছে সেটাই ভাল ও ন্যায়, ইহুদি খ্রিস্টানরা যেটাকে মন্দ বা অন্যায় বোলেছে সেটাই মন্দ বা অন্যায়। অর্থাৎ ইহুদি-খ্রিস্টানদের ভালটাকে গ্রহণ করে, তাদের মন্দ বলাটাকে বর্জন করে যে সভ্যতা গড়ে উঠেছে অর্থাৎ ইহুদি-খ্রিস্টানদের ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় নির্ধারণের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত ক্ষমতাধর কর্তৃপক্ষ (এলাহ) মেনে নিয়ে যে সভ্যতা গড়ে উঠেছে সেটাই ইহুদি-খ্রিস্টান বস্তুবাদী সভ্যতা। যেমন- ইহুদি-খ্রিস্টান সভ্যতা বোলেছে আল্লাহর বিধান চলবে না, বিধান চলবে মানুষের; স্রষ্টা নয় – জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস, তারা বোলেছে মানবজাতির অর্থনীতি হবে সুদভিত্তিক, সুদই সর্বশ্রেষ্ঠ ও আধুনিক পদ্ধতি, যদিও আল্লাহ ও তাঁর রসুল এই সুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা কোরেছেন (সুরা বাকারা ২৭৯)। অপরদিকে ইহুদি-খ্রিস্টানরা বোলেছে জীবন-ব্যবস্থাগুলির মধ্যে ইসলাম মন্দ, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হিসাবে যাকাত ব্যবস্থা মন্দ ইত্যাদি। ইহুদি-খ্রিস্টানদের তৈরি এই সভ্যতাই আজ সমস্ত পৃথিবী আচ্ছন্ন করে আছে। পৃথিবীর একজন মানুষ নাই, এক ইঞ্চি মাটি নাই, এক ইঞ্চি পানি নাই যেটা এই সভ্যতার বাইরে। অপরপক্ষে ইসলাম হোচ্ছে আরেকটি সভ্যতা। আল্লাহ, আল্লাহর রসুল যেটাকে ভাল বোলেছেন, ন্যায় বোলেছেন সেটাই ভাল, সেটাই ন্যায়, আর আল্লাহ এবং আল্লাহর রসুল যেটাকে মন্দ বা অন্যায় বোলেছেন সেটাই মন্দ বা অন্যায়। অর্থাৎ ন্যায় অন্যায়ের মাপকাঠি একমাত্র আল্লাহকে মেনে নিয়ে, আল্লাহকে একমাত্র সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক হিসাবে মেনে নিয়ে যে সভ্যতা গড়ে উঠে সেটাই ইসলামী সভ্যতা। এই সভ্যতা আজ পৃথিবীর কোথাও নাই। অথচ এক সময় এই সভ্যতা মানবজাতিকে এমন অতুলনীয় ন্যায়, শান্তি ও নিরাপত্তা উপহার দিয়েছিল, আজ যেটা কল্পনারও বাইরে। কাউকে বোললেও উত্তরে বলে, সেটা কি আজ সম্ভব?
ইহুদি-খ্রিস্টানরা যেটাকে ভাল বোলেছে সেটাই ভাল, যেটাকে মন্দ বোলেছে সেটাই মন্দ অর্থাৎ ইহুদি-খ্রিস্টানদের ভালটাকে গ্রহণ করে, তাদের বলা মন্দটাকে বর্জন করে যে সভ্যতা গড়ে উঠেছে অর্থাৎ ইহুদি-খ্রিস্টানদের ভাল-মন্দ নির্ধারণের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত ক্ষমতা (সার্বভৌমত্ব, Sovereignty – এলাহ) মেনে নিয়ে যে সভ্যতা গড়ে উঠেছে সেই ইহুদি-খ্রিস্টান সভ্যতাকে এ যামানার এমাম দ্যা লিডার অফ দ্যা টাইম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী দাজ্জাল বলে চিহ্নিত কোরেছেন। তিনি হাদিস, বিজ্ঞান, বাইবেলের মাধ্যমে প্রমাণ কোরেছেন যে, বিশ্বনবীর ভবিষ্যদ্বাণীতে যে একচক্ষুবিশিষ্ট অতিকায় দানবের উল্লেখ আছে এই ইহুদি-খ্রিস্টান সভ্যতাই সেই মহাশক্তিধর দানব দাজ্জাল। তিনি মানবজাতিকে আহ্বান জানিয়েছেন এই দাজ্জালকে প্রত্যাখান করে আল্লাহ, আল্লাহর রসুল যেটাকে ভাল ও ন্যায় বোলেছেন সেটাই ভাল ও ন্যায়, আল্লাহ ও আল্লাহর রসুল যেটাকে মন্দ বা অন্যায় বোলেছেন সেটাই মন্দ এবং অন্যায় হিসাবে মেনে নিয়ে অর্থাৎ আল্লাহকে একমাত্র সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক হিসাবে মেনে নিয়ে, আল্লাহর সার্বভৌমত্বের উপর ভিত্তি করা ইসলামী সভ্যতাকে মেনে নেওয়ার জন্য।