বিশ্বময় মুসলিম জাতির দুর্গতির কারণ কী, কেন একদা শ্রেষ্ঠ জাতি আজ সর্বত্র অপমানিত লাঞ্ছিত ও সর্ববিষয়ে নিকৃষ্ট তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। যারা শিক্ষিতমনা তারা বলেন, মুসলিম জাতি শিক্ষায় পিছিয়ে পড়েছে, তাদেরকে শিক্ষিত হতে হবে। যারা ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করেন তারা বলেন, মুসলিম জাতি রাজনীতি না করে কেবল ধর্মকর্ম নিয়ে আছে। তাদেরকে নির্বাচন করে আগে রাজনৈতিক ক্ষমতা হাসিল করতে হবে। আর আমাদের ধর্মীয় নেতারা বলেন, আমাদের ঈমান দুর্বল হয়ে গেছে। কেউ নামাজ পড়ে না, আলেম ওলামাদের সম্মান করে না। ওয়াজ মাহফিলে লোক হয় না, ওদিকে গানের আসর জমজমাট। এগুলো বন্ধ করতে হবে, তাহলেই মুসলিম জাতি আবার সেরা জাতি হয়ে যাবে। এসব হচ্ছে বিভিন্ন রকম ব্যাখ্যা।
বস্তুত মানবজাতির জীবনে যা কিছু ঘটে তার দুটো দিক থাকে- একটা বস্তুগত একটা আধ্যাত্মিক। আধ্যাত্মিক দিকটা হচ্ছে এমন, আল্লাহ বিশ্বনিয়ন্তা। তাঁর তৈরি প্রাকৃতিক নিয়মের বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা কারো নেই। প্রাকৃতিক নিয়মের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয় কোনো জাতির উত্থান পতন, জাতির তাকদির। মুসলিম জাতির চলমান দুর্গতির পেছনে এমনই একটি আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী। সেটা হচ্ছে, বিশেষ কিছু কারণে মুসলিম জাতি আল্লাহর অভিশাপের পাত্রে পরিণত হয়েছে। এই অভিশাপ যতদিন না কাটবে ততদিন তাদের বাঁচার কোনো পথ নেই। তাঁর এই ব্যাখ্যা কেউ গ্রহণ করতে পারেন, নাও করতে পারেন।
আমরা দেখছি মুসলিমদের জনসংখ্যা, মাদ্রাসা ও ছাত্রসংখ্যা, ওয়াজ মাহফিলের সংখ্যা, মসজিদের সংখ্যা, হাফেজ, মাওলানা, আল্লামা সবকিছুর সংখ্যাই প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। একসময় মুসলিম জাতির সংখ্যায় ৫ লক্ষ হয়েও ছিল শ্রেষ্ঠ, আর আজ ১৮০ কোটি হয়েও নিকৃষ্ট। মূল গলদ তাহলে কোথায়? মূল গলদ হচ্ছে আজকে এই মুসলিম জাতি নামমাত্র মুসলিম, তারা আল্লাহর দেওয়া সংজ্ঞা অনুযায়ী মো’মেন নয়। আল্লাহ বলেছেন, তারাই মো’মেন যারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করেনা এবং জীবন ও সম্পদ দ্বারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম (জেহাদ) করে, তারাই সত্যনিষ্ঠ (সুরা হুজুরাত ১৫)। আজ মুসলিম জাতি মো’মেন হওয়ার প্রথম শর্ত, ঈমান অর্থাৎ সামগ্রিক জীবনে আল্লাহর বিধিবিধান ছাড়া অন্য কারো বিধান না মানা থেকে সরে গেছে, তারা মানুষের তৈরি জীবনব্যবস্থা গ্রহণ করে ঈমান থেকে সরে গেছে। দ্বিতীয় শর্ত, সত্যদীন অর্থাৎ আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ত্যাগ করেছে। যার ফলস্বরূপ তারা আজ আল্লাহর ক্রোধের শিকার হয়েছে।
