আদিবা ইসলাম:
প্রতিবছর ক্যালেন্ডারের পাতা ঘুরে জিলহজ মাসে মুসলিম উম্মাহর বাৎসরিক সম্মেলন ‘হজ’ আসে। জিলহজ মাসের আট থেকে তেরো তারিখ পর্যন্ত চলে হজের আনুষ্ঠানিকতা। এই দিনগুলো আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় ইতিহাসের বহু তাৎপর্যময় ঘটনা। আল্লাহর প্রিয় নবী ইব্রাহিম (আ.) কে স্বপ্নযোগে আদেশ করে পুত্র ইসমাইল (আ.) কে কোরবানি করার জন্য। এটা ছিল তাঁর জন্য একটি পরীক্ষা। তিনি সেই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে উদ্যত হলে আল্লাহ খুশি হয়ে পুত্রের পরিবর্তে একটি পশু কোরবানি করতে বলেন। সেই থেকে শুরু হয় এই কোরবানি দেওয়ার প্রচলন। প্রতিবছর ঈদে এবং হজের সময় পশু কোরবানির মাধ্যমে সেই ইতিহাসকে স্মরণ করা হয়। শেষ ইসলাম প্রতিষ্ঠার আড়াই হাজার বছর আগে থেকেই মক্কায় হজ হত। লোকেরা কাবা তওয়াফ করত, পশু কোরবানি করত। ইব্রাহীমের (আ.) এর রেখে যাওয়া তওহীদকে অস্বীকার করে যখন তাঁর অনুসারীরা কাফের ও মোশরেকে পরিণত হল, মূর্তিপূজায় লিপ্ত হল তখনও তারা হজ চালিয়ে গেল, কোরবানি চালিয়ে গেল। রসুলাল্লাহ (সা.)-ও হজের ২ পৃষ্ঠায় দেখুন বিধান অব্যাহত রাখলেন তবে মূল কার্যক্রম নিয়ে গেলেন আরাফাতের ময়দানে। হজের অঙ্গ হিসাবে কাবা তওয়াফ, কোরবানি ইত্যাদি ঠিক রইল।
তফাৎ শুধু এই হলো যে, আগে মোশরেকরা সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়েও কাবা তাওয়াফ করত তা একধাপ তফাৎ করে সেলাই বিহীন দু’টুকরো কাপড় জড়িয়ে করা হল। প্রাক-ইসলামের হজের সঙ্গে ইসলামের ‘হজের’ আনুষ্ঠানিকতায় খুব বেশী তফাৎ ছিলো না, এখনও নেই। তবে আসমান-জমিনের তফাৎ এসে গেলো দুটো বিষয়ে, দুটো আকিদায়। একটা হলো- কাবার ভেতরের মূর্তিগুলো অদৃশ্য হয়ে গেল, দ্বিতীয় হলো মোশরেকদের ‘ইবাদতের’ বদলে একে করা হলো বিশ্ব-মুসলিমের বার্ষিক মহাসম্মেলন। যেহেতু মুসলিমের দীন ও দুনিয়া এক, কাজেই স্বভাবতঃই এ মহাসম্মেলনের রাজনৈতিক, সামাজিক আইনগত অর্থাৎ জাতীয় দিকটার সঙ্গে মুসলিমের ব্যক্তিগত আত্মার দিক অবিচ্ছিন্নভাবে জড়িত। তাই মুসলমান হজে যেয়ে যেমন উম্মাহর জাতীয় সমস্ত সমস্যার সমাধানে অংশ নেবে, তেমনি আরাফাতের ময়দানকে হাশরের ময়দান মনে করে নিজেকে আল্লাহর সামনে উপস্থিত বলে মনে করবে। এভাবে হজ হল মুসলিম উম্মাহর একাধারে জাগতিক ও আধ্যাত্মিক মিলনমেলা।
রসুল (সা.) জীবনে একবারই হজ করেছেন। সেই হজে লক্ষাধিক সাহাবি উপস্থিত ছিলেন। মূলত এই হজই ছিল বিশ্বনবীর (সা.) জীবনের সবচেয়ে বড় জনসমাবেশ। দশম হিজরি সনের নবম জিলহজ আরাফার দিনে এবং পরদিন দশম জিলহজ ঈদ ও কোরবানির দিন তিনি তার জীবনের এই শেষ হজের ভাষণ প্রদান করেন। কথা হচ্ছে, যে হজ তিনি জানতেন তাঁর শেষ হজ, সেই হজে জাতির উদ্দেশ্যে তিনি কি কি বিষয়ে (Point) বলেছিলেন? অতি সংক্ষেপে বিষয়গুলো উল্লেখ করছি:
