ইসলাম সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞানও যার আছে তিনি এ কথা স্বীকার করবেন যে, একজন সুস্থ মস্তিষ্ক ব্যক্তির পক্ষে এই যুগে নবী-রসুল দাবি করা অবান্তর। কারণ এটা সর্বজনস্বীকৃত সত্য যে মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) আখেরী নবী ও রসুল এবং তাঁর উপর অবতীর্ণ পবিত্র কোর’আন হলো শেষ আসমানি কেতাব। পবিত্র কোর’আনেও এ কথাটি ঘোষিত হয়েছে যে তিনিই শেষ নবী (সুরা আহযাব, ৪০)। রসুলাল্লাহর ওফাতের পর পর কয়েকজন ভণ্ডনবীর উত্থান হয়েছিল। কিন্তু উম্মতে মোহাম্মদীর সম্মিলিত অভিযানের মুখে ঐ সব ভণ্ড নবীদের বিনাশ হয়েছিল। মহান আল্লাহই এ ঘটনার মাধ্যমে তাঁর শেষ নবী হওয়ার বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বিগত চৌদ্দশ’ বছর ধরে ইসলামের চর্চা হয়ে আসছে এবং মোহাম্মদ (সা.) কে শেষ নবী হিসাবে বিশ্বাসের বিষয়টি এখন দেড়শো কোটিরও অধিক মুসলমানের অস্থিমজ্জায় মিশে গেছে। শুধু তা-ই নয়, এটা আমাদের নিশ্চিত ঈমান, ইলমাল ইয়াকীন, যার মধ্যে এক সরিষা পরিমাণও হেরফের করার সুযোগ নেই। এমতাবস্থায় নতুন কেউ নবী দাবি করলে সে ও তার অনুসারীরা ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে। রসুলের প্রকৃত উম্মত এ ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ দাবি কক্ষনো মেনে নিতে পারে না।
অথচ সত্যনিষ্ঠ আন্দোলন হেযবুত তওহীদ যেখানে নবী করিম (সা.) তাঁর উম্মতের উপর যে দায়িত্ব অর্পণ করে গিয়েছিলেন অর্থাৎ মানবজীবনে আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠা করে শান্তি আনার সংগ্রাম করে যাওয়া, সেই দায়িত্ব যখন পূর্ণ করার অঙ্গিকার নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে, সেখানে হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর উপর অপবাদ আরোপ করা হচ্ছে যে, তিনি নাকি নবী দাবি করেছেন (নাউযুবিল্লাহ)। ধর্মব্যবসায়ী একটি গোষ্ঠীর স্বার্থে আঘাত লাগায় তারা জনগণের মধ্যে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি করার জন্য ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই মিথ্যা বানোয়াট কথাটি প্রচার করছে, কারণ তারা জানে কোন কথা বললে মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে লাগবে। এভাবেই তারা মানুষের ঈমানকে বারবার স্বার্থহাসিলের জন্য ব্যবহার করেছে। এর পরিণাম খুব ভয়াবহ। তাদের এই ষড়যন্ত্রের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক ও কার্যকর অস্ত্র হলো এটা বলা যে, ‘অমুক নবী দাবি করেছে।’ ব্যাস, এবার তাকে মারো, হত্যা করো, তাদের বাড়িঘরে আগুন দাও। এক শ্রেণির প্রতিক্রিয়াশীল মানুষও কোনো ধরনের যাচাই বাছাই না করে এইসব ধর্মজীবীদের কথা অন্ধভাবে বিশ্বাস করে হুজুগে আর নৃশংসতায় মেতে ওঠে।
এ ষড়যন্ত্রটি হেযবুত তওহীদের বেলাতেও করা হয়েছে বিগত ২৪ বছর ধরে। ওয়াজে, জুমার খোতবায়, পোস্টার ও লিফলেট ছাপিয়ে, পত্রিকায় প্রচার করা হয়েছে। এমন কি স্কুলের কোমলমতি শিশুদের মনে ভুল ধারণা প্রবেশ করিয়ে দেওয়ার জন্য প্রশ্নপত্রে লেখা হয়েছে যে- মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী নাকি নবী দাবি করেছেন (নাউযুবিল্লাহ, মিথ্যাবাদীরা ধ্বংস হোক)। অথচ তিনি তাঁর বইয়ে, বক্তব্যে শত শতবার বলেছেন