চলতি বছরের কয়েকটি ঘটনা সর্বসাধারণের জানমালের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি সৃষ্টি করেছে। প্রথম ঘটনাটি হলো- মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ। সামরিক জান্তা সরকার মিয়ানমারের ক্ষমতায় আসার পর থেকে আরাকান আর্মিসহ বেশকিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে তাদের সংঘাত চলছে। এই সংঘাত চলতি বছরের শুরুর দিক থেকে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ফেব্রুয়ারির ৬ তারিখ বান্দরবানের নাই¶্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে দুজন নিহত হয়। মিয়ানমার থেকে বেশ কিছু সেনাসদস্য, পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাংলাদেশে পালিয়ে আসার ঘটনাও ঘটে। বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কিছু সদস্যও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। ঘটনাগুলো বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগজনক কারণ মিয়ানমার ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলিমদেরকে অমানবিক নির্যাতন করে বাংলাদেশে পুশ-ইন করিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার মানবিক দিক বিবেচনা করে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিমকে নোয়াখালীর ভাশানচরসহ বিভিন্ন জায়গাতে আশ্রয় দিয়েছে। এই ঘটনাকে ইস্যু করে বাংলাদেশে কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠী অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির পায়তারা করছে। তাছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও এটা নিয়ে উত্তেজনা রয়েছে। যদিও সরকার এ ব্যাপারে সচেতন রয়েছে।
দ্বিতীয়ত- বান্দরবানের রুমা ও থানচি উপজেলায় কেএনএফ নামের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুটের ঘটনা। কেএনএফ তথা কুকি-চিন-ন্যাশনাল ফ্রন্ট নামের সংগঠনটি চলতি মাসে দুই তারিখ ও তিন তারিখে এই ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুটের ঘটনা ঘটায়। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির মাধ্যমে দীর্ঘদিনের সহিংসতার অবসান ঘটে পাহাড়ী এই অঞ্চলে। কিন্তু দুই বছর আগে কেএনএফ নামের এই সংগঠন সৃষ্টি হয়, যার ফলে পাহাড়ী এই অঞ্চলে আবারও সহিংসতা বৃদ্ধি পায়। তারা দাবি তোলে বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির ৯টি উপজেলার সমন্বয়ে একটি স্বশাসিত অঞ্চল সৃষ্টির। এই কেএনএফ-এর সদস্যরা মূলত বম সম্প্রদায়ভুক্ত জনগোষ্ঠী। ভারতের মণিপুর, মিজোরাম ও বার্মার চিন রাজ্যের মানুষের সঙ্গে বাংলাদেশের বমদের এক ধরনের আত্মিক সম্পর্ক ও আদান প্রদান রয়েছে। তারা মূলত নৃ-তাত্ত্বিকভাবে একই জাতিগোষ্ঠীর সদস্য এবং তাদের অধিকাংশই ধর্মে খ্রিষ্টান। কাজেই বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের একটা অঞ্চল জুড়ে তারা একটা স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখে। তাদের পেছনে নিশ্চয় ইন্ধনদাতা রয়েছে, এটাই আশঙ্কার বিষয়। এরই মধ্যে আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ও র্যাব এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে এবং বেশকিছু সদস্যকে গ্রেফতারও করেছে। তবু তাদের দমন সহজ হবে না বলেই মন্তব্য করছেন বিশ্লেষকরা।
