আল্লাহ তাঁর রসুলের (সা.) উপর দায়িত্ব দিয়েছেন মানবজীবনে হেদায়াহ ও সত্যদীন প্রতিষ্ঠা করার (সুরা ফাতাহ-২৮, সুরা সফ ৯, সুরা তওবা ৩৩)। কেননা কেবল আল্লাহর দেওয়া সত্যদীন প্রতিষ্ঠা হলে পৃথিবী থেকে যাবতীয় অন্যায়-অবিচার, যুদ্ধ-রক্তপাত, হানাহানি, মারামারি এককথায় অশান্তি নির্মূল হয়ে যাবে; মানবজাতি শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। উম্মতে মোহাম্মদি জাতি আল্লাহর রসুলের ওফাতের পর তাঁর উপর আল্লাহর অর্পিত কর্তব্য বাস্তবায়ন করতে একাগ্র লক্ষ্যে সংগ্রাম চালিয়ে যায় প্রায় ৬০/৭০ বছর এবং এই অল্প সময়ের মধ্যে তদানীন্তন পৃথিবীর এক উল্লেখযোগ্য অংশে এই শেষ ইসলাম প্রতিষ্ঠা করে। তারপর দুর্ভাগ্যক্রমে আরম্ভ হয় উদ্দেশ্যচ্যুতি, আকিদার বিচ্যুতি। আর তন্মধ্যে প্রথম বিকৃতি হলো অতি বিশ্লেষণ, দীন নিয়ে বাড়াবাড়ি। পূর্ববর্তী প্রত্যেক নবী দুনিয়া থেকে বিদায় নেবার পর তাদের জাতির যার যার দীনকে নিয়ে সেটার ব্যাখ্যা, অতি ব্যাখ্যা, আরও অতি ব্যাখ্যা করতে শুরু করেছে। যার ফলে ঐ বিভিন্ন ব্যাখ্যার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন মতামত গড়ে উঠেছে। দীনের আসল উদ্দেশ্য, তার মর্মবাণী ভুলে যেয়ে ছোটখাটো বিভিন্ন ব্যবস্থা, ফতওয়া নিয়ে মতান্তর শুরু হয়ে গেছে এবং ফলে বহুভাগে ভাগ হয়ে জাতিগুলির ঐক্য নষ্ট হয়ে জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে।
শেষ দীনে বাড়াবাড়ির আর যেন পুনঃসংঘটন না হয় সেজন্য আল্লাহ সাবধান করে দিয়ে বলেন, ‘বলুন, হে আহলে কিতাব! তোমরা তোমাদের দ্বীন সম্বন্ধে অন্যায় বাড়াবাড়ি করো না; এবং যে-সম্প্রদায় অতীতে বিপথগামী হয়েছে এবং অনেককে বিপথগামী করেছে এবং সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে তাদের স্বেচ্ছাচারিতার অনুসরণ করো না (আল মায়েদা ৭৭)। আল্লাহ সুরা আন নিসার ১৭১ নম্বর আয়াতে বলেন, দীন নিয়ে বাড়াবাড়ি কর না। দীন নিয়ে বাড়াবাড়ি করার এই নিষেধের অর্থ এই নয় যে খুব ধার্মিক হয়োনা বা দীনকে শেষ পৃষ্ঠার পর: ভালোভাবে অনুসরণ কর না, বা বেশি ভালো মুসলিম হবার চেষ্টা কর না। এই বাড়াবাড়ির অর্থ, ঐ অতি বিশ্লেষণ, জীবন-বিধানের আদেশ নিষেধগুলিকে নিয়ে সেগুলোর সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর বিশ্লেষণ। যে জাতি রসুলের দেওয়া দায়িত্ব উপলব্ধি করে সমস্ত কিছুর মায়া ত্যাগ করে আটলান্টিকের তীর থেকে ৬০/৭০ বছরের মধ্যে চীনের সীমান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল, পরবর্তীতে সেই সত্য, ন্যায়, সুবিচার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ছেড়ে দিয়ে ঐ জাতি ঐ বিধানগুলির সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণ আরম্ভ করে দেয়। আদম (আ.) থেকে শুরু করে শেষনবী (সা.) পর্যন্ত আল্লাহ যে দীন মানুষের জন্য পাঠিয়েছেন, স্থান, কাল ভেদে সেগুলোর নিয়ম-কানুনের মধ্যে প্রভেদ থাকলেও সর্বদা ভিত্তি থেকেছে একটি মাত্র। সেটা হচ্ছে একেশ্বরবাদ, তওহীদ, একমাত্র প্রভু, একমাত্র বিধাতা (বিধানদাতা) আল্লাহ। যাঁর আদেশ, নির্দেশ, আইন-কানুন ছাড়া অন্য কারো আদেশ, নির্দেশ, আইন-কানুন কিছুই না মানা। একেই আল্লাহ কোর’আনে বলছেন দীনুল কাইয়্যেমা। আল্লাহ মানুষের কাছে এইটুকুই মাত্র চান। কাইয়্যেমা শব্দটা এসেছে কায়েম থেকে যার অর্থ চিরন্তন, শ্বাশত, সনাতন। আল্লাহ এই দীনুল কাইয়্যেমার কথা বলে বলছেন, এর বেশি তো আমি আদেশ করিনি (সুরা আল-বাইয়েনাহ্ ৫)। কারণ তাঁর বিধান ছাড়া অন্য কোনো বিধান মানুষ না মানলেই মানবজাতির মধ্যে পূর্ণ শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। এই সামান্য দাবিটুকুই আল্লাহ মানুষের কাছে আদম থেকে আজ পর্যন্ত করে আসছেন।
