হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

মহীয়সী নারী বিবি আসিয়া

আদিবা ইসলাম

মহান আল্লাহ যুগে যুগে এমন মহামানব সৃষ্টি করেছেন যারা সত্যের জন্য সীমাহীন কোরবানি ও সবরের দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। এদেরই অন্যতম হচ্ছেন বিবি আসিয়া। তাঁর জন্ম হয়েছিল মিসরের অধিবাসী মুজাহিমের ঘরে ঈসা (আ.) এর জন্মের ১৩৬৩ বছর পূর্বে। তিনি আব্বাস শহরে বনী ইসরাইল বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন বনী ইসরাইল বংশের একজন সম্ভ্রান্ত, ধনী, বিদ্বান ও সর্বোপরি একজন অতিশয় ধর্মপরায়ণ মানুষ। তিনি ছিলেন ইয়াকুব (আ.) এর পুত্র লেবিয়ার বংশধর।

মিশরের বাদশাহদের উপাধী ছিল ফেরাউন। মুজাহিম তার প্রিয় কন্যা আসিয়াকে ফেরাউন দ্বিতীয় রামেসিসের সঙ্গে বিয়ে দেন। ফেরাউন ছিল অত্যন্ত প্রতাপশালী। সে নিজেকে প্রভু বলে দাবি করত এবং আল্লাহর হুকুমকে অস্বীকার করে নিজের হুকুম-আহকাম ও আইন-কানুন দিয়ে শাসন পরিচালনা করত। বনী ইসরাইলের সাধারণ প্রজাদের উপর নির্মম অত্যাচার চালাত। সে ছিল কঠোর ও পাষাণ হৃদয়ের এবং প্রচণ্ড অহংকারী।

একদিন রাজ-জ্যোতিষী ফেরাউনের কাছে এসে বললেন, অচিরেই বনী ইসরাইলীদের মধ্যে এমন এক পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করবে যার হাতে ফেরাউনের সাম্রাজ্যের ধ্বংস নিশ্চিত। গণকের এই গণনা শুনে বনী ইসরাইলীদের উপর তার অত্যচার বহুগুণে বেড়ে গেল। সাম্রাজ্য রক্ষার জন্য সে বনী ইসরাইলের নবজাতক শিশুদের ধরে এনে নৃশংসভাবে হত্যা করা শুরু করল। কিন্তু আল্লাহর পরিকল্পনা ছিল অন্যরকম।

ফেরাউনের রাজপ্রাসাদের অদূরেই ছোট একটি ঝুপড়িতে ইউহানিব নামে একজন মহিলা বসবাস করতেন। এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে তার কোল আলো করে আসে এক পুত্র সন্তান। এই পুত্র সন্তানই ছিলেন বনী ইসরাইলের ত্রাণকর্তা, তাদের জন্য পাঠানো আল্লাহর রহমত, আল্লাহর নবী মুসা (আ.)। ফেরাউনের বর্বরতার কথা সবাই জানত তাই ইউহানিব তার সন্তানকে নিয়ে ভীত ও আতংকিত হয়ে পড়েন। ফেরাউনের হাত থেকে রক্ষার জন্য এক মাস পর্যন্ত মুসাকে (আ.) তিনি নিজের কাছেই লুকিয়ে রাখলেন। কিন্তু এভাবে আর কতদিন রাখা যায়। তখন মহান আল্লাহ তাকে নির্দেশ দিলেন। একটি কাঠের সিন্দুক তৈরি করতে বললেন এবং সেই সিন্দুকে মুসাকে (আ.) রেখে নীলনদে ভাসিয়ে দিতে বললেন। এই আদেশ পেয়ে মুসার (আ.) মায়ের মন শান্ত হল। তিনি সুন্দর একটি সিন্দুক তৈরি করলেন এবং মুসাকে (আ.) তার মধ্যে রেখে নীলনদে ভাসিয়ে দিলেন এবং তার মেয়েকে আদেশ দিলেন সিন্দুকের উপর নজর রাখার জন্য।

