(কাজী আবদাল্লাহ আল মাহফুজ)
গণতন্ত্র গণতন্ত্র করে চেঁচাতে চেঁচাতে মানুষের কণ্ঠনালী আজ শুকিয়ে গেছে। শুধু আমাদের দেশ নয়, পৃথিবীর উন্নত, অনুন্নত, উন্নয়নশীল প্রতিটি দেশেরই একই অবস্থা। এই দুরবস্থার মাত্রা এক এক দেশে এক এক রকম। কল্পনাতীত সুখ ও সমৃদ্ধির স্বপ্ন দেখালেও প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্র এক স্বপ্নবিলাসী জীবনব্যবস্থা ছাড়া আর কিছু নয়। এর তাত্ত্বিক সুখ পৃথিবীর কোথাও শতশত বছরেও বাস্তব রূপে আসতে পারেনি। কোন দেশের গণতন্ত্র এখন পর্যন্ত যৌবনপ্রাপ্ত হয়নি। শিশু, কিশোর অপ্রাপ্তবয়স্ক গণতন্ত্রের ভয়ানক ছেলেখেলার কাছে, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষগুলো অসহায়ের মত। গত শনিবার চ্যানেল আই’র ‘তৃতীয় মাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাধীনবাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা ও প্রাক্তন ছাত্রলীগ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান নূরে আলম সিদ্দিকী বেশ ক্ষোভের সাথেই বলেন- “এখনকার গণতন্ত্র হচ্ছে- তোমার সব অধিকার আমি ধ্বংস করে দেব।… বিজয়ের এই মাসে পুরো জাতির যখন বিজয়ের আনন্দে উদ্বেলিত হওয়ার কথা সেখানে আজ একটি হৃদয়ও নিঃশংঙ্কচিত্ত নয়। কেউ জানেন না ঘর থেকে বের হলে নিরাপদে আবার ফিরতে পারবেন কিনা। লাশের পর লাশ পড়ছে। এ পর্যন্ত দুইশ’র বেশি মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন।… …আজকে যে ধ্বংসলীলা চলছে, যে মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে তাতে পুরো জাতি উদ্বিগ্ন, বেদনা ভারাক্রান্ত। দুঃখের বিষয়, যাদের অসম্ভব দাম্ভিকতা, সীমাহীন ক্ষমতার প্রলোভন, তারা শুধু নির্বাক দর্শকের মতই এ অবস্থা পরিদর্শন করছেন না, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ-কৌতুকও করছেন। দেখেও না দেখার ভান করছেন। ডা: মিলনের বুকের রক্তের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় এলেন তাদের দাম্ভিকতা, প্রতিহিংসাপরায়ণতা, ক্ষমতার প্রতি নির্লজ্জ লোভ দেশকে আজ রাজতন্ত্রের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। একটা মানুষ নিঃশংঙ্কচিত্ত না যে, এ দেশ সোমালিয়া বা আফগানিস্তান হতে যাচ্ছে কিনা? আজ গণতন্ত্রের জানাজা, দাফন, কাফন, চল্লিশা সব হয়ে গেছে।
গণতন্ত্রের নৃশংসতা ও ভয়াবহতার রূপ দেখে শুধু নূরে আলম সিদ্দিকীই নয়, যারা এদেশের স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়েছেন আজ তারাও আক্ষেপের সুরে অশ্র“সিক্ত নয়নে বলে ফেলেন- আগে জানলে জীবনবাজী রেখে যুদ্ধ করতাম না (মৃত্যুর আগে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলাম)। গণতন্ত্রের নামে দেশ যে কিম্ভুতকিমাকার বিষধর একটা জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হয়েছে, যার দংশনে আজ মৃত্যুর কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে বঙ্গ জননী, যার ছোবলে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে তার সন্তানেরা।