এবার দীন নিয়ে বাড়াবাড়ি প্রসঙ্গে আল্লাহর রসুলের কিছু সাবধান বাণী দেখে নেওয়া যাক,
আল্লাহর রসুল বলেন, ‘দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি সম্পর্কে সাবধান! তোমাদের পূর্ববর্তী (জাতিগোষ্ঠী) এরূপ বাড়াবাড়ির পরিণামে নিশ্চিহ্ন হয়েছে (আহমাদ, নাসাই ও ইবনে মাজাহ)।’
‘তারা অভিশপ্ত, যারা চুল ফাঁড়তে (দীনের চুলচেরা বিশ্লেষণে) লিপ্ত (মুসলিম, আহমাদ ও আবু দাউদ)।’
‘নিজের ওপর এমন অতিরিক্ত বোঝা চাপিও না যাতে তোমার ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তোমাদের পূর্ববর্তী জনগোষ্ঠী নিজেদের ওপর অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে ধ্বংস হয়েছে। তাদের ধ্বংসাবশেষ পুরাতন মঠ-মন্দিরে খুঁজে পাওয়া যায় (আবু ইয়ালা তার মসনদে আনাস ইবনে মালিকের বরাতে এবং ইবনে কাছির সুরা হাদিসের ২৭ আয়াতের তাফসিরে এই হাদিস উল্লেখ করেছেন)।’ ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, ‘একটি লোক রসুলাল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রসুল, আমি যখনই এই গোশতগুলো খাই তখনই আমার কামপ্রবৃত্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, তাই আমি গোশত না খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর পরপরই আয়াত নাযিল হয় এবং ঐ ব্যক্তি সতর্ক হয়ে যান।’
আনাস ইবনে মালিক (রা) বর্ণনা করেন, একদল লোক নবী সহধর্মিণীদের কাছে এসে রসুলাল্লাহর এবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। এ ব্যাপারে অবহিত হওয়ার পর তারা তাদের ইবাদত-বন্দেগীকে অপর্যাপ্ত বিবেচনা করে একজন বললেন, আমি সর্বদা সারারাত নামাজ পড়ব; আরেকজন বললেন, আমি সারা বছর রোজা রাখব এবং কখনো ভাঙ্গবো না। এ সময় আল্লাহর নবী তাদের কাছে এলেন এবং বললেন, ‘আল্লাহর শপথ আল্লাহর প্রতি আনুগত্য আমারই সবচেয়ে বেশী এবং তাঁকে বেশী ভয় করি তোমাদের চেয়ে; তথাপি আমি রোযা রাখি এবং ভাঙ্গিও, আমি ঘুমাই এবং নারীকে বিয়ে করি। সুতরাং যে আমার সুন্নাহকে অনুসরণ করে না সে আমার অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত নয়।’
দীন নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে দেখলে রসুলাল্লাহ রেগে লাল হয়ে যেতেন এবং যারা তা করত তাদেরকে কঠিনভাবে তিরস্কার করতেন। অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কোন বিষয়ে মাসলা জানতে চাইলে বিশ্বনবী (দ.) প্রথমে তা বলে দিতেন। কিন্তু কেউ যদি আরও একটু খুঁটিয়ে জানতে চাইতো তাহলেই তিনি রেগে যেতেন। একদিন একজন পথে পড়ে থাকা জিনিসপত্র কি করা হবে এ ব্যাপারে রসুলাল্লাহর (দ.) কাছে মাসলা জিজ্ঞাসা করায় তিনি তার জবাব দিয়ে দিলেন। ঐ লোকটি যেই জিজ্ঞাসা করলেন যে যদি হারানো উট পাওয়া যায় তবে তার কি মাসলাহ? অমনি সেই জিতেন্দ্রীয় মহামানব এমন রেগে গেলেন যে তার পবিত্র মুখ লাল টকটকে হয়ে গেলো (হাদিস, যায়েদ এবনে খালেদ জুহানী (রা.) থেকে বুখারি)।