সর্বশক্তিমান আল্লাহ কোর’আনে বিভিন্ন জাতি, গোষ্ঠী, গোত্র, এমন কি ব্যক্তিকে তার কৃতকর্মের জন্য লা’নত অর্থাৎ অভিশাপ দিয়েছেন। তাঁর অভিশাপ মানেই নির্মম শাস্তি। আল্লাহ, যাঁর চেয়ে বড় ক্ষমাশীল নেই, যাঁর চেয়ে বড় দয়াশীল নেই, যাঁর কাছে ক্ষমা চাইলে তিনি বার বার ক্ষমার আশ্বাস দিয়েছেন, সেই তিনিই যখন অভিশাপ দেন তখন নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে সেই ব্যক্তি বা গোত্র বা গোষ্ঠী বা জাতি ক্ষমার যোগ্যতা ছাড়িয়ে বহুদূরে চলে গেছে, সেই ক্ষমাশীল আল্লাহর ক্ষমার সীমানা ছাড়িয়ে গেছে। কোর’আনে দেখা যায় তিনি প্রধানত তিনভাবে লা’নত দিয়েছেন।
১. তিনি শুধু নিজে দিয়েছেন। শুধু তাঁর একার লা’নত তিনি দিচ্ছেন তাদের, যুদ্ধ করতে বললে যারা ভয়ে মুর্ছিত, মৃতপ্রায় হয়ে যায় (কোর’আন সুরা মোহাম্মদ ২৩, ২৪), কাফেরদের (সুরা আহাযাব ৬৪), মোনাফেকদের (সুরা আল আহ্যাব ৬০, ৬১), যালেমদের (অন্যায়কারীদের) (সুরা হুদ ১৮) ইত্যাদি।
২. অন্যের মুখ দিয়ে দিয়েছেন। অন্যের মুখ দিয়ে লা’নত তিনি দিয়েছেন বনি ইসরাইলের কাফেরদের, একবার দাউদকে (আ.) দিয়ে, আরেকবার ঈসাকে (আ।) দিয়ে (সুরা আল মায়েদা ৮১)।
৩. তিনি তাঁর মালায়েক অর্থাৎ ফেরেশতা ও মানবজাতি সম্মিলিতভাবে লা’নত দিয়েছেন। আর তিনি, তাঁর মালায়েক ও মানবজাতির সম্মিলিত লা’নত দিয়েছেন দু’বার। একবার দিয়েছেন সেই সব কাফেরদের যারা মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহর দীনকে অস্বীকার করে কাফের অবস্থাই মারা গেল। তাদের সম্বন্ধে আল্লাহ বলছেন, ‘তারা (জাহান্নামে) চিরদিন থাকবে। তাদের শাস্তি কমানোও হবেন, বিরতিও দেয়া হবে না (কোর’আন সুরা আল বাকারা ১৬১, ১৬২)।’ আরেকবার দিয়েছেন তাদের, যারা একবার সত্য গ্রহণ করার পর কুফরে (অবিশ্বাসে) ফিরে গেছে (কোর’আন সুরা আল মায়েদা ৮৬, ৮৯)।
এই তিন রকমের লা’নতের মধ্যে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে ভয়ংকর লা’নত হচ্ছে তৃতীয়টি, অর্থাৎ সম্মিলিত লা’নত। অন্যের মুখ দিয়ে তিনি যে দু’বার বনি ইসরাইল অর্থাৎ ইহুদী জাতিকে লা’নত দিলেন তার পরিণাম দেখলেই বোঝা যাবে যে সম্মিলিত লা’নত কত ভয়ংকর হবে। ইহুদি জাতির উপর প্রথম লা’নত তিনি দিলেন দাউদের (আ.) মুখ দিয়ে। ফলে ব্যাবিলনের রাজা বখত নসর (ঘবনঁপযধফহবুুধৎ ওও) ইহুদিদের আক্রমণ করে পরাজিত করল। ব্যাবিলনীয় সৈন্যরা তাদের ঘরে ঘরে প্রবেশ করে তাদের হত্যা করল, বাকি সমস্ত লোকজনকে বন্দী করে সমস্ত জাতিটাকে ক্রীতদাসে পরিণত করে তাদের স্বদেশ ব্যাবিলনে নিয়ে গেল, ইহুদিদের ডেভিড মন্দির (ঞবসঢ়ষব ড়ভ উধারফ) ধ্বংস করে দিল। এ শাস্তি আল্লাহ দিলেন খ্রিস্টপূর্বাব্দ ৫৮৬ সনে। সম্পূর্ণ জাতিটি ব্যাবিলনে বহু বছর ক্রীতদাসের জীবন যাপনের পর আল্লাহর দয়ার উদ্রেক হলো। তিনি তাদের আবার সিরিয়ায় ফিরিয়ে এনে তাদের উপর দয়া করলেন। ইহুদিরা আবার ধনে-জনে সমৃদ্ধ হয়ে উঠল, তারা তাদের ডেভিড মন্দির পুনঃনির্মাণ করল।
