হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

জনতার প্রশ্ন – আমাদের উত্তর

প্রশ্ন: বর্তমানে যে ব্যবস্থার মধ্যে আমরা বাস করছি তাতে রাজনীতি না করলে রাষ্ট্র পরিচালনার জায়গায় যাওয়া সম্ভব নয়। আর রাষ্ট্রীয় শক্তি ছাড়া ইসলাম প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় এটা সর্বজনস্বীকৃত। কিন্তু আপনারা তো রাজনীতি করেন না বা করবেন না। তাহলে কীভাবে আপনারা জাতীয় জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন?

উত্তর: রাষ্ট্রীয় শক্তি বা সমর্থন ছাড়া কোনো অন্যায়ই নির্মূল করা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়, ইসলাম প্রতিষ্ঠাও সম্ভব নয়া- এটা স্বাভাবিক কথা। ইসলাম মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আইন-কানুন, দণ্ডবিধিসহ সকল সমস্যার সমাধানের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত একটি জীবনবিধান। এ জীবনবিধানকে অনুসরণ করা হলে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য আর কোথাও যাওয়া লাগবে না। এজন্যই পবিত্র কোর’আনের শেষ নাজেলকৃত আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, “আমি আজ তোমাদের জন্য ইসলামকে জীবনব্যবস্থা হিসাবে মনোনীত করলাম, তোমাদের প্রতি প্রেরিত আমার দীনকে পূর্ণ করে দিলাম (সুরা মায়েদা ৩)।”

কথা হচ্ছে, মানবজাতির শান্তির বিষয়টা রাষ্ট্রশক্তি ছাড়া সম্ভব না। মদিনাবাসীরা যখন রসুলাল্লাহর উপর তাদেরকে শাসন করার ভার অর্পণ করলেন তখন তিনি রাষ্ট্রশক্তির অধিকারী হলেন। তখন আল্লাহ একে একে শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় হুকুমগুলো নাজেল করতে লাগলেন। সেগুলোর প্রভাবে ঐ সমাজ শান্তিপূর্ণ হলো।

তাহলে এখন আমরা কীভাবে সত্যদীন প্রতিষ্ঠা করতে পারি। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, আল্লাহর রসুল যে জায়গায় মুসলমানদেরকে রেখে গিয়েছিলেন, ইসলামটাকে তিনি যে অবস্থায় জাতির হাতে তুলে দিয়ে গিয়েছিলেন, মুসলমানরা ক্রমান্বয়ে সেই জায়গা থেকে সরে গিয়েছে। বিরাট ভূখণ্ডের অধিকারী হওয়ার পর আত্মপ্রসাদে মগ্ন হয়ে জাতি সংগ্রাম ত্যাগ করেছে। পাঁচ দফার যে কর্মসূচির বন্ধনীর মধ্যে তিনি জাতিকে রেখে গিয়েছিলেন সেই কর্মসূচিকেও তারা ত্যাগ করেছে। কর্মসূচির প্রথম দফাই ছিল তওহীদের ভিত্তিতে ঐক্য। তারা তওহীদও ত্যাগ করেছে, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মাসলা মাসায়েল নিয়ে আলেমগণ তর্ক বিতর্ক বাহাসে লিপ্ত হয়েছে। তারা বহু রকম ফেরকা মাজহাব তৈরি করে এক জাতিকে ভেঙ্গে খান খান করে ফেলেছেন। আর সুলতানরা বিপুল সম্পদের অধিকারী হয়ে ভোগ বিলাসে লিপ্ত হয়েছেন। জনগণও এই দল, ঐ দল, এই মাযহাব, ঐ তরিকায় বিভক্ত হয়েছে। একজন মানুষকে টুকরো টুকরো করে ফেলার পর তার অস্তিত্বের কোনো অর্থ থাকে না, সে মারা যায়। মুসলিম উম্মাহও একইভাবে প্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। তারপর ইহুদি খ্রিষ্টান ‘সভ্যতা’, দাজ্জালীয় ‘সভ্যতা’ এ জাতির উপর সামরিক আগ্রাসন চালিয়েছে। তারা নতুন নতুন প্রযুক্তি, নতুন উদ্ভাবিত অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এ জাতির উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তাদের আক্রমণে আটলান্টিকের তীর থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত পুরো মুসলিম বিশ্ব তাদের একদম ক্রীতদাস হয়ে গেছে, তাদের পায়ের নীচে পিষ্ট গোলাম হয়ে গেছে। তাদেরকে অগ্রাভিযান মুসলিমরা কেউ রুখতে পারে নাই। তাদের সমস্ত আমল, সমস্ত জ্ঞান, তর্কবিতর্ক অর্থহীন হয়ে গেছে।

