হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

বন্ধ করুন ধর্মব্যবসা!

মুস্তাফিজ শিহাব

মহান আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে বলেন, “তিনি উম্মীদের মধ্যে থেকে একজনকে প্রেরণ করেছেন রসুল হিসেবে যাতে তিনি তাদের কাছে তাঁর (আল্লাহর) আয়াত সমূহ পাঠ করেন এবং তাদের পরিশুদ্ধ করেন (সুরা জুমআ ০২)।” নবী রসুলদের প্রেরণ করার অন্যতম উদ্দেশ্যই হচ্ছে মানুষকে পরিশুদ্ধ করা, পবিত্র করা। অর্থাৎ মানবজাতি কীভাবে থাকলে শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করবে, কীভাবে থাকলে আত্মিকভাবে প্রশান্তি লাভ করবে তারই দিক নির্দেশনা নিয়েই যুগে যুগে নবী রসুলগণ এসেছেন। শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) ও মানবজাতিকে তওহীদের দিকে আহ্বান করেছেন যাতে মানবজাতি পরিশুদ্ধ হয়, পবিত্র হয়। অতএব নবী রসুলদের মাধ্যমে যে সত্য দীন এসেছে তা মূলত মানবজীবনের কল্যাণের জন্য।

পবিত্র কোর’আনে আল্লাহ যে বস্তুগুলো হারাম সেগুলোর নাম স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ‘বিশেষ পরিস্থিতিতে’ সেই হারাম বস্তুও খাওয়া যাবে এ বিধানও স্বয়ং আল্লাহই দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, “তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন মৃত জীব, রক্ত, শুকরের গোশত এবং সেসব জীব-জন্তু যা আল্লাহ ব্যাতিত অপর কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। অবশ্য যদি কেউ অনন্যোপায় হয়ে পড়ে ও সীমালঙ্ঘনকারী না করে তবে তার জন্য কোনো পাপ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল ও অত্যন্ত দয়ালু (সুরা বাকারা- ১৭৩)।” তাহলে দেখা যাচ্ছে সীমালঙ্ঘন না করলে এবং জীবন বাঁচানোর জন্য হারাম করা জীবজন্তু খাওয়ার ব্যাপারেও পরম ক্ষমাশীল ও পরম দয়াময় মহান আল্লাহ নমনীয়তা প্রদর্শন করেছেন।

কিন্তু যারা আল্লাহর এই দীনকে গোপন করে এবং এ দীনকে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে অর্থাৎ ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করে তাদের ব্যাপারে আল্লাহ বরাবরই কঠোর মনভাব পোষণ করেছেন। পবিত্র কোর’আনে মহান আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর আয়াতসমূহ গোপন করে এবং এর বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ করে তারা আগুন ছাড়া নিজেদের পেটে কিছুই ঢুকায় না। কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না এবং তাদের পবিত্রও করবে না। বস্তুত তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি (সুরা বাকারা- ১৭৪)।” এছাড়াও আল্লাহ অন্যত্র এই সমস্ত লোকদের অনুসরণ না করার ব্যাপারেও আয়াত নাযিল করেছেন। বলা হয়েছে, “অনুসরণ কর তাদের যারা তোমাদের থেকে কোনোরূপ বিনিময় আশা করে না (সুরা ইয়াসিন- ২১)।” এই একটি বিষয়েই আল্লাহ কঠোর, তিনি বিন্দুমাত্র ছাড় দিতেও প্রস্তুত নন। কিন্তু আল্লাহ এই একটি বিষয়ে এত কঠোর কেন?