তারপর যখন তারা আবার বিপথগামী হলো তখন আল্লাহ পাঠালেন তাঁর নবী ঈসাকে (আ.)। ঈসা (আ.) এসে বনি ইসরাইলীদের ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি ও সীমালংঘন থেকে বিরত করতে চেষ্টা করলেন, কিন্তু ব্যর্থ হলেন। তখন তাঁর মুখ দিয়ে আল্লাহ তাদের দ্বিতীয়বার লা’নত দিলেন। এই দ্বিতীয় লা’নতের ফলে ৭০ খ্রিষ্টাব্দে রোমান সেনাপতি টিটাস ইহুদিদের আক্রমণ করে তাদের পাইকারীভাবে হত্যা করল, তাদের মেয়েদের নিয়ে গেল, ধন-সম্পত্তি সব লুটে নিল, ইহুদিদের ডেভিড মন্দিরসহ তাদের রাজধানী জেরুজালেম শহর সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিল এবং তারপর সমস্ত সিরিয়া থেকে সমস্ত জাতিটাকে সমূলে উচ্ছেদ করে দিল (কোর’আন সুরা বনী ইসরাঈল ৪-৮)। হাজার হাজার বছরের বাসস্থান থেকে উৎখাত হয়ে ইহুদিরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিল।
সেই ৭০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত অর্থাৎ প্রায় দুই হাজার বছর এই ইহুদি জাতির ইতিহাস কি? তাদের ইতিহাস হচ্ছে এই যে আল্লাহর লা’নতের ফলে ইউরোপের যে দেশেই তারা আশ্রয় নিয়েছে, বসতি স্থাপন করেছে, সেই দেশের সমস্ত মানুষ তাদের অবজ্ঞা করছে, ঘৃণা করেছে। আমরা শুকর যেমন ঘৃণা করি, তেমনি ঘৃণা করেছে। শুধু ঘৃণা করেই তারা ¶ান্ত হয় নি। মাঝে মাঝেই ইউরোপের খ্রিষ্টানরা দলবদ্ধ হয়ে ইহুদিদের বসতি আক্রমণ করে তাদের পুরষদের হত্যা করে মেয়েদের বেঁধে নিয়ে গেছে, সম্পত্তি লুটপাট করে বাড়ি-ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। এই কাজটা ইউরোপীয় খ্রিষ্টানরা প্রতিটি ইউরোপীয়ান রাষ্ট্রে এতবার করেছে যে ইউরোপীয় ভাষায় একে বোঝাবার জন্য একটি নতুন শব্দেরই সৃষ্টি হয়েছে। সেটা চড়মৎড়স, যার আভিধানিক অর্থ হল ঙৎমধহরংবফ করষষরহম ধহফ চষঁহফবৎ ড়ভ ধ ঈড়সসঁহরঃু ড়ভ চবড়ঢ়ষব, বাংলায় “সুসংগঠিত ভাবে সম্প্রদায় বিশেষকে হত্যা ও লুণ্ঠন।” দু’হাজার বছর ধরে অভিশপ্ত ইহুদিদের উপর ঐ চড়মৎড়স চালাবার পর, শেষ চড়মৎড়স আল্লাহ করালেন হিটলারকে দিয়ে। তাকে দিয়ে তিনি ইউরোপের ইহুদিদের উপর চরম অত্যাচার করালেন ও তাদের ছয় মিলিয়ন, অর্থাৎ ৬০ ল¶ ইহুদিদের হত্যা করালেন। এই ঘটনার পর মনে হয় এখন আল্লাহ তাদের উপর থেকে লা’নত উঠিয়ে নিলেন। কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে তাদের উপর আর চড়মৎড়স হচ্ছেনা এবং তারা বর্তমানে একটি শক্তিশালী ও সম্মানিত জাতি।