সন্তানকে আল্লাহর হাতে তুলে দিয়ে মুসার (আ.) মা ঘরে ফিরলেন। আল্লাহর পরিকল্পনা অনুসারে সিন্দুকটি ফেরাউনের রাজপ্রাসাদের ঘাটের সিড়িতে গিয়ে ভিড়ল। সেই সময় ফেরাউনের স্ত্রী পূণ্যবতী বিবি আসিয়া তাঁর কন্যা ও সেবিকাদের নিয়ে নদীর পাড়ে ঘাটেই বসে ছিলেন। তিনি সিন্দুকটি দেখে তুলে আনার আদেশ দিলেন। এরপর সেই শিশুটিকে তিনি ফেরাউনের কাছে নিয়ে গেলেন। প্রথম দর্শনেই শিশুটির প্রতি ফেরাউনের মনে ভালোবাসা জন্ম নিল। কিন্তু তার আশেপাশের সভাসদগণ তাকে শিশুটিকে মেরে ফেলার পরামর্শ দিলেন। কয়েকজন সন্দেহ পোষণ করলেন এই শিশু হয়তো কোন ইসরাইলী শিশু এবং কয়েকজন তো তাঁকে গণকের বলা সেই শিশু বলেই মতামত দিল। কিন্তু তাদের এই আলোচনার সময় বিবি আসিয়া এগিয়ে আসলেন। তিনি যে কথাটি ফেরাউনকে বলেছিলেন তা কোর’আনে রয়েছে- “এ শিশু আমার ও তোমার নয়নমণি, তাকে হত্যা করো না। এ আমাদের উপকারে আসতে পারে অথবা আমরা তাকে পুত্র করে নিতে পারি। প্রকৃতপ¶ে পরিণাম সম্পর্কে তাদের কোন খবর ছিল না (সুরা কাসাস ০৯)।” বিবি আসিয়ার এ বক্তব্য শুনে ফেরাউন শিশু মুসাকে (আ.) হত্যা করলেন না এবং শিশু মুসা (আ.) ফেরাউনের প্রাসাদেই তার পুত্রের ন্যায় লালিত-পালিত হতে থাকল। এ সময়ে মুসা (আ.) বিবি আসিয়া  এর ¯্নহে ও ভালোবাসায় বেড়ে উঠতে লাগলেন।

ইতোমধ্যে কৈশোর পেড়িয়ে যৌবনে পা রাখলেন মুসা (আ.)। বিবি আসিয়া মুসাকে (আ.) কখনোই চোখের আড়াল করতেন না এবং সবসময় তাঁকে আগলে রাখতেন। আল্লাহকে পরিত্যাগ করে যারা ফেরাউনকে নিজেদের প্রভু বলে মেনে নিয়েছিল এবং ফেরাউনের সামনে সিজদায় লুটিয়ে পড়ত বিবি আসিয়া তাদের ভীষণভাবে অপছন্দ করতেন। ভীতি ও ভক্তিসহকারে তারা ফেরাউনের মন জয় করার জন্য তাকে অসংখ্য উপাধিতে ভূষিত করত। ফেরাউন তার প্রতিপত্তি ও ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে যখন নিজেকে প্রভু বলে দাবি করত, সবার সামনে ঘোষণা করত তখন বিবি আসিয়া আল্লাহর কাছে পানাহ চাইতেন এবং ফেরাউনের এই মিথ্যে অহমিকা দেখে তার ধ্বংসের কথা চিন্তা করে ব্যাথিত হতেন এবং তার এই আচরণকে মনে প্রাণে ঘৃণা করতেন।