হে মানবমণ্ডলী, স্মরণ রাখ, তোমাদের আল্লাহ এক, তাঁর কোনো শরিক নেই। তোমাদের আদি পিতা একজন। অনারবদের ওপর আরবদের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। তদ্রুপ সাদার ওপর কালোর কোনো প্রাধান্য নেই। তাকওয়া (আল্লাহর আদেশ নিষেধের প্রতি সতর্কতা) শুধু শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার মানদণ্ড।
তোমাদের পরস্পরের রক্ত ও ধনসম্পদ আজকের দিন, এ মাস এবং এ শহরের মতো পবিত্র।
এখন থেকে সব ধরনের সুদ হারাম করা হলো।
স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। কেননা আল্লাহর আমানতস্বরূপ তোমরা তাদের গ্রহণ করেছ এবং আল্লাহর কলেমার মাধ্যমে হালাল করা হয়েছে।
আমি তোমাদের কাছে এমন দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যা দৃঢ়ভাবে ধারণ করলে পথভ্রষ্ট হবে না। একটি হলো আল্লাহর কিতাব আর অন্যটি হলো আমার সুন্নাহ।
হে জনতা, মনে রেখ, আমার পর কোনো নবি নেই। তোমাদের পর কোনো উম্মত নেই। ফলে তোমাদের প্রতিপালকের ইবাদত করবে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে, রমজানের রোজা রাখবে, স্বেচ্ছায় ধনসম্পদের জাকাত দেবে, আল্লাহর ঘরে হজ করবে, আমির ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক কানকাটা ক্রীতদাস হলেও তার আনুগত্য করবে। যদি তোমরা এসব পালন করো, তাহলে তোমাদের রবের জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে (ইবনে মাজাহ)।
হে মানবমণ্ডলী, পিতার অপরাধে পুত্র দায়ী হবে না এবং পুত্রের অপরাধে কোনো পিতাকে দায়ী করা হবে না।
প্রত্যেক মুসলমান ভাই ভাই। তোমরা তোমাদের দাস-দাসী সম্পর্কে সতর্ক থাকবে। তোমরা যা খাবে তাদেরও তা খেতে দেবে। তোমরা যা পরিধান করবে তাদেরও তা পরতে দেবে। তাদের অপরাধ ক্ষমা করে দেবে। শাস্তি দেবে না।
হে মানবজাতি, ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করবে না। কেননা অতীতের অনেক জাতি এ বাড়াবাড়ির কারণে ধ্বংস হয়েছে।
তিনি তাঁর এই ভাষণকে কতখানি গুরুত্ব দিয়েছিলেন তা বোঝা যায় এই থেকে যে, অতবড় সম্মেলনেও খুশি না হয়ে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যে, যারা উপস্থিত আছেন তারা যেন তাঁর নির্দেশগুলি অনুপস্থিত সবার কাছে পৌঁছে দেন। অর্থাৎ আরও বৃহত্তর জনগোষ্ঠী, তাঁর সমস্ত উম্মাহ যাতে এই বক্তব্য শুনতে এবং জানতে পারে। কথা হচ্ছে কী ছিল তার সেই বক্তব্যে যার ব্যাপারে তিনি এতখানি গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