এখন মুসলিম বলে পরিচিত জাতিটির দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে আল্লাহ লা’নত দিলে কোনো জাতির যে দশা হয়, এই জাতির দশা ঠিক তাই। সিরিয়া থেকে ইহুদিরা যেভাবে উৎখাত হয়েছিল, স্পেন থেকে মুসলিমরা ঠিক তেমনিভাবে উৎখাত হয়েছে। সমস্ত ইউরোপে ইহুদি জাতি যেমন ঘৃণিত, লাঞ্ছিত, অত্যাচারিত হয়েছে, মুসলিম বলে পরিচিত এই জাতি সমস্ত পৃথিবীময় তেমনি ঘৃণিত, লাঞ্ছিত, অত্যাচারিত, অপমানিত হচ্ছে। তফাৎ এই যে ইহুদিদের শাস্তি ইউরোপের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল আর এই জাতির উপর শাস্তি সমস্ত পৃথিবীময়। এর কারণ আছে, ইহুদি জাতি একটি ছোট জাতি, এই জাতির মধ্যে আল্লাহর যে নবী প্রেরিত হয়েছিলেন তার দায়িত্বও ছিল সীমাবদ্ধ, শুধু ইহুদি জাতির মধ্যে। কাজেই অভিশপ্ত অর্থাৎ মালাউন হবার পর তার শাস্তিও ছিল ইউরোপের মধ্যে সীমিত। আর মুসলিম বলে পরিচিত জাতিটি যিনি গঠন করেন সেই বিশ্বনবী (সা.) প্রেরিত হয়েছেন সমস্ত পৃথিবীর জন্য, সম্পূর্ণ মানবজাতির জন্য। তাই তার জাতির শাস্তি ও পুরস্কার দু’টোই পৃথিবীময়, কোথাও সীমিত নয়। এই মুসলিম জাতি পৃথিবীর যেখানেই আছে সেই দেশের মানুষ দিয়ে অত্যাচারিত, অপমানিত, লাঞ্ছিত হচ্ছে। পাঁচটি প্রধান ধর্মের চারটিকে দিয়েই পৃথিবীর সর্বত্র মুসলিম নামের এই জাতিটাকে পেষা হচ্ছে। এ যদি আল্লাহর লা’নতের ফল না হয় তবে লা’নত কাকে বলে?
যে জাতিকে আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা যদি মো’মেন হও তবে পৃথিবীর প্রভূত্ব, কর্তৃত্ব তোমাদের হাতে দেব (সুরা নুর ৫৫)’ এবং সত্যই সেই ছোট্ট জাতির হাতে তাই দিয়েছিলেন। এলাকায়, জনসংখ্যায়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক শক্তিতে, শি¶ায়, জ্ঞানে, বিজ্ঞানে, প্রযুক্তিতে এক কথায় সর্বতভাবে এই জাতি এই সময়টায় পৃথিবীতে সর্বোচ্চ। অথচ আল্লাহর লা’নতের প্রতিটি ছাপ আজ এই জাতির দেহে চিহ্নিত। প্রশ্ন হলো, কেন এই লা’নত? এর জবাব হচ্ছে এই, আল্লাহ বলেছেন যারা আল্লাহ ও রসুলের (সা.) উপর ঈমান এনে তারপর কুফরে প্রত্যাবর্তন করছে তাদের উপর আল্লাহ, আল্লাহর মালায়েকদের ও মানবজাতির সম্মিলিত লা’নত (অভিশাপ) (কোর’আন সুরা আলে ইমরান ৮৬-৮৯)।
