হেযবুত তওহীদের নতুন সদস্যদের প্রতি
ধর্মব্যবসাকে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ নিষিদ্ধ বা হারাম করেছেন যা পবিত্র কোর’আন থেকে আমরা বহু আয়াত দিয়ে প্রমাণ করে দেখিয়েছি। যুগে যুগে ধর্মগুলি এসেছে মানবতার কল্যাণে, মানুষকে শান্তি দেয়ার জন্য, মানুষকে মুক্তি দেয়ার জন্য। সেই ধর্ম যখন ব্যবসা বা ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ারে পরিণত হয় তখন সেটা পরিণামে মানুষের জন্য অকল্যাণ বয়ে আনে। কারণ সেটা তার প্রকৃত রূপ হারিয়ে বিকৃত হয়ে যায়। ধর্মব্যবসায়ীরা ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থে ধর্মের অপব্যবহার করে মানুষের ঈমানকে ভুল খাতে প্রবাহিত করে। ফলে মানুষ ঐ ঈমান থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ, জাতি, সমাজ তথা মানবতার অকল্যাণ হয়, এমন সব কাজে লিপ্ত হয়। মানুষ আল্লাহর দীনের প্রকৃত রূপ, প্রকৃত বিধানগুলো জানতে পারে না, ধর্মব্যবসায়ীরা যা বলে সেটাকেই ধর্ম বলে জানে। সেজন্য আল্লাহ ধর্মব্যবসাকে অবৈধ করেছেন। সকল ধর্মেই ধর্মকে ব্যবহার করে ব্যবসা বা স্বার্থ হাসিল নিষিদ্ধ। ধর্মের কাজ হবে সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে, ব্যক্তিগত হিসেব নিকেষ মুক্ত হয়ে। ধর্মের আবির্ভাবই মানবতার কল্যাণে মানুষের উপকারের জন্য, মানুষকে ন্যায়নিষ্ঠ, সততা ও মানবিকতার শিক্ষা দেওয়ার জন্য। তাই এখন এই ধর্মব্যবসাকে এবং এর ধারক বাহকদের অবশ্যই না বলতে হবে।
যেহেতু আমরা এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর আাহ্বানে সাড়া দিয়ে তওহীদের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি, সকল ন্যায়ের পক্ষে, সত্যের পক্ষে, আল্লাহর তওহীদের পক্ষে, যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে, ধর্মব্যবসা, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। অতএব, আমরা যারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি, আমাদেরকে আত্মা দিয়ে উপলব্ধি করতে হবে যে, সত্য এবং মিথ্যা কখনো এক হতে পারে না। সত্য থেকে মিথ্যা আলাদা হতেই হবে। এটা আল্লাহই বলেছেন যে, সত্য যখন আসে তখন মিথ্যাকে বিতাড়িত হতেই হয়। দিনের সূর্য যখন উদিত হয়, রাতের অন্ধকারকে তখন দূর হতেই হয়। ন্যায় ও অন্যায় এক সঙ্গে থাকতে পারে না অসম্ভব। দিন রাত্রির একসঙ্গে উপস্থিতি অসম্ভব, দিনের আগমনে যেমন রাতের অন্ধকার দূর হয়, তেমনি আলো আসলে অন্ধকার দূর হবে, এবং সত্য উদ্ভাসিত হলে মিথ্যা দূরীভূত হবে। যারা সত্যের পক্ষ অবলম্বন করবে, যারা ন্যায়ের পক্ষ অবলম্বন করবে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার শপথ নিবে, তাদেরকে অবশ্যই মিথ্যাকে ঘৃণা করতে হবে, অন্যায়কে ঘৃণা করতে হবে। অন্যায়ের সংশ্রব ত্যাগ করতে হবে। মিথ্যার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। এজন্য আমরা সোজা বাংলায় বললাম, ‘না’ বলুন। আসুন, এখন থেকে মিথ্যা, ধর্মব্যবসা, ধর্মের নামে স্বার্থ উদ্ধার, অশান্তি সৃষ্টি করা ইত্যাদি যাবতীয় অন্যায়ের উৎস ধর্মব্যবসাকে আমরা এক কথায় ‘না’ বলি। আমরা আলাদা হব যাবতীয় অন্যায় থেকে। এই অভিশাপ, মিথ্যা থেকে আমরা আলাদা হব। আত্মার অন্তঃস্থল থেকে, মন থেকে আলাদা হব।