এর কারণ খুবই যুক্তিযুক্ত। আগেই বলেছি মহান আল্লাহ দীন প্রেরণ করেছেন মানবজাতির কল্যাণের জন্য। কিন্তু যখনই ধর্ম নিয়ে স্বার্থোদ্ধারের প্রতিযোগিতা শুরু হয় তখনই ধর্ম তার প্রকৃত রূপ থেকে বহুদূরে সরে যায়। ধর্ম থেকেই তখন সমস্ত অধর্মের জন্ম হয়। সুরা বাকারার- ১৭৪ নম্বর আয়াতটি যদি আমরা লক্ষ করি তাহলে স্পষ্ট দেখব এখানে আল্লাহ দুটি নীতির কথা উল্লেখ করেছেন। প্রথমটি হচ্ছে আল্লাহ প্রেরিত আয়াতসমূহকে গোপন করা যাবে না। আল্লাহ যেভাবে যতটুকু বলেছেন ঠিক সেভাবেই মানুষের মধ্যে প্রচার করতে হবে, কোনো অংশে কোনো কিছু সংযোজন-বিয়োজন করার কোনো সুযোগ নেই। দ্বিতীয় নীতিটি হচ্ছে আয়াতের বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ করা যাবে না অর্থাৎ আয়াতকে ব্যবহার করে ব্যবসা করা যাবে না, আয়াতের বিনিময়ে কোনোরূপ স্বার্থোদ্ধার করা যাবে না। মহান আল্লাহ অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিবহাল। তাই তিনি জানতেন যে যদি মানুষ তার দেয়া এই দুটি নীতিকে বর্জন করে এবং আয়াতের বিনিময়ে পার্থিব স্বার্থ হাসিল শুরু হয় তাহলে দীন খুব শীঘ্রই বিকৃত হয়ে যাবে। যুগে যুগে এমনটিই ঘটেছে এবং এর ফলেই মহান আল্লাহ শেষ দীনের ক্ষেত্রে যাতে এ ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটে সেজন্য কোর’আনের মাধ্যমে সতর্ক করে দিয়েছেন।

আল্লাহ আহলে কিতাবের অনুসারীদের ঘটনাও আমাদের সামনে উল্লেখ করেছেন। ইহুদি ধর্মের পুরহিতরাও ধর্ম নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিল, তারা মুসা (আ.) এর উপর অবতীর্ণ তওরাতের আয়াত সমূহ গোপন করত এবং নিজেদের ইচ্ছেমত সেগুলোর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে সাধারণ জনগণের সামনে উপস্থান করত এবং এভাবে তারা তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করত। আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে এ সম্পর্কে বলেন, “যাদের গ্রন্থ দেয়া হয়েছে, আল্লাহ তখন তাদের অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন যে, তোমরা নিশ্চয়ই এটা মানুষের মধ্যে প্রচার করবে এবং তা গোপন করবে না। কিন্তু তারা তা তাদের পেছনে নিক্ষেপ করল এবং খুব কম মূল্যে বিক্রয় করল, অতএব তারা যা কিনল তা নিকৃষ্টতর (সুরা ইমরান- ১৮৭)।” আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে তাদের পুস্তক বহনকারী গাধা বলেও সম্বোধন করেছেন (সুরা জুমাআ- ৫)।

আল্লাহর রসুলও (স.) এ ব্যাপারে তাঁর উম্মাহকে সতর্ক করে দিয়ে গিয়েছেন। আল্লাহর রসুল (স.) বলে গেছেন, যে ব্যক্তি এমন কোনো জ্ঞান অর্জন করল, যার দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়, কিন্তু তা সে কেবল পার্থিব স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে অর্জন করল, কেয়ামতের দিন সে ব্যক্তি জান্নাতের সুগন্ধ পর্যন্ত পাবে না (আবু হোরায়রাহ (রা.) থেকে আবু দাউদ)। আরো বলেছেন, তোমরা কোর’আন পড় তবে তাতে বাড়াবাড়ি করো না এবং তার প্রতি বিরূপ হয়ো না। কোর’আনের বিনিময় ভক্ষণ করো না এবং এর দ্বারা সম্পদ কামনা করো না (মুসনাদে আহমদ ৩/৪২৮; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৫/২৪০; কিতাবুত তারাবীহ)।