অতি বিশ্লেষণ করে দীনের প্রাণশক্তি বিনষ্ট করে দেওয়ার কাজটা আজকের নতুন নয়, শুধু আমাদের ধর্মীয় পণ্ডিত আলেম-মাওলানারাই যে এই কাজ করেছেন তাই নয়। পূর্ববর্তী দীনগুলোতেও অতি-ধার্মিকরা গজিয়েছেন ও পাণ্ডিত্য জাহির করে তাদের দীনগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে আল্লাহ কোর’আনে একটি উদাহরণ দিয়ে আমাদের বুঝিয়ে দিচ্ছেন তাঁর নবী মুসার (আ.) জীবনী থেকে যেখানে আল্লাহ বনী ইসরাইলদের একটি গরু কোরবানি করতে আদেশ দিলেন। মুসা (আ.) যখন এই কোরবানির আদেশ বনী ইসরাইলদের জানিয়ে দিলেন তখন যদি তারা মোটামুটি ভালো একটি গরু এনে কোরবানি করে দিত তাহলে তাতেই কাজ হয়ে যেত। কারণ কোরবানির গরুটা কেমন হবে সে সম্বন্ধে আল্লাহ কোনো শর্ত দেন নি। কিন্তু আল্লাহ কোর’আনে বলছেন, বনী ইসরাইল তা করে নি। তারা মুসার (আ.) মাধ্যমে আল্লাহকে প্রশ্ন করতে লাগল, গরুটার বয়স কত হবে, গায়ের রং কী হবে, সেটা জমি চাষের জন্য শি¶িত কিনা, জমিতে পানি দেয়ার জন্য শি¶িত কিনা, গায়ে কোন খুঁত থাকতে পারবে কিনা, ইত্যাদি ইত্যাদি (সুরা আল বাকারা ৬৭-৭১)। তারা প্রশ্ন করে যেতে লাগল আর আল্লাহ তাদের প্রত্যেক প্রশ্নের জবাব দিতে লাগলেন। তারপর যখন প্রশ্ন করার মতো আর কিছুই রইল না তখন স্বভাবতঃই ঠিক অমন একটি গরু পাওয়া দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াল। একটা সহজ সরল আদেশ, ‘একটা গরু কোরবানি কর’ এটাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে এমন কঠিন করে ফেলা হলো যে, অমন গরু আর পাওয়া যায় না। এই জাতির মহা পণ্ডিতরাও বিশ্বনবীর (দ.) ওফাতের ৬০/৭০ বছর পর ঠিক ঐ কাজটিই মহা ধুমধামের সাথে করা শুরু করেছেন। দু’টি মাত্র আদেশ- আমাকে ছাড়া কাউকে মানবে না, আমার দেয়া জীবন-বিধান ছাড়া আর কোনো বিধান মানবে না, আর এই জীবন-বিধানকে সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করবে। সহজ, সরল দু’টি আদেশ। বিশ্বনবীর (দ.) উম্মাহ ইস্পাতের মতো কঠিন ঐক্য নিয়ে ঐ কাজ করতে আরব থেকে বের হয়ে অবিশ্বাস্য ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। পূর্ববর্তী দীনের পণ্ডিতদের মতো এ উম্মাহর পণ্ডিতরাও একে ধ্বংস করে দিলেন।
আমরা কিন্তু ফিকাহ বা ফকিহদের বিরুদ্ধে বলছি না। মূলত কোর’আন ও হাদিস থেকে জীবন বিধানের নির্দেশগুলি একত্র ও বিন্যাস করলে যা দাঁড়ায় তাই ফিকাহ, এটি ছাড়া কোনো মুসলিমের জীবনব্যবস্থা অনুসরণ অসম্ভব। আমাদের ফকিহরা যদি কোর’আন-হাদিসের মৌলিক আদেশ নিষেধগুলিকে সুন্দরভাবে শ্রেণি বিন্যাস করেই ক্ষান্ত হতেন এবং লিখতেন যে এতটুকুই যথেষ্ঠ, এরপর আর অতিরিক্ত বিশ্লেষণে যেও না, তবে তাদের কাজের মাধ্যমে ইসলামকে প্রকৃত সেবা হতো। কিন্তু দুর্ভাগ্য তারা আজীবন কঠিন পরিশ্রম করে আল্লাহর আদেশ-নিষেধগুলি ও বিশ্বনবীর (দ.) কাজ ও কথাগুলিকে সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতম বিশ্লেষণ করতে করতে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছেন যে, সাধারণ মানুষের পক্ষে তা পূর্ণভাবে পালন করা প্রায় অসম্ভব এবং কেউ চেষ্টা করলে তার জীবনে অন্য আর কোনো কাজ করা সম্ভব হবে না, এ দীনকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের তো প্রশ্নই আসে না।