প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় মুসা (আ.) নবুয়্যত প্রাপ্ত হলেন এবং আল্লাহ তাঁকে নির্দেশ দিলেন বনী ইসরাইলদের তওহীদের দাওয়াত দিতে এবং ফেরাউনকেও সঠিক পথ চিনিয়ে দিতে। এ সময়ে মুসার (আ.) সঙ্গী ছিলেন তাঁর সহোদর ভাই হারুন (আ.)। আল্লাহর রসুল মুসা কালিমুল্লাহ (আ.) যখন ফেরাউনের দরবারে প্রস্তাব রাখলেন এবং তাকে এক আল্লাহর দিকে ডাক দিলেন তখন মুসা (আ.) ও ফেরাউনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হলো। বিবি আসিয়া দরবারের আলোচনা ভিতর থেকে শুনছিলেন এবং তিনি মুসার (আ.) কথা শুনে তখনই ভিতরে বসে তাঁর উপর পূর্ণ ঈমান আনলেন। বিবি আসিয়া ছিলেন নারীদের মধ্যে প্রথম যিনি মুসা (আ.) এর উপর ঈমান এনেছিলেন। মুসার (আ.) ওপর ফেরাউন এক পর্যায়ে রেগে গেলেন। তখন মুসা (আ.) ফেরাউনের উদ্দেশ্যে বললেন, “যদি আমার দাবির স্বপক্ষে প্রমাণ পেশ করতে পারি তবে কী আপনি আমার কথা মেনে নিবেন?” এ কথা বলেই মুসা (আ.) তাঁর হাতের লাঠিটি দরবারের মেঝেতে ছুঁড়ে মারলেন এবং সেখান থেকে এক বৃহদাকার অজগর সাপের উৎপত্তি ঘটল এবং ফেরাউন ও সভাসদদের দিকে তাকিয়ে ফোঁস ফোঁস করতে শুরু করল। ফেরাউন ও তার সভাসদরা ভীত হয়ে পড়লেন। এছাড়াও আল্লাহর রসুল মুসা (আ.) ডানহাত বাম বগলের নিচে থেকে বের করে মেলে ধরলেন এবং তাঁর হাত থেকে অপরূপ শুভ্র জ্যোতি বিচ্ছুরণ হওয়া শুরু করল যা গোটা দরবারে ছড়িয়ে পড়ল। এই সকল মো’জেজা দেখে বিবি আসিয়ার মুসার (আ.) প্রতি ঈমান আরো দৃঢ় হল এবং তিনি তার এই ঈমান আনার কথা তার পরিচারিকার নিকট তুলে ধরলেন।

অতঃপর মুসাকে (আ.) জব্দ করার জন্য ফেরাউন মিশরের বিখ্যাত জাদুকরদের একত্রিত করলেন এবং তারা যখন তাদের জাদুকরী বিদ্যা প্রদর্শন করছিল তা দেখে বিবি আসিয়া ভীত হলেন এবং দুশ্চিন্তার কালো রেখা তাঁর চেহারায় ফুটে উঠল। কিন্তু আল্লাহ নির্দেশে মুসা (আ.) তাঁর হাতের লাঠি পুনরায় হাত থেকে ছুঁড়ে মারলেন এবং লাঠিটি পুনরায় প্রকাণ্ড এক সাপে পরিণত হল এবং জাদুকরদের সাপগুলোকে গিলতে শুরু করল। এ দৃশ্য ফেরাউনকে যেমন ভয়ে ভীত করেছিল তেমনি বিবি আসিয়াকে করেছিল আনন্দিত। মনের অজান্তেই তাঁর মুখ থেকে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতাসূচক কথা বের হয়ে আসলো। জাদুকরের মুসা (আ.) এর মো’জেজা দেখে তাঁর উপর ঈমান আনলো যা ফেরাউনের রাগকে আরো বহুগুণে বাড়িয়ে দিল এবং সে সমস্ত জাদুকরকে নির্মমভাবে হত্যা করল।

ফেরাউন এরপর মুসা (আ.) সম্পর্কে সীমাহীন উদ্বেগ নিয়ে বিবি আসিয়ার কাছে গেলেন। মুসার (আ.) বিরুদ্ধে তিনি বিদ্রোহের অভিযোগ আনলেন এবং বিবি আসিয়ার সাথে এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করলেন। কিন্তু বিবি আসিয়া তার দিকে ভাবলেশহীনভাবে তাকিয়ে রইলেন এবং এতে ফেরাউন রাগান্বিত হয়ে উঠলে তিনি জিজ্ঞেস করল, “আপনি কেন মুসাকে (আ.) অপছন্দ করেন?” ফেরাউন জবাব দিল, “সে আমার প্রভুত্ব অস্বীকার করে অন্য কাউকে প্রভু হিসেবে মেনে নিয়েছে।” তখন বিবি আসিয়া বলে উঠলেন, “সে যা বলছে তা সত্য। তাঁর কথা মেনে নেও এবং আল্লাহকে একমাত্র প্রভু হিসেবে গ্রহণ কর। তাঁকে নিয়ে দুশ্চিন্তা কোরো না এবং বাড়াবাড়ি কোরো না।”