মোহাম্মদ (সা.) শেষনবী, আখেরি নবী। আমিও আমার শত শত বক্তব্যে হাজার হাজারবার উল্লেখ করেছি যে তিনি শেষ নবী। তারপরও এমন জলজ্যান্ত মিথ্যাটি প্রচার করতে তাদের আত্মা একটুও কাঁপল না? আমরা বহুবার প্রমাণ চেয়েছি যে কোথায়, কোন লেখায়, কোন বক্তব্যে আমরা এ কথাটি বলেছি। আজ পর্যন্ত কেউই প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। কিন্তু অপপ্রচার ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, হেযবুত তওহীদকে আদর্শিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে ধর্মব্যবসায়ী একটি গোষ্ঠী এই অপপ্রচার চালিয়ে মানুষকে আমাদের থেকে ফিরিয়ে রাখতে চাচ্ছে। তারা অনেকে এমনও বলে যে, মাননীয় এমামুয্যামান নাকি নিজেকে ইমাম মহদি (আ.) বলে দাবি করেছেন। এই দুটো অপপ্রচার সাংঘর্ষিক, কারণ একই ব্যক্তি একই সাথে নবী ও ইমাম মাহদি (আ.) হতে পারেন না। এমন সাংঘর্ষিক অপপ্রচার আরো আছে। যেমন সাধারণ মানুষকে তারা বোঝান যে হেযবুত তওহীদ খ্রিষ্টান আবার পুলিশ প্রশাসনকে বোঝান যে হেযবুত তওহীদ জঙ্গি। এখন তো জঙ্গি হলে রক্ষে নেই। প্রশাসনও প্রথম প্রথম না বুঝে আমাদের হাজার হাজার কর্মীকে মামলা দিয়ে নির্যাতন করেছে। প্রকাশ্যে ও গোপনে ব্যাপক তদন্ত করেছে। অবশেষে তারা নিশ্চিত হয়েছে যে হেযবুত তওহীদ জঙ্গি তো নয়-ই বরং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের অর্থ ব্যয় করে আদর্শিক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
যাহোক আমরা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে রাখি, আমাদের আকিদা ও বিশ্বাস হলো মাহদি (আ.) আসবেন সত্য, মহানবী তাঁর আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। কিন্তু তিনি কবে আসবেন, কোথায় আসবেন সবই আল্লাহর এখতিয়ারভুক্ত। মাহদি (আ.) হওয়াটা কোনো দাবি করার বিষয় নয়। তিনি তাঁর কর্মকাণ্ডের দ্বারাই সমগ্র বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হবেন। মাননীয় এমামুয্যামান স্পষ্ট করেই বলেছেন, তিনি নবী নন, রসুল নন, ভবিষ্যদ্বক্তাও নন এমনকি পীর ফকিরও নন। তিনি বলেছেন, “তোমরা কেউ আমাকে মাহদি বলবে না, মনেও করবে না, প্রচার করা দূরে থাক। মাহদির (আ.) মর্যাদা আমি জানি। আমি কেবল শেষ নবীর একজন উম্মত হিসাবে আল্লাহর তওহীদ প্রতিষ্ঠা করতে দাঁড়িয়েছি- এটাই আমাদের জন্য যথেষ্ট।” এরপরও যারা এসব অপবাদ দেয় তারা মিথ্যাবাদী, শয়তান। আর যারা যাচাই না করে হুজুগে মেতে ওঠে তারাও চরম অপরাধী। কারণ গুজবে কান দিয়ে কোনো কাজ করা আল্লাহর সরাসরি নিষেধ। উড়ো কথা প্রচার করা বা কারো উপর অপবাদ আরোপ করে জানমালের ও সম্মানের ক্ষতি করা যেমন হারাম তেমনি প্রচলিত আইনেও দণ্ডনীয়। আল্লাহ বলেছেন- মো’মেনগণ! যদি কোন পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও (সুরা হুজরাত, ৬)।
আল্লাহ বলছেন, “আর যে বিষয় তোমার জানা নাই তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয় কান, চোখ ও অন্তকরণ- এদের প্রতিটির ব্যাপারে সে জিজ্ঞাসিত হবে। (সুরা বনি ইসরাইল, ৩৬)।
