মাননীয় এমামুয্যামানের লেখা থেকে:
বর্তমান মোসলেম নামধারী জনসংখ্যার একমাত্র কাজ হোচ্ছে আল্লাহর কাছে দোয়া চাওয়া। এর ধর্মীয় নেতারা, আলেম, মাশায়েখরা এই দোয়া চাওয়াকে বর্তমানে একটি আর্টে, শিল্পে পরিণত কোরে ফেলেছেন। লম্বা ফর্দ ধোরে লম্বা সময় নিয়ে আল্লাহর কাছে এরা দোয়া কোরতে থাকেন। যেন এদের দোয়া মোতাবেক কাজ করার জন্য আল্লাহ অপেক্ষা কোরে বোসে আছেন। মাঝে মাঝে বিশেষ (Special) দোয়া ও মোনাজাতেরও ডাক দেওয়া হয় এবং তাতে এত লম্বা সময় ধোরে মোনাজাত করা হয় যে হাত তুলে রাখতে রাখতে মানুষের হাত ব্যথা হোয়ে যায়। অজ্ঞানতা ও বিকৃত আকীদার কারণে এরা ভুলে গেছেন যে কোন জিনিসের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা না কোরে শুধু তাঁর কাছে চাইলেই তিনি তা দেন না, ওরকম দোয়া তাঁর কাছে পৌঁছে না। আল্লাহ তাঁর শ্রেষ্ঠ নবী (দ:) তাঁর হাবিবকে যে কাজের ভার দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন সে কাজ সম্পন্ন কোরতে তাঁকে কি অপরিসীম পরিশ্রম কোরতে হোয়েছে, কত অপমান-বিদ্রুপ-নির্যাতন-পীড়ন সহ্য কোরতে হোয়েছে- যুদ্ধ কোরতে মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত কোরছে। ধর্মের বিনিময় নেওয়া বা ধর্মকে পার্থিব স্বার্থে ব্যবহার করা যে এসলাম বিবর্জিত সেটাও তিনি উপযুক্ত যুক্তি-প্রমাণ সহকারে মানবজাতির সম্মুখে তুলে ধরেছেন। তিনি কালের গর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়া প্রকৃত তওহীদের সরূপ বের কোরে এনেছেন এবং শান্তিপূর্ণ সুখী-সমৃদ্ধ ঐক্যবদ্ধ পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, গোত্র নির্বিশেষে সবাইকে সেই তওহীদের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নেবার আহ্বান জানিয়েছেন।
কিন্তু যামানার এমামের এই মহান যাত্রাপথে বাধার প্রাচীর হোয়ে দাঁড়ায় বর্তমানের আলেম-মাওলানা নামধারী ধর্মজীবী শ্রেণিটি। এর উপযুক্ত কারণও আছে। সেটা হোল- যেহেতু যামানার এমাম ও তাঁর অনুসারীদের দ্বারা মানুষ প্রকৃত এসলাম জেনে যাচ্ছে, কাজেই অদূর ভবিষ্যতে ধর্মজীবীদের অবৈধ ধর্মবাণিজ্য নিশ্চিতভাবেই হুমকির মুখে পড়বে। তারা যে ধর্মের দোহায় দিয়ে, পাবলিক সেন্টিমেন্টকে পুঁজি কোরে সমাজে প্রাধান্য বিস্তার কোরে রেখেছে, ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট তৈরি কোরেছে, এতে কোরে সেটা ভেঙ্গে পড়বে। এই কথা চিন্তা কোরেই তথাকথিত আলেম-মাওলানা, ওয়ায়েজরা যামানার এমামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক মিথ্যা প্রচার কোরছে। তারা অবিরাম অপপ্রচার কোরে যাচ্ছে- ‘হেযবুত তওহীদ খ্রিস্টান হোয়ে গেছে, এরা খ্রিস্টানদের দালালী কোরছে। তারা এসলামকে ধ্বংস কোরতে মাঠে নেমেছে।’ অথচ এই প্রচারণার পক্ষে কোন যুক্তি-প্রমাণ ধর্মজীবীদের নেই। কিন্তু তারপরও তারা মিথ্যা প্রচারে সফল হয় এই কারণে যে, তারা যে মিথ্যা বোলতে পারে তা অধিকাংশ ধর্মপ্রাণ মানুষেরই ধারণার বাইরে। এই সাধারণ মানুষগুলো মন-প্রাণ দিয়ে, অনেকটা অন্ধভাবে ধর্মজীবীদের বিশ্বাস করে। তারা ধর্মজীবীদের কথার সত্যতা যাচাই না কোরে সেই কথায় প্রভাবিত হোয়ে যামানার এমাম ও তাঁর অনুসারী হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে বিভ্রান্ত হয়।