এটা হওয়ার কথা ছিল না। মো’মেন কখনো পরাজিত হতে পারে না। যখনই পরাজিত হলো তখনই বুঝতে হবে আমরা আল্লাহর দৃষ্টিতে আর মো’মেন নই। আমাদেরকে দাস বানিয়ে তারা তাদের তৈরি জীবনবিধান, তাদের সুদভিত্তিক অর্থব্যবস্থা, তাদের যাবতীয় হুকুম আমাদেরকে মেনে নিতে বাধ্য করল। ইসলামের সব ব্যবস্থা পাল্টে একে একে তাদের রাজনৈতিক দর্শন, প্রশাসনিক কাঠামো, আমলাতান্ত্রিক সিস্টেম ইত্যাদি সব ব্যবস্থা আমাদের উপর চাপিয়ে দিল। আমরা আমাদের সব হারালাম। জীবনব্যবস্থার সকল অঙ্গন থেকে ইসলাম হারিয়ে ব্যক্তিগত আমলের মধ্যে সীমিত হয়ে গেল। আল্লাহ রসুলের উপর ঈমান নিয়ে আমরা মসজিদে মাদ্রাসায় গিয়ে উপাসনায় মশগুল হলাম। আমরা ব্যাপৃত হলাম জিকির আজকার, নামাজ-রোজা, সহীহভাবে ওজু করা, মেয়েদের বোরকা পরানো, ছেলেদের দাড়ির দৈর্ঘ্য এসব আমলের মধ্যে।  সেখানে বসে সোবাহানাল্লাহ, সোবাহানাল্লাহ জিকির করে আমরা জীবন পার করতে লাগলাম। আমরা ব্যাপৃত হলাম দাড়ি, টুপি, ওজু, নামাজ-রোজা আর নারীদের পর্দা করার মাসলা-মাসায়েল নিয়ে। আলেমরা এসব নিয়ে শত শত ওয়াজ মাহফিল, বাহাস চালিয়ে যেতে লাগলেন। যে দীন এসেছিল মানুষের মুক্তির জন্য সেই দীনকে লম্বা জোব্বার পকেটে পুরে তারা ব্যবসা করে যেতে লাগলেন।

পরাধীন হয়ে জাতির জীবনে কালোরাত নেমে এলো, অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে গেল মানুষ। পেটে খাবার নাই, রাজনৈতিক অধিকার নাই, কথা বলার ক্ষমতা নাই। হাজার প্রকার খাজনা তাদের উপর চাপানো হলো। খাদ্যশস্যের বদলে নীলের চাষ করতে বাধ্য করা হলো। এভাবে নির্যাতিত হতে হতে একসময় মানুষ আওয়াজ তুলল, আমরা আর ব্রিটিশদেরকে মানি না। কিন্তু মানি না বললে তো হবে না। অস্ত্র তাদের হাতে, ক্ষমতা তাদের হতে। তারা ঐক্যবদ্ধ, শক্তিশালী আর আমরা ফেরকা মাজহাব নিয়ে মারামারি করছি। কিন্তু এরই মধ্যে সেই আফ্রিকা থেকে শুরু করে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত মুসলিম বিশ্বে বহু জাতীয়তাবাদী নেতার জন্ম হলো। তারা দেখলেন ধর্মের যে হাল হয়েছে তা দিয়ে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা যাবে না। তাদের কেউ কেউ বাম আদর্শ নিলেন, কেউ কেউ মানুষের মধ্যে জাতীয়দাবাদের চেতনা ঢুকিয়ে দিলেন। তারা বললেন, আমরা বাঙালি, আমরা ইরানি, আমরা ইরাকি, আমরা আফগানি, আমরা পাকিস্তানি, আমরা মালয়েশিয়ান, আমরা ইন্দোনেশিয়ান। ধর্ম-বর্ণ ভুলে এখন আমাদের দেশ বাঁচাতে হবে। আলেমরা এসকল জাতীয়তাবাদকে কুফরি বলে ফতোয়া দিলে কী হবে, ব্রিটিশ তাড়াতে এগুলোই মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল, ধর্ম ঐক্যবদ্ধ করতে পারে নি।