আমাদের দেশের প্রায় নব্বই শতাংশ জনগণ মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও আজ আমাদের সমাজে শান্তি নেই, নিরাপত্তা নেই, সুবিচার নেই। আজ আমরা ইসলামের মূল, ইসলামে বর্ণিত সেই শিক্ষা ও আদর্শ থেকে বহুদূরে সরে এসেছি যার পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী। শুধু আমরাই নই বিশ্বের প্রতিটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের আজ একই অবস্থা। প্রতিটি দেশ আজ অস্থিতিশীল, প্রতিটি দেশে চলছে অন্যায়, অত্যাচার, খুন, রাহাজানী, ধর্ষণ। প্রতিটি দেশে চলছে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড, প্রতিটি দেশ রয়েছে জঙ্গিবাদী আগ্রাসনের মুখে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বাণিজ্য বিভাগের প্রফেসর হুসেইন আসকারি ইসলামের বিধান মেনে চলার ব্যাপারে দুশো আটটি দেশ নিয়ে একটি গবেষণাকর্ম সম্পন্ন করেছেন যেখানে দেখা যাচ্ছে “ইসলামী রীতি মেনে চলায় দেশের তালিকার শীর্ষে ইসলামী কোনো দেশের নাম নেই, এমনকি তালিকার ৩৩ নম্বরে রয়েছে মালেশিয়া এবং কুয়েত ৪৮ এ। সমাজে ইসলামী বিধান মেনে চলার ক্ষেত্রে আয়ারল্যান্ড, ডেনমার্ক, সুইডেন, যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে ও বেলজিয়াম তালিকার শীর্ষে রয়েছে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশ বাহরাইন ৬৪ নম্বরে এবং সৌদি আরব রয়েছে ১৩১ নম্বরে।

গবেষক হুসেইন আসকারি বলেন, “মুসলিম দেশগুলো রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য ইসলামী আইন ব্যবহার করে। এমন অনেক দেশ আছে; যেগুলো ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। তবে সেখানকার সমাজে ইসলামী আইন মেনে চলা হয় না, দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে, এমনকি ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ড চলছে সেখানে।” তিনি আরো বলেন, “তথাকথিত ইসলামী দেশগুলোতে মুসলমানরা নামাজ আদায় করেন, রোজা রাখেন, কোর’আন-হাদিস পড়েন, নারীরা পর্দা মেনে চলে, দাড়ি রাখার সংখ্যা বেশি, ইসলামী পোষাক নিয়ে সচেতন; তবে সমাজে দুর্নীতি আর পেশাগত জীবনে অসদুপায় অবলম্বনের নজির চতুর্দিকে (ইসলামী বিধান অনুরসণ সূচকে শীর্ষে আয়ারল্যান্ড, ১৩১ সৌদি, প্রকাশকাল- ১০ এপ্রিল ২০১৯)।”

উপর্যুক্ত পরিসংখ্যানের ফলে মুসলিম দেশগুলো অবস্থা খুব সহজেই অনুমেয়। আমাদের দেশের অবস্থাও ঠিক অন্যান্য দেশগুলোর মতই। ধর্ম আজ ধর্মব্যবসায়ীদের কুক্ষিগত। আজ আমাদের সমাজে শান্তি নেই, নিরাপত্তা নেই, সুবিচার নেই। ধর্মব্যবসার কুফল শুধু এতটুকুই নয় এর আরো কুফল রয়েছে।

এই একটি কাজের জন্য সমগ্র জাতি ধ্বংসের মুখে পতিত হয়, আল্লাহ যে উদ্দেশ্যের কথা চিন্তা করে একজন নবীকে প্রেরণ করেন সে উদ্দেশ্য পণ্ড হয়ে যায়, আসমানী কিতাবের কার্যকারিতা হারিয়ে যায়, মানুষ ধর্মকে মুক্তির পথ ভাবা বন্ধ করে ধর্মকে তাদের জন্য একটি বোঝা মনে করে।

ধর্মব্যবসায়ীরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করে যার ফলে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে না কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা। মহান আল্লাহ কোর’আনে এ কাজটিকে নিষিদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন, “তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিয়ে দিও না এবং জেনে শুনে সত্যকে গোপন করো না (সুরা বাকারা ৪২)।” সত্য ও মিথ্যার লড়াই পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্ন থেকেই তাই যখন একজন ব্যক্তি সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য করতে পারে না তখন সে বিপর্যস্ত হয়। এভাবে একজন ব্যক্তি থেকে একটি পরিবার, একটি পরিবার থেকে একটি সমাজ এবং ধারাবাহিকভাবে গোটা জাতি বিপর্যয়ের শিকার হয়। ধর্মব্যবসায়ীদের নানা ধরনের স্বার্থের দ্বন্দ্বে আজ এক ও অখণ্ড জাতি নানারকম ফেরকা-মাজহাব-তরিকায় ও হাজার হাজার খণ্ডে বিভক্ত। এই অনৈক্যের বিষে আজ জাতি জর্জরীত। অথচ তারা একদল আরেকদলের বিরুদ্ধে বাহাস-বিতর্ক ও হানাহানিতে লিপ্ত।