দ্বিতীয় কথা হল, যারা ধর্মব্যবসা করবে, ধর্মের নামে বিনিময় নিবে, স্বার্থ উদ্ধার করবে তাদেরকে আমরা বয়কট করব। এটা আমাদেরকে করতেই হবে। যদি বয়কট না করি, তাহলে তো আমরা সেই মিথ্যার সঙ্গে মিশেই থাকলাম, মিথ্যার দলেই থাকলাম। মিথ্যার দলে থেকে সত্য প্রতিষ্ঠা কখনো হবে না, মিথ্যার উপরে সত্য বিজয়ী হবে না। মিথ্যা সারা জীবন চলবে, থাকবে। তাই সকল নবী-রসুল, এমনকি শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (দ.) পর্যন্ত মক্কার ঐ ধর্মব্যবসায়ীদের থেকে আলাদা হয়েছেন। তিনি তাদেরকে বয়কট করেছেন। বয়কট করে এই মিথ্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাঁর উপরে অত্যাচার হয়েছে, অপপ্রচার চালিয়েছে, অন্যায় করা হয়েছে কিন্তু তবু তিনি দমে যান নি। তিনি অটল ছিলেন ন্যায়ের পক্ষে। একদিন তাঁরই বিজয় হয়েছে, কাবাকেন্দ্রিক ধর্মব্যবসার পরাজয় হয়েছে। তাই এটাই আমাদের কথা।
এখন আমাদের সাথে যারা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন, আপনাদেরকে এটা আত্মা দিয়ে বুঝতে হবে যে, এই ন্যায়ের পক্ষে, সত্যের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার অর্থ হলো মিথ্যার সঙ্গে আপস না করা, ধর্মব্যবসাকে ‘না’ বলা, ঘৃণা করা এবং ধর্মব্যবসা যারা করবে তাদেরকে বয়কট করা। এটা যদি আমরা না করতে পারি, তাহলে আমাদের আচরণ হবে মোনফেকের মত। আমরা মুখে ধর্মব্যবসার বিরোধিতা করলাম, আর বাস্তবে আমরা ধর্মব্যবসায়ীদের পিছনে প্রার্থনা করলাম, এটা হলে মোনাফেকী করা হবে। ঈমান তো হলো, যেটা আত্মায় বিশ্বাস করব, মুখে প্রচার করব, সেটা কাজেও প্রমাণ করব। এজন্য যারা ধর্মব্যবসা করবেন আমরা তাদেরকে বয়কটা করব। আর যারা ধর্মব্যবাসা করবেন না, নিঃস্বার্থভাবে মানতার কল্যাণে কাজ করবেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অসত্যের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন সেই সাথে ন্যায়ের পক্ষে ভূমিকা রাখবেন অর্থাৎ যিনি ধর্মের কোনো বিনিময় নিবেন না, বিনিময়ে কোনো স্বার্থ উদ্ধার করবেন না, আমরা তার সঙ্গে এবাদত করব, প্রার্থনা করব এবং তার সঙ্গে কাজ করব, ফলে এই নিবেদিত প্রাণদের সঙ্গে আমাদের আত্মার মিল হবে। এটা কথায় এবং আমাদের কাজে প্রমাণ করতে হবে। এটা করতে গেলে আমাদেরকে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হতে পারে। সেটার জন্য আমাদেরকে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।