এই ব্যর্থতা কি আমাদের নয়? কেন আমাদের জাতীয়তাবাদী নেতারা বিপ্লবের আদর্শ হিসাবে ইসলাম নিতে পারলেন না কেন? রসুলাল্লাহ কি বিপ্লব ঘটাননি? তারা পারেননি, পারবেনও না, কারণ আমাদের এক শ্রেণির আলেমের কাছে ইসলাম হলো কতটুকু দাড়ি আছে, কার টুপি আছে, কার টাখনুর কাপড় কোথায় উঠল, কার আরবি উচ্চারণ মাখরাজ মোতাবেক হচ্ছে কিনা এটা নিয়ে পড়ে আছে। আর জাতীয়তাবাদী নেতারা নেমেছেন মানুষের অধিকারের জন্য, কোটি কোটি মূর্খ মানুষ যারা লেখাপড়া জানে না, আলিফ-বা-তা, ক-খ পড়তে জানে না, এ-বি-সি-ডি জানে না। এই নিরক্ষর অজ্ঞ মানুষদেরকে তারা জাতীয়তাবাদী চেতনায় ঐক্যবদ্ধ করলেন। এরই মধ্যে সাম্রাজ্যবাদী ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক জাতিগুলো দুই দুইটা বিশ্বযুদ্ধ করে দুর্বল হয়ে পড়ল এবং উপনিবেশগুলো ছেড়ে চলে গেল। যাওয়ার পরও যে রাষ্ট্রব্যবস্থা, অর্থব্যবস্থা, আমলাতান্ত্রিক সিস্টেম, সামরিক বাহিনীর সিস্টেম তারা প্রবর্তন করেছিল সেটাই আমরা চালু রাখলাম। নতুন কোনো ব্যবস্থা কোত্থেকেই বা আমরা আনব? ইসলাম তো বহু আগেই ব্যক্তিগত ধর্মাচারে পরিণত হয়েছে। ওদের রেখে যাওয়া সেই ব্যবস্থার উপরে আজকের বিশ্বব্যবস্থা দাঁড়িয়ে আছে।

এখন আপনি যদি মসজিদের কোনায় বসে বলেন, ও কাফের, ওকে ভোট দিস না, এটা বলে কোনো লাভ হবে? সংবিধান রচিত হয়ে গেছে। মানুষ রক্ত দিয়ে সংবিধান বানিয়েছে, গণপরিষদে বা সংসদে বসে সেটাকে পাশ করা হয়েছে। আপনারা ইসলামের ধ্বজাধারীরা তখন কোথায় ছিলেন? আপনারা তো রক্ত দেন নাই। আপনারা ফতোয়া নিয়ে হাজার হাজার কেতাব রচনা করেছেন। যারা আন্দোলন করে রক্ত দিয়ে সংবিধান বানিয়েছে তারা সেই সংবিধানের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আদালত সুপ্রিমকোর্ট বসিয়েছেন। সেই সংবিধানের রায়কে কার্যকর করার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বানিয়েছেন। সরকার কাঠামো নির্ধারণ করেছেন। সরকারে আবার কে আসবে কে যাবে, এক সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে তারা ঠিক করে রেখেছেন। আলেম দাবিদারেরা তো শুধু মাসলা মাসায়েল নিয়ে কূটতর্ক আর ধর্মব্যবসা নিয়েই ছিলেন। রাষ্ট্র পরিচালনার যোগ্যতাই তাদের গড়ে ওঠেনি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে রাষ্ট্রশক্তি ছাড়া ইসলাম সম্ভব নয়। তাহলে এখন যারা রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলামকে দেখতে চান তারা কী করবেন। এখন একটা কাজই করতে পারবেন, ঐ প্রতিষ্ঠিত সরকারের বিরুদ্ধে শ্লোগান তুলতে পারবেন, আমার দাবি মানতে হবে – নইলে গদি ছাড়তে হবে। আল্লাহর আইন চাই – কোর’আনের আইন চাই। আর জনগণকে বোঝাবেন, এটাই জেহাদ। তারা জেহাদ করছেন। এই জেহাদ করতে গিয়ে তারা জনজীবনে বিপর্যয় ডেকে আনছেন, গাড়ি ভাঙচুর করছেন, মানুষ হত্যা করছেন। তখন সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। তখন আবার মানুষের ধর্মানভূতিকে ব্যবহার করে বলা হচ্ছে, “তওহীদী জনতার উপর তাগুতি, কুফরি রাষ্ট্রশক্তির আক্রমণ” ইত্যাদি।

