দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান নিয়ে জোর গুঞ্জন চলছিল দেশটি দেউলিয়া হবার পথে এগোচ্ছে। অবশেষে সেই গুঞ্জনটিই সত্য হলো। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে বলেছেন, ‘দেউলিয়া দেশে বাস করছে পাকিস্তানবাসী।’
পাকিস্তানের এই শোচনীয় পরিস্থিতির জন্য প্রধানত দুইটি কারণকে চিহ্নিত করা হচ্ছে, তা হলো দেশটির শাসকগোষ্ঠীর লাগামহীন দুর্নীতি ও ধর্মকে ব্যবহার করে স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টা। পাকিস্তানের মতো একটি দেশ, যার জন্ম হয়েছিল মুসলিম পরিচয় ও ইসলামের আদর্শকে সামনে রেখে, সেই দেশটির স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর আজ এই শোচনীয় পরিস্থিতি এটাই প্রমাণ করে যে, দেশটিতে ইসলামের বুলি কেবল মুখে মুখেই আউড়ানো হয়েছে এবং রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, সেই আদর্শকে কখনই বাস্তবে অনুসরণ করা হয়নি।
পাকিস্তান এমন একটি দেশ, যেখানে বিভিন্ন ধরনের ইসলামী দল, পীরতান্ত্রিক গোষ্ঠী, সশস্ত্র জঙ্গিগোষ্ঠী, সেক্যুলার রাজনৈতিক দল, এমনকি সেনাবাহিনী পর্যন্ত ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের এই ধর্ম নিয়ে খেলার পরিণতিতে দেশটিতে সবসময় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা লেগেই আছে। জঙ্গিবাদী হামলা, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, উগ্রবাদী আস্ফালন দিনকে দিন মাত্রা ছাড়িয়েছে। শুধু গত দশ বছরে পাকিস্তানের বিভিন্ন মসজিদে উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর বোমা হামলায় যত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে তা ভাবলেও গা শিউরে ওঠে। মসজিদে হামলা, শপিং মলে হামলা, থানায় হামলা, আদালতে হামলা, হাসপাতালে হামলা, স্কুলে হামলা, মন্দিরে হামলা, সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা- এগুলো পাকিস্তানের নিত্যদিনের ঘটনা। এদিকে ইস্যু-সন্ধানী রাজনৈতিক দলগুলোও বসে থাকে কখন কোন ধর্মীয় ইস্যুকে সামনে এনে দাঙ্গা-হাঙ্গামা লাগানো যায়, রাজনীতির মাঠ গরম করা যায়। ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতি একটি দেশকে কীভাবে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে তার উদাহরণ পাকিস্তান।
২০০৯ সালের পাঞ্জাবের ঘটনা। আসিয়া নামের একজন খ্রিস্টধর্মাবলম্বী, নিরক্ষর ও দরিদ্র গ্রাম্য নারীর সাথে গ্রামের কুয়া থেকে পানি তুলতে গিয়ে অন্যান্য মহিলাদের সঙ্গে বচসা বেঁধে যায়। এসময় গুজব রটে যে, আসিয়া মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) এর নামে কটূক্তি করেছেন। ব্যাস! সেই গুজবের সত্যতা যাচাই করার আর প্রয়োজন পড়েনি। স্থানীয় একজন মৌলভীর অভিযোগের ভিত্তিতে সঙ্গে সঙ্গেই আসিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। সেই মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায় এবং দীর্ঘ দশ বছর পর সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা সাক্ষ্য-প্রমাণ ঘেঁটে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেন যে, নবী অবমাননার বিষয়টি ছিল গুজব। তারা আসিয়াকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন। কিন্তু আদালতে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে কী প্রমাণিত হলো সেটা দেখলে তো রাজনীতি চলবে না, ধর্ম অবমাননার মতো এত লাগসই ইস্যু এভাবে হাতছাড়া হয়ে গেলে রাজনীতি হবে কী নিয়ে? কাজেই টিএলপি’র (তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান) মতো ধর্মভিত্তিক উগ্রবাদী দলগুলো আদালতের রায়কে থোড়াই কেয়ার করে আসিয়ার ফাঁসির দাবিতে ব্যাপক সহিংস আন্দোলন শুরু করল, রাজপথে পুলিশের সঙ্গে দাঙ্গা বেঁধে গেল। আরেকদিকে শুরু হলো জঙ্গিবাদী দলগুলোর জঙ্গি হামলা। সরকার কোনো শক্ত ব্যবস্থা তো নিলই না বরং টিএলপির অন্যায় আবদার মেনে নিয়ে প্রতিশ্রুতি দিল যে, আসিয়াকে দেশত্যাগ করতে দেওয়া হবে না এবং মামলাটা পুনরায় সুপ্রিম কোর্টে পুনর্বিবেচনার জন্য পাঠানো হবে।