অনেক ধর্মব্যবসায়ী গত সাতাশ বছরে নানা অপপ্রচার চালিয়েছে। তারা অপপ্রচার চালিয়েছে, হেযবুত তওহীদ নাকি নামাজ পড়ে না, জুমা পড়ে না। আমরা ইসলাম বিদ্বেষী, এই রকম ধারণা জনমনে সৃষ্টি করার চেষ্টা তারা করেছে। ঘটনা সত্য নয়, একদম নিরেট মিথ্যা কথা, ভালোভাবে জেনে রাখবেন। সত্য হলো আমরা নামাজ পড়ি, নামাজের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি দেই। এখন প্রশ্ন হলো, আমরা নামাজ পড়ি না কার পিছনে? যারা ধর্মব্যবসা করে তাদের পিছনে। জুমা আমরা পড়ি, কোন জুমা? যে জুমার মধ্যে জাতির জন্য, জাতির স্বার্থে কথা হয়, যাতে করে জাতির মধ্যে মতভেদ দুরীভূত হয়; যে জুমায় জাতির শৃঙ্খলা নিয়ে কথা হয়, জাতীয় স্বার্থ নিয়ে কথা হয়, ধর্মের নামে কোনো বিনিময় নেয়া হয় না, নামাজ পড়ানোর জন্য কেউ বিনিময় নেয় না, আমরা সেখানে নামাজ পড়ি, সেই জুমা আমরা পড়ি। অতএব আমরা জুমা বা নামাজ পড়ি না, এটা ঠিক না। কথা হচ্ছে, যারা ধর্মের নামে বিনিময় নিবে, তারা মূলত স্বার্থ হাসিলকারী, তাদের পিছনে আমরা কোন নামাজ পড়ব না। এবং শুধু তাই নয়, আমরা তাদেরকে বয়কট করেছি, এটা আমাদের প্রতিবাদ। যেহেতু এই ধর্মব্যবসাকে আমরা আত্মা দিয়ে ঘৃণা করি, তাই বাস্তবে আমরা তাদেরকে বয়কট করেছি। তারা যেন এটা বুঝতে পারে, সমাজের মানুষ যেন বুঝতে পারে যে ধর্মব্যবসা ঠিক নয়। আজকে যারা আমাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন তাদেরকে অবশ্যই এই কথার মধ্যে একমত হতে হবে। নাহলে আপনারা সত্যের মধ্যে টিকে থাকতে পারবেন না।
হেযবুত তওহীদ যখন প্রতিষ্ঠা হয়েছিলো, তখনও এমামুয্যামান এই সিদ্ধান্ত নিলেন যে, আমরা ধর্মব্যবসার সঙ্গে আপস করব না। তখনও যারা এই ধর্মব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল, তারা অনেকেই অনেক পীর সাহেব, অনেক আলেম সাহেব, অনেক মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন, ওনারা সঙ্গে সঙ্গে চলে গেছেন। তারা বলেছিলেন, ‘তাহলে আমরা আর হেযবুত তওহীদে থাকবো না’। তবুও আমরা কোন আপস করি নাই, পরোয়া করি নাই। কারণ, ধর্মব্যবসা আল্লাহ ঘৃণা করেছেন, আল্লাহ হারাম করেছেন। আমরা সেই অপরাধের সাথে আপস করতে পারি না, সেটাকে সমর্থন করতে পারি না। তাদের পিছনে আমরা দাঁড়াতে পারি না, কারণ, রসুল এটা করেন নি। এই সত্য, এই হিম্মত নিয়ে আমরা যদি না দাঁড়াতে পারি, তাহলে কোনোদিনও আমাদের মধ্যে ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য সৃষ্টি হবে না, অন্যায় দূর হবে না। ফলশ্রুতিতে অন্যায় এভাবে চলতেই থাকবে বছরের পর বছর, তবু ন্যায় প্রতিষ্ঠা হবে না। আলহামদুল্লিাহ, হেযবুত তওহীদ কর্তৃক সত্যের পক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে এহেন দৃঢ় মনোবলের কারণে, আল্লাহর রহম অনেকেই ধর্মব্যবসা ত্যাগ করেছেন, কষ্ট করে জীবন নির্বাহ করছেন, অনেকে রিকশা-ভ্যান চালাচ্ছেন, কায়িক পরিশ্রম করছেন, ক্ষেত খামারে কাজ করছেন, চাকরি করছেন অথবা ব্যবসা করছেন কিন্তু ধর্মব্যবসা করছেন না। পূর্বে ধর্মব্যবসায় নিয়োজিত থাকা ঐ মানুষই এখন ধর্মের কাজ ঠিকই করছেন অথচ বিনিময় নিচ্ছেন না। কাজেই আমার শেষ কথা হলো, আসুন আমরা ধর্মব্যবসাকে না বলি ধর্মব্যবসায়ীদেরকে বয়কট করি।