গতকাল দৈনিক যুগান্তরে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা অরবিন্দু রায় “দেশে কি মহাপ্রলয় আসন্ন?” শিরোনামে ছোট্ট একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। তার লেখার মধ্যেও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে গণতন্ত্র নামক এই জীবনব্যবস্থা সাধারণ মানুষের জন্য কেমন বিষবাস্প ছড়িয়ে দিয়েছে। তিনি লিখেছেন “একে সংসদীয় গণতন্ত্র না বলে ‘সংঘাতীয় গণতন্ত্র’ বলা যেতে পারে। বাস্তবে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা কেবল সংঘাতীয় গণতন্ত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এর বাস্তব চিত্র আরও ভয়াবহ। মূলতঃ দেশে এখন নামে গণতন্ত্র, কাজে রাজতন্ত্র, বাস্তবে নাইতন্ত্র চলছে।… …মজার বিষয় হচ্ছে, এসব অপকর্ম করার লাইসেন্স জনগণই তাদের হাতে তুলে দেয়। আর প্রতি পাঁচ বছর পর পর লাইসেন্স নবায়নের যখন সময় আসে, তখন ঝগড়া-বিবাদের প্রদর্শনী বসে। এ বায়োস্কোপ না দেখলে বিশ্বাস করার উপায় থাকে না যে বিবাদ কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এসব বিবাদের ফলাফল যাই হোক, তার ভাগিদার যারা তাদের কখনোই এসব ফ্যাসাদে প্রাণ হারাতে দেখা যায় না।” সত্যই বাবু অরবিন্দু রায়- এ কথাগুলোই আমরা বলে আসছি দীর্ঘদিন ধরে। এই জীবনব্যস্থা একটা কালসাপের মত। যে সাপকে দেবতা ভেবে আমরা সাধারণ জনগণ দুধ-কলা দিয়ে লালন পালন করে আসছি। আর আমাদের এই বোকামীর ফলে জীবন যাচ্ছে আমাদের মতই সাধারণ মানুষের। আদর্শহীন, নীতি-নৈতিকতাহীন, আত্মাহীন এই ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য বাক্স ভরে ব্যালট পেপার দিয়ে আমরা আমাদের ভাগ্যে নৃশংস মৃত্যু পরোয়ানাই জারী করে চলেছি প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অন্তর। তাই সাধারণ মানুষ হিসাবে এখনো কি আমাদের ভেবে দেখার সময় আসেনি? এখনো কি এই ব্যর্থ পথ পরিহার করার সময় আসেনি? যারা আমাদের উপর গণতন্ত্র নামের জীবনব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়ে গেছে তারাও কিন্তু একদিনের জন্যও এ ব্যবস্থা মানেনি। তাদের কোন লাট নির্বাচনে দাঁড়াননি, এমনকি এখন পর্যন্ত তারা তাদের দেশের রাজতন্ত্র বা কিংডম চালু রেখেছে। সুতরাং তাদের গেলনো এই জীবনব্যস্থাকে কেন আমরা আমাদের জীবনে প্রতিষ্ঠার ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছি অবিরত?
নূরে আলম সিদ্দিকী অথবা অরবিন্দু রায়ের মত অনেকেই হয়তো বুঝতে পারছেন একটা বিধ্বংসী, ব্যর্থ সিস্টেম এদেশের মানুষকে গ্রাস করে চলেছে কিন্তু এখান থেকে বের হয়ে আসার মত কোন বিকল্প পথ তাদের জানা নেই। কারণ মানুষের তৈরি সকল প্রকার তন্ত্রমন্ত্রই আজ চূড়ান্তভাবে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। আর স্রষ্টার তৈরি জীবনব্যবস্থা হিসাবে তারা যে এসলামটাকে সামনে দেখতে পাচ্ছেন সেটাও ধর্মব্যবসায়ী মোল্লাশ্রেণি ও কিছু ধর্মীয় রাজনীতিকদের খপ্পরে পড়ে বিকৃতির শেষ সীমানায় পৌঁছে গেছে, এখন তা কূপমণ্ডূকতায় পরিপূর্ণ। তাহলে উপায় কি? এই চরম সংকট থেকে কি মানুষের বাঁচার কোন রাস্তাই খোলা নেই? তাহলে কি আমাদের মহাপ্রলয়ে ধ্বংস হয়ে যেতে হবে? না, মনের দরজা খুলে প্রশস্ত নয়নে অবলোকন করলেই আপনাদের সামনে একটা সত্য উদ্ভাসিত হবে? সেই উদ্ভাসিত মহসত্যের বার্তা নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন যামানার এমামের অনুসারীগণ। সুতরাং বাঁচতে হলে প্রকৃত এসলামের ছায়াতলে না এসে আর কোন উপায় নেই। এ জাতিকে আল্লাহ প্রদত্ত ও রসুলের প্রতিষ্ঠা করা সত্য দীন ছাড়া আর কেউ বাঁচাতে পারবে না।