এইবার সরকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিল- “এদেরকে দেখো। এরা জনগণের গাড়ি ভাঙছে। রাস্তাঘাট ধ্বংস করছে, বোমা মারছে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। এদেরকে ফেরাও।” তখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের উপর টিয়ার শেল বা রাবার বুলেট নিক্ষেপ করলে তখনই তারা প্রচার করে দিল- “তওহীদী জনতার উপর কুফরি রাষ্ট্রশক্তির আক্রমণ। জেহাদ জেহাদ জেহাদ চাই – জেহাদ করে বাঁচতে চাই।” ফলটা কী হলো তা আমরা বছরের পর বছর ধরে দেখে এসেছি। আমরা তাদেরকে বলছি, এই পথ ভুল। এই পথে কোনোদিনও ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা যায় নি, যাবেও না। গণতান্ত্রিক অধিকার দেওয়া হয়েছে কিন্তু শাসনক্ষমতায় যাওয়ার কোনো সুযোগ তাদেরকে দেওয়া হবে না। কারণ শাসনক্ষমতায় কে যাবে না যাবে তা পশ্চিমাদের সিদ্ধান্ত। এরা নির্বাচনে জিতবেও না, যদিও কেউ ধাপ্পাবাজি করে যায় বছর না ঘুরতেই তাদের নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এখন তাহলে কী হবে? আগেই বলেছি- রাষ্ট্রশক্তি ছাড়া ইসলাম সম্ভব না। আমরা রাষ্ট্রে বর্তমানে যারা আছেন তাদেরকে বলেছি যে, আপনাদের হাতে একটা রাষ্ট্রকাঠামো আছে। তাই নতুন করে শক্তি সংগ্রহের প্রয়োজন নেই। কিন্তু মানুষকে শান্তি ন্যায় সুবিচারের মধ্যে রাখার জন্য যে আদর্শ লাগবে সেটা আপনাদের কাছে নেই। সেই আদর্শ নেই যা দিয়ে রাষ্ট্রও পরিচালনা করা যাবে আবার জাতিও ঐক্যবদ্ধ, মানবতাবাদী, নিঃস্বার্থ হবে; দেশে জঙ্গিবাদ থাকবে না, দুর্নীতি, অপরাজনীতি থাকবে না, কেউ সাম্রাজ্যবাদীদের দাওয়াত দিয়ে ডেকে আনবে না; জাতি শাসকের আদেশ মানবে, সরকারকে নিজেদের অভিভাবক হিসাবে মান্য করবে। সেই আদর্শ আপনাদের কাছে না থাকায় আপনারা ব্রিটিশদের তৈরি ব্যবস্থা দিয়ে দেশ চালিয়ে আসছেন। কিন্তু শান্তি দিতে পারেন নি। সেই পশ্চিমারাও সেই ব্যবস্থায় শান্তি পায় নি, আপনারাও পাবেন না। তারা আজকে দেউলিয়া। তাদের বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা পরিজনহীনভাবে ধুঁকে ধুঁকে মারা যাচ্ছে। তরুণরা মাদকাসক্ত, তারা হতাশায় আত্মহনন করছে। তাদের কিশোরেরা পর্যন্ত স্কুলে গুলি চালিয়ে শিশুদের হত্যা করছে। তারা এখন বিশ্বকে এটমবোমার মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়েছে। তাদের কোটি কোটি মানুষ আজ চব্বিশ ঘণ্টা গরুর মতো খাটনি করেও সংসার চালাতে পারছে না। ঐ ব্যবস্থারই চর্চা আপনারা করছেন। এখান থেকে বেরিয়ে আসুন। আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনাদের জীবন পরিচালনার জন্য সঠিক আদর্শ চলে এসেছে। আমরা রাষ্ট্রশক্তিকে এই প্রস্তাব দিচ্ছি। প্রস্তাব দেওয়া ছাড়া আমরা আর কীই বা করতে পারি? আমরা কি এটা বলতে পারি যে আমাদের দাবি মানতে হবে, নইলে গদি ছাড়তে হবে। আমরা কি গাড়ি ভাঙচুর করতে পারি? পারি না। কারণ এটা রসুলের তরিকা না।