মহানবীর বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সেখানে তিনি যাবতীয় সকল অন্যায়-অবিচার, বর্ণবাদ, বণবৈষম্য, দাসপ্রথা, কন্যা শিশু হত্যা, গোত্রে গোত্রে দ্বন্দ্ব-সংঘাত, হত্যা, লুণ্ঠন, সুদ, ঘুষ, ব্যভিচার, বিভেদ-বিভাজনের বিরুদ্ধে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এক যুগান্তকারী দলিল পেশ করেন। তিনি বলেন, সব মানুষ আদম (আ.)-এর সন্তান। সব মুসলমান পরস্পর ভাই ভাই। তাই তারা ঐক্যবদ্ধ থাকবে। তাদের একের উপর অন্যের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই। অনারবের ওপর আরবের, আরবের ওপর অনারবের, শ্বেতাঙ্গের ওপর কৃষ্ণাঙ্গের এবং কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শ্বেতাঙ্গের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই। জাতি, বর্ণ, ভাষার ভিত্তিতে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব নির্ণয় হবে না। শ্রেষ্ঠত্ব হবে তাকওয়ার ভিত্তিতে, ন্যায়-অন্যায়ের মানদণ্ডের ভিত্তিতে। যে যত ন্যায়ের পথ অবলম্বন করবে সে আল্লাহর কাছে তত প্রিয়। জাহেলি যুগের বর্বর দাসত্ব ব্যবস্থাকে রহিত করতে এবং দাসদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে তিনি বলেন, তোমাদের অধীনদের (দাস-দাসীদের) প্রতি খেয়াল রাখবে, তোমরা যা খাবে, তাদেরকে তা খাওয়াবে, তোমরা যা পরিধান করবে, তাদেরকেও তা পরাবে। ভাবা যায়, সমাজের সমতা, ন্যায়পরায়ণতা কোন জায়গায় আনলে রসুলাল্লাহ (সা.) এ কথা বলতে পারেন যে, মালিক যা খাবে তার কাজের লোককেও সে খাবার খাওয়াতে হবে, মালিক যা পরবে তাকেও তা পরাতে হবে! অন্যের সম্পদ কেউ যেন আত্মসাৎ না করে সেজন্য তিনি বলেন, অন্যের গচ্ছিত আমানত তার প্রাপকের নিকট অবশ্যই পৌঁছে দিতে হবে। সমাজে যেন সুদের চর্চা না হয় সেজন্য তিনি কঠোরভাবে সুদকে রহিত করেন। তিনি বলেন মহান আল্লাহ ফয়সালা দিয়েছেন যে আর কোনো সুদ নয়।
তৎকালীন আরবে নারীদের অবস্থা ছিল খুব শোচনীয়। স্বামীরা স্ত্রীদেরকে তাদের সম্পত্তি, দাসী, বাঁদি মনে করত। তাদেরকে মানুষের মর্যাদা দেওয়া হত না। তাই এ ব্যাপারেও তিনি বিশেষ সাবধান বাণী উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, নারী জাতির কথা ভুলো না। নারীর ওপর পুরুষের যেমন অধিকার আছে, পুরুষের ওপর নারীরও তেমন অধিকার আছে। তাদের প্রতি অত্যাচার কোরো না। মনে রেখ, আল্লাহকে সাক্ষী রেখে তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের গ্রহণ করেছ। নারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, স্বামীর বিনা অনুমতিতে তার সম্পদ অন্যকে দান কোরো না। এভাবে তিনি পারিবারিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। তৎকালীন আরব সমাজে একের অপরাধে অন্যকে শাস্তি দেওয়ার প্রচলন ছিল। রসুলাল্লাহ (সা.) তাই এ ব্যাপারেও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। তিনি বলেন, একের অপরাধে অন্যকে শাস্তি দেওয়া নিষিদ্ধ। অপরাধ যে করবে শাস্তি সেই পাবে। সম্পত্তি বন্টনের ক্ষেত্রে আল্লাহ যে উত্তরাধিকার আইন দিয়েছে তা মেনে চলার ব্যাপারেও তিনি নির্দেশ দেন। স¤পত্তির ওসিয়ত তিনি নিষিদ্ধ করেন। এভাবে ন্যায়, সুবিচার, শান্তিপূর্ণ একটি সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য জরুরি প্রতিটা বিষয় তিনি তুলে ধরেন। আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল তাঁর নির্দেশনাগুলির প্রায় সবই ছিল সামষ্টিক জীবন সম্পর্কিত, ব্যক্তিগতভাবে পালনের মত বলতে গেলে কিছুই সেখানে ছিল না।