কিন্তু এত কিছুর পরও অত্যন্ত আশ্চর্য হোতে হয় যখন দেখা যায় যে, ধর্মজীবীরা একদিকে হেযবুত তওহীদকে খ্রিস্টান-মুরতাদ আখ্যা দিয়ে সাধারণ মানুষকে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার কোরেছে, অপরদিকে তারাই আবার প্রশাসনের কাছে গিয়ে মিথ্যাচার কোরছে- হেযবুত তওহীদ জঙ্গি, সন্ত্রাসী, উগ্রপন্থী ইত্যাদি। উদ্দেশ্য পরিষ্কার, সরকার ও প্রশাসন যাতে হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে বিভ্রান্ত হয়। এভাবেই হেযবুত তওহীদের জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত গত ১৯ বছর যাবৎ ধর্মজীবীরা ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে, তাদেরকে উত্তেজিত কোরে কখনো এমামুয্যামান ও তাঁর অনুসারীদের খ্রিস্টান আখ্যা দিয়ে তাদের পেছনে লেলিয়ে দিয়েছে, আবার কখনও হেযবুত তওহীদ জঙ্গি- এই ধোয়া তুলে প্রশাসনকে বিভ্রান্ত কোরেছে। কিন্তু এত কিছুর পরও যামানার এমাম ও তাঁর অনুসারীরা সত্য প্রচার করা থেকে বিরত হন নি। ধর্মজীবীদের শত-সহস্র বাধার প্রাচীর ডিঙিয়ে ঠিকই তারা অবিরামভাবে সত্যকে মানুষের সামনে তুলে ধরছেন, সেই সাথে খুলে দিচ্ছেন ধর্মজীবীদের মুখোশ, উন্মোচন কোরছেন তাদের জোব্বা-পাঞ্জাবির অন্তরালে লুকিয়ে থাকা কুৎসিত চেহারা।
কিন্তু প্রশ্ন হোল, ধর্মজীবীদের এরকম দু’মুখো নীতি কেন? তারা যদি নিজেদেরকে সত্যের ধারক-বাহকই মনে কোরবেন তাহলে হেযবুত তওহীদকে একবার খ্রিস্টান আবার পরমুহূর্তেই জঙ্গি বলেন কী কোরে? সত্যকে সত্য বোলতে আর মিথ্যাকে মিথ্যা বোলতে তাদের এত লুকোচুরি কেন? তারা যদি সত্যই মানবতার কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ হোতেন, প্রকৃতপক্ষেই রসুলাল্লাহর উত্তরসূরী হবার যোগ্যতা রাখতেন, তাহলে যামানার এমাম সম্পর্কে মিথ্যা উচ্চারণ কোরতে পারতেন না। নিজের স্বার্থের কথা চিন্তা কোরে মিথ্যাকে সত্যের সাথে গুলিয়ে ফেলা কোন প্রকৃত আলেমের কাজ হোতে পারে না। সেটা কেবল সম্ভব ধর্মজীবী স্বার্থবাদীদের পক্ষেই। রসুলাল্লাহর নবুওয়াতের দায়িত্ব পালনকালে এমন সুযোগ এসেছিল যেখানে তাঁকে মিথ্যা কথা বোলতে হবে না, শুধু সত্য বোলবেন না অর্থাৎ চুপ থাকবেন, এতেও তাঁর জন্য যথেষ্ট স্বার্থ আদায় করা সম্ভব হোত। কিন্তু রসুল সেই সুযোগ নিলেন না। তিনি নিজের বিপক্ষে গেলেও সত্যকে প্রকাশ কোরলেন। এমনই একটি ঘটনা এখানে সংক্ষেপে তুলে ধরছি-