বিবি আসিয়ার এই পরিবর্তন দেখে ফেরাউন হতভম্ব হয়ে পড়ল এবং নিজের ঘরেও যে মুসার (আ.) ধর্ম ঢুকে পড়েছে তা বুঝতে পারল। সে রাগে বিস্ফোরিত হতে থাকল এবং প্রহরীদের ডেকে বিবি আসিয়াকে বন্দী করার নির্দেশ দিল। শুধু বন্দী করেই সে ক্ষান্ত হয় নি সে তাঁর উপর নির্যাতন শুরু করল। তাঁকে ও তাঁর সন্তানদের দুর্গন্ধময় একটি কারাগারে রাখা হল। তাদের কারাগারে মৃত লাশ এনে রাখা হত তাদের কষ্ট দেয়ার জন্য। তাদের খাওয়া ও পানি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় বিবি আসিয়া ও তাঁর সন্তানরা কষ্ট করছিল। তার সন্তানদের পানির অভাবে মৃতপ্রায় অবস্থা। দুই বছরের শিশু সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছিলেন কিন্তু না খেয়ে থাকার দরুন সেটাও শেষ হয়ে গিয়েছিল। তবুও তিনি এই সংকটেও আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস হারান নি। তিনি সবরের সাথে নিজের ঈমানের উপর অটল ছিলেন। ফেরাউনের নির্দেশে তার প্রহরী ও সাঙ্গরা এসে বিবি আসিয়াকে নানাভাবে প্ররোচিত করার চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু বিবি আসিয়া তাঁর বিশ্বাসে অটল ছিলেন। তিনি দৃঢ়ভাবে তওহীদের উপর অটল ছিলেন।

বিবি আসিয়ার দৃঢ়তা দেখে শেষমেষ ফেরাউন নির্দেশ দিলেন তাঁকে অগ্নিকুণ্ডে ফেলার জন্য। তখন বিবি আসিয়া বলে উঠলেন, “মৃত্যু ভয়ে আমি ভীত নই। একমাত্র আল্লাহ ব্যাতীত আর কাউকে আমি ভয় করি না।” বিবি আসিয়ার মুখে এক কথা শুনে ফেরাউন আরো বেশি হিংস্র হয়ে উঠল এবং নির্দেশ দিল তাঁর সন্তানদের তাঁর সামনে হত্যা করতে। এই ভয়াবহ দৃশ্য দেখার জন্য বহু লোক জমায়েত হলো। অনেকেই বিবি আসিয়াকে অনুরোধ করল ফেরাউনকে প্রভু বলে মেনে নিতে তাহলে তাঁর সন্তানরা প্রাণভিক্ষা পাবে কিন্তু পুণ্যাত্মা বিবি আসিয়া কিছুতেই তাদের কথায় রাজি হলেন না। ফেরাউন এ দৃশ্য দেখে প্রহরীদের নির্দেশ দিল এবং প্রহরীরা তাঁর বড় ছেলেকে এনে গরম তেলের মধ্যে ছেড়ে দিল! এই বিভৎস দৃশ্য দেখে উপস্থিত আঁতকে উঠলেও তাঁর মধ্যে বিন্দুমাত্র ভাবলেশ দেখা গেল না। তিনি পূর্বের ন্যায় সাবের ছিলেন। পাষণ্ড ফেরাউন আবার তাঁকে জিজ্ঞেস করল সে তাঁর মত পরিবর্তন করেছে কিনা। কিন্তু তিনি পূর্বের ন্যায় জবাব দিলেন। এবার ফেরাউন একে একে তাঁর পরবর্তী ছয় সন্তানকেও ফুটন্ত তেলের কড়াইয়ের মধ্যে ফেলে পুড়িয়ে হত্যা করল। বিবি আসিয়া পূর্বের ন্যায় দৃঢ়চিত্তে বসে বসে তাঁর সন্তানদের পরিণতি দেখতে লাগলেন। সবশেষে তাদের সবচেয়ে কনিষ্ঠ সন্তান দুই বছরের দুধের মাসুম শিশুর পালা। সেই সন্তানকে গরম তেলে ফেলতে জল্লাদ যখন সন্তানকে ধরে টানছিল সন্তান মাকে জড়িয়ে ধরে ভয়ে চিৎকার করে কান্না করছিল। কিন্তু মা নিরূপায়। জল্লাদ মায়ের বুক থেকে সন্তানকে কেড়ে নিয়ে গরম তেলে ছুঁড়ে মারল। কী মর্মান্তিক দৃশ্য! তবুও বিবি আসিয়া তাঁর ঈমান থেকে একচুল সরলেন না।