এখন যদি সরকার আমাদের প্রস্তাব না নেয় তাহলে আমাদের কর্তব্য হবে জনগণকে বুঝানো- যেটা রসুল করেছেন। আমরা এটাও করছি। আমরা এই জনগণকে বুঝানোর জন্য এইবার মাঠে ময়দানে, হাটে বাজারে সেমিনার করে আমাদের পত্র-পত্রিকার মধ্য দিয়ে আমাদের এই কথাই বুঝিয়ে এসেছি। আমরা বলছি – প্রিয় দেশবাসী! আমরা ধ্বংস হয়ে যাব। আসুন আমরা সবাই মিলে আল্লাহর দেওয়া এমন একটা আদর্শ গ্রহণ করি যা দিয়ে আমরা নিজেরাও শান্তি পাব, আমাদের সমাজও রক্ষা পাবে, দারিদ্র্য দূর হবে।

ধরুন জনগণও যদি আমাদের কথা না মানে তাহলে কী করব? এ ক্ষেত্রে আমাদের পরিষ্কার কথা হলো, জনগণ যদি ত্রুটিপূর্ণ আর অশান্তিময় জীবনব্যবস্থায় বসবাস করতে চায় তাহলে আমার কী দায় পড়েছে তাদেরকে শান্তি দেওয়ার? জনগণকে জোর করে, বোমা মেরে, ভাঙচুর করে, হরতাল অবরোধ করে এই ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে? জনগণ যদি তার এই ভুল জীবনব্যবস্থার ফল পেয়েও না ফেরে, এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ না হয়, সত্য প্রত্যাখ্যান করে, যে জনগণের জন্য কাজ করছি তারাই যদি এটা না চায় তাহলে আমার আর জোর করার দায়িত্ব নাই। তারা তাদের পরিণতি ভোগ করবে। মানুষের মনের উপর জোর চলে না। এটা আল্লাহ নিষেধ করেছেন- দীন নিয়ে জবরদস্তি করো না। সত্য ও মিথ্যাকে আলাদা করে চিহ্নিত করে দাও। আমরা সেটা করেছি। জনগণকে আমরা এই ব্যাপারে যেমন সতর্ক করছি তেমনি সত্য আগমনের শুভ সংবাদও দিচ্ছি। সতর্কবাণী হচ্ছে, যে বিপদ মাথার উপরে আবর্তিত হচ্ছে সেই বিপদ থেকে কেউ রক্ষা পায় নি। আর শুভ সংবাদ হলো, আমরা চাইলে রক্ষা পেতে পারি, সেই পথ আল্লাহ দান করেছেন।

আমরা যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তাদেরকেই বোঝাচ্ছি। তারা যে বুঝবে না সেই নিশ্চয়তা আপনাকে কে দিল? আমি একজন নাগরিক হিসাবে সরকারকে ভালোমন্দ প্রস্তাব দেওয়ার অধিকার আমার আছে। যদি সরকার এই প্রস্তাব মেনে নেয় তাহলে তাদেরও উপকার, জাতিরও উপকার। যদি তারা মেনে নেয় তাহলে আর ওখানে গিয়ে ক্ষমতা নিয়ে কামড়া-কামড়ি করার তো দরকার নাই, শান্তি প্রতিষ্ঠা হওয়া নিয়ে কথা। সরকার নিক বা জনগণ নিক দেশে আমরা যে আদর্শ প্রস্তাব করছি সেটা সামষ্টিক জীবনে প্রয়োগ করা হলে শান্তি আসবে এটা আমরা শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারি।

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...