মাননীয় এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী করটিয়া, টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী পন্নী পরিবারে ১৯২৫ সনের ১১ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪২ সনে তিনি মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। এরপর সা’দাত কলেজে কিছুদিন অতিবাহিত করার পর দ্বিতীয় বর্ষে তিনি কোলকাতার ইসলামিয়া কলেজে ভর্ত্তি হন। সেখান থেকে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক সমাপ্ত করেন।
কোলকাতায় তাঁর শিক্ষালাভের সময় পুরো ভারত উপমহাদেশ ছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামে উত্তাল আর কোলকাতা ছিলো এই বিপ্লবের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। আন্দোলনের এই চরম মুহূর্ত্তে তরুণ এমামুযযামান ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে পুরোপুরি জড়িয়ে পরেন। সেই সুবাদে তিনি এই সংগ্রামের কিংবদন্তীতুল্য নেতৃবৃন্দের সাহচর্য্য লাভ করেন যাঁদের মধ্যে মহাত্মা গান্ধী, কায়েদে আযম মোহম্মদ আলী জিন্নাহ্, অরবিন্দু বোস, শহীদ হোসেন সোহরাওয়ার্দি, মাওলানা সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদুদী অন্যতম। উপমহাদেশের দু’টি বৃহৎ ও প্রসিদ্ধ দল ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে নেতৃত্ব দান কোরেছিল যথা- মহাত্মা গান্ধী ও জওহরলাল নেহেরুর নেতৃত্বে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস এবং মোহম্মদ আলী জিন্নাহ’র নেতৃত্বে সর্বভারতীয় মুসলীম লীগ। কিন্তু এমামুযযামান এই দু’টি বড় দলের একটিতেও যুক্ত না হোয়ে যোগ দিলেন আল্লামা এনায়েত উল্লাহ খান আল মাশরেকীর প্রতিষ্ঠিত ‘তেহরীক এ খাকসার’ নামক অপেক্ষাকৃত ছোট একটি আন্দোলনে। আন্দোলনটি অপেক্ষাকৃত ছোট হোলেও অনন্য শৃংখলা ও বৈশিষ্ট্যের কারণে পুরো ভারতবর্ষব্যাপী বিস্তার লাভ কোরেছিলো এবং ব্রিটিশ শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল। এমামুযযামান ছাত্র বয়সে উক্ত আন্দোলনে সাধারণ একজন সদস্য হিসেবে যোগদান কোরেও খুব দ্রুত তাঁর চেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ ও পুরাতন নেতাদের ছাড়িয়ে পূর্ববাংলার কমান্ডারের দায়িত্বপদ লাভ করেন। অল্পদিনের মধ্যেই তিনি দুঃসাহসী কর্মকাণ্ড ও সহজাত নেতৃত্বের গুণে আন্দোলনের কর্ণধার আল্লামা মাশরেকী’র নজরে আসেন এবং স্বয়ং আল্লামা মাশরেকী তাঁকে সমগ্র ভারতবর্ষ থেকে বিশেষ কাজের জন্য বাছাইকৃত ৯৬ জন ‘সালার-এ-খাস হিন্দ’ (বিশেষ কমান্ডার, ভারত) এর একজন হিসেবে নির্বাচিত করেন। এটি ব্রিটিশদের ভারতবর্ষ ত্যাগ এবং দেশবিভাগের ঠিক আগের ঘটনা, তখন এমামুয্যমানের বয়স ছিল মাত্র ২২ বছর। দেশ বিভাগের অল্পদিন পর তিনি বাংলাদেশে (তদানিন্তন পূর্বপাকিস্তান) নিজ গ্রামে প্রত্যাবর্ত্তন করেন।
আল্লামা এনায়েত উল্লাহ খান মাশরেকী ‘খাকসার’ আন্দোলন ভেঙ্গে দেওয়ার পর আন্দোলনের এসলামপ্রিয় নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা চান আন্দোলনকে বাঁচিয়ে রাখতে। এজন্য তারা ঐক্যবদ্ধ হোয়ে বাংলাদেশে আসেন এবং করটিয়াতে এমামুযযামানের সঙ্গে সাক্ষাত করেন এবং তাঁকে আন্দোলনের নেতৃত্বভার গ্রহণ করার জন্য সনির্বন্ধ অনুরোধ করেন। কিন্তু এমামুময্যামান আর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হোতে চান না। এরপর বেশ কয়েকবছর তিনি রাজনীতির সংস্রব থেকে বিচ্ছিন্ন হোয়ে নিরিবিলি জীবনযাপন আরম্ভ করেন।