এতকিছু ঘটার পরও যখন বিবি আসিয়া নির্বিকার, ধীর ও সত্যে অটল তখন ফেরাউন তাঁকে শাস্তি দেয়ার জন্য আরো অধিক পরিমাণে মরিয়া হয়ে উঠল। বিবি আসিয়া এমন একজন সৌভাগ্যবতী নারী যিনি পৃথিবীতে থাকতেই জান্নাতের দর্শন লাভ করেছিলেন। এ বিষয়ে আমরা রসুলাল্লাহর একটি হাদিস পাই। রসুলাল্লাহ বলেন, ফেরাউন বিবি আসিয়ার এর দুই হাত ও দুই পায়ে লোহার পেরেক পুঁতে রাখত। যখন ফেরাউনের লোকেরা চলে যেত তখন মালায়েকগণ তাঁকে ছায়া প্রদান করত। বিবি আসিয়া বলতেন, ‘হে আল­াহ! আপনি আমার জন্য আপনার নিকটে জান্নাতে একটি ঘর তৈরি কর“ন এবং ফেরাউন ও তার অত্যাচারী সম্প্রদায় থেকে আমাকে মুক্তি দান কর“ন’। অতঃপর আল­াহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতের ঘর উন্মুক্ত করে দেন (সুরা তাহরীম ১১, মুসনাদে আবী ইয়ালা, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৫০৮)। এর পরই তাঁর শাহাদাত কবুল হয়।

এই পর্যায়ে তাকে হত্যা করার জন্য পেষণ যন্ত্রের মধ্যে ঢুকানো হলো। ধীরে ধীরে পেষণ যন্ত্র বিবি আসিয়াকে পিষে ফেলা শুরু করল। তীব্র যন্ত্রণায় তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়লেন। তাঁর শরীর থেকে চামড়া উঠে যেতে শুরু করল। ধীরে ধীরে শুধু একটি কথাই বললেন, “আল্লাহ ছাড়া কোন হুকুমদাতা নেই, আল্লাহ তুমি এদের ক্ষমা করো।” এভাবেই ঈমানের পরীক্ষা দিয়ে শাহাদত বরণ করলেন এই মহিয়সী নারী।

আল্লাহর শেষ রসুল (স.) একবার মাটিতে চারটি দাগ কেটে সাহাবিদের জিজ্ঞেস করলেন, “তোমরা কী জানো এগুলো কি?” সাহাবীগণ বললেন, “আল্লাহ ও তাঁর রসুলই ভালো জানেন।” রসুল (স.) বললেন, “সর্বশ্রেষ্ঠ চার জান্নাতী নারী হচ্ছেন খাদিজা বিনতে খুয়ালিদ, ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ, মরিয়ম বিনতে ইমরান এবং আসিয়া বিনতে মুজাহিম।”

শিক্ষা:

১. সত্যের মোকাবেলায় পৃথিবীর কোনো শক্তির সামনে মাথা নত না করা।

২.  পৃথিবীর কোনো প্রাণ, সম্পর্ক বা সম্পদ নেই যা তওহীদের তুলনায় মূল্যবান হতে পারে।

৩. তওহীদে অটল থাকার জন্য প্রয়োজনে নিজের কলিজার টুকরো সন্তানদেরকে একে একে শহীদ করে দিয়ে, প্রয়োজনে নিজেও শাহাদাতের পেয়ালা পান করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

৪. মো’মেন/মো’মেনাদের সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হতে হয়। তাহলে আল্লাহই তাদেরকে কঠিন পরীক্ষার সময় সবর অবলম্বন করার শক্তি দেন।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...