অ-রাজনৈতিক আন্দোলন ‘হেযবুত তওহীদ বিগত ২৮ বছর ধরে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, অপ-রাজনীতি, নারী নির্যাতন, ধর্মব্যবসা, সাম্প্রদায়িকতাসহ সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা প্রচারের মাধ্যমে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। ১৯৯৫ সনে উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী সুলতানি পরিবারের উত্তরসূরী জনাব মোহাম্মদ বায়াজিদ খান পন্নী আন্দোলনটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। হেযবুত তওহীদ কোনোদিন কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের উস্কানিমূলক কথা বলেনি, কোনো আইনভঙ্গ করেনি। আমাদের এই কাজ মানবতার কল্যাণে, সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে।
আমাদের সমাজে একটি উগ্রবাদী, জঙ্গিবাদী, সাম্প্রাদায়িক, ধর্মব্যবসায়ী, ধর্মান্ধ, কট্টর ও গোড়াপন্থী গোষ্ঠী রয়েছে যারা ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতি করে, ব্যক্তিগত স্বার্থে ধর্মকে বিক্রি করে, গুজব হুজুগ রটনা করে, ওয়াজের মঞ্চ, মসিজদের মিম্বর ও মাইক ব্যবহার করে ধর্মবিশ্বাসী মানুষকে যে কারো বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত করে তোলে, জঘন্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে তা তওহীদী জনতার নামে চালিয়ে দেয়, মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে হাতিয়ার করে গুজবের ভিত্তিতে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বড়িঘর পুড়িয়ে দেয়, নির্বিচারে ভিন্নমতের মানুষকে কুপিয়ে মারার ফতোয়া দেয়। এ গোষ্ঠীটি হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি নতুন করে সারাদেশে ব্যাপক মিথ্যাচার, পোপাগান্ডা চালাচ্ছে, আন্দোলনের সদস্য ও কার্যালয়গুলোর উপর হামলা চালানোর হুমকি দিচ্ছে। তারা সংখ্যায় অগণিত। এই সংখ্যাকে কাজে লাগিয়ে তারা হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারমূলক কন্টেন্ট ও ওয়াজের মাঠে মিথ্যাচার করে সেই ভিডিও স্যোশাল মিডিয়ায় এমনভাবে প্রচার করছে যে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছে।
শুধু তাই নয়, হেযবুত তওহীদের সদস্যরা যখন ইসলামের প্রকৃত শিক্ষাগুলো তুলে ধরতে আন্দোলনের প্রকাশনা সামগ্রী নিয়ে প্রচারকার্যে যাচ্ছে, এই গোষ্ঠীটি তাদের উপর আক্রমণ চালাচ্ছে, তাদের কাছ থেকে পত্রিকা বই ছিনিয়ে নিচ্ছে, তাদেরকে আহত রক্তাক্ত পর্যন্ত করছে। আন্দোলন প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত সাড়ে চারশতাধিক স্থানে এই ধর্মজীবী গোষ্ঠীর আক্রমণের শিকার হয়েছেন আমাদের সদস্যরা। বহুস্থানে তারা আমাদের বাড়িঘরে, কার্যালয়ে এসে হামলা হালিয়েছে। এ পর্যন্ত তাদের হাতে আমাদের পাঁচজন সদস্য-সদস্যা নির্মমভাবে শহীদ হয়েছেন। সর্বশেষ গত বছর ২৩ আগস্ট পাবনায় সুজন মন্ডল নামে এক সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করেছে তারা। গত কয়েক মাসে প্রায় তিরিশটি জায়গায় তারা হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ হামলাই করা হয়েছে আমাদের নারী কর্মীদের উপর। হেযবুত তওহীদের নারীরা দেশের আইন মান্য করে, নাগরিক অধিকার বলে, মানবাধিকার বলে, ধর্মীয় শালীনতা মেনে বই, পত্রিকা ইত্যাদির প্রচারকার্যে অংশগ্রহণ করেন। নরসিংদী, ঢাকার লালবাগ, কেরানিগঞ্জ, রংপুর, কুড়িগ্রাম, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, শেরপুরসহ বিভিন্ন জেলায় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের উপর হামলা চালানো হয়েছে।
প্রত্যেকটি ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু ধর্মান্ধ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতির কলকাঠি যাদের হাতে সেই ধর্মব্যবসায়ী, সাম্প্রদায়িক, উগ্রবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কার্যকরী আইনগত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। মনে হয় সরকার প্রশাসন রাষ্ট্রযন্ত্র তাদের ফতোয়া সন্ত্রাসের সামনে অসহায়। এভাবে আস্কারা পেয়ে তারা দিনকেদিন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে, আইনকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে প্রতিনিয়ত তারা ওয়াজে খোতবায় হুমকি দিয়ে যাচ্ছে, হামলা করে যাচ্ছে।