১৯৪৮ সালে ঘোষিত জাতিসংঘের করা মানবাধিকার চার্টারকে সর্বোচ্চ মানবাধিকার হিসাবে গণ্য করা হয়। অথচ এসব অধিকার ইসলাম ১৪০০ বছর আগেই কার্যকর করে দেখিয়েছে। জাতিসংঘের ঘোষিত মানবাধিকারের ধারাগুলো কেতাবে থাকলেও গোয়ালে কতটা আছে তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। যেমন ঘোষণাপত্রের ২ নং ধারায় বলা হচ্ছে, ‘কোনো দেশ বা ভূখণ্ডের রাজনৈতিক, সীমানাগত বা আন্তর্জাতিক মর্যাদার ভিত্তিতে তার কোন অধিবাসীর প্রতি কোনরূপ বৈষম্য করা হবে না; সে দেশ বা ভূখণ্ড স্বাধীনই হোক, হোক অছিভূক্ত, অ-স্বায়ত্বশাসিত কিংবা সার্বভৌমত্বের অন্য কোন সীমাবদ্ধতায় বিরাজমান।’ অথচ জাতিসংঘের চোখের সামনে ফিলিস্তিনের মুসলমান জনগোষ্ঠীর উপর ইসরায়েল রাষ্ট্র যেভাবে অত্যাচার-নিপীড়ন চালাচ্ছে, তাদের ভূখণ্ড থেকে বিতাড়িত করছে, অধিকার ক্ষুণ্ন করছে। সাম্য-সমতা তো বহু পরের বিষয় বেঁচে থাকার অধিকারটুকুও হারিয়েছে তারা। এই সেদিন মিয়ানমারের সামারিক সরকার যখন ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলমানকে শত শত বছরের বাসভূমি থেকে উৎখাত করে দিল, অর্ধ লক্ষ মানুষকে হত্যা করল তখন জাতিসংঘের ঘোষণাপত্র কোথায় ছিল? ঘোষণাপত্রের ০৭ নং ধারায় বলা হচ্ছে, ‘আইনের চোখে সকলেই সমান এবং ব্যক্তি নির্বিশেষে সকলেই আইনের আশ্রয় সমানভাবে ভোগ করবে’। তাহলে গাজার মুসলমান, রোহিঙ্গা মুসলমান তারা আইনের আশ্রয় কেন পাচ্ছে না?
আমাদের দেশের অবস্থাও একই। আইনের প্রয়োগ, বিচার, শাসন কেবল সমাজের দুর্বল মানুষের জন্য। রাঘব বোয়ালরা দুর্নীতি করে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি কামিয়ে নেয়, দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে কিন্তু তখন বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে কাঁদে।
অন্যদিকে আল্লাহর রসুল (সা.) তাঁর সমগ্র জীবনে অক্লান্ত পরিশ্রম, সীমাহীন ত্যাগ-তিতীক্ষার বিনিময়ে মানুষের জীবনে আল্লাহর দেওয়া দীন প্রতিষ্ঠা করে প্রকৃতপক্ষে শান্তিময় এক স্বর্গরাজ্যের ভিত রচনা করে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সেই ভিতের উপর এমন এক সভ্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যেখানে মাসের পর মাস আদালতে কোনো মামলা আসতো না, স্বর্ণের দোকান খোলা রেখে মানুষ নামাজ পড়তে যেত কেউ চুরি করত না, মূল্যবান কিছু হারিয়ে ফেললে তা আবার ফিরে পাওয়া যেত, ধনীরা উটের পিঠে খাবার ও সম্পদ বোঝাই করে দরিদ্র মানুষ খুঁজে ফিরত, কিন্তু কেউ গ্রহণ করত না। সবাই বলত, আল্লাহর দয়ায় আজ আমাদের যথেষ্ট আছে। সমাজের