প্রশ্ন: ইসলামের যে প্রচলিত প্রক্রিয়া আমাদের সমাজে বিরাজ করছে সেটাকেই অধিকাংশ মুসলমান ইসলাম হিসেবে মেনে চলছে। আর হেযবুত তওহীদের আকিদা প্রচলিত ইসলামের ঠিক বিপরীত অর্থাৎ অধিকাংশ মুসলমানের আকিদার বিপরীতে আপনাদের অবস্থান। এখন, একটি গণতান্ত্রিক দেশ যেখানে অধিকাংশ মানুষের মতামত নিয়েই সরকার গঠিত হয়, সে দেশের সরকার কেন আপনাদেরকে সমর্থন দেবে? তারা তো অধিকাংশ মানুষের ধ্যান-ধারণা বা ধর্মানুভূতির বিরুদ্ধে যাবে না।
উত্তর: প্রশ্নটা একটু জটিল, আমি সহজ করে বলছি। প্রশ্নে বলা হয়েছে, আমরা ইসলামের যে রূপটা তুলে ধরছি সেটা আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের বিশ্বাস বা আকিদার সাথে মেলে না। তো অধিকাংশ মানুষের সমর্থনের ওপর নির্ভর করেই এই সরকার ব্যবস্থাটা গড়ে উঠেছে। যেহেতু অধিকাংশ মানুষের আকিদার সঙ্গে মেলে না সেহেতু সরকার কেন আমাদেরকে মেনে নেবে বা অনুমোদন দেবে।
আমি আগেই বলেছি অধিকাংশ মানুষ কাকে সমর্থন দেয় বা দেয় না এটা সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এখনো আসে নাই। আপনার প্রশ্নের আলোকে আমি বলছি, তাহলে সরকারকে বলুন সারা বাংলাদেশে ষোলকোটির প্রত্যেকটি মানুষের কর্ণকুহরে আমার বক্তব্য পৌঁছে দেয়া হোক, আমাকে কথা বলতে দেয়া হোক। আমি যেন তাদের মধ্যে হেযবুত তওহীদের বক্তব্য সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরতে পারি। তখন সিদ্ধান্ত নেবেন অধিকাংশ মানুষ আমাদেরকে সমর্থন করছেন নাকি ধর্মব্যবসায়ীদেরকে সমর্থন করছেন। যদি তারপর অর্থাৎ আমার সম্পূর্ণ বক্তব্য মানুষের কাছে তুলে ধরার পর আমার দেশের জনগণ যদি আমাকে প্রত্যাখ্যান করে, আমাকে যদি সমুদ্রে নিক্ষেপ করে আমার কোনো আপত্তি থাকেবে না। আমি কথা বলতে পারি না, আমাকে জনসভা, সেমিনার করার অনুমতি দেয়া হয় না, আমার বক্তব্য মিডিয়াতে প্রচার করা হয় না, পত্রিকায় দেয়া হয় না। তাহলে জনগণ কী করে জানবে আমি সত্যের পথে আছি নাকি মিথ্যার পথে আছি। আপনার প্রশ্নের আলোকে জবাব দিচ্ছি, দেশের সাধারণ মানুষ ওই ধর্মান্ধ, ধর্মব্যব্যবসায়ী, জঙ্গিবাদী এবং ধর্ম নিয়ে যারা অপরাজনীতি করে তাদের পক্ষে আছে নাকি হেযবুত তওহীদের পক্ষে আছে সেটা প্রমাণ করার জন্য আমার বক্তব্য সারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করুন।
তারা আমার কথা শুনুক, বিচারের ভার আমি তাদেরকে দিয়ে দেব। তারা যদি সিদ্ধান্ত নেন, হেযবুত তওহীদের এমাম অযৌক্তিক কথা বলছে, ইসলামবিরোধী কথা বলছে, তারা আমাকে মানবেন না, তারা বলছে আমাকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করা হোক, তবে আমার কোন আপত্তি থাকবে না। হ্যাঁ, আমাদের দেশে একটা গণতান্ত্রিক সিস্টেম রয়েছে। এই সিস্টেমে অধিকাংশ জনগণকে হিসেবের মধ্যে আনা হয় কারণ অধিকাংশের মতামতই গ্রহণযোগ্য। এই ধারণাটা ঠিক নয়, অধিকাংশ মানুষের মতই সবসময় গ্রহণযোগ্য বা সঠিক হয় না। গণতন্ত্র এটা মানতে পারে তবে আমি এটা মানি না। গণতন্ত্রের এই নীতি দুনিয়াতেও এখন এই নীতি কোথাও চলে না। সত্য অর্থাৎ ন্যায়ই সর্বদা গ্রহণযোগ্য হবে। দুনিয়ার সকলে যদি একজোট হয়ে মিথ্যা বলে তবে সেটা কি গ্রহণযোগ্য হবে? না।
সম্প্রতি কানাডা সীমিত আকারে মাদক নেয়ার অনুমতি দিয়েছে। অবশ্য না দিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। তাদের ঘরে ঘরে এখন মাদকাসক্ত, ভোগ বিলাসে মত্ত, টাকা পয়সার অভাব নেই। কিন্তু শুধু টাকা দিয়েই জীবন চলে না, মানুষের আত্মাও রয়েছে। তার আনন্দ করার প্রয়োজন পড়ে। আনন্দ করার জন্য মদ খাওয়ার ‘বার’ বানানো হয়েছে। সেই বারে গোলাগুলি করে ১৪-১৫ জন খুন হয়েছে কিছুদিন আগে। টাকা আছে কিন্তু শান্তি নেই। মদ খেয়ে পড়ে থাকে রাস্তায়, হতাশায় আক্রান্ত হয়ে আত্মহত্যা করে। দেহের শান্তির জন্য, মনের শান্তির জন্য একটা ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থা লাগে, যেটা আল্লাহ দিয়েছেন। কাজেই দুনিয়ার মানবজাতি যদি বলে মদ খাওয়া ভালো আপনি সেটা মেনে নিবেন? না। তাহলে অধিকাংশ মতামতই গ্রহণযোগ্য কী করে হল? অতএব সূত্র হবে, সত্য সর্বদা গ্রহণযোগ্য, মিথ্যা সর্বদা প্রত্যাখ্যনযোগ্য।
কাজেই আপনি যে বলেছেন হেযবুত তওহীদকে সরকার কেন মেনে নেবে বা অনুমতি দেবে, সরকার এজন্যই অনুমতি দেবেন- হেযবুত তওহীদের বক্তব্য ন্যায়সঙ্গত এবং এদেশের গুটিকয়েক ধর্মান্ধ, জঙ্গি ভাবাপন্ন, সন্ত্রাসবাদী মনোভাবের লোক ব্যতীত কোটি কোটি মানুষের মৌলিক আবেগের পক্ষে কথা বলছে হেযবুত তওহীদ। হেযবুত তওহীদ জ্বালাও পোড়াও, হরতাল, অবরোধ করে না, এ জন্যে জগদ্বাসীর চোখে পড়ে না। কিন্তু জ্বালাও পোড়াও ভুল পথ, ও পথে শান্তি আসবে না। শান্তি আসার জন্যে আল্লাহ-রসুলের পথ রয়েছে। আমরা মানবজাতি বহু আগেই সে পথ হারিয়েছি। এখন আবার আমাদেরকে সে পথ অবলম্বন করতে হবে।