ফিরোজ মেহদী:
আজকের ইসলামের ধর্মব্যবসায়ী মোল্লারা মূর্র্তিপূজাকে একেবারে হারাম ও শেরকী গোনাহ ফতোয়া দিয়েই ক্ষান্ত হন। এর বেশি তারা তলিয়ে দেখেন না বা দেখতে পারেন না। যদি দেখতে পেতেন তবে বুঝতেন যে, মূর্র্তিপূজার চেয়েও বড় শেরকে আজ মানবজাতি ডুবে আছে। সেই শেরকের ব্যাপারে এই বিকৃত ইসলামের ধর্মজীবী আলেম সাহেবরা নীরব। সেই শেরক হোচ্ছে গণতন্ত্রের পূজা, সমাজতন্ত্রের পূজা, একনায়কতন্ত্রের পূজা, প্রথাগত রাজতন্ত্রের পূজা। বর্তমানে সনাতনধর্মীরা যে প্রতিমাপূজা করে থাকেন তাদের মূল লক্ষ্য থাকে স্রষ্টার সান্নিধ্যলাভ, পার্থিব নানা সমস্যা থেকে পরিত্রাণ লাভ। আল্লাহর শেষ রসুল যখন মক্কায় আসেন তখনও কাবা শরীফের প্রাঙ্গণে ৩৬০টি মূর্র্তি ছিল এবং আরব গোত্রগুলির অধিকাংশই মূর্র্তিগুলির পূজা করত। ইতিহাস এবং কোর’আন উভয়ই সাক্ষ্য দেয় যে, সেই আরবরা মুর্তিগুলিকে আল্লাহ মনে করত না, তারা মনে করত এগুলি তাদেরকে আল্লাহর সান্নিধ্য পাইয়ে দেবে, তাদের সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে তাদের জন্য সুপারিশ করবে। অর্থাৎ তাদের মূর্র্তিপূজার নেপথ্যে স্রষ্টার একটি যোগসূত্র তারা বিশ্বাস করত। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন মতবাদ ও জীবনব্যবস্থার যে মূর্র্তিগুলির পূজা মানবজাতি করছে তার সঙ্গে স্রষ্টার কোন সম্পর্ক নেই, বরং স্রষ্টা বিমুখতা, স্রষ্টার বিধানের প্রতি বিদ্রোহ ইত্যাদিই সেগুলিতে বেশি পরিমাণে প্রকট। আমাদেরকে বুঝতে হবে যে, মূর্তি এখন আর এলাহ অর্থাৎ বিধানদাতা, হুকুমকর্তা, সার্বভৌমত্বের স্থানে নেই। রসুলাল্লাহ মূর্র্তি ভেঙ্গেছিলেন যতদিন ঐ মূর্র্তির পুরোহিতরা সার্বভৌমত্বের অধিকারী ছিল। কিন্তু যখন স্রষ্টার সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হলো তখন আর রসুলাল্লাহর অনুসারীরা ভিন্ন ধর্মের উপাস্য, উপাসনালয় ও আরাধ্য ব্যক্তিদের মূর্র্তি বা ভাস্কর্য কিছুই ভাঙেন নি। এমন বহু উদাহরণ ইতিহাসের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে।
সমগ্র পৃথিবীতে আজ সার্বভৌমত্ব দাজ্জাল অর্থাৎ ইহুদি খ্রিস্টান পাশ্চাত্য বস্তুবাদী ‘সভ্যতা’র হাতে। সেই এখন মানবজাতির প্রধান এলাহ বা হুকুমদাতা, ধর্ম আজ ব্যক্তি-ইচ্ছার পরিসীমায় আবদ্ধ। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মন্দিরে গিয়ে দেব-দেবীর সামনে প্রণত হয় অথচ তারাও তাদের জাতীয় জীবনে সেই পশ্চিমা সভ্যতার দেওয়া বিধানের সামনে কেবল প্রণতিই জানাচ্ছেন না, ‘ষাষ্ঠাঙ্গপ্রণিপাত’ করে আছেন। রামচন্দ্র-যুধিষ্ঠিরকে মন্দিরে, মহাকাব্যের পাতায় আর টিভি পর্দায় রেখে জীবন চালাচ্ছেন ব্রিটিশের বিধান দিয়ে, তন্ত্রমন্ত্রের মূর্তিই এখন তাদের ভাগ্যনিয়ন্তা প্রভু। হায়রে ধর্ম!!
কাজেই এখন বুঝতে হবে কাঠ পাথরের মূর্র্তির পূজা হয়ে গেছে ব্যক্তিগত আরাধনার বিষয়, প্রকৃত অর্থে ধর্ম ব্যবসায়ীদের আয়ের একটা মাধ্যম। কিন্তু বৃহত্তর জনসাধারণের জন্য জীবনের বাস্তব অঙ্গনে এখন বড় মূর্র্তি হলো পাশ্চাত্য সভ্যতার তন্ত্র মন্ত্র ইত্যাদি। আগে ঐসব মূর্র্তিকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। আসুন আমরা সবাই মিলে সম্মিলিতভাবে সেই ‘নব্য ভগবান’ পাশ্চাত্য সভ্যতাকে প্রত্যাখ্যান করি, যারা আমাদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করেছে, যারা আজও আমাদের রক্ত শুষে দিন দিন দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম, হীন থেকে হীনতম করে ফেলছে। যারা আমাদের ভাইয়ে ভাইয়ে লড়াই বাধিয়ে দিয়ে গেছে, দাঙ্গা-বিভেদের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে দিয়ে গেছে, আসুন আমরা ঘৃণাভরে সেই প্রতারক সভ্যতাকে প্রত্যাখ্যান করি এবং স্রষ্টার দিকে ফিরে যাই।