আমরাও বাংলাদেশের নাগরিক। সংবিধানমতে আমাদেরও অধিকার রয়েছে দেশের কল্যাণে, মানুষের কল্যাণে, ধর্মের পক্ষে কথা বলার। ইসলাম ধর্মে নারীদের যে জাতীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সকল কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার অধিকার রয়েছে। নারীদের শিক্ষা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, জ্ঞান, প্রজ্ঞা, সাহস ইত্যাদির স্বীকৃতি ইসলাম দিয়েছে এবং তাকে বিকশিত করার পরিবেশ নিশ্চিত করেছে। আজকে পর্দা প্রথার নামে বাড়াবাড়ি করে, নারীকে বিকৃত ফতোয়ার জালে বন্দী করে নারীদের সেই অধিকার ও যোগ্যতাকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। কিন্তু আল্লাহ তাদেরকে যে অধিকার দিয়েছে সেটা যেন তারা ফিরে পান এ লক্ষ্যে আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছি। হাজার হাজার নারী এ আন্দোলনে আছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত একজন নারীও আন্দোলনের কোনো সদস্যের দ্বারা অসম্মানিত হয়েছেন এমন নজির কেউ দেখাতে পারবে না।
কিন্তু ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী, যারা ইসলামকে তাদের মালিকানাধীন সম্পত্তি বলে বিশ্বাস করে, যারা বাংলাদেশটাকে ধর্মান্ধ, মোল্লাতান্ত্রিক, পশ্চাৎপদ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়, নারীদেরকে বাক্সবন্দী করে রাখতে চায়, ইসলামের প্রকৃত শিক্ষার এই উদ্ভাসনকে মাটিচাপা দিতে চায়। এ জন্যই হেযবুত তওহীদের নারীদের উপর তারা আক্রমণ করছে, তাদের গায়ে পর্যন্ত হাত তোলার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে। ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা কী, আল্লাহ কোর’আনে কী বলেছেন, নবী করিম (সা.) নারী জাতিকে জাতীয়, রাষ্ট্রীয়, পেশাগত কিংবা সামরিক অঙ্গনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার জন্য কীভাবে তৈরি করেছেন এ শিক্ষা তারা জনসম্মুখে আনতে দিতে চায় না। আল্লাহর রসুল এমন একটি সভ্যতা কায়েম করেছিলেন যেখানে নারী পুরুষ উভয়ে একসঙ্গে মসজিদে নামাজ পড়তেন, রসুলাল্লাহর বক্তব্য একসঙ্গে বসে শ্রবণ করতেন। কেউ বলতে পারবে না যে মসজিদে নববীতে নারীদের জন্য পৃথক কোনো কক্ষ বা পর্দাঘেরা পৃথক বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। রসুলাল্লাহ মসজিদের প্রাঙ্গণে যে হাসপাতাল নির্মাণ করেছিলেন তার অধ্যক্ষ ছিলেন একজন নারী, মসজিদ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য যাঁকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন তিনিও একজন নারী। তিনি নারীদেরকে প্রতিটি যুদ্ধে নিয়ে গেছেন, সেখানে গিয়ে তারা রসদ সরবরাহ, আহতদের শুশ্রূষা প্রদান থেকে শুরু করে সরাসরি লড়াইয়ে অংশ গ্রহণ করেছেন। মদিনার বাণিজ্য ব্যবস্থার পরিচালক ছিলেন একজন নারী। এভাবে তিনি সকল কাজে শালীনতার সাথে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছিলেন। সেখানে হেযবুত তওহীদের মেয়েরা পত্রিকা বা বই বিক্রি করতে পারবে না এমন কথা কোনো ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী বলতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে এই মোল্লাতান্ত্রিক গোষ্ঠী চায় তাদের বানোয়াট ফতোয়া আরোপ করে নারীদেরকে অবরোধ করে রাখতে, চায় নারীদেরকে পশ্চাৎপদ অবলা বানিয়ে রাখতে। তারা চায় নারীদের স্রষ্ট্রা প্রদত্ত যাবতীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাখতে।
এজন্যই তারা ক্ষিপ্ত হয়ে এখানে সেখানে হেযবুত তওহীদের নারী সদস্যদের হামলা করছে। আমরা তাদের একই কাপুরুষোচিত হামলার প্রতিবাদ জানাই এবং এর পেছনে দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।