মদিনায় আল্লাহর রসুলের ৩ বছরের ছেলে এব্রাহীম যেদিন এন্তেকাল কোরলেন, সেদিন সূর্যগ্রহণ হোল। আরবের নিরক্ষর, অনেকটা কুসংস্কারাচ্ছন্ন লোকদের মনে এই ধারণা হোল যে, যার ছেলে মারা যাওয়ায় সূর্যগ্রহণ হয়, তিনি তো নিশ্চয়ই আল্লাহর রসুল, না হোলে তাঁর ছেলের মৃত্যুতে কেন সূর্যগ্রহণ হবে। কাজেই চলো, আমরা তাঁর হাতে বায়াত নেই, তাঁকে আল্লাহর রসুল হিসাবে মেনে নেই, তাঁর ধর্মমত গ্রহণ কোরি। তাদের এ মনোভাব মুখে মুখে প্রচার হোতে থাকলো। আল্লাহর রসুল যখন একথা শুনতে পেলেন, তিনি বের হোয়ে লোকজন ডাকলেন এবং বোললেন- “আমি শুনতে পেলাম তোমরা অনেকেই বোলছো- আমার ছেলে এব্রাহীমের এন্তেকালের জন্য নাকি সূর্যগ্রহণ হোয়েছে। এ কথা ঠিক নয়। এব্রাহীমকে আল্লাহ নিয়ে গিয়েছেন আর সূর্যগ্রহণ একটি প্রাকৃতিক নিয়ম। এর সাথে এব্রাহীমের মৃত্যুর কোন সম্পর্ক নেই।” একবার চিন্তা কোরে দেখুন, রসুলাল্লাহর কথাটি যতটা সহজ মনে হোচ্ছে, বাস্তবতার প্রেক্ষিতে সেই মুহূর্তে ততটা সহজ কাজ ছিলো না।
ঐ সময় মানুষের মধ্যে প্রচণ্ড টানাপড়েন ও বিতর্ক চোলছে যে তিনি আসলেই আল্লাহর রসুল কি রসুল নন। এমতাবস্থায় রসুলাল্লাহ কিছু না বোলে যদি শুধুমাত্র চুপ কোরে থাকতেন, কিছু নাও বোলতেন, দেখা যেত অনেক লোক তাঁর উপর ঈমান এনে এসলামে দাখিল হতো, তাঁর উম্মাহ বৃদ্ধি পেত- অর্থাৎ যে কাজের জন্য আল্লাহ তাঁকে প্রেরণ কোরেছেন সেই কাজে তিনি অনেকটা পথ অগ্রসর হোয়ে যেতেন। কিন্তু তিনি ছিলেন সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত, এসেছিলেন সত্যকে প্রতিষ্ঠা কোরতে, তাই তিনি এতটুকুও আপস কোরলেন না। এতে তাঁর নিজের ক্ষতি হোল। কিন্তু যেহেতু এ কথা সত্য নয়, সত্যের উপর দৃঢ় অবস্থান থাকার কারণে তিনি সেটিকে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ দিলেন না। কাজেই আজ আমাদের আলেম-মাওলানারা যে তাদের সামান্য স্বার্থের জন্য যামানার এমাম ও তাঁর অনুসারীদের সম্পর্কে এখন এক কথা-তখন আরেক কথা বোলছেন সেটার স্থান কোথায়? স্থানবিশেষে যদি কথাও নড়বড় করা যেত তাহোলে রসুলাল্লাহও উপরোক্ত ঘটনাটিকে কাজে লাগাতে পারতেন। কিন্তু তিনি সত্যকে ধারণ কোরে দেখিয়ে দিলেন যে, সত্য সত্যই; সেটাকে স্থান বা সময়ের আপেক্ষিকতায় পরিবর্তন করার কোন ভিত্তি নেই।
অপর একটি ঘটনা হোল পবিত্র মে’রাজ। মে’রাজের রাতে রসুলাল্লাহ তাঁর চাচাতো বোন উম্মে হানী (রা:) বিনতে আবু তালেব এর বাড়িতে ছিলেন। অতঃপর মেরাজের কথা শুনে উম্মে হানী (রা:) বোললেন, ‘সর্বনাশ! এ কথা বাইরে কাউকে বোলবেন না। এ কি অসম্ভব কথা! কেউ আপনার কথা বিশ্বাস কোরবে না। আপনার উপর মানুষের যে ঈমান এসেছিল তাও যাবে।’ কিন্তু রসুল ছিলেন সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত, বলীয়ান। তিনি এসেছেন হক নিয়ে, তিনি হক্, তিনি হককে গোপন কোরবেন না, প্রকাশ কোরবেনই- পরিণতি যাই হোক। তিনি বোললেন- ‘আমি যাচ্ছি সকলকে বোলতে।’ উম্মে হানী (রা:) পেছন থেকে তাঁর কাপড় টেনে ধোরলেন, বোললেন, ‘আমি আপনাকে আল্লাহর কথা স্মরণ কোরিয়ে দিয়ে বোলছি, আপনি যদি তাদের কাছে এই ঘটনা বর্ণনা করেন, তবে তারা আপনার কথা অস্বীকার কোরবে এবং আপনাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন কোরবে। আমার আশঙ্কা হয় যে তারা আপনার সাথে বেয়াদবি কোরতে পারে, এমনকি গায়েও হাত তুলতে পারে।’ কিন্তু রসুলাল্লাহ ঝটকা দিয়ে তাঁর কাপড় ছাড়িয়ে নিলেন এবং কোরায়েশদেরকে পুরো ঘটনা খুলে বোললেন। তাঁর কথা শুনে কোরায়েশরা অবাক হোয়ে গেলো। কাফের জুবায়ের এবনে মুতঈম বোলল, ‘হে মোহাম্মদ! তোমার যদি কোন মান-সম্মানবোধ থাকতো তবে তুমি এমন অবিশ্বাস্য কথা বোলতে পারতে না।’ কেউ কেউ আশ্চর্য হোয়ে মাথায় হাত দিয়ে বোসে পড়লো। আবার কেউ তালি বাজাতে আরম্ভ কোরল।
মে’রাজের এই ঘটনা মো’মেনদের জন্য ছিলো আল্লাহর পরীক্ষা-স্বরূপ। অনেকে এই ঘটনা শুনে ঈমান হারিয়ে ফেলেছেন, অনেকে সন্দেহে পতিত হোয়েছেন। কাফের-মোশরেকরা রসুলের বিরোধিতা করার বড় ধরণের ইস্যু খুঁজে পেয়েছে। এসব যে ঘোটবে তা কি রসুল জানতেন না? অবশ্যই জানতেন। কাজেই তিনি সেই কথা নাও বোলতে পারতেন, বা ঘটনাটিকে পরিবেশ বুঝে অন্যভাবে বোলতে পারতেন; অথবা মোমেনদেরকে একভাবে বোলে মোশরেকদেরকে অন্যভাবে বোলতে পারতেন (নাউজুবিল্লাহ)। কিন্তু তিনি তা করেন নি। কারণ তিনি দাঁড়িয়েছেন সত্য নিয়ে, মিথ্যার সাথে কণা পরিমাণ আপস করাও সত্যের নিশ্চিত বরখেলাপ। আর এই সত্য যদি নিজের বিপক্ষেও যায় তথাপি তার অংশবিশেষও গোপন করা সমীচীন নয়। আজকের আলেম-মাওলানা নামক ধর্মজীবী শ্রেণিটির সাথে রসুলাল্লাহর ঐ শিক্ষার মিল কতটুকু তা নিরূপণের দায়িত্ব পাঠকের উপরেই ছেড়ে দিলাম। অপরদিকে যামানার এমাম, এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী ও তাঁর অনুসারী হেযবুত তওহীদের মোজাহেদ মোজাহেদাদের কর্মকাণ্ডও অনেকের জানা আছে। সমস্ত পৃথিবী যখন মিথ্যায় ভরপুর, স্রষ্টার সত্যধর্মকে যখন মানুষ বিকৃত কোরে বিক্রি কোরে খাচ্ছে, চারিদিকে মিথ্যার লাগামহীন পদধ্বনি, তখন যামানার এমাম একা দাঁড়িয়েছেন সত্যকে ধারণ কোরে, স্রষ্টার সত্যধর্মকে তার যথাস্থানে অধিষ্ঠিত করার জন্য। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে যারা ঐক্যবদ্ধ হোয়েছেন তারাও মিথ্যার বিরুদ্ধে তাদের ক্ষুদ্র শক্তি নিয়ে এক অসম লড়াইতে লিপ্ত হোয়েছে। এই লড়াই হোল সত্য-মিথ্যার লড়াই, ধর্মজীবী ও ধর্ম নিয়ে বাণিজ্যের বিরুদ্ধে সত্যের ধারক-বাহক ও মানবতার মুক্তির অগ্রদূতদের লড়াই। কাজেই ধর্মব্যবসায়ীরা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে সত্যের মোকাবেলা করার যে ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা কোরে চোলেছে তা অচীরেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। কারণ, মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে কোনদিন সত্যের মোকাবেলা করা যায় না। সত্যের জয় হবেই হবে এনশাআল্লাহ।