তৃতীয়ত- ভারতে গত মাসের (মার্চ-২০২৪) ১১ তারিখ থেকে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে ভারত সরকার। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী “বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে স্ব স্ব দেশের সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ, পার্শি, শিখ, জৈন ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা যদি ২০১৪ সালের ৩১-শে ডিসেম্বরের আগে ভারতে চলে এসে থাকেন তাহলে তারা ভারতে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।” এ আইনে কিন্তু মুসলিমদের কথা নেই। এই প্রথম নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে ধর্মের পরিচয় দিতে হবে। অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে যে সকল মুসলিম ভারতে গিয়েছে স্বাধীনতার আগে-পরে তারা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবে না। তাহলে তারা কোথায় যাবে? যদি ভারত থেকে তাদেরকে পুশ-ব্যাক করানো হয় তাহলে বাংলাদেশে নতুন করে আবার রোহিঙ্গা সঙ্কটের চেয়েও বড় সঙ্কট তৈরি হবে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। অনেকে এমন আশঙ্কাও করছেন, শত শত বছর ধরে ভারতে জন্ম নেওয়া, ভারতে বেড়ে ওঠা মুসলমানদেরকেও ভবিষ্যতে বাংলাদেশে পুশ করা হতে পারে এই আইনের দোহাই দিয়ে।
এছাড়াও বাংলাদেশের সীমান্তে পাচারকারি আখ্যা দিয়ে প্রতিনিয়ত গুলি করে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা করা হচ্ছে। এর কোনো সুরাহা আজ পর্যন্ত হয়নি। এ নিয়েও আমাদের দেশের জনসাধারণের মাঝে ক্ষোভ সঞ্চিত হচ্ছে। এই ঘটনাগুলো আলাদা মনে হলেও এগুলোর প্রত্যেকটি আসলে আমাদের মাতৃভূমির বিরুদ্ধে এক একটা ষড়যন্ত্র। চতুর্দিকে শত্রুরা ওঁৎ পেতে বসে আছে।
এই ঘটনাগুলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মনে করছেন অনেকেই। এছাড়াও অর্থনৈতিক সঙ্কট, রাজনৈতিক সঙ্কট ইত্যাদি সঙ্কট তো রয়েছেই। কাজেই এখনই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে, সিদ্ধান্ত নিতে হবে, পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে আসন্ন সঙ্কটের হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্য। না হলে ইরাক-সিরিয়ার পরিণতি ভোগ করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
এ বিষয়ে হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম রাজধানীর মিরপুরে সম্প্রতি হাজারও মানুষের উপস্থিতিতে এক ইফতার মাহফিলে বলেন, “রসুলাল্লাহ (সা.) যখন মদিনাতে গেলেন এবং ছোট্ট একটি রাষ্ট্র গঠন করলেন তখন কিন্তু মদিনার চারিপাশে ছিল ইসলামের শত্রুরা। এই শত্রুরা কুরাইশদের সাথে হাত মিলিয়েছে মদিনাকে ধ্বংস করার জন্য, মুসলিমদেরকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য। সেখানে বদর হয়েছে, উহুদ হয়েছে এবং সর্বশেষ সম্মিলিত বাহিনী নিয়ে তারা আহযাবের যুদ্ধ করেছে। তিনি বলেন, রসুলাল্লাহ (সা.) মদিনার জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে বহিঃশত্রুদের মোকাবেলা করেছেন ঠিক তেমনি আজকেও আঞ্চলিক পরিস্থিতি, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করলে এটাই প্রতিয়মাণ হয় যে, এখনও রসুলাল্লাহর (সা.) পন্থা অবলম্বন করে শত্রুদের সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করা সম্ভব। কাজেই এখন দেশকে রক্ষা করতে হবে মদিনার মতো।”
মদিনাতে রসুলাল্লাহ (সা.) কী করেছেন?
