নির্বাচনকে সামনে রেখে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর কদর বাড়ছে। সংবাদপত্রে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো পড়ে আমার আফসোস হচ্ছে যে, ধর্মপ্রাণ মানুষ যারা প্রকৃতপক্ষেই আল্লাহর সন্তুষ্টি চায়, পরকালে জান্নাতে যেতে চায়, আল্লাহকে বিশ্বাস করে এবং এই বিশ্বাস থেকে, ঈমান থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠিকে টাকা দেয়, ভোট দেয়, তাদেরকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ায়, তাদেরকে সমীহ করে, তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন আন্দোলনের কর্মসূচিতে যোগ দেয়, তাদের কাছে দোয়া চায়; অথচ দুঃখজনক বা¯—বতা হলো গত কয়েক শতাব্দি থেকে, বিশেষ করে ব্রিটিশদের, ইউরোপিয়ানদের গোলামির পর থেকে তাদের এই ধর্মবিশ্বাসকে কেবল শাসকশ্রেণি ব্যবহার করেছে। এর আগের সহস্রাধিক বছর তারা নিজেরা নিজেরা কামড়াকামড়ি করে দুর্বল হয়ে অন্য জাতির গোলামে পরিণত হয়েছে। সেই থেকে এ পযন্র্ত কিভাবে মানুষের ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়ে খেলা হয়েছে, হাইজ্যাক করা হয়েছে তা অতি ন্যাক্কারজনক ইতিহাস।
ধর্মবিদ্বেষী বা সেক্যুলার দলগুলো কোনো অবস্থাতেই রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে ধর্মের ছায়াও দেখতে চান না, সেই তারাই দাবার ঘুঁটি হিসেবে ধর্মীয় দলগুলোকে বরাবর ব্যবহার করছে। ধর্মভিত্তিক দলগুলোর নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মুরোদ নেই, জনগণের ভোট পাওয়ার মত উন্নত চরিত্র বা আদর্শও নেই। তাই তারা বারাঙ্গনার মত আজ এর কাছে তো কাল ওর কাছে আদর চায়। কিন্তু সাধারণ জনগণ তাদের ধার্মিক ভাবমূর্তি দ্বারা প্রভাবিত হয়। কিন্তু না। ধর্মের এ কদর্য ব্যবহারের দ্বারা তাদের নেতৃপর্যায় লাভবান হলেও এতে না ইসলামের উপকার হয়েছে, না মানবজাতির উপকার হয়েছে। এখন সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের চিন্তা করার, বুঝার সিদ্ধান্ত নেবার সময় হয়েছে।
সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের প্রতি আমাদের আহ্বান হচ্ছে, আপনাদেরকে ইসলামের কথা বলে বারবার প্রতারিত করা হচ্ছে, অথচ তারা যে ইসলামটা নিয়ে আপনাদের কাছে ভোটভিক্ষা করছে সেটা আসলে আল্লাহ রসুলের ইসলাম না। তাদের খেদমত করলে ইসলামের কোনো উপকার হবে না, তাদের ভোট দিলে আপনাদেরও কোনো সওয়াবও হবে না। এই বিকৃত ইসলামের খোলস ধারণ করে তারা আসলে স্বার্থের ব্যবসা করছে। একেক দল একেকভাবে বাণিজ্য করছে। কেউ একেকটি অনর্থক ইস্যুকে হাজির করে গর্জন করতে থাকেন যেন একটু উঁচু দামে নিজেদের বিক্রি হতে পারেন। কেউ বিভিন্ন সেক্যুলার দলের পেছনে জোট গঠনের নামে লেজুড় হয়ে জুড়ে যাচ্ছেন।
আল্লাহর রসুলের ইসলাম তো এমন ছিল না। তিনি বা তাঁর সাহাবিরা তো এভাবে কারো ঘুঁটিতে পরিণত হন নি, কারো লেজুড়বৃত্তিও করেননি। তারা তো পণ্য ছিল না। আল্লাহর রসুলকে তো সেই মক্কায় থাকতেই রাজা বানানোর প্রলোভন দেখানো হয়েছিল, তিনি তো সে কথায় কর্ণপাতও করেন নি। ধর্মের নামে ধর্মব্যবসায়ীদের এ কোন ফটকাবাজি চলছে বিশ্বজুড়ে।
এভাবে একদিকে ধর্মব্যবসায়ী কিছু গোষ্ঠি ধর্মের নামে দল তৈরি করে মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে, অপরদিকে সেকুলার দলগুলি ধোঁকা দিচ্ছে ধর্মবিশ্বাসী মানুষদেরকে। ইসলামপন্থী দলগুলোর এই লেজ নাড়ানো দেখে এবং রাজনৈতিক দলগুলো যেভাবে ইসলামকে টিস্যু পেপারের মত ব্যবহার করছে দেখে একজন ইসলামপ্রিয় মানুষ হিসাবে ব্যক্তিগতভাবে আমি লজ্জা পাচ্ছি।