মানুষ আলেমদের মনে করে নবীর ওয়ারিশ। যার ফলে তাদের মুখের সকল কথাই তারা মনে করে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের কথা এবং তাদের প্রতিটি কথাকে সওয়াব হবে এ আশায় পালন করা শুরু করে। কিন্তু তাদের মধ্যে যারা হীনস্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করে অর্থাৎ ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী জনগণের এ বিশ্বাসকেই কাজে লাগায়। তারা জনগণের ঈমানী চেতনাকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে। এর ফলে তারা যেকোনো সময় সমাজে অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে, নিজেদের স্বার্থের জন্য সকল কাজ তারা জনগণের উপর দিয়ে করিয়ে নেওয়ার ফন্দি-ফিকির করে। এতে সমাজব্যবস্থা ধ্বসে পরার সমূহ সম্ভবনার সৃৃষ্টি হয়।

এতে সবচেয়ে বেশি যে ক্ষতিটি হয় সেটি হচ্ছে এতে সবচেয়ে বেশি যে ক্ষতিটি হয় সেটি হচ্ছে মানুষের আল্লাহ ও তাঁর রসুলের উপর থেকে বিশ্বাস উঠে যায়। আল্লাহ যে দীন প্রেরণ করেছে সে দীনের মূল উদ্দেশ্যই ছিল সমাজে শান্তি, ন্যায় ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের আত্মিক উন্নতী সাধন। কিন্তু দুটোর একটিও যখন হয় না তখন তারা ধর্মের প্রতি বিদ্রোহী হয়ে উঠে। আল্লাহর হুকুম মানার মাঝেই রয়েছে প্রকৃত শান্তি। কিন্তু ধর্মব্যবসায়ীরা আল্লাহর হুকুমের বদলে নিজেদের হুকুমকে আল্লাহর হুকুম বলে চালিয়ে দেয় এবং এর ফলেই সমাজে আদৌ কোনো শান্তি আসে না। ফলে আল্লাহর হুকুমের উপর থেকেই মানুষের আস্থা নষ্ট হয়।

এছাড়াও ধর্মব্যবসায়ীরা মানুষের এই আস্থার ফায়দা নিয়ে হুজুগ তুলে বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডও সংঘটিত করে। আমাদের দেশেই এ ঘটনার নজির রয়েছে। ২০১৬ সালে নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের ‘খ্রিষ্টান’ আখ্যা দিয়ে স্থানীয় জনগণকে উসকে তোলে এবং সেখানে ব্যাপক হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি করে এবং ঘরবাড়ি, ক্ষেত খামার আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়, তাদের দুইজন সদস্যকে প্রকাশ্যে জবাই করে হত্যা করে ও হাত পায়ের রগ কেটে দেয় এবং পরবর্তীতে লাশের উপর পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রতিটি ঘটনাই ঘটান হয়েছিল গুজব ও মিথ্যে অপবাদ ছড়িয়ে সাধারণ জনগণকে উস্কে দেয়ার মাধ্যমে।

ঈসা (আ.) তৎকালীন ইহুদি ধর্মব্যবসায়ী আলেমদের লক্ষ করে বায়তুল মোকাদ্দসে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, “শরিয়ত শিক্ষা দেবার ব্যাপারে আলেমেরা ও ফরিসিরা মুসা (আ.) এর জায়গায় আছেন। সুতরাং এরা যা কিছু করতে আদেশ করেন তোমরা তা পালন করো। কিন্তু তাঁরা যা করেন সেটা তোমরা অনুসরণ করো না, কারণ তাঁরা মুখে যা বলেন কাজে তা করেন না।  তাঁরা ভারি ভারি বোঝা বেঁধে মানুষের কাঁধে চাপিয়ে দেন, কিন্তু সেগুলো সরাবার জন্য নিজেরা একটা আঙ্গুলও নাড়াতে চান না। সব কাজই তারা করে থাকেন কেবল লোক দেখানোর জন্য। দাওয়াত খাওয়ার সময় তারা সম্মানের জায়গায় এবং সিনাগগেও প্রধান প্রধান আসনে তাঁরা বসতে ভালোবাসেন। তাঁরা হাটে-বাজারে সম্মান খুঁজে বেড়ান আর চান যেন লোকেরা ‘আমাদের প্রভু’ বা রাব্বাই বলে ডাকে। কিন্তু কেউ তোমাদেরকে প্রভু বলে ডাকুক তা তোমরা চেয়ো না, কারণ তোমাদের প্রভু বলতে কেবল একজনই আছেন। আর তোমরা সবাই ভাই ভাই।