রসুলাল্লাহ (সা.) সর্ব প্রথম তওহীদের উপর ঐক্যবদ্ধ একটা শক্তিশালী জাতি গঠন করেছেন, যারা এই জাতির সদস্য ছিল তারা এই কথার উপরে অঙ্গীকারাবদ্ধ ছিল যে, তারা কোনো অন্যায় করবে না, আল্লাহ ও তাঁর রসুলের অবাধ্য হবে না। তাছাড়া মদিনাতে বসবাসরত অন্যান্য জাতির লোকেরাও মদিনা সনদের মাধ্যমে মদিনাকে রক্ষা করার ব্যাপারসহ বিভিন্ন বিষয়ে ছিল ঐক্যবদ্ধ। মুসলিমদেরকে মহানবী (সা.) ঐক্য, শৃঙ্খলা, আনুগত্য, হেযরত ও জেহাদের এই পাঁচদফার ঐক্যবন্ধনীতে আবদ্ধ করেছিলেন। জাতির কল্যাণে, মদিনা নামক রাষ্ট্রকে রক্ষার জন্য নিজেদের জীবন ও সম্পদ উৎসর্গ করার ব্যাপারে তাদেরকে রসুলাল্লাহ (সা.) অনুপ্রাণিত করেছেন যাকে ইসলামের পরিভাষায় বলা হয় জেহাদ। জেহাদ করতে হবে মানুষের জান-মাল রক্ষার জন্য, ধর্ম রক্ষার জন্য, মানুষের ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষার জন্য, শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের জন্য। জীবন ধারণের অধিকার মানুষের মানবাধিকার। এটাকে রক্ষা করা প্রত্যেক জাতি-গোষ্ঠীরই দায়িত্ব, কর্তব্য। এই অধিকার রক্ষার জন্য প্রতিবাদী হওয়া, প্রয়োজনে জানের বাজি রেখে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়া প্রত্যেকের কর্তব্য, ইসলামের পরিভাষায় এটাকে বলা হয়েছে জেহাদ।
দেশকে স্বাধীন করার জন্য ৭১ সালে যেভাবে এদেশের মানুষ লড়াই করেছে, সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছে এখনও সেভাবেই স্বাধীনতা রক্ষার জন্য, নানামুখী ষড়যন্ত্রের হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্য সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার চেতনা, দেশপ্রেমের শিক্ষা এখন অপরিহার্য।
রসুলাল্লাহ (সা.) তাঁর উম্মার মধ্যে শিক্ষা দিয়েছেন- এক আল্লাহ, এক রসুল, এক কেতাব, এক জাতি, এক নেতা। উম্মার প্রত্যেক সদস্য ভাই-ভাই, সবাই ঐক্যবদ্ধ। কোনো অর্থনীতিক অবিচার ছিল না। মদিনা রাষ্ট্রের সম্পদ কেউ বাইরে পাচার করেনি। দলীয়করণ ছিল না। স্বজনপ্রীতি ছিল না। সুদ-ঘুষ ছিল না। মাদক ব্যবসা নির্মূল হয়ে গিয়েছিল। দাসত্ব ব্যবস্থাও প্রায় নির্মূল হবার পথে ছিল। এভাবে মানবাধিকার যখন প্রতিষ্ঠিত হলো তখন শাসকের প্রতি তথা মহানবীর (সা.) প্রতি জনগণের আস্থা সৃষ্টি হলো। অপরদিকে শাসক শ্রেণি অর্থাৎ রসুলাল্লাহর (সা.) সাহাবাগণ দেশের জন্য, ধর্মের জন্য, জনগণের স্বার্থ রক্ষার জন্য, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেরা জীবন দিয়েছেন রণাঙ্গণে। যুদ্ধলব্ধ সম্পত্তি অন্য কোথাও পাচার না করে মদিনাতে এনেছেন, ফলে মদিনা সমৃদ্ধ হয়েছে। ফলে শাসক শ্রেণির প্রতি জনগণের আস্থা, ভালোবাসা সৃষ্টি হয়েছে।
আজকেও যদি দেশকে নানামুখী ষড়যন্ত্রের হাত থেকে রক্ষা করতে হয় তাহলে মদিনা রাষ্ট্রের মতোই পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমত একটা ন্যায়ভিত্তিক আদর্শের উপরে জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, চলমান অপরাজনীতি, ধান্দাবাজের রাজনীতি, স্বার্থের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। এই রাজনীতি জনগণের স্বার্থ রক্ষা করে না, বরং হরতালের নামে জ্বালাও-পোড়াও, ভাংচুর করে। জনগণের জান-মালের উপরে হুমকি সৃষ্টি করে। কোটি কোটি টাকা বিদেশি ব্যাংকে পাচার করছে রাজনীতিক নেতৃবৃন্দ। বিদেশের কাছে নালিশ করা হয় বাংলাদেশের দুর্বলতা নিয়ে। হামলা, মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করা হয় বিরোধী পক্ষকে। এই ধাপ্পাবাজির রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।