অতি বিশ্লেষণ ও বাড়াবাড়ির কারণে এই জাতির মূল কর্তব্য ও উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি এত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ে নিবদ্ধ হয়েছে যে আকাশের মতো বিশাল ইসলামকে তারা আর দেখতে পায় না। আজ তাদের দ্বিধাদ্বন্দ্বের বিষয় নবীজি মাটির তৈরি নাকি নূরের তৈরি, নবীজির ছায়া পড়তো কিনা, ইমাম সুরা ফাতিহা পড়ার পর মুক্তাদিরা আমিন জোরে বলবেন নাকি আস্তে বলবেন, দোয়াল্লিন হবে নাকি জোয়াল্লিন হবে, পাগড়ির রং কী হবে, টুপি কী আকৃতির হবে, দাড়ি কতটুকু হবে ইত্যাদি। অথচ এগুলোর সাথে দীনের বুনিয়াদি বিষয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। এসব বিষয়বস্তু জাতির মধ্যে কেবল বিভক্তিই সৃষ্টি করে যাচ্ছে।
এই ধরনের অতি বিশ্লেষণ এবং বাড়াবাড়ি করার কারণ হচ্ছে উম্মতে মোহাম্মদি জাতি আল্লাহর রসুলের ওফাতের মাত্র ৬০ থেকে ৭০ বছর পর জাতিগতভাবে ভুলে যায় তাঁদের মূল লক্ষ্য (পৃথিবীব্যাপী আল্লাহর দেওয়া জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা)। প্রথমে খলিফা পরিণত হয় ভোগবাদী সম্রাটে, তারা বিলাসী রাজা-বাদশাদের মতো জীবনযাপন শুরু করে। অন্যদিকে মুসলমানদের একটি অংশ ইসলামের মারেফতের অংশটুকু নিয়ে আলাদা হয়ে যায়, তারা নিজেদের আত্মার ঘষামাজা করে নিজেরা শুদ্ধ জীবন যাপনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, সমাজের অন্যায়, অবিচার নির্মূলের লক্ষ্য থেকে তারা সরে যায়। আরেকটি অংশ একইভাবে ব্যস্ত হয়ে পড়ে শরিয়তের সূক্ষ্ম ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে। অর্থাৎ এই দীনের দুটি অংশ মারেফত এবং শরিয়াহ দুটিকে আলাদা করে দিয়ে এই দীনকেই পঙ্গু করে দেওয়া হয়। আর আজও পর্যন্ত এই বাড়াবাড়ি চলেছে।
দীন নিয়ে বাড়াবাড়ির পরণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। দীন নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কারণে জাতির মধ্যে দেখা দেয় মতবিরোধ, ফলে জাতির ঐক্য নষ্ট হয়ে যায়। আর ঐক্য নষ্ট হলে যেকোন শক্তিশালী জাতিই দুর্বল হয়ে যায়। এছাড়াও বাড়াবাড়ির কারণে উম্মতের মোহাম্মদি জাতি গঠনের মূল উদ্দেশ্য অর্থাৎ দুনিয়াব্যাপী সংগ্রাম করে সত্যদীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য থেকে সরে গিয়ে ব্যক্তিগত জীবনে নিখুঁতভাবে আমলের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম বিষয়ের ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আর এরই ফলস্বরূপ মুসলিম জাতি পৃথিবীর কর্তৃত্বের আসন থেকে আজ দাসত্বের শৃংখলে বন্দী হয়েছে। পৃথিবীব্যাপী যে মুসলিম জাতির নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল তারা আজ অন্যান্য সকল জাতির কাছে ফুটবলের মত লাথি খাচ্ছে।
মুসলিম জাতি যদি এখন নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে চায়, আবারও পৃথিবীর কর্তৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত হতে চায় তবে তাদেরকে সকল মতবিরোধ, মতপার্থক্য ভুলে এক আল্লাহর তওহীদের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তাদেরকে একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আমরা আমাদের ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে সমষ্টিগত জীবনে এক আল্লাহর বিধিবিধান ছাড়া অন্য কারো বিধান মানবো না। সেই সাথে আল্লাহর দেওয়া বিধান সমগ্র দুনিয়াতে প্রতিষ্ঠার জন্য একত্রে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
[লেখক: শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, যোগাযোগ: ০১৬৭০১৭৪৬৪৩, ০১৭১১০০৫০২৫, ০১৭১১৫৭১৫৮১]