সুবিচার, নিরাপত্তা, স্বচ্ছলতা কোন পর্যায়ে গিয়েছিল কল্পনা করুন। বিদায় হজ্বের ভাষণে রসুলাল্লাহ যেসব মানবাধিকার ঘোষণা করেছিলেন সেগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর চেয়েও অধিক মানবতাবাদী, উপযোগী, ন্যায়পূর্ণ ঘোষণা আর হতে পারে না। এই ঘোষণাই পারে আমাদের বর্তমান সময়ের অন্যায় অপরাধ, দুর্নীতি, অর্থনৈতিক বৈষম্য, অবিচারপূর্ণ সমাজে শান্তি ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে। ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে চলমান শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতা চরম অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবাই নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ জাতি ও আল্লাহর আশীর্বাদপুষ্ট বান্দা বলে দাবি করছে। এই অবস্থার পরিবর্তন আনতে পারে সেই ঐতিহাসিক ভাষণের কথা, ‘সাদার উপর কালোর কোন শ্রেষ্ঠত্ব নাই, কালোর উপর সাদার কোন শ্রেষ্ঠত্ব নাই’। শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ড নির্ধারিত হবে ন্যায়-অন্যায়ের উপর। এটাই আল্লাহ শ্রেষ্ঠত্ব পরিমাপের মানদণ্ড দিয়েছেন। রসুলাল্লাহ (সা.) বলা এই প্রতিটি শিক্ষা যখন বাস্তবায়ন হবে তখনই আমাদের মধ্যকার এই উচু-নিচুর দেওয়াল, বিবাদ-বিভাজন দূর হবে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বিদায় হজের ভাষণের এই শিক্ষাগুলো কে বাস্তবায়ন করবে? শিক্ষাগুলো তো জাতিগত, একা একা পালনযোগ্য নয়। তাই প্রয়োজন একটি জাতির যার জীবনব্যবস্থা হবে আল্লাহর দেওয়া। তাগুতের জীবনব্যবস্থার অধীনে থেকে এই ভাষণ কার্যকর করা যাবে না। যেমন এতে বলা হয়েছে সুদ নিষিদ্ধ। এখন চাইলেই কি কেউ সুদ থেকে মুক্ত থাকতে পারবে? পারবে না। পুঁজিবাদী অর্থনীতি সুদের উপরই দাঁড়িয়ে আছে। সুদ রহিত করতে হলে পুঁজিবাদী গণতন্ত্রের পতন ঘটাতে হবে। এভাবে সবগুলো বিষয়ই কার্যকর করা সম্ভব হবে যদি আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি মানবজীবনে প্রতিষ্ঠা করা হয়। তাহলে শুরুতেই লাগবে একদল মো’মেন যারা এই দীনকে মানবসমাজে প্রতিষ্ঠা করবে। তারাই বিদায় হজে বলা রসুলাল্লাহর প্রতিটি নির্দেশ এবং বাণী সমাজে বাস্তবায়ন করতে পারবে। বিশ্বের যে অংশে এটা প্রতিষ্ঠিত হবে সেখানে শান্তি নেমে আসবে। এই জাতির দায়িত্ব সমগ্র পৃথিবীতে আল্লাহর দীনকে প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে মানবজীবনে শান্তি ও মানবাধিকার নিশ্চিত করা। এজন্য রসুলাল্লাহ যেভাবে এক জন থেকে বহুজনের একটি উম্মাহ গড়ে তুলেছিলেন, তাদেরকে নিয়ে প্রাণপণ সংগ্রাম করে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, আমাদেরকেও সেটাই করতে হবে। অন্য কোনো পথ নেই।
[লেখক: শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ; যোগাযোগ: ০১৬৭০১৭৪৬৪৩, ০১৭১১০০৫০২৫, ০১৭১১৫৭১৫৮১]