মোহাম্মদ আসাদ আলী:
পবিত্র কোর’আনে আল্লাহর ঘোষণা, আমি জ্বীন এবং ইন্সানকে শুধুমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি (সুরা যারিয়াত ৫৬)। এই ইবাদত বলতে প্রায় সবাই সালাহ, সওম প্রভৃতি মনে করে। এই ধারণা সঠিক নয়। সালাহ, সওম ইত্যাদি হচ্ছে প্রকৃত ইবাদতের আনুষাঙ্গিক কাজ। আল্লাহ কোর’আনে এরশাদ করেছেন, আমি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই। অতএব আমার ইবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে সালাহ কায়েম কর (সুরা ত্বাহা, আয়াত-১৪)। পবিত্র কোর’আনের এই আয়াতে আল্লাহ প্রথমে তাঁর সার্বভৌমত্বের মালিক, নিজেকে মানবজাতির একমাত্র হুকুমদাতা হিসাবে ঘোষণা দিলেন। ইলাহ বলতে বর্তমানে মনে করা হয় উপাস্য। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা নয়। ইলাহ হচ্ছেন সেই সত্তা যার হুকুম শুনতে হবে এবং পালন করতে হবে। এক কথায় জীবনের যে কোন অঙ্গনে যেখানে আল্লাহর কোন বক্তব্য আছে সেটা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজৈেনতিক, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি যে বিভাগেই হোক না কেন সেখানে আর কারও কোন বক্তব্য গ্রহণ করা যাবে না অর্থাৎ তওহীদ; আল্লাহর সার্বভৌমত্ব। এরপর এই আয়াতে আল্লাহ তাঁর ইবাদত করার কথা বললেন এবং পরিশেষে তাঁর স্মরণার্থে সালাহ কায়েমের কথা বললেন। আলোচ্য আয়াতে এটা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে ইবাদত ও সালাহ অর্থাৎ উপাসনা এক জিনিস নয়।
তাহলে ইবাদত কী? ইবাদত হচ্ছে যে জিনিসকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে সেই কাজ করাই হচ্ছে ঐ জিনিসের ইবাদত। প্রশ্ন হলো- আল্লাহ আমাদের কি কাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন? এর উত্তর আমরা পবিত্র কোর’আন থেকেই পাচ্ছি। কোর’আনের সুরা বাকারার ৩০ নম্বর আয়াতে আল্লাহর ঘোষণা, আমি মানুষকে আমার খলিফা অর্থাৎ প্রতিনিধি হিসেবে সৃষ্টি করেছি। খলিফা অর্থাৎ প্রতিনিধির কাজ হচ্ছে একজনের কাজ তিনি না কোরে তার হয়ে আরেকজন করা। তাহলে কোর’আনে আল্লাহ বললেন তিনি আমাদেরকে খলিফা অর্থাৎ প্রতিনিধি হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ পৃথিবীতে আল্লাহ নিজে যে কাজটি করতেন সেই কাজটি তিনি না কোরে তা আমাদের দিয়ে করাবেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আল্লাহর কী কাজ? তিনি কি নামাজ, রোজা করেন? নিশ্চয় না। তাঁর কাজ হলো: তাঁর সৃষ্টজগতকে শাসন করা। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি এ কাজটি নিজে না কোরে মানুষকে দিয়ে করাবেন। তাই তিনি কোর’আনে ঘোষণা করেছেন আমি মানুষকে আমার খলিফা হিসাবে সৃষ্টি করেছি। তাহলে ইবাদতের সংজ্ঞা অনুযায়ী আল্লাহ্র খেলাফত করাই হচ্ছে মানুষের ইবাদত। অর্থাৎ আল্লাহর দেওয়া বিধান দিয়ে পৃথিবী শাসন করাই হচ্ছে খেলাফতের কাজ, কিন্তু মানুষ আজ এই খেলাফতের কাজ করছে না অর্থাৎ আল্লাহ্র ইবাদত করছে না। অথচ আল্লাহ্ আমাদেরকে মূলত: তাঁর ইবাদত করার জন্যই সৃষ্টি করেছেন। এই মুসলিম নামক জাতিটি আল্লাহর প্রকৃত ইবাদত কী তা না জেনে, না বুঝে নামাজ রোজা কোরে ভাবছে খুব ইবাদত করছি।
প্রকৃতপক্ষে তারা কার ইবাদত করছে, কার প্রতিনিধিত্ব বা খেলাফত করছে? সত্য হচ্ছে এই যে, মুসলিম নামধারী জনসংখ্যাটিসহ গোটা মানবজাতি এখন ইহুদি-খ্রিস্টানদের তৈরি আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা অর্থাৎ সামগ্রিক জীবন পাশ্চাত্যদের, তথা ইহুদী-খ্রিস্টান সভ্যতার বিধান, মতবাদ অনুযায়ী পরিচালিত করছে। সুতরাং মানুষ এখন ইহুদি-খিস্টান ‘সভ্যতা’ তথা দাজ্জালেরই ইবাদত কোরে চোলেছে।