ভণ্ড আলেম ও ফরিসিরা, কী নিকৃষ্ট আপনারা! আপনারা মানুষের সামনে জান্নাতে প্রবেশের দরজা বন্ধ করে রাখেন। তাতে নিজেরাও ঢোকেন না আর যারা ঢুকতে চেষ্টা করছে তাদেরও ঢুকতে দেন না। একদিকে আপনারা লোকদের দেখাবার জন্য লম্বা লম্বা মোনাজাত করেন, অন্য দিকে বিধবাদের সম্পত্তি দখল করেন। ভণ্ড আলেম ও ফরিসিরা, কী ঘৃণ্য আপনারা! আপনারা পুদিনা, মৌরি আর জিরার দশ ভাগের এক ভাগ আল্লাহকে ঠিকঠাক দিয়ে থাকেন; কিন্তু আপনারা মুসা (আ.) এর শরীয়তের অনেক বেশি প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকে বাদ দিয়েছেন। যেমন সুবিচার, দয়া এবং সততা। আপনাদের উচিত আগে এইগুলো পালন করা এবং অন্য বিধানগুলোকেও বাদ না দেওয়া। আপনারা নিজেরা অন্ধ অথচ অন্যদের পথ দেখান। একটা ছোট মাছিও আপনার ছাঁকেন অথচ উট গিলে ফেলেন। ভণ্ড আলেম ও ফরিসিরা, ঘৃণ্য আপনারা। আপনারা খাওয়ার পাত্রের বাইরের দিকটা পরিষ্কার করে থাকেন, কিন্তু পাত্রের ভিতরে আছে কেবল সেই নোংরা জিনিস যা মানুষের উপর জুলুম আর স্বার্থপরতা দ্বারা আপনারা লাভ করেছেন।

অন্ধ ফরিসিরা, আগে পাত্রের ভিতরের ময়লাগুলো পরিষ্কার করুন, তাহলে বাইরের দিকটাও পরিষ্কার হবে। ভণ্ড আলেম ও ফরিসিরা, কী ভয়াবহ আপনারা! আপনারা সাদা ঝকঝকে রং করা কবরের মত, যার বাইরে থেকে দেখতে খুবই সুন্দর কিন্তু তার ভেতরে আছে মরা মানুষের হাড়-গোড় ও পঁচা গলা লাশ। ঠিক সেইভাবে, বাইরে আপনারা লোকদের চোখে ধার্মিক কিন্তু ভিতরে মোনফেকী আর পাপে পরিপূর্ণ। হে সাপের দল আর সাপের বংশধরেরা! কিভাবে আপনারা জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা পাবেন (বাইবেল, নিউ টেস্টামেন্ট: ম্যাথু ২৩ : ১-৩৪)?”

বর্তমানে আমরা ইসলামকে নানা রকম আনুষ্ঠানিকতায় বেঁধে ফেলেছি। আমাদের ইসলাম লেবাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু আমাদের মধ্যে নীতি নৈতিকতা জন্ম নেয়নি, আমরা ইসলামের প্রকৃত আদর্শে আদর্শিত নই। তাই আমাদের ধর্মব্যবসা ও ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সচেতন হতে হবে। উপর্যুক্ত আলোচনাই বলে দিচ্ছে ধর্মব্যবসা মোটেও ছোটখাটো কোনো বিষয় নয়। ধর্মব্যবসা এমন একটি অপরাধ যা অনেক বড় বড় অপরাধের জন্ম দেয়। ধর্মব্যবসা হচ্ছে চরম মাত্রার বিপর্যয় সংঘটনকারী, প্রাণঘাতী, জতি বিধ্বসংসী একটি অপকর্ম। তাই ধর্মব্যবসা বন্ধ করার ক্ষেত্রে আমাদের সচেষ্ট হওয়া উচিত। আমরা মাদকব্যবসা, অবৈধ অস্ত্রব্যবসা, সুদের ব্যবসা ইত্যাদির ব্যাপারে যেমন সজাগ তেমনি ধর্মব্যবসার ব্যাপারেও সজাগ হতে হবে।

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...