রসুলাল্লাহ বলেছেন, কোনো মানুষের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে যাই শোনে তাই যাচাই না করেই অন্যের কাছে বর্ণনা করে দেয় (মুসলিম)। রসুলাল্লাহর জীবনে এমন একটি ঘটনাও নেই যেখানে সাহাবীরা গুজবে মেতে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ক্ষতিসাধন করেছেন। এমন কি যুদ্ধের সময়ও তারা অত্যন্ত সতর্ক থেকেছেন যেন কোনো নির্দোষ বেসামরিক ব্যক্তি, নারী, শিশু, বৃদ্ধের উপর আঘাত না লাগে।
ধর্মব্যবসায়ীরা যে কত বড় ষড়যন্ত্রকারী তার একটি নিদর্শন হচ্ছে একটি অলৌকিক ঘটনা নিয়ে তাদের অপপ্রচার। এ দেশের শত শত পীর আউলিয়ার জীবনীতে শত শত অলৌকিক ঘটনার নজির রয়েছে। এবং এই সমস্ত অলৌকিক ঘটনাগুলো বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিল করে সারাবছরই প্রচার করা হয়। অলৌকিক ঘটনা এমন একটি বিষয় যেটা কেউ বিশ্বাস করতেও পারে- নাও করতে পারে, এটা তার নিজ এখতিয়ারভুক্ত বিষয়। হেযবুত তওহীদের জীবনে সংঘটিত অলৌকিক ঘটনাটির (Miracle) মাধ্যমে মহান আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন হেযবুত তওহীদ হক, হেযবুত তওহীদের এমাম হক এবং হেযবুত তওহীদ দিয়ে সারা পৃথিবীতে আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশা’আল্লাহ। আমরা ঘটনাটির বিস্তারিত বিবরণ বই লিখে প্রকাশ করেছি। এখন হেযবুত তওহীদের ক্ষেত্রে অলৌকিক ঘটনা হবে কেন এমন অভিযোগ তুলে যদি বলা হয়- “ইহার দ্বারা প্রকারান্তরে, অতএব, সুতরাং, বোঝা যায়” যে তিনি নবী দাবি করেছেন, তাহলে সেটা হবে তাঁর উপর মিথ্যারোপ ও বিরাট অন্যায়। উল্লেখ্য, ঐ ঘটনার সময় তিনি সেখানে উপস্থিতও ছিলেন না। যারা উপস্থিত ছিলেন তারাই বর্ণনা করেছেন যে সেখানে কী হয়েছে। উক্ত বইয়ের ১৫ পৃষ্ঠায় এমামুয্যামান নিজেই লিখেছেন, “নব্যুয়ত, রেসালাত শেষ হয়ে গেছে।” সুতরাং তাঁর নবী দাবি করার কোনো সুযোগ আর থাকে না। তবু এমন আজগুবি ইস্যুকে পুঁজি করেই তারা সৃষ্টি করে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, জ্বালাও পোড়াও, হত্যাযজ্ঞ ঘটানোর পায়তারা চলছে।
এ পর্যন্ত বহু জায়গায় আমরা গুজবের কারণে হামলার শিকার হয়েছি। ২০১৬ সনের ১৪ মার্চ এ জাতীয় গুজব ছড়িয়ে দিয়ে সোনাইমুড়ি, নোয়াখালীতে অবস্থিত আমাদের নিজ বসতভিটায় নির্মাণাধীন মসজিদে হামলা চালানো হয়। প্রকাশ্য দিবালোকে নির্দোষ, নিরপরাধ দুইজন হেযবুত তওহীদ সদস্যকে জবাই করে হত্যা করে। তাদের মরদেহ জ্বালিয়ে দেয় পেট্রোল ঢেলে। একেই বলে মধ্যযুগীয় বর্বরতা, একেই বলে জাহেলিয়াত। এই জাহেলিয়াতের যুগের যারা ধর্মব্যবসায়ী তারা আসলে ওরাসাতুল আম্বিয়া নয়, তারা আবু জাহেলদের যোগ্য উত্তরসূরি। এই ঘটনায় পুলিশ শত শত আসামির নামে মামলা করছে, কিন্তু সেই অপপ্রচারকারী উস্কানিদাতা ধর্মব্যবসায়ীরা বাড়িতে, মসজিদে, মাদ্রাসায় নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। অথচ তাদের অপপ্রচারে প্ররোচিত হয়ে আসা ব্যক্তিরা এখন আসামির কাঠগড়ায়।
সকল সচেতন মানুষের প্রতি আমাদের আহ্বান, আমরা মানবতার কল্যাণে নিঃস্বার্থভাবে মাদক, জঙ্গিবাদ, ধর্মব্যবসাসহ যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে যে আদর্শিক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি আপনারাও তাতে সামিল হন। যখনই হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে কোথাও কারো কাছে কোনো নেতিবাচক তথ্য জানবেন, তখনই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। আমাদের বক্তব্য আমাদের কাছ থেকেই যাচাই করবেন।