১৪০০ বছর আগে এই জাতি আল্লাহর রসুলের আহ্বান ও সর্বাত্মক সংগ্রামের ফলে আল্লাহর তওহীদ অর্থাৎ সামগ্রিক জীবনে, তাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, অর্থনীতি ইত্যাদি সর্ব বিষয়ে বিশেষ করে সমষ্টিগত জীবনে আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করে নিয়েছিল এবং আল্লাহর দীনকে সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম, জেহাদ কোরেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত রসুলের (সা.) এন্তেকালের ৬০/৭০ বছর পর এই জাতি যে কাজের জন্য তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে অর্থাৎ সারা পৃথিবীতে আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠা করা সেই কাজটি এই জাতি ত্যাগ করে। ফলে আল্লাহও এই জাতির অভিভাবকত্ব ত্যাগ করেন। তিনি বলেই দিয়েছেন, ‘তোমরা যদি (জেহাদের) অভিযানে বের না হও তবে তোমাদের কঠিন শাস্তি দেব এবং তোমাদের বদলে অন্য জাতিকে মনোনীত করবো। তোমরা আল্লাহর কোনও ¶তি করতে পারবে না। আল্লাহ সর্বশক্তিধর। (সুরা তওবা ৩৮, ৩৯)।’ আল্লাহ তাঁর এই পূর্বঘোষণা মোতাবেক এই জাতিকে খ্রিষ্টান জাতিগুলির দাসে পরিণত করে দিয়েছেন। এই জাতিটি তওহীদকে (আল্লাহর সার্বভৌমত্ব) সার্বিক জীবন থেকে প্রত্যাখ্যান করে সমষ্টিগত জীবনে ইহুদি খ্রিষ্টান ‘সভ্যতা’র অর্থাৎ দাজ্জালের সার্বভৌমত্ব গ্রহণ করে আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে শুধু ব্যক্তি জীবনে সীমাবদ্ধ করায় অর্থাৎ শেরক ও কুফরে প্রত্যাবর্তন করেছে। ফলে এই জাতি লা’নতের পাত্রে পরিণত হয়েছে। মালাউন (অভিশপ্ত) ইহুদি জাতির উপর যে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল তার চেয়েও বেশি শাস্তি হচ্ছে এই মুসলিম নামধারী জাতিটির উপর। কারণ ইহুদি জাতিকে আল্লাহ লা’নত দিয়েছিলেন, তা দিয়েছিলেন তিনি একা এবং অন্যের মুখ দিয়ে আর আমাদের লা’নত তিনি দিয়েছেন তাঁর অসংখ্য মালায়েক এবং মানবজাতিকে সঙ্গে নিয়ে সম্মিলিতভাবে।
পূর্বের লা’নতপ্রাপ্ত জাতিগুলোর অবস্থা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আল্লাহর লা’নতের ফলে সাধারণত এই ঘটনাগুলি ঘটে, প্রথমত লা’নতপ্রাপ্ত জাতি সবার কাছে লাঞ্ছিত ও নির্যাতিত হয়, দ্বিতীয়ত তারা কোথাও ন্যায়বিচার পায় না, তৃতীয়ত তাদের বোধশক্তি লোপ পায়। তাই এত সওয়াবের কাজের পরও এত নির্মম শাস্তি কেন তা বুঝে আসে না। এ জাতির বেলাতেও তাই হয়েছে। আল্লাহর লা’নতের নির্মম শাস্তি সত্ত্বেও এই জাতি তওবা করে তওহীদ অর্থাৎ আল্লাহর সার্বভৌমত্ব মেনে না নিয়ে এবং তওহীদ ভিত্তিক দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে (জেহাদ) ফিরে না এসে নির্বোধের মত নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাতসহ হাজার রকমের নফল ধর্মকর্ম ও তাকওয়া করে যাচ্ছে আর ভাবছে তাদের জন্য জান্নাতের দরজায় লাল কার্পেট বিছিয়ে রাখা হয়েছে।
[সম্পাদনা: রিয়াদুল হাসান, যোগাযোগ: ০১৬৭০১৭৪৬৪৩, ০১৭১১৫৭১৫৮১, ০১৭১১০০৫০২৫]