মিরেরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জে জঙ্গিবাদবিরোধী অভিযানে দুই জন ব্যক্তি নিহত হয়েছে। অনেকদিন পরে আবারো এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটল। আমরা যখন জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশ র্যালি বা সেমিনার করি, তখন অনেকেই প্রশ্ন তোলেন যে, এখন তো আমাদের দেশে জঙ্গিসংকট নেই। তাহলে কেন একটা অপ্রয়োজনীয় ইস্যুকে বারবার সামনে আনা? তাদের প্রতি সবিনয়ে কয়েকটি কথা বলব।
জঙ্গিবাদ একটি আদর্শিক বা মতবাদভিত্তিক সন্ত্রাস। আমরা যতই বলি যে, ইসলাম শান্তির ধর্ম ইত্যাদি, কিন্তু জঙ্গিবাদীরা মনে করে সে সেটাই ধর্মের নির্দেশিত সঠিক পথ। সাধারণ সন্ত্রাসীরা স্বার্থের প্রয়োজনে সন্ত্রাস করে কিন্তু জঙ্গিবাদীরা ধর্মের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত। শত্রুর হাতে ধরা পড়ার চেয়ে আত্মঘাতী হওয়াকে তারা গৌরবের মনে করে। সুতরাং জঙ্গিবাদের ইস্যুটা অন্যান্য ইস্যুর মতো নয় যে কেবল ধরপাকড় করে, ফাঁসি দিয়ে, অভিযান করে তাদেরকে নির্মূল করা যাবে।
জঙ্গিদের গ্রেফতার বা নিহত হওয়ার সংবাদ আমরা বিগত বছরগুলোতে নিয়মিতভাবে পত্রিকায় পড়েছি। অনেক জঙ্গি হামলা যেমন দেখেছি তেমনি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানও কম দেখি নি। হলি আর্টিজানে ২০ জন নির্দোষ মানুষকে সারারাত ধরে জবাই করার ঘটনা দেশবাসীকে থমকে দিয়েছিল। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল ঘটনাটি। এর পূর্বে লাগাতারভাবে কথিত মুক্তমনা ও ব্লগারদের চাপাতি দিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটল। বাংলাদেশকে জঙ্গিদমনে সাহায্য করতে আসলো এফবিআই।
জঙ্গি মরল বহুসংখ্যক কিন্তু মতবাদ এত সহজে মরে না, বিশেষ করে যদি সেটা হয় ঈমানের ভিত্তিতে। তাই দীর্ঘ বিরতির পর আবারও জঙ্গিনিধন অভিযান চালাতে হলো আইন-শৃঙ্খলা র¶াকারী বাহিনীকে। কিন্তু আবারও বলছি, এসব করে জঙ্গিবাদ নির্মূল করা সম্ভব নয়। সাময়িকভাবে দুর্বল করে রাখা সম্ভব হতে পারে, কিন্তু ভিতরে ভিতরে তারা ঠিকই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। কোর’আন হাদিসের অপব্যাখ্যা শুনিয়ে নতুন লোকদেরকে দলে অন্তর্ভুক্ত করবে। মওকা খুঁজবে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে অস্তিত্বের জানান দিতে।
পৃথিবীর কোনো দেশ থেকেই জঙ্গিবাদকে নির্মূল করা সম্ভব হয়নি, কারণ তাদের মতাদর্শকে ভ্রান্ত প্রমাণ করার মতো কোনো শক্তিশালী আদর্শ কোথাও পাওয়া যায় নি। ইসলামের জেহাদ আর জঙ্গিবাদের মধ্যে বিরাট ও মৌলিক তফাৎ রয়েছে- সেটা কী তা জঙ্গিবাদীদের জানাতে হবে যেন তারা সেই ভুল পথ থেকে ফিরে আসতে পারে। একে বলা হয় কাউন্টার ন্যারেটিভ বা পাল্টা আদর্শ দিয়ে লড়াই। এটি জাতির সামনে কোর’আন হাদিসের দলিল দিয়ে তুলে ধরতে হবে। এই কাজটি করে যাচ্ছে হেযবুত তওহীদ।