এই ঘটনায় আসিয়ার ভাগ্যে কী হয়েছিল সেটায় পরে আসি, আগে জানা যাক আসিয়ার পক্ষে যারা কথা বলেছিল তাদের পরিণতি কী হয়েছিল। আসিয়ার পক্ষে মন্তব্য করায় পাঞ্জাবের গভর্নর সালমান তাসিরকে ২০১১ সালে জঙ্গি হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয়। তাকে ৩০টি গুলি করা হয়েছিল। হত্যার দায়ে মুমতাজ কাদরী নামের এক ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হলে সেই ব্যক্তি রাতারাতি ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর চোখে “পীরসাহেব” বনে যান। খুনের মামলা যখন আদালতে উঠল, দেখা গেল আসামী কাদরীর বিরুদ্ধে আইনী লড়াই চালানোর জন্য একজন আইনজীবীও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ তার বিরুদ্ধে মামলা লড়লে মৃত্যু নিশ্চিত। ইতোমধ্যেই আসিয়ার পক্ষে যে উকিল মামলা লড়েছিল, সে কোনোমতে প্রাণ নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।
আসিয়া বিবির পক্ষে কথা বলেছিলেন আরও একজন ব্যক্তি, তিনি হলেন পাকিস্তানের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী শাহবাজ ভাট্টি। তিনিও বেঁচে থাকতে পারেননি। আশ্চর্যের বিষয় হলো, একের পর এক সরকারের মন্ত্রী ও গভর্নরদের হত্যা করা হলেও এসবের বিরুদ্ধে সরকার কোনো মন্তব্য করে রাজনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়তে চায়নি। এসব খুন ও তার নেপথ্যের তাত্ত্বিক গুরুদের গ্রেফতার ও বিচার করা তো দূরের কথা, সরকার এই গোষ্ঠীর সঙ্গে আপসরফার পথ বেছে নেয় এবং ধর্মব্যবসায়ী সন্ত্রাসীদের সমস্ত দাবি আনুষ্ঠানিকভাবে মেনে নেয়। সরকারের এই নতিস্বীকার আরও লক্ষ নির্দোষ মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে তুলতে পারে সেটা বিবেচনায় নেওয়া হলো না। ফলে এই ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকল।
এই তো কয়েক মাস আগে শ্রীলঙ্কার একজন নাগরিকের (স্থানীয় একটি কারখানার ম্যানেজার) বিরুদ্ধে কোর’আন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে দিয়ে পাকিস্তানের শিয়ালকোট এলাকায় ব্যাপক সন্ত্রাসী তাণ্ডব চালালো ধর্মান্ধ উগ্রবাদী গোষ্ঠী। শ্রীলঙ্কার ওই নাগরিক আসলেই কোর’আন অবমাননা করেছেন কিনা- তা যাচাই করে দেখার আগেই, আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের আগেই, উগ্রবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠী শত শত মানুষকে জড়ো করে ৪৮ বছর বয়স্ক ওই শ্রীলঙ্কানকে দোকান থেকে টেনে হিঁচড়ে রাস্তায় নামিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে এবং তারপর মরদেহে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এই ঘটনাটি আন্তর্জাতিক মহলে আলোড়ন তুলেছিল কারণ নিহত ব্যক্তি ছিলেন অন্য দেশের নাগরিক। পাকিস্তানের অভ্যন্তরে কিন্তু এ ঘটনাগুলো খুবই পরিচিত, কিছুদিন পরপরই ঘটে থাকে। বিবিসির এক সূত্রে বলা হয়েছে, গত ৩০ বছরে পাকিস্তানে প্রায় ৯০ জন ধর্ম অবমাননার অভিযোগে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এমনকি ব্লাসফেমি আইনে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বিচারকার্য চলাকালীন আদালতে হামলা চালিয়ে গুলি করে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। এ ধরনের হামলায় জড়িতরা রাতারাতি হিরো বনে যায় এবং উগ্রবাদী ধর্মীয় দলগুলোর নেতারা ওই হামলাকারীকে প্রকাশ্যে বাহবা দেয়।
