সমগ্র পৃথিবী যখন অন্যায়-অবিচার, অশান্তি, যুদ্ধ, রক্তপাত, খুন-রাহাজানি, নারী-নির্যাতন, উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, জুলুমের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে শান্তির অন্বেষায় পাগলপারা, ঠিক এমন একটি সময়ে মুক্তির দূত হয়ে আলোর মশাল হাতে ধরারবুকে আগমন ঘটে একজন মহামানবের। যিনি টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী জমিদার পন্নী পরিবারের উত্তরসূরি, হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজিদ খান পন্নী। ১৪০০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া আল্লাহর রসুলের (সা.) প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা আবারও মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য, আল্লাহর তওহীদভিত্তিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য ১৯৯৫ সালে তিনি হেযবুত তওহীদ আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেন। সেইদিন থেকে তাঁর হাত ধরে শুরু হয় হেযবুত তওহীদের পথচলা। এরপর নানা ঘাত-প্রতিঘাত, সংগ্রাম, সংঘর্ষ, বাধা-প্রতিপত্তি পেরিয়ে বিগত ২৮ বছর ধরে হেযবুত তওহীদ সম্মুখপানে এগিয়ে চলেছে। এখন হেযবুত তওহীদ এক পরিচিত নাম। লক্ষ লক্ষ প্রাণের স্পন্দন, চেতনার বাতিঘর। হেযবুত তওহীদের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে অগণিত মানুষ এখন উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, অপরাজনীতি, ধর্মব্যবসা, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি মহান আদর্শ প্রতিষ্ঠার চেতনায় বলীয়ান হচ্ছে।
আমাদের মূল বক্তব্য হচ্ছে, মানুষ আল্লাহর খলিফা, আল্লাহর প্রতিনিধি। পৃথিবীতে মানুষের মূল দায়িত্ব হচ্ছে আল্লাহর খেলাফত করা, আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করা। এটাই বান্দার সাথে আল্লাহর চুক্তি। মানুষ যেন এই চুক্তিতে থাকতে না পারে, আল্লাহর খেলাফত করতে না পারে এজন্য প্রতিপক্ষ ইবলিশ সবসময় ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। এখন মানুষের কর্তব্য হচ্ছে ইবলিশের ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করে আল্লাহর খেলাফত করা, ইবলিশের চ্যালেঞ্জে আল্লাহকে জয়ী করা। প্রশ্ন আসতে পারে, মানুষ আল্লাহর খেলাফত করবে কী দিয়ে? সহজ উত্তর – আল্লাহ হুকুম-বিধান দিয়ে। মানুষ তার পারিবারিক, সামষ্টিক, রাষ্ট্রীয় জীবন যদি আল্লাহর দেওয়া হুকুম-বিধান, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি দিয়ে পরিচালনা করে তবেই দুনিয়াতে সে আল্লাহর খেলাফত করল। দুনিয়াতে আল্লাহর এই খেলাফতের ফল হবে ন্যায়, সুবিচার, শান্তি ও নিরাপত্তা। আল্লাহ এটাই চান। আল্লাহ চান তার বান্দা শান্তিতে-সমৃদ্ধে থাকুক। তাই তিনি যুগে যুগে তাঁর প্রেরিত নবী-রসুলদের মাধ্যমে এই শান্তিপূর্ণ দীন বা জীবনব্যবস্থাই মানবজাতির জন্য পাঠিয়েছেন। আর আল্লাহর দেওয়া এই হুকুম-বিধান, আইন-কানুন মেনে নেওয়ার প্রাথমিক অঙ্গীকারের নামই হচ্ছে ঈমান, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর’ ঘোষণা, যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় আল্লাহর হুকুম-বিধান ছাড়া আর কারো হুকুম-বিধান মানি না।