সারা জীবন একই ধরনের রাজনীতি করতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই। একই খাবার তো সারা জীবন মানুষ খায় না, একই ধরনের পোশাক তো মানুষ চিরদিন পরে না। মানুষের রুচির পরিবর্তন হয়, পছন্দেও পরিবর্তন আসে। কাজেই যদি আমাদের রাজনৈতিক মতাদর্শে ভুল থাকে তাহলে সেটা পাল্টে উত্তম আদর্শ গ্রহণ করা সমীচীন। আজ জাতিকে বাঁচানোর জন্য, দেশকে রক্ষার জন্য প্রয়োজন হয়ে পড়েছে এতদিন ধরে চলে আসা ভুল আদর্শ পরিত্যাগ করে সঠিক আদর্শ গ্রহণ করার।
তৃতীয়ত, রসুলাল্লাহ (সা.) যেভাবে জনগণকে পাঁচদফা কর্মসূচির (ঐক্য, শৃঙ্খলা, আনুগত্য, হেযরত, জেহাদ) ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন ঠিক তেমনি আমাদের জনগণকেও ঐ পাঁচদফা কর্মসূচির ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।
চতুর্থত, যারা শাসন করবে অর্থাৎ নেতৃত্ব যারা দেবে তাদেরকে খেলাফতের আকিদা, খেলাফতের আদর্শ ধারণ করতে হবে, তাদেরকে জনগণের আস্থাভাজন হতে হবে। তারা যদি চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি করে, সন্ত্রাস, কেন্দ্র-দখল, জনগণের ঘুম হারাম করে দেয় তাহলে কিন্তু জনগণ তাদের জন্য বুক পেতে দেবে না, দেশ আক্রান্ত হলে তারা পালিয়ে যাবে। বিমান বন্দরে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হবে, কাটা তারের বেড়া টপকে পালিয়ে যাবে। কিন্তু মদিনার মানুষগুলো পালিয়ে যান নি, তারা মদিনাকে রক্ষা করার জন্য যুদ্ধ করেছেন, পরিখা খনন করেছেন, না খেয়ে পেটে পাথর বেঁধেছেন, খেজুরের আটি কোমরে রেখে দিয়েছেন, ক্ষুধা লাগলে সেটা চুষে খেয়েছেন। এক বাটি দুধ বহু মানুষ একসাথে খেয়েছেন। এই ঘটনাগুলি কিন্তু ঘটেছে আহযাবের যুদ্ধে। সেই চেতনা জনগণের মাঝে সৃষ্টি করতে হবে। স্বার্থপরতা, আত্মকেন্দ্রিকতা ত্যাগ করতে হবে। মানুষ এখন স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক। কিছু টাকা হলেই চলে যাচ্ছে বিদেশে, সেখানে বাড়ি-গাড়ি করে থেকে যাচ্ছে। এদেশের টাকা বিদেশি ব্যাংকে পাচার করে দিচ্ছে। দেশের প্রতি তাদের কোনো মায়া-ভালোবাসা নেই। এই অবস্থায় কেবল বেতনভুক্ত সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী দিয়ে দেশ রক্ষা হবে না। সঙ্কট আসলে তারাও অধিকাংশ পালিয়ে যাবে। ৭১ সালে যোগ্য নেতৃত্ব ছিল কিন্তু অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছে সাধারণ জনগণ। কাজেই সাধারণ মানুষকে যদি একটা আদর্শের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করা না যায় তাহলে আসন্ন সঙ্কট মোকাবেলা করা যাবে না।
পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলো কিন্তু বসে নেই। আন্তর্জাতিক বলয় সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। চীন চেষ্টা করছে ভারতকে টেক্কা দিয়ে এশিয়া অঞ্চলে নিজেদের একক প্রভাব সৃষ্টি করতে, আমেরিকা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের প্রভাব খর্ব করার জন্য ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানকে নিয়ে সামরিক জোট (কোয়াড) গঠন করেছে। ভারতও নিজেদেরকে শক্তিশালী করছে, নতুন নতুন অস্ত্র তৈরি করছে, ভারী ভারী অস্ত্র আমদানি করছে। ভারতের রাজনৈতিক মহল থেকে দাবি উঠছে পুরোনো সেই মহাভারত গঠনের। তারা এক সময় চাল-ডাল, মশলা, পেয়াজ ইত্যাদি কৃষিপণ্য রপ্তানি করত কিন্তু এখন প্রায় ৮৫ টা দেশে তারা অস্ত্র রপ্তানি করছে। চলতি অর্থবছরে ভারত ২১ হাজার কোটি টাকারও বেশি প্রতিরক্ষা সামগ্রী রপ্তানি করে হইচই ফেলে দিয়েছে। তারা আন্তর্জাতিক মাইট হতে চায়। এজন্য আমেরিকা-রাশিয়ার মতো তারাও অসুস্থ অস্ত্র প্রতিযোগিতায় নেমেছে। তাদের অন্যতম আয়ের উৎস এখন অস্ত্রব্যবসা হয়ে উঠছে। কাজেই তারা স্বপ্ন দেখবে আশেপাশের রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার, আনরেস্ট রাখার। আর আমেরিকা তো আমাদের উপর প্রভাব সৃষ্টির জন্য নির্বাচনের আগে যে দৌড়-ঝাঁপ করে সেটা আমরা বিগত নির্বাচনী বছরগুলোতে দেখেছি। রাশিয়াও বিভিন্নভাবে চাচ্ছে আমাদের উপর প্রভাব সৃষ্টি করতে।
বাংলাদেশ একটি ব-দ্বীপ অঞ্চল। এর তিন দিকে ভূমি ও একদিকে সমুদ্র। আর বঙ্গোপসাগর ভারত মহাসাগরে মিলিত হবার কারণে পৃথিবীর অন্যান্য যে কোনো অঞ্চলের সাথে খুব সহজেই এই রুটে যোগাযোগ করা সম্ভব। রাজধানী ঢাকার আশেপাশের জায়গার মূল্য আর গ্রামের জায়গার মূল্য যেমন এক নয় ঠিক তেমনি আন্তর্জাতিকভাবেও সব জায়গার গুরুত্ব সমান নয়। ভূরাজনৈতিক ও ভূসামরিক দিক থেকে আমাদের দেশের বেশ গুরুত্ব রয়েছে। রাষ্ট্র ছোট হলেও এর গুরুত্ব অনেক। এজন্যই আন্তর্জাতিক পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর শ্যেন দৃষ্টি পড়েছে আমাদের দিকে। তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য এখানে যুদ্ধ লাগিয়ে দেবে, অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করবে। ইরাক-সিরিয়া-আফগানিস্তান বানাবে। এটাই তারা করেছে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গাতে।
এখন এই ভূখণ্ডকে রক্ষা করতে হলে মদিনার মতো পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে- এই মাটিতেই আমরা বসবাস করি, এখানে ফসল ফলাই, এখানে আমাদের পূর্বপুরুষের অস্থি-মজ্জা মিশে আছে। এই মাটিতে আমরা এবাদত করি, এখানে পতাকা উড়িয়ে বিশ্বকে জানান দিই নিজেদের অস্তিত্বের। কাজেই এই ভূমিকে রক্ষা করার জন্য আমাদের মদিনার আদর্শকে ধারণ করতে হবে। রসুলাল্লাহ (সা.) মদিনা রক্ষায় যে নীতি নিয়েছেন, যে কর্মসূচির আলোকে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন সেই নীতির উপরও আমাদেরও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। না হলে এই জাতিকে আসন্ন সঙ্কট থেকে মুক্ত করা মুশকিল হবে।
আমরা কিন্তু অহেতুক আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য কথা বলছি না। বিশ্বপরিস্থিতি কিন্তু সেদিকেই যাচ্ছে। একটা ঘটনা ঘটার আগে কিন্তু খুব কম মানুষই সেটা পুরোপুরি আঁচ করতে পারে। কে জানত যে, রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করবে! কিন্তু ঘটনা ঘটেছে, সারা পৃথিবী আজ ফল ভোগ করছে।