পাকিস্তানের উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে দু’টো সংগঠনের নাম বেশি আলোচিত হয়ে থাকে। একটি হলো তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি), আরেকটি তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান (টিএলপি)। টিটিপি হলো আফগানিস্তানের তালেবানের আদলে গড়ে ওঠা পাকিস্তানি তালেবান। এরা সশস্ত্র গোষ্ঠী। আর টিএলপি হলো আল্লামা খাদিম হোসাইন রিজভীর প্রতিষ্ঠিত উগ্রবাদী রাজনৈতিক দল। দু’টোই পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন। দু’টোর বিরুদ্ধেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও খুনের অভিযোগ রয়েছে। ২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের পেশোয়ারে সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি স্কুলে হামলা চালিয়েছিল টিটিপি। এই নারকীয় হামলায় প্রাণ হারায় অন্তত ১৪১ জন, যাদের মধ্যে ১৩২ জনই ছিল শিশু! অথচ এই টিটিপির সঙ্গেই পরবর্তীতে সমঝতার পথ বেছে নিয়েছে পাকিস্তান সরকার। একইভাবে ২০২১ সালের শুরুর দিকে ফ্রান্সবিরোধী বিক্ষোভ চলাকালীন ৬ পুলিশ সদস্য হত্যার দায়ে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী টিএলপিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল পাকিস্তান সরকার। কিন্তু পরবর্তীতে টিএলপি পাকিস্তানের রাজধানী দখল করে নেওয়ার হুমকি দিলে পাকিস্তান সরকারই কার্যত আত্মসমর্পণ করে টিএলপির কাছে। সরকার টিএলপির সব দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর খুনের সঙ্গে জড়িত টিএলপির কয়েকশ’ নেতা-কর্মীকে মুক্তি দিতে রাজি হয়। সন্ত্রাসী এই গোষ্ঠীর ব্যাংক হিসাবও খুলে দেয়।
আসলে এটাই হবার কথা ছিল, কারণ ইসলামের আদর্শ প্রতিষ্ঠা বাদ দিয়ে যখন ইসলাম নিয়ে ধান্দাবাজি শুরু হয়, তখন জনগণকে ন্যায়, শান্তি, সুবিচার, সমৃদ্ধি ও আইনের শাসন এনে দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকে না, বরং প্রতিযোগিতা শুরু হয় কোন দল, কোন পীর, কোন নেতা, কোন মন্ত্রী, কোন সরকার কতখানি ইসলামের বন্ধু সেটা জাহির করতে। আর তা করতে গিয়েই একের পর এক জন্ম দেওয়া হয় সহিংস ঘটনা, হরতাল, অবরোধ, সংঘর্ষ, রক্তপাত, উগ্রবাদী কর্মকাণ্ড, উত্তেজনা, উস্কানি, হুমকি ও বে-আইনী তাণ্ডব এবং তা মেনেও নেওয়া হয় মুখ বুঁজে! কে ইসলামের দুশমন, কে নবীর দুশমন, কে ইসলামের কটূক্তিকারী, কে ঈমান হরণকারী, কে ভ্রান্ত আকিদা পোষণকারী ইত্যাদি নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করে ও ঘৃণা সঞ্চার করে রাজনীতির মাঠ দখল করাই বিভিন্ন দলের মুখ্য উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায়। আর সেই ধর্মব্যবসায়ী দলগুলোকে আবার ব্যবহার করতে থাকে বড় বড় সেক্যুলার দলগুলো। কারণ, তাদেরও ধর্মীয় সমর্থন লাগবে, ধর্মব্যবসায়ী পীর ও উগ্রবাদী মাওলানাদের আশীর্বাদ লাগবে।
মানুষের ঈমানকে হইজ্যাক করে অপরাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার এই প্রক্রিয়া পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ গণ্ডি ছাড়িয়ে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও মিশে গেছে। যেমন- আফগানিস্তানের তালেবান ইস্যু, ভারতের কাশ্মীর ইস্যু ইত্যাদিতে দেশটির শাসকমহল ধর্মকে ব্যবহার করে এসেছে নানাবিধ সময়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেও পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকরা ও তাদের দোসররা ব্যাপকভাবে ধর্মের অপব্যবহার করে খুন, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী কার্যক্রম চালিয়েছিল। ধর্মের তাস খেলে বিভিন্ন সময় সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তিগুলোকেও নানাবিধ সুবিধা যুগিয়েছে পাকিস্তান। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ওই খেলায় কেবল ইমরান খানই হারেনি, হেরে গেছে পাকিস্তানও। পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর গত ৭৫ বছরে দেশটার শাসকরা, রাজনীতিবিদরা, ধর্মীয় নেতারা, পীর সাহেবরা এত ধর্মের জিগির তুলে, এত আন্দোলন বিক্ষোভ করে, এত ইসলাম হেফাজত করে পাকিস্তানকে দেউলিয়া হবার পথ থেকে ফেরাতে পারল না। এখন পাকিস্তানের নেতারা ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে পশ্চিমা ইহুদি খ্রিস্টানদের কাছে হাত পেতে বসে আছে। এ অবস্থা থেকে রাষ্ট্রকে বাঁচানোর জন্য শেষ চেষ্টা হিসেবে যে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ নিবে সেটাও সম্ভব না। কারণ দীর্ঘদিনের ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতির ফলে জনগণও বিভিন্ন দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, বিভিন্ন ধর্মব্যবসায়ী নেতা ও পীরের অন্ধ অনুসারীতে পরিণত হয়েছে এবং সেই গোদের উপর ক্যান্সার হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে জঙ্গিবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো। তারা এখন আরও শক্তিশালী, আরও বেপরোয়া! সরকার এখন কী করবে? সরকার দিশেহারা।
এখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশকেও গত কয়েক দশকে একটু একটু করে গ্রাস করে চলেছে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা। বিভিন্ন উগ্রবাদী গোষ্ঠীকে রাজনৈতিক বিবেচনায় লালন-পালন করছে সরকার। বাংলাদেশেও ধর্ম অবমাননাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে দুইদিন পরপরই উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলো হামলা, সংঘর্ষ, রক্তপাত ও তাণ্ডব চালায় দেশব্যাপী। বাংলাদেশে নিকট অতীতে নোয়াখালী, রংপুর, লালমনিরহাট, কক্সবাজার, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ভোলা, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় ধর্মের নামে গুজব রটিয়ে ও উস্কানি দিয়ে যে ধরনের উগ্রবাদী তাণ্ডব চালানো হয়েছে এবং নির্দোষ মানুষকে হত্যা, বাড়িঘর লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি চালিয়েছে তার লক্ষণ হুবহু পাকিস্তানের সঙ্গে মিলে যায়। ওয়াজ মাহফিলের আড়ালে অবৈধ সমাবেশ করে পরিকল্পিতভাবে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের মধ্যে ঘৃণার বিস্তার ঘটাচ্ছে এবং প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। তারা প্রকাশ্যে বেপরোয়াভাবে নির্দিষ্ট ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংগঠন ও সরকারকে কাফের, মুরতাদ, নাস্তিক, ইহুদির দালাল, ভারতের দালাল ইত্যাদি আখ্যা দিচ্ছে এবং তাদের উপর হামলার উস্কানি দিচ্ছে। তাদের এসব বেআইনী কার্যক্রম দেখেও না দেখার ভান করছে সরকার। কখনও বাধ্য হয়ে শক্ত ব্যবস্থা নিলেও পরবর্তীতে রাজনৈতিক বিবেচনায় তাদের সঙ্গে আপসরফা করছে এবং যে কোনোভাবে দাবি দাওয়া মেনে নিয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে খুশি করে ধর্মীয় দলগুলোকে বগলদাবা করে রাখতে চাইছে যাতে করে এই গোষ্ঠীটি প্রতিপক্ষের কব্জায় চলে না যায়। কিন্তু সরকারকে এটাও মনে রাখতে হবে, এই ধর্মান্ধ উগ্রবাদী গোষ্ঠীকে প্রশ্রয় দিয়ে, লালন পালন করে, আজ পর্যন্ত কেউই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি, অধিকাংশ ওঝার মৃত্যু সাপের কামড়েই হয়েছে। পাকিস্তানের শাসকমহল যুগের পর যুগ এই বৃথা চেষ্টাটাই করে এসেছে এবং তার মাশুল এখন চোখের পানি দিয়ে পরিশোধ করতে হচ্ছে। বাংলাদেশকে আমরা ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের জায়গায় দেখতে চাই না এবং বাংলাদেশের সরকারকেও ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াবে এমন দৃশ্য দেখতে চাই না। আমরা চাই বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও জনগণের একতা। আমরা ইসলাম নিয়ে ব্যবসা দেখতে চাই না, আমরা ইসলামের সুমহান নীতি ও আদর্শের বাস্তবায়ন দেখতে চাই। ন্যায়বিচার, সুবিচার, অর্থনৈতিক মুক্তি ও উন্নয়ন দেখতে চাই। আমরা চাই পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো দেশগুলোর শোচনীয় পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশ সরকার কতটুকু শিক্ষা গ্রহণ করুক।