আমাদের আখেরী নবী, বিশ্বনবী, হুজুরেপাক (সা.) যে সমাজে এসেছিলেন, সেই সমাজটা কেমন ছিল, কতটা জাহেলিয়াতে পরিপূর্ণ ছিল সে কথা কমবেশি সবাই জানেন। সেই অন্যায়, অবিচার, জাহেলিয়াত আর কূপমণ্ডুকতায় পরিপূর্ণ সমাজকে আল্লাহর রসুল (সা.) বদলে দিলেন কোন পরশ পাথরের ছোঁয়ায়? তিনি এই অসাধ্য সাধন করতে পেরেছিলেন আল্লাহর তওহীদভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। আইয়ামে জাহিলিয়াতে নিমজ্জিত মানুষগুলো যখন আল্লাহর তওহীদভিত্তিক জীবনব্যবস্থার উপর ঐক্যবদ্ধ হল, তাদের সার্বিক জীবনে আল্লাহর হুকুম প্রতিষ্ঠা হল তখন তাদের সমাজ অকল্পনীয় শান্তি, ন্যায়, সুবিচার ও নিরাপত্তায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠল। তাঁর জীবদ্দশাতেই সমগ্র জাজিরাতুল আরবে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় চলে এলো। অর্ধ দুনিয়াতে ন্যায়বিচার, মানবতা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হলো। রসুলাল্লাহর ওফাতের পর তাঁর হাতে গড়া উম্মতে মোহাম্মদি জাতিটি তাদের রসুলের (সা.) অর্পণ করে যাওয়া বাকি দায়িত্বটুকু পূর্ণ করতে নিজেদের জীবন-সম্পদ, পুত্র-পরিজন কোরবানি করে উল্কাবেগে ঝাঁপিয়ে পড়ল। এভাবে চলে গেল প্রায় ৬০/৭০ বছর। ততদিনে উম্মতে মোহাম্মদি জাতিটি জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, প্রযুক্তিতে, সামরিক শক্তিতে তৎকালীন দুনিয়ার পরাশক্তিতে পরিণত হল। প্রাচুর্য, সমৃদ্ধি, গৌরবে তারা সকল জাতির শিক্ষকের জাতিতে আসীন হলো। পুরো দুনিয়া তাদের পদতলে অধিষ্ঠিত হল। কিন্তু এরপরই ঘটল মহা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা।
জাতি তাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ভুলে গেল। ভুলে গেল তাদের রসুলের (সা.) দেওয়া অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য। টুকরো টুকরো হয়ে গেল জাতির ঐক্য। বিভিন্ন দল, মত, ফেরকা, মাজহাবে বিভক্ত হয়ে জাতি শত শতভাগে বিভক্ত হয়ে গেল। একটি ভাগ ডুবে গেল দীনের ছোটখাট বিষয় নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণে, আরেকটি ভাগ ডুবে গেল আমোদ-প্রমোদ, ভোগ বিলাসিতায়, আরেকটি ভাগ বৈরাগ্যের পথ বেছে নিল। এভাবে জাতির সদস্যরা আকিদা বিকৃতির কারণে তাদের মূল কাজ, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, যে কাজের জন্য তাদের সৃষ্টি করা হয়েছিল, যে দায়িত্ব তাদের উপর অর্পণ করা হয়েছিল তা সমন্ধে বেখেয়াল হয়ে গেল। সেই থেকে চলছে এই জাতির বিপর্যের ইতিহাস। আজও তারা সেই মতভেদ, তর্ক-বিতর্ক, হাজার-হাজার ভাগে বিভক্ত হয়ে ওই চুলচেরা বিশ্লেষণেই মহাব্যস্ত। এটাকেই তারা ইসলামের কাজ মনে করে মহা আনন্দের সাথে শত শত বছর ধরে করে আসছে। এখন আর তাদের সামনে আর দীন প্রতিষ্ঠার আকিদা নেই, দুনিয়াতে আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠার কোন লক্ষ্য-উদ্দেশ্যও নেই। তারা দুনিয়াজুড়ে পরাজিত, লাঞ্ছিত, অপমানিত, নিগৃহিত, অন্য জাতির গোলাম। যে মুসলমান জাতি একসময় ছিল শিক্ষক্ষের জাতি, সেরা জাতি তারা আজ অন্য জাতির হাতে মার খেয়ে উদ্বাস্তু হয়ে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়। কিন্তু এটা তো হওয়ার কথা ছিল না। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, আমরা মুসলমান জাতি যদি সত্যিই এখন আমাদের অতীতের হারানো গৌরব-মর্যাদা আবার ফিরে পেতে চাই, সমগ্র দুনিয়া আল্লাহর সুশীতল শান্তির ছায়াতলে আবারও আনতে চাই, আমাদের সমাজে চলা এই অন্যায়, অবিচার, যুদ্ধ, রক্তপাত বন্ধ করতে চাই তবে আমাদের হাতে মুক্তির একটি উপায়ই আছে। আর তা হলো- মানুষকে আবারও আল্লাহর তওহীদের দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।
তওহীদের দিকে প্রত্যাবর্তনের প্রথম শর্তই হচ্ছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ- মোহাম্মাদুর রাসুলাল্লাহ (সা.)’ অর্থাৎ আল্লাহর হুকুম ছাড়া অন্য কারো হুকুম মানব না এবং মোহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রসুল- এ কথার ঘোষণা দেওয়া। এ কথাটা বুঝানোর জন্যই হেযবুত তওহীদ বিগত ২৮ বছর ধরে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। হেযবুত তওহীদের নিবেদিতপ্রাণ সদস্যরা নিজেদের জীবন-সম্পদ উৎসর্গ করে মানুষকে আল্লাহর তওহীদের দিকে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এ কাজ করতে গিয়ে হেযবুত তওহীদ সেই কর্মসূচিই নিয়েছে যে কর্মসূচির শিক্ষা আল্লাহর রসুল তাঁর হাতে গড়া উম্মতে মোহাম্মদি জাতিকে দিয়েছিলেন। আর তা হল –
১. ঐক্যবদ্ধ হওয়া।
২. নেতার আদেশ শোনা।
৩. নেতার আদেশ পালন করা।
৪. হেজরত করা।
৫. আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করা (দীনুল হক কে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার জন্য)।
আন্দোলনের সূচনালগ্ন থেকেই হেযবুত তওহীদ এই কর্মসূচিকে গ্রহণ করে নিয়ে প্রতিটি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই কর্মসূচির উপর দণ্ডায়মান থেকেই হেযবুত তওহীদ মানুষের আত্ম্যাধিক ও জাগতিক জগতে একটি রেনেসাঁ বা বিপ্লব ঘটানোর চেষ্টা করছে। বিভক্ত জনগোষ্ঠীকে যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজ করতে গিয়ে অনেক বাধা-বিপত্তি, প্রতিবন্ধকতা, হামলা, হুমকি-ধামকি, মারধোর, চোখ রাঙানি, মিথ্যাচার, অপপ্রচারের শিকার হতে হচ্ছে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের। কিন্তু তারা কোনকিছুর পরোয়া করে না। তারা সবর ও দৃঢ় সকল্পের মাধ্যমে তাদের লক্ষ্যের পানে এগিয়ে যাচ্ছে। তারা জানে, সত্যের পথ ফুল বিছানো হবে না। এই পথ বন্ধুর, কণ্টকাকীর্ণ। পথে পথে বাঁক, বিপদ। যুগে যুগে যারাই এ পথে হেঁটে গেছেন তাদেরই এমন বাধা-প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে হয়েছে। হেযবুত তওহীদ তাই কোন প্রতিবন্ধকতাকে ভয় পায় না। তারা জানে সত্যের বিজয় সুনিশ্চিত। আমরা হেযবুত তওহীদ আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাব। আমরা বিশ্বাস করি, একদিন হেযবুত তওহীদের মাধ্যমেই সমগ্র দুনিয়া আল্লাহ সত্যদীনের আলোতে আলোকিত হবে ইনশাল্লাহ।